মিসরে ইসরায়েল ও হামাসের প্রথম দিনের আলোচনা ‘ইতিবাচকভাবে’ শেষ হয়েছে
Published: 7th, October 2025 GMT
মিসরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া পরোক্ষ আলোচনার প্রথম দিনটি ভালোভাবে শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র আল–জাজিরা ও অন্যান্য গণমাধ্যমকে বলেছে, গাজায় যুদ্ধ অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা নিয়ে সমঝোতার আশা দেখা দিয়েছে।
আলোচকেরা আজ মঙ্গলবার আবারও বৈঠকে বসবেন।
আল–জাজিরা অ্যারাবিককে সূত্রগুলো বলেছে, গতকাল সোমবার লোহিত সাগর–সংলগ্ন শারম আল-শেখ শহরে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ছিল ইতিবাচক। সেখানে চলমান আলোচনার পরবর্তী ধাপ কীভাবে এগোবে, তার একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে।
হামাস মধ্যস্থতাকারীদের বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলা বন্দীদের মুক্তিসংক্রান্ত আলোচনাকে কঠিন করে তুলছে। আল–জাজিরা অ্যারাবিকের প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।
আজ ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং এর জবাবে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরু হওয়ার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করা হয়।আলোচনায় অংশ নেওয়া হামাসের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংগঠনটির দুই নেতা খলিল আল-হায়া ও জাহের জাবারিন। এ দুই আলোচক গত মাসে দোহায় ইসরায়েলের হামলা থেকে বেঁচে যান। ওই হামলায় পাঁচজন নিহত হন।
মিসরের সংবাদমাধ্যম আল-কাহেরা নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথম দিনের আলোচনায় বন্দিবিনিময়, যুদ্ধবিরতি ও গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে কথা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ট্রাম্প দ্রুত ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি বন্দিবিনিময়ের প্রক্রিয়াটি শেষ করতে চাইছেন। এর মধ্য দিয়ে গাজায় যুদ্ধ অবসানে তাঁর পরিকল্পনার অন্য অংশগুলো বাস্তবায়নের কাজে গতি আনতে চান তিনি।
ট্রাম্প গতকাল বিকেলে ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আমাদের চুক্তি করার ভালো সুযোগ আছে।’ তবে তাঁর মতে, কিছু বিষয় নিয়ে সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘কিন্তু আমি মনে করি, আমরা ভালো করছি। হামাস এমন কিছু বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ট্রাম্প দ্রুত ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি বন্দিবিনিময়ের প্রক্রিয়াটি শেষ করতে চাইছেন। এর মধ্য দিয়ে গাজায় যুদ্ধ অবসানে তাঁর পরিকল্পনার অন্য অংশগুলো বাস্তবায়নের কাজে গতি আনতে চান তিনি।ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আল–জাজিরার প্রতিনিধি রোজিল্যান্ড জর্ডান বলেন, আলোচনার বিস্তারিত কীভাবে এগোচ্ছে, সেটি ট্রাম্প বলেননি। কেবল সাধারণ ইতিবাচক মূল্যায়ন দিয়েছেন।
জর্ডান আরও বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট হামাসকে আলোচনায় রাখার জন্য যৌথ আরব-তুর্কি সমর্থনের প্রশংসা করেছেন, তিনি ইসরায়েলের জনগণকে প্রশংসা করেছেন এবং অবশ্যই তাঁর নিজস্ব বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে প্রশংসা করেছেন, যিনি এই আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’
ট্রাম্পের জামাতা এবং আবাসন ব্যবসায়ী জ্যারেড কুশনারও মার্কিন প্রতিনিধিদলের অংশ বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুনগাজায় শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে পুতিনের সঙ্গে কথা বললেন নেতানিয়াহু৭ ঘণ্টা আগেমিসরের আল-কাহেরা নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচনা মঙ্গলবারও চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আজ ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং এর জবাবে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরু হওয়ার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করা হয়।
তারপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৬৭ হাজার ১৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন।
বিভিন্ন সূত্রে আল–জাজিরা জানতে পেরেছে, গতকাল আলোচনা চলার সময়ও গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামলা হয়েছে। এতে অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন মানবিক সহায়তা নেওয়ার সময় মারা গেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ জ য় ইসর য় ল আল জ জ র
এছাড়াও পড়ুন:
গত দশকের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীরা
প্রতিবছর সাহিত্যের জগতে যে পুরস্কারের দিকে সবার নজর থাকে, তা হলো—‘নোবেল প্রাইজ ইন লিটারেচার’। ১৯০১ সালে শুরু হওয়া এ সম্মাননা দেওয়া হয় সেসব লেখক, কবি বা নাট্যকারকে, যাঁরা ‘মানবতার কল্যাণে অসাধারণ সাহিত্যিক অবদান রেখেছেন’। এ ক্ষেত্রে শুধু জীবিত লেখকেরাই বিবেচনায় আসেন; মৃত ব্যক্তিকে এ পুরস্কার দেওয়া হয় না। সাধারণত যাঁরা ভাষার সীমা অতিক্রম করে মানব অভিজ্ঞতাকে নতুন আলোয় হাজির করেন, ইতিহাস ও সমাজের কঠিন প্রশ্নগুলোকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে শেখান, তাঁরাই আসেন আলোচনায়।
২০১৫: সলতিয়েনা আলেক্সিয়েভিচবেলারুশি লেখক ও সাংবাদিক সলতিয়েনা আলেক্সিয়েভিচ মৌখিক ইতিহাসকে সাহিত্যে রূপ দেওয়ার জন্য ২০১৫ সালে নোবেল পান। যুদ্ধ, চেরনোবিল বিপর্যয় কিংবা সোভিয়েত জীবনের পতন—তিনি সংগ্রহ করেছেন সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর, সাক্ষাৎকার আর স্মৃতি। ভয়েসেস ফ্রম চেরনোবিল, দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার কিংবা সেকেন্ডহ্যান্ড টাইম দেখিয়েছে, ইতিহাস কেবল রাজনীতিকদের দলিল নয়; বরং মানুষের কান্না, ভাঙা স্বপ্ন আর বেঁচে থাকার সংগ্রামের সমষ্টি।
২০১৬: বব ডিলানঅপ্রত্যাশিতভাবেই ২০১৬ সালে নোবেল পান মার্কিন সংগীতশিল্পী ও গীতিকার বব ডিলান। কারণ, তাঁর গানগুলো কেবল সুর নয়, একেকটা সময়ের ইতিহাস। ‘ব্লোইন’ ইন দ্য উইন্ড’ কিংবা ‘দ্য টাইমস দে আর আ চেঞ্জিং’ সত্তরের দশকের সামাজিক আন্দোলনের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে। নোবেল কমিটি স্বীকৃতি দেয়—গানও সাহিত্য হতে পারে এবং সাহিত্যের প্রভাব রাখতে পারে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে। বব ডিলানের পুরস্কার জেতা অনেক বিতর্কও তোলে, কিন্তু একই সঙ্গে সাহিত্যের সীমানাকে বিস্তৃত করে।
২০১৭: কাজুও ইশিগুরোজাপানে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ লেখক কাজুও ইশিগুরো নোবেল পান ২০১৭ সালে। তাঁর লেখার প্রধান বিষয় স্মৃতি, ভ্রান্তি ও আত্মপ্রবঞ্চনা। দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে উপন্যাসে এক বাটলারের জীবনে দায়িত্ব ও ব্যক্তিগত অনুভূতির দ্বন্দ্ব উঠে আসে। আর নেভার লেট মি গো ভবিষ্যতের এক ডিস্টোপিয়ান পৃথিবীতে মানুষ হওয়ার অর্থ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ইশিগুরো নীরব, সংযত গদ্যে মানুষের অস্তিত্বের গভীরতর দিকগুলো খুঁজে বের করেন।
২০১৮: ওলগা তোকারচুকপোল্যান্ডের লেখক ওলগা তোকারচুক পান ২০১৮ সালের নোবেল। ইতিহাস, পুরাণ ও ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে মিশিয়ে তিনি রচনা করেন এমন সব বই, যা একই সঙ্গে জ্ঞানভিত্তিক ও কল্পনাশক্তিতে সমৃদ্ধ। ফ্লাইটস (যা ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল জয় করে) ভ্রমণ ও শরীরকে কেন্দ্র করে নানা গল্প একত্র করে। আর দ্য বুকস অব জ্যাকব ইউরোপের আঠারো শতকের ধর্মীয় আন্দোলনের পটভূমিতে বিস্তৃত এক কাহিনি। তাঁর সাহিত্য মানুষকে দেখায়, আমরা সবাই এক দীর্ঘ, চিরন্তন যাত্রার অংশ।
২০১৯: পিটার হান্ডকেঅস্ট্রিয়ান লেখক পিটার হান্ডকে তাঁর পরীক্ষামূলক গদ্য ও নাটকের জন্য ২০১৯ সালে নোবেল পান। ভাষা ও অভিজ্ঞতার ভেতরের সীমান্ত ভাঙাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য। এ সোরো বিয়ন্ড ড্রিমস বইয়ে তিনি নিজের মায়ের আত্মহত্যার কাহিনি লিখেছেন। আর শর্ট লেটার, লং ফেয়ারওয়েল উপন্যাসে বিচ্ছিন্নতা ও যাত্রার প্রতীকী রূপ মেলে। তাঁর কাজ পাঠককে মানুষের ভেতরের নীরবতা, দুঃখ ও ভাঙনের গভীরে নিয়ে যায়।
২০২০: লুইস গ্লুকমার্কিন কবি লুইস গ্লুক ২০২০ সালে নোবেল পান। তাঁর কাব্যধারা সংযত অথচ তীক্ষ্ণ। দ্য ওয়াইল্ড আইরিস বইয়ে তিনি প্রকৃতিকে মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতীক করেছেন। আর এ ভিলেজ লাইফ ও ফেইথফুল অ্যান্ড ভার্চ্যুয়াস নাইট-এ উঠে আসে পারিবারিক স্মৃতি, ব্যক্তিগত যন্ত্রণা ও নীরব আশা। গ্লুকের কবিতায় দেখা যায়, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কীভাবে হয়ে ওঠে সর্বজনীন।
২০২১: আবদুলরাজাক গুরনাহতাঞ্জানিয়ায় জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ লেখক আবদুলরাজাক গুরনাহ উপনিবেশ-পরবর্তী আফ্রিকার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন। ২০২১ সালে তিনি নোবেল পান। প্যারাডাইস, বাই দ্য সি এবং আফটারলাইভস উপন্যাসগুলোতে শরণার্থীজীবনের যন্ত্রণা, উপনিবেশের দাগ ও পরিচয়ের টানাপোড়েন উঠে আসে। গুরনাহর লেখায় ইতিহাসের কষ্টকেই দেখা যায় মানবিকতার দৃষ্টিতে।
২০২২: অ্যানি আর্নোফরাসি লেখক অ্যানি আর্নো ২০২২ সালের নোবেল পান। তাঁর লেখায় ব্যক্তিগত স্মৃতি হয়ে ওঠে সমষ্টিগত ইতিহাস। দ্য ইয়ারস বইটি একদিকে আত্মজীবনী, অন্যদিকে ফ্রান্সের সমাজ পরিবর্তনের দলিল। শ্রেণি, লিঙ্গ, ভালোবাসা, বিচ্ছিন্নতা—সবকিছু তিনি লেখেন নির্মোহ ভঙ্গিতে। তাঁর শক্তি হলো ব্যক্তিগতকে সর্বজনীনে রূপান্তর করা।
২০২৩: ইয়োন ফসেনরওয়ের লেখক ইয়োন ফসে সমসাময়িক নাট্যকারদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর। ২০২৩ সালে তিনি নোবেল পান। তাঁর নাটকগুলোতে নীরবতা, মৃত্যু, বিশ্বাস ও মানবিক একাকিত্ব বারবার ফিরে আসে। আর ‘সেপ্টোলজি’ সিরিজে বিশ্বাস ও অস্তিত্বের প্রশ্নকে তিনি ভাষার মিতব্যয়ী ছন্দে প্রকাশ করেছেন। ফসে দেখান, শব্দ কম হলেও সাহিত্যের গভীরতা অসীম হতে পারে।
২০২৪: হান কাং২০২৪ সালে প্রথম কোরিয়ান হিসেবে নোবেল পান হান কাং। তাঁর উপন্যাস দ্য ভেজিটেরিয়ান ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে আলোচিত ছিল এবং ২০১৬ সালে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কারও পেয়েছিল। পাশাপাশি হিউম্যান অ্যাক্টস কোরিয়ার গণ–আন্দোলন ও সহিংসতার পটভূমিতে এক শোকগাথা। আর গ্রিক লেসনস মানবিক সম্পর্কের ভঙ্গুরতা নিয়ে লেখা। হন কাংয়ের লেখায় শরীর, সহিংসতা, ইতিহাস ও করুণা একসঙ্গে মিশে যায়, যা তাঁকে সমকালীন সাহিত্যে এক অনন্য কণ্ঠ দিয়েছে।
গত দশকের নোবেলজয়ী লেখকদের কাজ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সাহিত্য কেবল গল্প বলাই নয়; বরং মানুষের অস্তিত্ব, ইতিহাস ও সমাজের প্রতিচ্ছবি। কেউ আমাদের নিয়ে যান ভ্রমণের ভেতরে, কেউ শোনান নীরবতার ভাষা, কেউবা সুরকে রূপ দেন সাহিত্যে।
২০২৫ সালের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার আর কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। এবার কার হাতে উঠবে এ সম্মান? আপনাদের কী মনে হয়, কে হতে পারেন পরবর্তী নোবেলজয়ী সাহিত্যিক?