সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বেতন, পেনশনসহ অন্য প্রাপ্যতা রিভিজিট করতে কেন নির্দেশ নয়: হাইকোর্ট
Published: 24th, November 2025 GMT
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, পেনশন ও বিশেষাধিকারসংক্রান্ত আইন প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। আইন দুটি কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বেতন, পেনশনসহ অন্যান্য প্রাপ্যতা রিভিজিট (পুনরায় দেখা) করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রাজিউদ্দিন আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য বিদ্যমান গবেষণা সুবিধা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা বিষয়ে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনসচিব এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালের বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন এবং ২০২৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেনসহ ১৩ আইনজীবী ও আইন শিক্ষার্থী চলতি মাসে রিটটি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
আদালতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বাংলাদশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের আর্থিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন ধাপে রয়েছে। যেখানে ভারতের প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা, পাকিস্তানে ৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা, ভুটানে ১ লাখ ৯১ হাজার থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, মালদ্বীপে প্রায় ৭ লাখ টাকা, সেখানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পান। এই অসামঞ্জস্য শুধু আর্থিক নয়, বরং বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের মানের প্রতিও সাংঘর্ষিক।
রিট আবেদনকারীপক্ষের ভাষ্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। সংবিধানের ৯৪(৪) ও ১৪৭(২এ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংবিধান প্রদত্ত সুরক্ষিত একটি অধিকার। তবে ২০২১ ও ২০২৩ সালের উল্লিখিত আইন দুটি বিচারকদের বেতন, পেনশন ও বিশেষাধিকার—এমনভাবে নির্ধারণ করেছে, যা বাস্তবে তাঁদের আর্থিক স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন রছে। ফলে আইন দুটি সংবিধানের পরিপন্থী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র ম ক র ট র ব চ রকদ র ব চ রপত আইনজ ব আর থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় হাফিজুর রহমানের হাইকোর্টে জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জামিন চেয়ে হাফিজুর রহমানের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা ও বিচারপতি রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
এই মামলায় নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে গত সপ্তাহে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন হাফিজুর রহমান।
আদালতে হাফিজুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আনিসুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
পরে আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্ট রুল দিয়ে হাফিজুর রহমানকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। ফলে তাঁর কারামুক্তিতে আপাতত বাধা নেই।’
এর আগে আটকের ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পর গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
গত ২৮ আগস্ট সকালে লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাম ছিল। তবে তিনি সেখানে ছিলেন না। সকাল ১০টায় গোলটেবিল আলোচনা শুরুর কথা ছিল। তবে শুরু হয় বেলা ১১টায়।
আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন হাফিজুর রহমান। তাঁর বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। এ সময় তাঁরা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তাঁরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের একটি দল আসে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমান, মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করে। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ১০ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন। এতে করে তাঁদের হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকে।
হাফিজুর রহমানের আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের যে ধারায় মামলাটি করা হয়েছে, সেই অপরাধের উপাদান এজাহারে নেই। ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকও ছিলেন না হাফিজুর রহমান। মামলায় লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। হাফিজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। তাঁর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। মূলত এসব যুক্তিতে তাঁর জামিন চাওয়া হয়।