নাগরিকদের জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের, উৎপাদনকারীদের নয় বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশের বিধান এবং ২০২৩ সালের ওষুধ ও কসমেটিকস্ আইনের ৩০(১) ও ৩০(২) ধারায় স্পষ্টতই দেখা যায় যে জীবনরক্ষাকারী ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের এখতিয়ার নিশ্চিত করে। সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান এ ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে কোনো নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ রাখেনি।

সাত বছর আগে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো.

রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৫ আগস্ট ওই রায় দেন।

২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি আজ সোমবার হাতে পেয়েছেন বলে জানান রিট আবেদনকারীপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, এই রায়ের মাধ্যমে মানুষের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য যখন-তখন ইচ্ছামাফিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্ধারণের সুযোগ থাকছে না।

এর আগে দ্য ড্রাগস (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৮২ সালে প্রণয়ন করা হয়। এটি ২০২৩ সালের ওষুধ ও কসমেটিকস আইন দিয়ে রহিত করা হয়। অধ্যাদেশের ১১(১) ধারায় সরকার গেজেট নোটিফিকেশের মাধ্যমে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে বলে উল্লেখ ছিল। আর ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামালের মূল্য নির্ধারণসংক্রান্ত ২০২৩ সালের ওষুধ ও কসমেটিকস আইনের ৩০ ধারায় বলা আছে। ৩০(১) ধারা অনুযায়ী, সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে, উপধারা (২)–এর অধীন তালিকাভুক্ত এবং আমদানিকারকেরা ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। ৩০(২) ধারা অনুযায়ী, সরকার উপধারা (১)–এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, যেসব ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হবে, তার একটি তালিকা প্রস্তুত করে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশ করবে।

রিট আবেদনকারীপক্ষের তথ্য অনুসারে, আইনের বিধান অনুসারে ১৯৯৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ৭৩৯টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। পরে সীমিত করে ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা রেখে ১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সার্কুলার ইস্যু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রুল নিষ্পত্তি করে ২৫ আগস্ট নির্দেশনাসহ রায় দেন হাইকোর্ট।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওষুধ প্রস্তুত মালিক সমিতির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির শুনানিতে ছিলেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিকদের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকবে এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা থাকবে না বলে রায়ে এসেছে। হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন যে প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী ওষুধগুলোর মূল্য সরকার নির্ধারণ করবে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে মূল্য নির্ধারণ করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। ওষুধ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশের বিধান যা বর্তমানে ওষুধ ও কসমেটিকস আইনের সুনির্দিষ্ট বিধান অনুসারে সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটির মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করার বিষয়টিও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ য ষ ঠ আইনজ ব সরক র র র জ বন আইন র দনক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুই মাস পর জামিন পেলেন ভারতীয় নাগরিক সখিনা বেগম

পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ভারতীয় নাগরিক সখিনা বেগম দুই মাস পর জামিন পেয়েছেন। একই সঙ্গে সখিনাকে বাংলাদেশি আশ্রয়দাতাদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ পর পর ভাষানটেক থানার পরিদর্শককে সখিনার বিষয়ে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ৪ মে থেকে ভাষানটেক থানাধীন মিরপুর ১৪ নম্বরের টিনশেড এলাকার বাসিন্দা জাকিয়া আক্তার ও ক্লান্তি আক্তারের আশ্রয়ে ছিলেন ৬৮ বছর বয়সী সখিনা বেগম। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে সেখান থেকে আটক করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ আদালত জামিন মঞ্জুর করে সখিনাকে মা–মেয়ে জাকিয়া ও ক্লান্তি আক্তারের জিম্মায় দেন। আদালত বলেছেন, যদি কখনো সখিনাকে ওঁনাদের রাখতে সমস্যা হয়, তাহলে আদালতকে জানাতে। আদালত অন্য কোথাও রাখার ব্যবস্থা করবেন। এ ছাড়া এক সপ্তাহ পরপর ভাষানটেক থানার পরিদর্শককে সখিনার বিষয়ে আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার আসামিপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন জামিন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। এর আগে সখিনাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তখন জামিন শুনানি হয়। এরপর বিচারক বিরতি দিয়ে আদেশের জন্য রাখেন।

সখিনা বেগমকে আটকের পর ‘দ্য কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট, ১৯৫২’ আইনে মামলা করে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরের দিন তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

উল্লেখ্য, এই আইন অনুযায়ী কোনো ভারতীয় নাগরিক পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না। এর ব্যত্যয় হলে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অথবা ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

আজ আসামি সখিনার পক্ষের আইনজীবী রহমাতুল্যাহ সিদ্দিক বলেন, ‘জামিন শুনানির জন্য সখিনাকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানিতে আমরা বলেছি, এটা একটা জামিনযোগ্য ধারা। জামিন পেলে আসামি পালাবেন না। বিচারক জানতে চেয়েছেন, কার জিম্মায় জামিন দেবেন। আমরা বলেছি, ওনাকে গত চার–পাঁচ মাস যাঁরা রেখেছেন, ওনাদের অধীনে দেন।’

সখিনার খোঁজ পাওয়ার বিষয়ে ক্লান্তি আক্তার বলেন, সখিনার কাছ থেকে জানতে পেরেছেন ভারতের আসামের বাসিন্দা তিনি। একদিন আসামে তাঁর বাসা থেকে সেখানকার পুলিশ সই করার কথা বলে তাঁকে থানায় নেয়। ওঁনার পরিবার থানায় গেলে তাদের চলে যেতে বলে। বলে, ওঁনার কাজ শেষ হলে বাসায় যাবে। ওই দিন রাতেই ২৫ থেকে ৩০ জনের সঙ্গে ওঁনাকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়। সেখান থেকে কয়েক সপ্তাহ এদিক–সেদিক ঘুরতে ঘুরতে ঢাকার ভাষানটেকে আসেন।

ক্লান্তি আক্তার বলেন, ‘মে মাসের চার তারিখ একটা দোকানে ওঁনাকে বসে থাকতে দেখি। ওঁনার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। সেখান থেকে বাসায় আশ্রয় দিই।...আমরা বিষয়টি বিবিসির সাংবাদিককে জানাই। উনি রিপোর্ট করার পর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। উনি আমাদের কাছে পাঁচ মাসের মতো ছিলেন।’

জামিন পাওয়া সখিনা যত দিন বাংলাদেশে থাকবেন, তত দিন তাঁদের কাছেই থাকবেন বলে জানান ক্লান্তি। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে থাকাকালে ওঁনার প্রতি একটা মায়া জম্মেছে। উনি (সখিনা) ওঁনার দেশকে ভালোবাসেন। ওনার দেশেই যেতে চান। ওঁনার আত্মীয়স্বজন ওঁনাকে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।’

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে ভাষানটেক থানার টিনশেড টেকপাড়া গলির মাথায় সখিনা বেগমকে পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের জিজ্ঞসাবাদে ওই নারী তাঁর বাড়ি আসামে বলে জানান। তিনি কিছুটা বাংলায় আর কিছুটা অসমীয়া ভাষায় কথা বলতে পারেন। তাঁর কাছে পাসপোর্ট ও ভিসা চাইলে দেখাতে পারেননি। কীভাবে ভাষানটেক এসেছেন, সে–সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। আসামের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে প্রবেশের অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নূরাল পাগলার দরবারে হামলার ঘটনায় করা মামলা প্রত্যাহারে পরিবারের আবেদন
  • সারা হোসেনের প্রশ্ন, ‘পুলিশ কি পুরোনো নিপীড়ন বন্ধ করবে’
  • দুই সেনা কর্মকর্তাসহ চার আসামির মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি ৪ ডিসেম্বর
  • ‘ই-পারিবারিক আদালত বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে’
  • বিচারের দীর্ঘসূত্রতা দূর করবে ই-পারিবারিক আদালত
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় হাফিজুর রহমানের হাইকোর্টে জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই
  • ট্রাইব্যুনাল বললেন, আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য
  • দুই মাস পর জামিন পেলেন ভারতীয় নাগরিক সখিনা বেগম
  • যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৪২ ফিলিস্তিনি নিহত