রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে উদ্বাস্তু জনপদ
Published: 9th, October 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা প্রাচীন সন্দ্বীপের প্রান্তিক ইউনিয়ন উড়িরচর। মেঘনার মোহনায় অবস্থিত উড়িরচর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে আগত যেকোনো ভ্রমণকারীর মন ভরে উঠবে মোটা চালের ভাত, টাটকা মাছ আর সবুজ ফসলের সমারোহে। এখানকার বাসিন্দাদের আন্তরিক আতিথেয়তাও মুগ্ধ করার মতো।
কিন্তু এই শান্ত দ্বীপের আড়ালে লুকিয়ে আছে নানা বঞ্চনা, যা বাইরের চোখে সহজে ধরা পড়ে না। বৈরী প্রকৃতি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, প্রভাবশালীদের সঙ্গে জলদস্যুদের আঁতাত, ভূমি-বাণিজ্য এবং একতরফা সীমা নির্ধারণের বেড়াজালে আটকে আছে উড়িরচরের মানুষ।
অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার বাস্তুচ্যুত মানুষের অন্যতম বৃহৎ আশ্রয়স্থল উড়িরচর। ভূমি–বাণিজ্যের ফলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বরাদ্দযোগ্য জমি অস্থানীয় বিত্তশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ।
অন্যদিকে একতরফা সীমানা নির্ধারণ উড়িরচরের আদি বাসিন্দাদের মধ্যে পরিচয় হারানোর শঙ্কা এবং তীব্র সামাজিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে চোখে পড়ে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার সীমানা নির্ধারণকারী স্তম্ভ।
এ পরিস্থিতিটা স্থানীয় মানুষের ভাষায়, ‘এক জমিতে দুই কৃষকের চাষ, মাঝখানটায় শস্যের সর্বনাশ’।
১৯৭৮ সালের দিকে সন্দ্বীপ থেকে ২৫টি ভূমিহারা পরিবার প্রথম উড়িরচরে বসতি স্থাপন করে। এরপরের দুই-তিন বছরে শত শত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিতে শুরু করে। ১৯৮৫ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলেও সন্দ্বীপের ভূমিহীন মানুষ দ্রুত ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ২০১০ সালের দিকে মেঘনা অববাহিকার ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর বিভিন্ন ছোট-বড় দ্বীপের ভিটেহারা মানুষ এসে এখানে নতুন করে জীবন শুরু করেন। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার পরিবার এই দ্বীপে বসবাস করছে, যাদের আগের ঠিকানা সমুদ্রের বুকে বিলীন হয়ে গেছে।
প্রায় ৫০ বছর হয়ে গেলেও উড়িরচরের এই ভূমিহীন মানুষেরা এখনো তাঁদের ভূমির অধিকার পাননি। উল্টো তাঁরা এখন ভূমি হারানোর ঝুঁকিতে। সরকারের চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএসপি) উদ্বাস্তুদের ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানে কাজ করেছে। ফলে দেরিতে হলেও ভূমির মালিকানা নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলেন উড়িরচরের বাসিন্দারা। কিন্তু প্রকল্পটি চরবাসীর জন্য আশীর্বাদ না হয়ে বরং নিপীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কি না, এমন প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।
উড়িরচরে পা রাখতেই দেখা হলো ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারানো লক্ষ্মীপুরের রামগতির শহীদুল ইসলামের (৬৫) সঙ্গে। ভিটেমাটি হারিয়ে উড়িরচরে এসেছিলেন নতুন জীবনের আশায়। গ্রামীণ ব্যাংক ও সাগরিকা থেকে ঋণ নিয়ে একটি মুদিদোকান চালালেও থাকার মতো ঘর নেই। স্ত্রী থাকেন অন্যের আশ্রয়ে। ঋণের বোঝা আর মাথা গোঁজার ঠাঁই না পাওয়ার হতাশায় নিমজ্জিত শহীদুল।নিত্যসঙ্গী বৈরী প্রকৃতিসীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট থেকে মালবোঝাই নৌকার ছাদে চেপে উড়িরচরের উদ্দেশে যাত্রা করতেই দেখা মেলে ভাঙা পায়ে প্লাস্টার নিয়ে নৌকায় ওঠা সালাউদ্দিনের (৩২) সঙ্গে। ঢাকায় পিকআপ ভ্যান দুর্ঘটনায় আহত সালাউদ্দিন আড়াই মাস পর ফিরছেন নিজের বাড়ি উড়িরচরে। এত সময় চট্টগ্রামে থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি উড়িরচরের দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার কথা বলেন। জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল নৌকাই এখানকার প্রধান বাহন। বিকল্প হিসেবে স্পিডবোট থাকলেও তা ব্যয়বহুল।
উড়িরচরে পা রাখতেই দেখা হলো ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারানো লক্ষ্মীপুরের রামগতির শহীদুল ইসলামের (৬৫) সঙ্গে। ভিটেমাটি হারিয়ে উড়িরচরে এসেছিলেন নতুন জীবনের আশায়। গ্রামীণ ব্যাংক ও সাগরিকা থেকে ঋণ নিয়ে একটি মুদিদোকান চালালেও থাকার মতো ঘর নেই। স্ত্রী থাকেন অন্যের আশ্রয়ে। ঋণের বোঝা আর মাথা গোঁজার ঠাঁই না পাওয়ার হতাশায় নিমজ্জিত শহীদুল। তার ওপর ভূমি–বাণিজ্যের শিকার হয়ে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের নানা আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
এই হতাশা শহীদুলের একার নয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ভিটেমাটি হারানো অসংখ্য মানুষের একই পরিণতি।
গুগল ম্যাপ দিয়ে তৈরি বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের একটি ভিডিও চিত্রে ১৯৮৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, দক্ষিণের ভাঙনে উড়িরচর দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে ভেঙে যাওয়া এলাকায় জাহাইজ্জার চর (স্বর্ণদ্বীপ) ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। উপকূলে পলিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন ভূমি জেগে ওঠার প্রবণতা বাড়লেও লবণাক্ততা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং স্রোতের অস্বাভাবিক গতি এসব নতুন ভূমিকেও দ্রুত বিলীন করে দিচ্ছে। ফলে জলবায়ু উদ্বাস্তুরা এক চর থেকে অন্য চরে যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
বাস্তুচ্যুতির এই চক্র উড়িরচরের বাসিন্দাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমানে যেটুকু উড়িরচর টিকে আছে, সেখানকার ৮০ ভাগ পরিবারই দক্ষিণ দিকের প্রবল ভাঙনের শিকার হয়ে ক্রমেই উত্তরে সরে এসে বসতি গড়েছে। উত্তরের প্রান্তভাগে বসবাস করা মানুষেরা ১৫ বছর আগেও অন্য কোনো দ্বীপ বা চরে ছিলেন। গাছপালাহীন এই প্রান্তে তারা মাত্র এক দশক আগে বসতি স্থাপন করতে শুরু করেছেন।
উড়িরচরে গত ৫০ বছরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস এখানকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। জলদস্যুদের আশ্রয়স্থল হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে এই চর, যেখানে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা ভূমিহীন উদ্বাস্তুদের ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে।
নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারানো শহীদুল হকের একমাত্র সম্বল ক্ষুদ্রঋণে করা এই মুদিদোকান। তাঁর স্ত্রী থাকেন অন্যের বাড়িতে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লক ষ ম প র উদ ব স ত র জন ত ক পর ব র রচর র জলব য
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে উদ্বাস্তু জনপদ
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা প্রাচীন সন্দ্বীপের প্রান্তিক ইউনিয়ন উড়িরচর। মেঘনার মোহনায় অবস্থিত উড়িরচর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে আগত যেকোনো ভ্রমণকারীর মন ভরে উঠবে মোটা চালের ভাত, টাটকা মাছ আর সবুজ ফসলের সমারোহে। এখানকার বাসিন্দাদের আন্তরিক আতিথেয়তাও মুগ্ধ করার মতো।
কিন্তু এই শান্ত দ্বীপের আড়ালে লুকিয়ে আছে নানা বঞ্চনা, যা বাইরের চোখে সহজে ধরা পড়ে না। বৈরী প্রকৃতি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, প্রভাবশালীদের সঙ্গে জলদস্যুদের আঁতাত, ভূমি-বাণিজ্য এবং একতরফা সীমা নির্ধারণের বেড়াজালে আটকে আছে উড়িরচরের মানুষ।
অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার বাস্তুচ্যুত মানুষের অন্যতম বৃহৎ আশ্রয়স্থল উড়িরচর। ভূমি–বাণিজ্যের ফলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বরাদ্দযোগ্য জমি অস্থানীয় বিত্তশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ।
অন্যদিকে একতরফা সীমানা নির্ধারণ উড়িরচরের আদি বাসিন্দাদের মধ্যে পরিচয় হারানোর শঙ্কা এবং তীব্র সামাজিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে চোখে পড়ে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার সীমানা নির্ধারণকারী স্তম্ভ।
এ পরিস্থিতিটা স্থানীয় মানুষের ভাষায়, ‘এক জমিতে দুই কৃষকের চাষ, মাঝখানটায় শস্যের সর্বনাশ’।
১৯৭৮ সালের দিকে সন্দ্বীপ থেকে ২৫টি ভূমিহারা পরিবার প্রথম উড়িরচরে বসতি স্থাপন করে। এরপরের দুই-তিন বছরে শত শত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিতে শুরু করে। ১৯৮৫ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলেও সন্দ্বীপের ভূমিহীন মানুষ দ্রুত ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ২০১০ সালের দিকে মেঘনা অববাহিকার ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর বিভিন্ন ছোট-বড় দ্বীপের ভিটেহারা মানুষ এসে এখানে নতুন করে জীবন শুরু করেন। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার পরিবার এই দ্বীপে বসবাস করছে, যাদের আগের ঠিকানা সমুদ্রের বুকে বিলীন হয়ে গেছে।
প্রায় ৫০ বছর হয়ে গেলেও উড়িরচরের এই ভূমিহীন মানুষেরা এখনো তাঁদের ভূমির অধিকার পাননি। উল্টো তাঁরা এখন ভূমি হারানোর ঝুঁকিতে। সরকারের চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএসপি) উদ্বাস্তুদের ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানে কাজ করেছে। ফলে দেরিতে হলেও ভূমির মালিকানা নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলেন উড়িরচরের বাসিন্দারা। কিন্তু প্রকল্পটি চরবাসীর জন্য আশীর্বাদ না হয়ে বরং নিপীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কি না, এমন প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।
উড়িরচরে পা রাখতেই দেখা হলো ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারানো লক্ষ্মীপুরের রামগতির শহীদুল ইসলামের (৬৫) সঙ্গে। ভিটেমাটি হারিয়ে উড়িরচরে এসেছিলেন নতুন জীবনের আশায়। গ্রামীণ ব্যাংক ও সাগরিকা থেকে ঋণ নিয়ে একটি মুদিদোকান চালালেও থাকার মতো ঘর নেই। স্ত্রী থাকেন অন্যের আশ্রয়ে। ঋণের বোঝা আর মাথা গোঁজার ঠাঁই না পাওয়ার হতাশায় নিমজ্জিত শহীদুল।নিত্যসঙ্গী বৈরী প্রকৃতিসীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট থেকে মালবোঝাই নৌকার ছাদে চেপে উড়িরচরের উদ্দেশে যাত্রা করতেই দেখা মেলে ভাঙা পায়ে প্লাস্টার নিয়ে নৌকায় ওঠা সালাউদ্দিনের (৩২) সঙ্গে। ঢাকায় পিকআপ ভ্যান দুর্ঘটনায় আহত সালাউদ্দিন আড়াই মাস পর ফিরছেন নিজের বাড়ি উড়িরচরে। এত সময় চট্টগ্রামে থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি উড়িরচরের দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার কথা বলেন। জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল নৌকাই এখানকার প্রধান বাহন। বিকল্প হিসেবে স্পিডবোট থাকলেও তা ব্যয়বহুল।
উড়িরচরে পা রাখতেই দেখা হলো ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারানো লক্ষ্মীপুরের রামগতির শহীদুল ইসলামের (৬৫) সঙ্গে। ভিটেমাটি হারিয়ে উড়িরচরে এসেছিলেন নতুন জীবনের আশায়। গ্রামীণ ব্যাংক ও সাগরিকা থেকে ঋণ নিয়ে একটি মুদিদোকান চালালেও থাকার মতো ঘর নেই। স্ত্রী থাকেন অন্যের আশ্রয়ে। ঋণের বোঝা আর মাথা গোঁজার ঠাঁই না পাওয়ার হতাশায় নিমজ্জিত শহীদুল। তার ওপর ভূমি–বাণিজ্যের শিকার হয়ে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের নানা আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
এই হতাশা শহীদুলের একার নয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ভিটেমাটি হারানো অসংখ্য মানুষের একই পরিণতি।
গুগল ম্যাপ দিয়ে তৈরি বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের একটি ভিডিও চিত্রে ১৯৮৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, দক্ষিণের ভাঙনে উড়িরচর দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে ভেঙে যাওয়া এলাকায় জাহাইজ্জার চর (স্বর্ণদ্বীপ) ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। উপকূলে পলিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন ভূমি জেগে ওঠার প্রবণতা বাড়লেও লবণাক্ততা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং স্রোতের অস্বাভাবিক গতি এসব নতুন ভূমিকেও দ্রুত বিলীন করে দিচ্ছে। ফলে জলবায়ু উদ্বাস্তুরা এক চর থেকে অন্য চরে যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
বাস্তুচ্যুতির এই চক্র উড়িরচরের বাসিন্দাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমানে যেটুকু উড়িরচর টিকে আছে, সেখানকার ৮০ ভাগ পরিবারই দক্ষিণ দিকের প্রবল ভাঙনের শিকার হয়ে ক্রমেই উত্তরে সরে এসে বসতি গড়েছে। উত্তরের প্রান্তভাগে বসবাস করা মানুষেরা ১৫ বছর আগেও অন্য কোনো দ্বীপ বা চরে ছিলেন। গাছপালাহীন এই প্রান্তে তারা মাত্র এক দশক আগে বসতি স্থাপন করতে শুরু করেছেন।
উড়িরচরে গত ৫০ বছরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস এখানকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। জলদস্যুদের আশ্রয়স্থল হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে এই চর, যেখানে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা ভূমিহীন উদ্বাস্তুদের ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে।
নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারানো শহীদুল হকের একমাত্র সম্বল ক্ষুদ্রঋণে করা এই মুদিদোকান। তাঁর স্ত্রী থাকেন অন্যের বাড়িতে