মামলাবাজ ট্রাম্পের ‘আইনি যুদ্ধ’ কার স্বার্থে
Published: 9th, October 2025 GMT
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির বিরুদ্ধে মামলা করে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে একপ্রকার ‘আইনি যুদ্ধ’ শুরু করেছেন। এতে তাঁর শাসনব্যবস্থাকে অনেকেই ১৯৩০-এর দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে তুলনা করছেন। কারণ, হিটলারও কিন্তু আইন মেনে ক্ষমতায় এসে পরে সেই আইনের জোরেই একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিলেন।
তবে হিটলারের সঙ্গে ট্রাম্পের পার্থক্যও আছে। হিটলার যুদ্ধের ফ্রন্টে লড়েছিলেন, আহতও হয়েছিলেন দুবার। কিন্তু ট্রাম্প সামরিক দায়িত্ব এড়িয়ে যান, দাবি করেন তাঁর পায়ের হাড়ে সমস্যা আছে। তাঁর চোখে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া মানে ‘বোকা’ বা ‘পরাজিত’ হওয়া।
ট্রাম্পের রাজনীতির আসল কৌশল হলো নিজেকে অবহেলিত জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান সংখ্যাগোষ্ঠীকে ‘অবহেলিত সংখ্যালঘু’ হিসেবে উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুনট্রাম্প তাঁর ভূ-অর্থনৈতিক যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন ০৭ অক্টোবর ২০২৫এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদেরও তিনি ‘শরণার্থী’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানান। কিন্তু এখন তাঁর বক্তৃতাগুলো ক্রমেই অর্থহীন বকবকানিতে পরিণত হয়েছে। হিটলার অন্তত এসব বকবক নিজের ব্যক্তিগত ‘টেবিল টক’-এর মধ্যে রাখতেন, যেখানে তিনি স্পার্টানদের স্যুপ নিয়ে আলোচনা করতেন। ট্রাম্প কিন্তু হাজারো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে বাতাসচালিত টারবাইন কীভাবে পাখি ও তিমি মেরে ফেলে—এসব নিয়ে বক্তৃতা দেন।
ট্রাম্প কখনো অপমান ভুলে যান না। সম্প্রতি কোমির পাশাপাশি তাঁর নিশানায় এসেছেন জর্জ সোরোস। তাঁর বিরুদ্ধে তিনি ‘দেশে সন্ত্রাসে অর্থায়নের’ অভিযোগ তুলেছেন। অথচ তাঁরই সাবেক অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বহু বছর সোরোসের কর্মচারী ছিলেন। এমনকি তিনি সেনাপ্রধান মার্ক মিলিকেও মৃত্যুদণ্ডের হুমকি দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সহিংসতার ভাষা এখন তাঁর মুখে আরও ঘন ঘন শোনা যাচ্ছে।
ট্রাম্প আসলে বহু বছর ধরেই ‘ল’ফেয়ার’ বা আইনি যুদ্ধের কৌশল ব্যবহার করে আসছেন। ১৯৭৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে তিনি ব্যবসায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী, কর কর্তৃপক্ষ, সাংবাদিক বা সমালোচকদের বিরুদ্ধে প্রায় ৪ হাজার মামলা করেছেন। তাঁর কৌশল সহজ: প্রতিপক্ষকে ব্যয়সাপেক্ষ ও দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে ক্লান্ত করে দেওয়া। অনেক আইনজীবীকেও তিনি পরে নিজের পাওনা টাকার জন্য মামলা করতে বাধ্য করেছেন।
এই মামলাবাজি দিয়ে ট্রাম্প ছোট ব্যবসায়ী, কন্ট্রাক্টর, এমনকি রংমিস্ত্রিদেরও ঠকিয়েছেন। অনেক বড় আইন সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়কেও তিনি সরকারি চাপে রেখেছেন। যদি তারা ‘ভুল’ মক্কেলের পক্ষে দাঁড়ায় বা ভিন্নমতাবলম্বী অধ্যাপক নিয়োগ দেয়, তাহলে তিনি তাদের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নেন। এখন ট্রাম্প নির্বাচিত মেয়র ও গভর্নরদের মত উপেক্ষা করে লস অ্যাঞ্জেলেস, পোর্টল্যান্ড ও মেমফিসে সেনা পাঠাচ্ছেন। মুখোশধারী ফেডারেল এজেন্টরা কৃষি ও মাংসশিল্পে কাজ করা অভিবাসীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের এক লাখ ডলারের ট্যালেন্ট ট্যাক্স বনাম চীনের ফ্রি আমন্ত্রণ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর বাজেট এখন বিশ্বের ১৭তম বৃহৎ সামরিক বাহিনীর সমান। তবু ট্রাম্প চান নিয়মিত সেনাবাহিনীও এসব অভিযানে যুক্ত হোক। সম্প্রতি ভার্জিনিয়ার কোয়ান্টিকো ঘাঁটিতে জেনারেলদের সমাবেশে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ তাঁদের বলেন, ‘ওজন কমাও, দাড়ি কামাও, এবং ওয়োক (প্রগতিশীল) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুত হও।’ তাঁর বেআইনি নির্দেশেই ক্যারিবীয় সাগরে তথাকথিত ‘ড্রাগ বোট’-এর যাত্রীদের হত্যা করা হয়েছে।
এই বেআইনি সংস্কৃতি একধরনের লোভ ও দুর্নীতির দ্বারা চালিত হচ্ছে। হিটলার নিজে সম্পদের লোভে অন্ধ ছিলেন না। কিন্তু ট্রাম্প প্রকাশ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের, তাঁর পরিবারের ও ঘনিষ্ঠদের জন্য অর্থ উপার্জন করছেন।
ট্রাম্পপন্থী ধনকুবের ইলন মাস্ক ও ল্যারি এলিসন সরকারি চুক্তি থেকে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। তাঁর নিযুক্ত বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ উপসাগরীয় অঞ্চলে গিয়ে নিজের বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। সঙ্গে আছেন তাঁর ছেলে অ্যালেক্স উইটকফ। অ্যালেক্স আবার ট্রাম্পের ছেলে এরিক ট্রাম্পের সঙ্গে ক্রিপ্টো ব্যবসায় অংশীদার। এই উদ্যোগে অর্থ দিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এমনকি মেলানিয়া ট্রাম্পও নিজের জীবন নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরির জন্য জেফ বেজোসের কাছ থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাচ্ছেন।
এই প্রকাশ্য দুর্নীতিও ট্রাম্পের ভোটারদের বিচলিত করছে না। কিন্তু বাকিদের কাছে এখন একটাই প্রশ্ন: আমরা কি ট্রাম্পের গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ধ্বংসের পথে সহযোগী হব, নাকি দেরি হওয়ার আগেই কথা বলব?
মাইকেল বার্লি সিনিয়র ফেলো, এলএসই আইডিয়াস, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীরের কান্না ও একজন বাবার আত্মাহুতির গল্প
১৫ নভেম্বরের কথা, শ্রীনগরে বিলাল আহমেদ বিলালের বাড়িতে অভিযান চালায় জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। তারা তুলে নিয়ে যায় বিলালের ছেলে জাসির বিলাল ও ভাই নবীল আহমদকে। দিল্লিতে সাম্প্রতিক বোমা বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে কয়েকজন কাশ্মীরির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কাশ্মীরে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। তাদের গ্রেপ্তার সেই অভিযানেরই অংশ। পুলিশ কাশ্মীরজুড়ে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে নির্বিচার আটক করেছে। যা উপত্যকাজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে আতঙ্ক।
ছেলে ও ভাই আটক হওয়ার খবর শুনে ৫০ বছর বয়সী বিলাল থানায় যান; কিন্তু তাঁকে তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এ ঘটনা তাঁকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়। বাড়ি ফিরে তিনি প্রচণ্ড উদ্বেগে ভুগছিলেন। পরিবার জানায়, তিনি ঠিকমতো হাঁটতেও পারছিলেন না। গত রোববার তিনি নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। তাঁকে শ্রীনগরের শ্রী মহারাজা হরি সিং হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা সোমবার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বেশির ভাগ বিবরণ অনুযায়ী, বিলালের আত্মাহুতি ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে এ ধরনের প্রথম ঘটনা। তবে এ ঘটনা ভারতের জনমনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি।
এর আগে দুঃশাসনের দমবন্ধ পরিবেশে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্মহুতি দিয়েছিলেন তিউনিসিয়ার বুয়াজিজি। বুয়াজিজির আত্মাহুতি দিয়েছিল আরব বসন্তের। বুয়াজিজির মতো বিলালও ফল বিক্রেতা ছিলেন। বুয়াজিজির মতো তিনিও এমন এক দমবন্ধ শাসনে বাস করতেন। বুয়াজিজির মতোই ধারাবাহিক অবমাননা ও নির্যাতনের পর বিলালও চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তবে তিউনিসিয়ায় বুয়াজিজির আত্মাহুতি যেখানে আরব বসন্তের জন্ম দিয়েছিল, কাশ্মীরে বিলালের গল্প সেখানে প্রায় চাপা পড়ে গেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে, বিশেষ করে ২০১৯ সালে দিল্লি কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অবসান ঘটানোর পর থেকে কাশ্মীরে কথা বলা, একত্র হওয়া বা বিতর্ক করার ক্ষমতাই যেন হারিয়ে গেছে। ভারত সরকার শুধু ‘উন্নয়ন’কে হাতিয়ার বানিয়ে রাজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণই জোরদার করছে না, তারা জমির আইন পুনর্লিখন করছে, হাজার হাজার ভারতীয় সেটেলার আনছে, মানুষের জীবিকা নষ্ট করছে এবং রাজ্যের জনসংখ্যাগত কাঠামো বদলে ফেলছে। দিন দিন বাড়তে থাকা নজরদারির জালে মানুষ যে শ্বাসরুদ্ধ পরিবেশে বাস করছে, তা কল্পনাতীত।
কাশ্মীরি চিকিৎসকদের ‘হোয়াইট কলার টেরর মডিউল’-এর সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এতে করে হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালানোকে ন্যায়সংগত দেখানো যায়, এমনকি চিকিৎসকদের দেওয়া সাক্ষ্য–প্রমাণকেও অগ্রাহ্য করা যায়। গবেষক-শিক্ষকেরা চাকরি হারাচ্ছেন বা হুমকির মুখে পড়ছেন; সাংবাদিকদের পুলিশ ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের প্রতিবেদন ব্যাখ্যা করতে বলছে। বেতনের রসিদ দেখাতে বাধ্য করা হচ্ছে, এমনকি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করতে বলা হচ্ছে।গত ছয় বছরে ভারত নানা ঔপনিবেশিক কৌশল ব্যবহার করে কাশ্মীরের ওপর তার দখল আরও কঠোর করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক স্থবিরতা সৃষ্টি, জমি দখল এবং সমষ্টিগত শাস্তি দেওয়া।
ফসল তোলায় বাধা আর ‘উন্নয়ন’-এর নামে জমি বাজেয়াপ্ত হওয়ায় আপেলচাষিদের জীবিকা তলানিতে ঠেকেছে। এসব পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে ভয় ও অনিশ্চয়তার মানচিত্রে পরিণত করেছে। ভয় ও অনিশ্চয়তার উদ্দেশ্য কাশ্মীরিদের রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করা এবং অঞ্চলটিকে ভারতের শর্তে পুনর্গঠিত করা।
বিলাল বুঝেছিলেন, তাঁর ছেলে ও ভাই ভারতের কারাগারের অন্ধকার গহ্বরে হারিয়ে যেতে পারেন। সেখানে ন্যায়বিচার নেই, নেই সুষ্ঠু বিচারপ্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা। হাজার হাজার কাশ্মীরিকে ভিত্তিহীন অভিযোগে আটক করে রেখেছে ভারত। তাঁদের মধ্যে আছেন সাংবাদিক ইরফান মেহরাজ, যিনি আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে বন্দি; আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারকর্মী খুররম পারভেজ, চার বছর ধরে আটক; আরও আছেন গবেষক শফাত বিলাল এবং আইনজীবী মিয়ান আবদুল কাইয়ুম, যাদের কারাবাস সাত মাস ও দেড় বছর ছাড়িয়েছে।
রাষ্ট্র যাদের বিদ্রোহীদের পরিবার বা সন্দেহভাজন বলে মনে করে, তাদের পরিবারগুলোকে নিয়মিত অপমানিত করা হয়, তাদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়। লিগ্যাল ফোরাম ফর কাশ্মীর (এলএফকে)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতীয় বাহিনী কমপক্ষে ১ হাজার ১৭২টি বেসামরিক বাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। চলতি বছরের শুরুতে পেহেলগামে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর হামলার পর, সন্দেহভাজন বিদ্রোহীদের পরিবারের অন্তত ১০টি বাড়ি ধ্বংস করা হয়।
পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট (পিএসএ) এবং আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্টের (এএফএসপিএ) মাধ্যমে কাশ্মীরে আইনের শাসনহীনতার মাত্রা এত গভীর যে দায়মুক্তিই সেখানে একমাত্র স্থায়ী নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন আবার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ তুলছে ভারত সরকার। এর মাধ্যমে ভারত সরকার মূলত ডানপন্থীরা বহু বছরের বয়ান, তথাকথিত ‘হোয়াইট কলার সন্ত্রাসী’ আতঙ্ক সামনে নিয়ে আসছে। এতে বোঝানো হচ্ছে, গরিব শ্রমজীবী পাথর নিক্ষেপকারী থেকে শুরু করে পেশাদার চিকিৎসক, লেখক, গবেষক—পুরো সমাজই নাকি ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সহিংসতার পরিকল্পনা করছে।
কাশ্মীরি চিকিৎসকদের ‘হোয়াইট কলার টেরর মডিউল’-এর সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এতে করে হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালানোকে ন্যায়সংগত দেখানো যায়, এমনকি চিকিৎসকদের দেওয়া সাক্ষ্য–প্রমাণকেও অগ্রাহ্য করা যায়। গবেষক-শিক্ষকেরা চাকরি হারাচ্ছেন বা হুমকির মুখে পড়ছেন; সাংবাদিকদের পুলিশ ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের প্রতিবেদন ব্যাখ্যা করতে বলছে। বেতনের রসিদ দেখাতে বাধ্য করা হচ্ছে, এমনকি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করতে বলা হচ্ছে।
অন্যদের ভ্রমণ স্বাধীনতা বজায় রাখতে বন্ডে সই করতে বাধ্য করা হচ্ছে। বিদেশে থাকা কাশ্মীরিরা যদি রাষ্ট্রীয় বয়ান অমান্য করেন, কাশ্মীরে থাকা তাঁদের পরিবারকে উদ্বেগজনক বার্তা পাঠানো হচ্ছে।
তাঁদের সতর্ক করা হচ্ছে, যেন তাঁরা কোনোভাবেই ‘জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে’ কোনো লেখা বা কনটেন্ট তৈরি না করে। আর অবাধ্যতার মূল্য যে কত কঠিন, তা স্পষ্টভাবে দেখা যায় সেসব কাশ্মীরি সাংবাদিকদের মধ্যে, যাঁরা আর লিখতে পারেন না বা যাঁদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
বিলাল আগুন ধরানোর মুহূর্তে ঠিক কী ভাবছিলেন, তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে না পারলেও যে পরিস্থিতি তাঁকে এই হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা স্পষ্ট।
কাশ্মীরে বিলালের মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সেই বাস্তবতার ফল, যা ভারত তৈরি করেছে। ওটা এমন এক জগৎ, যেখানে ন্যায়বিচারের ক্ষীণতম আশা থেকেও হতাশা অনেক বেশি।
• আজাদ ঈসা, সাংবাদিক ও বৈদেশিক নীতি, আরব সম্প্রদায়, ভারত ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ বিশ্লেষক
• মিডিল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত