গণ–অভ্যুত্থানের শক্তির ক্ষমতার এক বছরে শ্রীলঙ্কা কী পেল
Published: 9th, October 2025 GMT
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে দেশটির সবাই ‘একেডি’ বলে। পুরো নাম অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে কেবল কাগজপত্রেই লেখা হয়। সেপ্টেম্বরে তাঁর সরকারের এক বছর হলো। ২০২২ সালের অভ্যুত্থান শেষে সেখানে দুই বছর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছিল।
গত বছর অভ্যুত্থান–পরবর্তী নির্বাচনে একেডি প্রেসিডেন্ট হন। কিছুদিন পর পার্লামেন্ট নির্বাচনেও তাঁদের দল জেভিপি (জনতা বিমুক্তি পেরামুনা) বড় অঙ্কের সংখ্যাগরিষ্ঠায় জেতে। সব মিলে গত এক বছরে দেশটিতে পুরোনো প্রধান দুটি দলের (ন্যাশনাল পার্টি ও পডুযানা পেরামুনা) আধিপত্য ভেঙে অনেকখানি জেভিপি-জোটের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন চলছে তাদের গত এক বছরের সরকার পরিচালনার মূল্যায়ন।
ভোটের রাজনীতিতে তারুণ্যের উত্থান যেভাবেশ্রীলঙ্কায় ২০২৪ সালের আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় ২০১৯ সালে। সেবার একেডি ভোট পান ৩ শতাংশ। এই ফল বিস্ময়কর ছিল না। দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় প্রধান দুই দলের কেউ প্রেসিডেন্ট হবেন, সেটিই জানেন সবাই। কিন্তু পুরোনো শাসকদের দুর্নীতি রাজনীতির চেহারা এতটাই বদলায় যে গত বছরের নির্বাচনে অনূঢ়া ভোট পান ৪২ শতাংশ। কয়েক মাস পর সংসদ নির্বাচনে তাঁদের জোট (এনপিপি) ভোট পায় ৬২ শতাংশ; যা আগের নির্বাচনে ছিল ৩ শতাংশ।
পুরোনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারগুলোর প্রভাব ছিন্নভিন্ন করে ভোটাররা তরুণ একেডি ও তাঁর সহযোগীদের পছন্দ করেছিলেন দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকারের কারণে। জনগণের আরেকটা চাওয়া ছিল অর্থনীতির পুনর্গঠন। তারা দেশটির কুলীনদের আর বিশ্বাস করছিল না।
কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান যতটা ‘কবিতার মতো’, সরকার পরিচালনা ততই ‘আবেগহীন গদ্যে’র মতো। একেডি নিশ্চয়ই এটা জানতেন। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর শপথের সময় তিনি বলছিলেন, ‘আমাকে ভোট দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমি জাদুকর নই। অনেক কিছু আমি জানি; কিন্তু বহু কিছু জানি না। দেশকে পুনর্গঠন করতে যৌথ উদ্যোগ লাগবে।’ জেভিপি এখনো যৌথতার মনোভাব ধরে রেখেছে বটে; কিন্তু আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের বিষয়ে জনতার মতামত মিশ্র।
অর্থনীতির রিপোর্টকার্ড
গণ–অভ্যুত্থান ও নির্বাচনের মাঝখানের দুই বছরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশটির অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে মূলত আইএমএফের নির্দেশনাগুলো মেনে চলেছে। সরকারি ব্যয় সংকোচনের পাশাপাশি উন্নয়নধর্মী কাজে সরকারি বিনিয়োগ কমেছে। জেভিপি এসবের বিরুদ্ধে ছিল। তাদের মত ছিল আমলা ও রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি কমিয়ে অর্থনীতি ঠিক করা সম্ভব। ক্ষমতায় বসে অবশ্য একেডি ইতিমধ্যে চলমান আইএমএফের প্রেসক্রিপশনের বাইরে যাননি। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদে আছেন। প্রশাসনকে কড়া নজরদারিতে রেখেছেন সরকারি দলের রাজনীতিবিদেরা।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মিছিলগুলোতে জেভিপির ক্যাডাররা স্লোগানে বলতেন ‘কোন পথে আমরা যাব—আমরা চে গুয়েভারার পথে যাব।’ জেভিপি সেটি পারেননি। চের কিউবা কখনো আইএমএফের ঋণ বা পরামর্শ কিছু না নিলেও একেডি সেই সাহস করতে পারছেন না। এটা অস্বাভাবিকও নয়। রাজাপক্ষে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে খুব বিপন্ন অবস্থায় ফেলে গিয়েছিলেন। ম্যাক্রো অর্থনীতিতে শৃঙ্ক্ষলা প্রতিষ্ঠায় বেদনাদায়ক পথ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় ছিল না।
আইএমএফের একটি নির্দেশ কেবল জেভিপি অগ্রাহ্য করছে। তা হলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাইভেটাইজেশন বন্ধ রাখা। সরকার সিলন পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও সিলন ইলেকট্রিসিটি বোর্ড সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণেই রাখতে ইচ্ছুক। একইভাবে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসকেও রাখতে চায়। এসবের ব্যবস্থাপনা বদলাতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি আইনও করা হয়েছে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাস্থ্য হয়তো পাল্টাবে।
জেভিপিকে বামপন্থী বলা হয়। তবে দুই বার সশস্ত্র বিপ্লব করতে গিয়ে মার খেয়ে এবং ২০১২ সালে দলের বিপ্লবী অংশ বেরিয়ে ফ্রন্টলাইন সোশ্যালিস্ট পার্টি (এফএসপি) দল করায় জেভিপি অনেকটাই এখন মধ্যপন্থী রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে আছে। যাদের রাজনীতিতে সিংহলি জাতীয়তাবাদেরও বেশ প্রভাব। তাদের শক্তিভিতও মুখ্যত সিংহলি ভোটাররা। রাজাপক্ষদের প্রভাব থেকে বের করে ওই সিংহলিদের কাছে টানতেই ১১ বছর আগে ৪৫ বছর বয়সী একেডিকে জেভিপির প্রধান করা হয়।
মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন পেশাজীবীদের স্থানীয় ধাঁচের সংগঠন করার কাজে এক দশক পরিশ্রম শেষে গত বছর তাঁর প্রতি দলের আস্থাকে নির্বাচনী বিজয়ে পরিণত করতে পারলেন একেডি। এই বিজয়ের মূল সাংগঠনিক জাদু ছিল বিভিন্ন পেশাজীবীদের ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে কাছে এনে ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) নামে একটি জোট গড়ে জেভিপি ২০১৯ সালে। সিংহলি ভাষায় যাকে ওরা বলে ‘জাতিকা জন বালাওয়াগা’।
এই জোটে রেডিক্যাল বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও শিল্পীদেরও নেওয়া হয়। এসবের মাধ্যমে শহুরে এলাকায় তারা সবল হলেও গ্রামে দুর্বলই থেকে যায়। তবে সেই সংকট কাটে রাজাপক্ষদের আমলে কৃষি খাতে সংকটের সময়। কৃষকদের সারের দুষ্প্রাপ্যতা নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন করে তারা। এটিই এনপিপিকে গ্রামীণ ভোটারদের কাছাকাছি নিয়ে যায়।
ক্ষমতার প্রথম ১২ মাসে জেভিপি-এনপিপি জোটের জনসমর্থন কমেছে এমন ইঙ্গিত নেই। তবে রাজনৈতিক-অর্থনীতিতে প্রত্যাশার অনেকটা এখনো পূরণ হয়নি। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে ইতিবাচক মন্তব্য আছে অনেক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে এবং মূল্যস্ফীতি কমেছে। সময়সূচি পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় দেনা পরিশোধের চাপ কমানো গেছে। সংকোচনের জায়গা থেকে অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির ধারায় এসেছে। ২০২২-২৩–এর উদ্বেগ আর নেই লঙ্কাবাসীর মনে। তবে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর গতি খুব ধীর।
সরকার সচেতনভাবে বছরপূর্তি উৎসব এড়িয়ে গেছে। কারণ, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় প্রত্যাশিত মাত্রায় কমেনি গত এক বছরেও। খাদ্যপণ্যের দাম এখনো চড়া। সম্ভবত সে কারণেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচনের চেয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এনপিপি জোট ভোট কম পেয়েছে (৪৩ শতাংশ)। যদিও আগের দুই নির্বাচনের মতো তারা প্রথম অবস্থান ধরে রেখেছে। শেষোক্ত নির্বাচনের ফল ইঙ্গিত দিচ্ছে মানুষ একেডি সরকার নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও উচ্ছ্বসিত নয়। কর্মসংস্থানের ঘাটতি এবং আয়কর ও ভ্যাটের বোঝা নিয়ে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের অসন্তুষ্টি আছে।
রাষ্ট্রীয় উৎপাদনধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের বেলাতেও এখনো বড় আকারে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকার দুই জায়গায় জোর দিচ্ছে—কারিগরি শিক্ষা ও ডিজিটাল ইকোনমির প্রসার। দরিদ্রদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিসরও বাড়িয়েছে সরকার। গরিবদের নগদ অর্থসহায়তাকে সরকার পুরোপুরি ডিজিটালাইজ করেছে।
তবে নিচুতলার সমাজের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে যে সম্পদ দরকার, তার জন্য ভবিষ্যতে সম্পদ কর এবং উত্তরাধিকার কর বসাতে বলছে আইএমএফ। এ ধরনের সাহসী পদক্ষেপে টিম-একেডি যাবে কি না, সেটি দেখার ব্যাপার। এ রকম পদক্ষেপ না নেওয়া গেলে সম্পদ আহরণের বিকল্প আর পথ নেই সরকারের হাতে। তবে কর আহরণের নতুন এসব পদক্ষেপকে উপলক্ষ করে সিংহলি ডানপন্থীরা সামাজিক অসন্তোষও ধূমায়িত করে তুলতে পারে।
প্রধান বিরোধী নেতা মধ্যপন্থী সজিথ প্রেমাদাসা মৃদু ভাষায় সরকারের সমালোচনা শুরু করলেও এনপিপি জোটের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে কেবল উগ্র শক্তিগুলো। সেই ভয় থেকেই হয়তো জেভিপি রাজনৈতিকভাবে মধ্যপন্থী ধাঁচের প্রশাসনিক নীতিতে হাঁটছে।
গত আগস্টে সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিলকে দুর্নীতির এক মামলায় গ্রেপ্তার করা হলে বিরোধী দলগুলো সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে এক দফা। পরে রনিল জামিন পাওয়ায় সেই উদ্যোগ এগোয়নি। রনিলকে ছাড় দেওয়া থেকে মনে হয়েছে সরকার নিজেও রাজনৈতিক কোনো সংঘাত চাইছে না; বরং সংস্কারধর্মী কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে ইচ্ছুক।
গত এক বছরের আকর্ষণীয় একটি উদ্যোগ ছিল ১০০টি রেলস্টেশনের আধুনিকায়ন ও কলম্বোর মূল বাস টার্মিনালের উন্নয়ন উদ্যোগ। এ রকম প্রকল্পে জোর দেওয়া হচ্ছে জনপরিসরকে প্রকৃতিবান্ধব ও যাত্রীবান্ধব করার দিকে। সরকার বলছে, তারা মানুষের জীবনের গুণগত দিকের উন্নয়ন করতে চায়।
খরচ কমাতে ইতিমধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্টদের দায়িত্বকাল পরবর্তী সুবিধার তালিকা ব্যাপক কাটছাঁট করা হয়েছে, এমপিদের পেনশনের নিয়ম বাদ দিতে বিল আনা হয়েছে এবং তাঁদের বিমা সুবিধার পরিমাণ চার ভাগের এক ভাগ করা হয়েছে।
দুর্নীতি রোধ ও রাজনৈতিক সংস্কার
গত এক বছরে অনূঢ়াদের এনপিপি সবচেয়ে ভালো পেরেছে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার কাজ। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়ে অল্প অগ্রগতি ঘটেছে, তা হলো প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা কমানোর বিষয়ে প্রত্যাশিত সংস্কার।
লঙ্কায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো একচ্ছত্র। দেশটিতে সরকারের কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার পেছনে এটাই বড় কারণ। সাংবিধানিক পদগুলোর নিয়োগে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমানো এবং পার্লামেন্ট ও প্রদেশগুলোর ক্ষমতা আরও বাড়ানোর বিষয়ে পুরোনো দাবি রয়েছে সেখানে। জেভিপি ও এনপিপি এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। প্রথম বছরেই সরকার এ বিষয়ে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে মতামতের জন্য উপস্থাপন করেছে। তবে সংসদে এ বিষয়ে এখনো বিল আনা হয়নি। এ ধরনের সংস্কারের জন্য সংসদে এনপিপির প্রয়োজনীয় দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও এ বিষয়ে গণভোটও লাগবে। অনূঢ়াকে এই সংস্কারে হাত দিতেই হবে ভবিষ্যতে।
দুর্নীতির বিষয়ে বিগত সরকারের আমলের বহুল আলোচিত কিছু কেলেংকারী নিয়েও তদন্তে হাত দিয়েছে সরকার। এমপি ও আমলাদের অর্থ-সম্পদের বিবরণী প্রকাশে সরকার বেশ কঠোর হয়েছে। কিছুদিন আগে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে একেডি চমৎকার একটা কথা বলেছেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজে নামায় বিপদ আছে, তবে না নামায় বিপদ বেশি।’ একেডি সরকার তার প্রথম বছরে নেপালে দুর্নীতিবিরোধী গণ–অভ্যুত্থান দেখেছে। একেডির কথাটা নেপালের রাজনৈতিক ঘটনাবলির পটভূমিতে বেশ বোধগম্য।
অপেক্ষায় তামিলরা
দুর্নীতির ব্যাপারে কঠোরতার পাশাপাশি সংখ্যালঘু তামিলদের বিষয়েও একেডি কিছু সফলতা দেখিয়েছেন। অতীতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জেভিপি ভোটই পেত না। এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেক তামিল তাঁদের ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বেশ কয়েকবার ওই সব এলাকায় গেছেন। জেভিপি যদি প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমতা কমানোর কর্মসূচিতে সফল হন, তাহলে পরোক্ষভাবে তামিলদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়বে। ২২৫ আসনের সংসদে তামিল এলাকা থেকে প্রায় ১৫ জন এমপি হন। তামিল এমপিরা তখন জাতীয় রাজনীতি ও প্রশাসনে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তারে সুযোগ পাবেন, প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারে যেটি প্রায় অসম্ভব।
পার্লামেন্টারি পদ্ধতির প্রাধান্যের মাধ্যমে দেশটির রাজনীতিতে বহুত্ববাদী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পারেন একেডি। তবে প্রিভেনশন অব টেররিজম অ্যাক্ট নামের দানবীয় আইন তামিলদের মধে৵ এখনো বড় অসন্তোষের কারণ হয়ে আছে। তবে তাদের জন্য স্বস্তির জায়গা হলো সরকারি দল সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে জাতিগত ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে রাজনৈতিক পুঁজি সংগ্রহ করছে না।
অনেকের মতে, অনূঢ়ার মন্ত্রিসভা সবচেয়ে দক্ষতা দেখিয়েছে বৈদেশিক সম্পর্কের বেলায়। চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কেউই লঙ্কায় এখন আর নিজেদের কোণঠাসা বোধ করছে না। সরকারের ওপর বিদেশি কোনো দেশের বাড়তি প্রভাব আছে বলেও মনে হচ্ছে না। কোনো বিদেশি মুরব্বির দিকে হেলে পড়েনি সরকার।
ইতিমধ্যে আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারত, চীন, জাপান—সব দেশে সফর করেছেন একেডি। সবার কাছ থেকে সরকার বিনিয়োগ চাইছে, তবে পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে। আমন্ত্রণ পেয়েও গত নভেম্বরে ব্রিকস সম্মেলনে যাননি অনূঢ়া। আবার তাঁর সরকার শ্রীলঙ্কার মান্নারের সঙ্গে ভারতের তামিলনাড়ুর স্থল ব্রিজ প্রকল্পও বাতিল করেছে। এই দুই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এনপিপি বোঝাতে চাইছে, আপাতত চীন-ভারত উভয় থেকে স্বশাসিত দূরত্বে থাকতে চায় তারা।
তবে দেশ-বিদেশে সবাই সরকারের কাজে গতিশীলতার অভাব দেখছে। একধরনের শিক্ষানবিশ ভঙ্গি ও টানাপোড়েন ছিল সরকারে গত ১২ মাসে। এর বড় কারণ রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ নতুন একটি টিম এটি। সরকারের অনেকেই প্রথমবার প্রশাসন পরিচালনায় দায়িত্ব নিয়েছে, ফলে অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল। তবে সেই দুর্বলতা ঢাকতে বড় বড় হাঁকডাক দেওয়া হয়নি বা জনগণকে বোকা বানানোর মতো লোকরঞ্জনবাদী কাজেও লিপ্ত হননি লঙ্কার মন্ত্রীরা, যেমনটি ঘটেছে আমাদের দেশে।
আলতাফ পারভেজ, ইতিহাস বিষয়ে গবেষক
মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইএমএফ র র জন ত ক র র জন ত র ক ষমত র সরক র সরক র ন সরক র র গত বছর মন ত র সন ত ষ র জন য উদ য গ দ শট র প রথম বছর র এনপ প
এছাড়াও পড়ুন:
ভুয়া ওয়েবসাইট ও অ্যাপসে ঋণের প্রলোভন, সতর্ক করল বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নাম বা লোগো ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অ্যাপস তৈরি করে ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ফাঁদে না পড়ার জন্য সতর্ক করেছে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্কবার্তা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বা আইএমএফের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জনসাধারণকে সতর্ক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এর মাধ্যমে জনসাধারণ আর্থিক প্রতারণার শিকার হতে পারেন বা বিভিন্ন আইনগত ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এ জন্য এসব ওয়েবসাইট বা অ্যাপসে নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ কোনো তথ্য না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নাম কিংবা লোগো ব্যবহার করে https://dbbloan.com, https://bblloan.com ও https://www.bdloan71.com নামে ঋণ দেওয়া–সংক্রান্ত ভুয়া অ্যাপ ও ওয়েবসাইট চালানো হচ্ছে। যার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। এসব অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে জনসাধারণ আর্থিক প্রতারণার শিকার হতে পারে বা বিভিন্ন আইনগত ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। আর্থিক ক্ষতি ও আইনি ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে সবাইকে এ–জাতীয় ভুয়া অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে যেকোনো ধরনের সংবেদনশীল তথ্য দেওয়া ও আর্থিক লেনদেন না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানিয়েছে, পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪–এর ১৫ (২) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া জনসাধারণ থেকে বিনিয়োগ নেওয়া বা ঋণ দেওয়ার উদেশ্যে যেকোনো ধরনের অনলাইন বা অফলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা একটি অপরাধ। এ জন্য কোনো ব্যক্তি ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিহারের জন্য সবাইকে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।