Prothomalo:
2025-10-10@07:59:13 GMT

কোরআন তিলাওয়াতের ১১টি আদব

Published: 10th, October 2025 GMT

কোরআন তিলাওয়াত করা মানে শুধু পড়ে যাওয়া নয়, যেমন অন্য যে–কোনো বই পড়া হয়, বরং এটা হল আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার মতো একটি পবিত্র কাজ।

কোরআন পড়ার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর পড়ে, তার জন্য একটি নেকি। আর প্রতিটি নেকি দশগুণ বৃদ্ধি পায়। আমি বলছি না যে ‘আলিফ লাম মীম’ একটি অক্ষর, বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মীম একটি অক্ষর।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৯১০)

যে কোরআন পড়ে, সে যেন আল্লাহর কাছে চায়। কারণ, এমন কিছু লোক আসবে যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে চাইবে। সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৯১৬

এই কাজকে আরও অর্থপূর্ণ করতে কিছু শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত। কথায় আছে, আদব নেই যার, সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে। কোরআন তিলাওয়াতের কয়েকটি আদব উল্লেখ করা হল:

১.

খাঁটি নিয়ত

কোরআন পড়ার সময় নিয়ত খাঁটি হওয়া জরুরি। এটি শুধু আল্লাহর জন্য হতে হবে, মানুষের প্রশংসা বা দেখানোর জন্য নয়।

ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বলেন, একজন লোক কোরআন পড়ে মানুষের কাছে কিছু চাইছিলেন। এ দেখে তিনি বললেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে কোরআন পড়ে, সে যেন আল্লাহর কাছে চায়। কারণ, এমন কিছু লোক আসবে যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে চাইবে।” (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৯১৬)

আরও পড়ুনব্যস্ত জীবনেও কোরআন খতমের কার্যকর কৌশল০৩ আগস্ট ২০২৫২. শরীর ও স্থানের পবিত্রতা

কোরআন পড়ার আগে শরীর, কাপড় ও জায়গা পরিষ্কার রাখা উচিত। অজু করা ভালো, আর কোরআন স্পর্শ করতে হলে অজু আবশ্যক। রাসুল (সা.) বলেছেন, “পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কোরআন স্পর্শ করবে না।” (মুয়াত্তা ইবনে মালিক, হাদিস: ৪৬৮)

মসজিদে কোরআন পড়া উত্তম, কারণ এটি পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র জায়গা।

৩. মুখ পরিষ্কার করা

কোরআন পড়ার আগে মুখ পরিষ্কার করা, বিশেষ করে মিসওয়াক ব্যবহার করা ভালো। আলী (রা.) বলেছেন, “তোমাদের মুখ কোরআনের পাঠের রাস্তা, তাই মিসওয়াক দিয়ে তা পরিষ্কার করো।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৯১)

৪. কিবলার দিকে মুখ করা

কোরআন পড়ার সময় কিবলার দিকে মুখ করা ভালো। তবে দাঁড়িয়ে, বসে, হেঁটে বা শুয়ে পড়া যায়। কোরআনে বলা হয়েছে, “যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহর কথা স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯১)

নারীদের জন্য পড়ার সময় পর্দা করা জরুরি নয়।

তিলাওয়াতের সময় হাত নাড়ানো, ইতস্তত তাকানো বা বাজে কথা এড়াতে হবে। চিন্তা করে পড়া জরুরি, যাতে আয়াতের অর্থ হৃদয়ে প্রবেশ করে।৫. শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া

পড়ার শুরুতে “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম” বলা উচিত। কোরআনে বলা হয়েছে, “যখন তুমি কোরআন পড়তে চাও, তখন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও।” (সুরা নাহল, আয়াত: ৯৮)

শয়তান পড়ার সময় মনকে বিভ্রান্ত করতে চায়, তাই এই দোয়া মনকে সুরক্ষিত রাখে। রাসুল (সা.) বলতেন, “আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের প্ররোচনা, ফুঁ দেওয়া ও থুথু দেওয়া থেকে।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৭৭৫)

৬. মনের একাগ্রতা ও চিন্তাভাবনা

কোরআন পড়ার সময় মনকে একাগ্র রাখতে হবে এবং আল্লাহর কথার মহত্ত্ব অনুভব করতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, “যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের ওপর নাযিল করতাম, তাহলে তুমি তাকে আল্লাহর ভয়ে কাঁপতে ও ভেঙে পড়তে দেখতে।” (সুরা হাশর, আয়াত: ২১)

তিলাওয়াতের সময় হাত নাড়ানো, ইতস্তত তাকানো বা বাজে কথা এড়াতে হবে। চিন্তা করে পড়া জরুরি, যাতে আয়াতের অর্থ হৃদয়ে প্রবেশ করে। কোরআন বলে, “এটি একটি বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াত নিয়ে চিন্তা করে।” (সুরা সাদ: ২৯)।

ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে একজন বললেন, “আমি এক রাকাতে অনেক সুরা পড়ে ফেলি।” তিনি বললেন, “এ কি কবিতার মতো তাড়াহুড়ো করে পড়ার বিষয়? কিছু লোক কোরআন পড়ে, কিন্তু তা তাদের গলার ওপর দিয়ে যায় না। যখন কোরআন হৃদয়ে প্রবেশ করে এবং গেঁথে যায়, তখন তা কাজে লাগে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮২২)।

আরও পড়ুনকোরআন যেভাবে মানুষের চেতনা পাল্টে দিয়েছে০২ অক্টোবর ২০২৫৭. ধীরে ধীরে সুন্দর করে পড়া

কোরআন ধীরে ধীরে, সুন্দর করে পড়তে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, “কোরআন ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করো।” (সুরা মুযযাম্মিল, আয়াত: ৪)

রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে তিন দিনের কম সময়ে কোরআন শেষ করে, সে তা বুঝতে পারে না।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১৩৯৪)

আয়েশা (রা.) বলেন, “নবীজি কখনো এক রাতে পুরো কোরআন শেষ করেননি।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৪৬)

৮. রহমত ও আজাবের আয়াতে দোয়া

রহমতের আয়াত পড়ার সময় আল্লাহর রহমত চাইতে হবে এবং আজাবের আয়াতে আশ্রয় চাইতে হবে। আউফ ইবনে মালিক (রা.) বলেন, “আমি রাসুলের সঙ্গে রাতে নামাজ পড়লাম। তিনি সুরা বাকারা পড়লেন। রহমতের আয়াতে থেমে দোয়া করলেন এবং আজাবের আয়াতে আশ্রয় চাইলেন।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১৩৯৫)

এটি নামাজের ভেতরে বা বাইরে সব সময়ই উত্তম। কান্না ও আবেগ কোরআন পড়ার সৌন্দর্য বাড়ায়। কোরআন বলে, “আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।” (সুরা ইসরা, আয়াত: ১০৯)

হাসি, কথাবার্তা বা ব্যস্ততা এড়াতে হবে। কেননা, কোরআন তিলাওয়াত শুধু পড়া নয়, এটি আল্লাহর সঙ্গে হৃদয়ের সংযোগ।৯. সুন্দর কণ্ঠে পড়া

কোরআন সুন্দর কণ্ঠে পড়া উচিত, তবে অতিরঞ্জিত না করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে কোরআন সুন্দর কণ্ঠে পড়ে না, সে আমাদের দলের নয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৫২৭)

তিনি আরও বলেছেন, “তোমাদের কণ্ঠ দিয়ে কোরআনকে সুন্দর করো, কারণ সুন্দর কণ্ঠ কোরআনের সৌন্দর্য বাড়ায়।” (সুনানে দারিমি, হাদিস: ৩৩৭৩)

১০. আয়াতের শেষে থামা

কোরআন পড়ার সময় আয়াতের শেষে থামা উচিত। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, “নবীজি সুরা ফাতিহা পড়তেন এভাবে: ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’—থামতেন, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’—থামতেন, এভাবে আয়াতে আয়াতে থামতেন।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪০০১)

১১. সিজদার আয়াতে সিজদা

কোরআনের সিজদার আয়াত পড়লে সিজদা করা উত্তম, তবে বাধ্যতামূলক নয়। আবু রাফি (রা.) বলেন, “আমি আবু হুরায়রার সঙ্গে নামাজ পড়লাম। তিনি সুরা ইনশিকাক পড়লেন এবং সিজদা করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কী? তিনি বললেন, আমি নবীজির পেছনে এতে সিজদা করেছি, তাই তাঁর সঙ্গে দেখা না হওয়া পর্যন্ত এটি চালিয়ে যাব।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১০৭৩)

সিজদার জন্য অজু বাধ্যতামূলক নয়, এবং এতে তাকবির বা সালাম নেই।

এ ছাড়া কোরআন পাঠ শুধু গুরুত্বপূর্ণ কারণে বন্ধ করা উচিত, যেমন সালামের জবাব দেওয়া, ভালো কাজের আদেশ দেওয়া বা খারাপ কাজে বাধা দেওয়া।

অন্য কেউ কোরআন পড়লে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, “যখন কোরআন পড়া হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমরা রহমত পাও।” (সুরা আরাফ: ২০৪)

হাসি, কথাবার্তা বা ব্যস্ততা এড়াতে হবে। কেননা, কোরআন তিলাওয়াত শুধু পড়া নয়, এটি আল্লাহর সঙ্গে হৃদয়ের সংযোগ।

আরও পড়ুনকোরআনে ‘পেছনে ফিরে না তাকানো’র জীবনদর্শন০৮ অক্টোবর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ষ ক র ক রআন র ক রআন প ক রআন স বল ছ ন র জন য র সময বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

জিতেও দলের সিনিয়র ক্রিকেটারের আউট নিয়ে অসন্তুষ্ট আফগান অধিনায়ক

বাংলাদেশের বিপক্ষে গতকাল রাতে সহজেই জিতেছে আফগানিস্তান। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে তারা জিতেছে ১৭ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখে। তবে জয়টা আরও সহজে আসতে পারত। যদি না ৫০ রান করা রহমত শাহ উইকেট দিয়ে না আসতেন।

ফিফটি তুলে নেওয়ার পর রহমত যেভাবে আউট হয়েছেন, তাতে খুশি নন আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি।

আবুধাবিতে ২২১ রান তাড়া করতে নেমে আফগানিস্তান প্রথম উইকেট হারায় ৫২ রানে। ২৩ রানে ফেরেন ইব্রাহিম জাদরান। দলীয় ৫৮ রানে ফেরেন সেদিকউল্লাহ আতাল।

এরপর তৃতীয় উইকেটে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও রহমত শাহ ৭৮ রানের জুটি গড়েন। তখন আফগানরা সহজেই জিতবে বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু ৭০ বলে ৫০ রান করা রহমত তানজিমের বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজকে।

কাল ৫০ রান করে ফিরেছেন রহমত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জিতেও দলের সিনিয়র ক্রিকেটারের আউট নিয়ে অসন্তুষ্ট আফগান অধিনায়ক