নতুন পে-স্কেলে যেসব সুবিধা পাবেন সরকারি কর্মচারীরা
Published: 10th, October 2025 GMT
সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। চলতি সরকারের মেয়াদেই গেজেট আকারে নতুন পে-স্কেল প্রকাশ এবং তা কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের শুরু থেকেই সরকারি চাকরিজীবীরা নতুন কাঠামোর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, নতুন কাঠামোয় শুধু বেতন নয়, চিকিৎসা, শিক্ষা ও পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ভাতায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। এরইমধ্যে জাতীয় পে কমিশন গঠিত হয়েছে, যা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেবে। সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বাধীন এই কমিশনকে একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত বেতন কাঠামো প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আর নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করার লক্ষ্যে অর্থ বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাখা হবে। বাজেট সংশোধন শুরু হবে ডিসেম্বরে, সেখানে নতুন পে স্কেল কার্যকর করার বিধান যুক্ত করা হবে, যাতে নতুন পে-স্কেল আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল থেকে বাস্তবায়িত হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভাতা সংস্কার ও বেতন কাঠামো আধুনিকায়নের ওপর জোর দিচ্ছে। নতুন পে-স্কেল কার্যকর হলে সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও জীবনমানের মানোন্নয়ন ঘটবে, যা কর্মক্ষেত্রে আরো উৎসাহ ও দক্ষতা বাড়াবে।
তথ্য মতে, সরকার নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে চলতি বছরের গত ২৪ জুলাই গঠিত জাতীয় পে কমিশন গঠন করে। গঠিত কমিশন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দেবে। সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে চেয়ারম্যান করে গঠিত এই কমিশন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যুগোপযোগী ও টেকসই বেতন কাঠামো প্রণয়নের কাজ করছে।
বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১০:১। নতুন কাঠামোতেও এই অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে থাকবে বলে জানা গেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর বেতন কাঠামোতেও অনুরূপ অনুপাত প্রচলিত রয়েছে। তবে নতুন কাঠামোয় শুধু মূল বেতন বাড়ানই নয়, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাতেও বড় পরিবর্তন আসছে বলে জানা গেছে।
নতুন কাঠামোয় যেসব সুবিধা থাকতে পারে
বেতন বৃদ্ধি: নতুন পে স্কেলের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোতে পরিবর্তন আসবে এবং তারা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বেতন পাবেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য নতুন কাঠামোয় বিশেষ প্রণোদনা ভাতার প্রস্তাব থাকবে। কমিশনের মতে, এসব খাতে তরুণদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় উদ্ভাবন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি: বর্তমানে অনুমোদিত চিকিৎসা ভাতা বাড়ানো হবে, যা কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি বড় সুবিধা বলে বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমানে একজন কর্মচারী চাকরির শুরু থেকে অবসর পর্যন্ত মাসে ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। কমিশন এ ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি অবসরোত্তর সময়ের জন্যও বাড়তি সুবিধা রাখার পরিকল্পনা করছে।
সন্তানদের শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধি: সন্তানদের শিক্ষা ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ থাকবে। এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের পরিবারের শিক্ষাব্যয় বহনে সহায়তা পাওয়া যাবে।
ন্যায়সঙ্গত অনুপাত নির্ধারণ: সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ন্যায়সঙ্গত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন কাঠামোয় ১:৮ বা ১:১০ অনুপাত কার্যকর হলে বৈষম্য কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিষ্কার প্রত্যাশা ও সুসংগঠিত কাঠামো: একটি সুসংগঠিত পে-স্কেল কর্মীদের জন্য সুস্পষ্ট প্রত্যাশা তৈরি করবে এবং বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেবে।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে ভিন্নমত
কর্মচারী সংগঠনগুলো জোর দিচ্ছে এগুলো পুনঃপ্রবর্তনের পক্ষে। তাদের মতে, দীর্ঘদিন একই পদে চাকরি করলেও পদোন্নতি না হওয়ায় কর্মচারীরা আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ফিরিয়ে আনলে নিয়মিত ব্যবধানে বেতন বৃদ্ধি ও সুবিধা পাওয়া সহজ হবে।
তবে কমিশনের ভেতরে আরেকটি মত রয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে- সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করেই পদোন্নতির প্রক্রিয়া আরো সহজ করা উচিত। কারণ, একইসঙ্গে দুই ধরনের সুযোগ রাখলে কাঠামোয় জটিলতা তৈরি হয়। তাই প্রস্তাব আসতে পারে, সরাসরি পদোন্নতির প্রক্রিয়া সহজ করার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।
কমিশনের কাজের অগ্রগতি
সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গত ২৪ জুলাই একটি পে কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেওয়া হবে। জাতীয় বেতন কমিশন গত ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের প্রথম সভা করেছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেবে কমিশন। কর্মচারীর পরিবারের সদস্য ছয়জন ধরে আর্থিক ব্যয় হিসাব করতে বলা হয়েছে। বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে এ কমিশন। কর্মচারীর পরিবারের সদস্য ছয়জন ধরে আর্থিক ব্যয় হিসাব করতে বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ১ অক্টোবর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে কমিশনের ওয়েবসাইটে (paycommission2025.
নতুন পে-স্কেলের বাস্তবায়ন
গত ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নতুন বেতন কাঠামো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদেই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। এজন্য পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে না। সর্বোপরি, নতুন পে-স্কেলের মাধ্যমে শুধু বেতন নয়, চিকিৎসা, শিক্ষা, ভাতা ও পদোন্নতির সুযোগে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে—যা সরকারি চাকরিজীবীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নিম্নগ্রেডের কর্মচারীরা মনে করেন, নতুন কাঠামোয় সর্বনিম্ন বেতন বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন নিচের গ্রেডের কর্মচারীরা। তাদের মতে, বর্তমান বাজারদরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দামের কারণে ১০:১ অনুপাত অনেক বৈষম্য তৈরি করছে। যদি অনুপাত ৮:১ করা যায় তবে বৈষম্য কিছুটা কমবে। তারা বলছেন, সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন অন্তত ১৬-২০ হাজার টাকা বেসিক ধরা উচিত।
এদিকে উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা মনে করেন, নতুন কাঠামোতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১০:১ বহাল রাখা উচিত। কারণ, অনুপাত কমে গেলে উচ্চ গ্রেডের কর্মচারীতের বেতন তুলনামূলক কমে যাবে। এতে মেধাবী কর্মকর্তারা সরকারি চাকরিতে নিরুৎসাহিত হবেন।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধু বেতন বাড়ালেই হবে না, ভাতা ও অবসর-পরবর্তী সুবিধাগুলোও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে চিকিৎসা ভাতা এবং সন্তানদের শিক্ষা ভাতা বাড়ানো সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে তাদের সতর্কতা- নতুন বেতন কাঠামোতে ব্যয় বাড়বে, তাই রাজস্ব আয়ও বাড়াতে হবে।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৪ সালের নভেম্বরে ভাতা সংস্কার আলোচনা শুরু হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১০ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা আগের বছরের ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটির চেয়ে বেশি।
ঢাকা/এনটি/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নত ন ক ঠ ম য় সরক র র ক ছ প রণয়ন র দ র জন য চ কর জ ব ড স ম বর আর থ ক র র পর অন প ত নত ন প আহম দ বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
১০ মাসে সাড়ে ২৮ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে সাড়ে ২৮ লাখের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। পাশাপাশি বন্দরে কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং বেড়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক।
বন্দর সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪২ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। একই সময়ে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ৫৫২টি।
আরো পড়ুন:
‘চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ৪১ শতাংশ মাশুল স্থগিত করুন’
হিলি বন্দরে কাঁচা মরিচ আমদানিতে ১৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়
সূত্রটি জানায়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কন্টেইনার বেড়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২৮ টিইইউএস। কার্গো বেড়েছে এক কোটি ২৯ লাখ ৮ হাজার ১৭৪ মেট্রিক টন। জাহাজ বেড়েছে ৩৫১টি। কনটেইনার হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। কার্গো প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জাহাজ প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
বন্দরের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ লাখ ১৩ হাজার ৮০৫ টিইইউএস কন্টেইনার। কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে চার কোটি ৫২ লাখ ৮২ হাজার ৯০৭ মেট্রিক টন। হ্যান্ডলিং হয়েছে এক হাজার ৪২২টি জাহাজ।
আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কন্টেইনার বেড়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৮৮৮ টিইইউএস। কার্গো বেড়েছে ৬১ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৫ মেট্রিক টন। জাহাজ বেড়েছে ১৪১টি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে কন্টেইনারে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ। কার্গোতে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। জাহাজে ১১ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, “জাহাজের ওয়েটিং টাইম এখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সেপ্টেম্বরে ৯ দিন, অক্টোবরে ১৮ দিন ও নভেম্বরে ১৯ দিন বন্দরে কোনো ওয়েটিং টাইম ছিল না। জাহাজ অন অ্যারাইভাল বার্থ পাচ্ছে। ফলে আমদানিকারকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারছেন। রপ্তানি পণ্যও সময়মতো জাহাজীকরণ হচ্ছে। ফলে পোর্ট লিড টাইম কমেছে।”
তিনি বলেন, “আধুনিক কার্গো কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম যোগ হয়েছে। ইয়ার্ড ক্যাপাসিটি বেড়েছে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের পরিশ্রম এবং ব্যবহারকারীদের সহযোগিতায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে প্রবৃদ্ধি বজায় আছে।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ