‘সঠিক চিকিৎসা নিলে স্তন ক্যানসার থেকে বাঁচা সম্ভব’
Published: 10th, October 2025 GMT
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ৬ হাজার নারীর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর মূল কারণ হলো সচেতনতার অভাব, লজ্জা বা গোপনীয়তা এবং সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়া। তাই পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দেওয়া উচিত। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে স্তন ক্যানসার থেকে বাঁচা সম্ভব।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম’ আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আলোচনায় বলা হয়, স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে নারীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা সবচেয়ে জরুরি।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বেলুনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৫
শরীয়তপুরে ৪ লাখ শিশু টাইফয়েড টিকা পাবে: সিভিল সার্জন
ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন জানান, আগামী ৩০–৩১ অক্টোবর ‘গোলাপি সজ্জিত বাসে’ রাজশাহী ও খুলনায় সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান চালানো হবে। এছাড়া ৮ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ‘চতুর্থ সমাজভিত্তিক ক্যানসার সম্মেলন’, যেখানে অনলাইনে ৫০০, ৭০০ বা ১,০০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে স্তন ক্যানসার অপারেশনের সর্বোচ্চ খরচ ৬৫ হাজার টাকা, আর অতিদরিদ্রদের জন্য এটি মাত্র ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা.
অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, “ক্যানসার হলে দেরি না করে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেক সহজ ও কম খরচে করা সম্ভব।”
ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন বলেন, “নারীরা যদি নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করেন, তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা ধরা পড়ে যেতে পারে।”
নারীস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. হালিদা হানুম আক্তার বলেন, “আমাদের সমাজে নারীরা স্তন ক্যানসার লুকাতে চান। কিন্তু এটি গোপন না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া দরকার। পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সব জায়গায় এই বিষয়ে সচেতনতা ছড়াতে হবে।”
স্থানীয় সরকার বিষয়ক কমিশনের সদস্য মাশহুদা খাতুন শেফালী বলেন, “মানুষকে সচেতন করা সহজ কাজ নয়, এতে খরচ হয়। সরকারকে এ কাজে যুক্ত করতে হবে এবং যারা এ নিয়ে কাজ করেন, তাদের সহযোগিতা দিতে হবে।”
অধ্যাপক সারিয়া তাসনিম বলেন, “তরুণদের এই সচেতনতা কার্যক্রমে যুক্ত করা গেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।”
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কাঁধে ব্যথা কেন হয়? চিকিৎসা ও করণীয়
কাঁধ মানবদেহের সবচেয়ে গতিশীল জয়েন্ট। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজে—হাত তুলতে, পেছনে নিতে, ঘোরাতে—কাঁধের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই কাঁধে যেকোনো সমস্যা কর্মক্ষমতা, ঘুম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও সরাসরি প্রভাব ফেলে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না নিলে দীর্ঘস্থায়ী জটিলতায় রূপ নিতে পারে।
কাঁধে ব্যথার কারণ
কাঁধে পেশি, টেন্ডন, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল ও অস্থির জটিল গঠন রয়েছে। এদের যেকোনো অংশে সমস্যা হলেই ব্যথা শুরু হতে পারে। প্রধান কারণগুলো হলো—
১. সুপ্রাস্পাইনেটাস টেন্ডিনাইটিস
রোটেটর কাফের চারটি পেশির মধ্যে সুপ্রাস্পাইনেটাস সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ।
ওভারহেড কাজ, বারবার হাত তোলা, ব্যায়ামের ভুল পদ্ধতি বা পেশির ভারসাম্যহীনতার কারণে টেন্ডনে প্রদাহ হয়। এর ফলে হাত উপরের দিকে তুলতে তীক্ষ্ণ ব্যথা হয়, ৬০–১২০ ডিগ্রিতে, “Painful Arc" হয়, রাতে ব্যথা বেড়ে যাওয়া এবং কাঁধে দুর্বলতা ও ক্লিকিং শব্দ হতে পারে।
২. রোটেটর কাফ ইনজুরি
অতিরিক্ত কাজ, ভারী জিনিস তোলা বা খেলাধুলার চাপে রোটেটর কাফ পেশিতে টান বা ইনজুরি হয়। হাত তুলতে ব্যথা ও দুর্বলতা দেখা যায়।
৩. ফ্রোজেন শোল্ডার
জয়েন্ট ক্যাপসুল শক্ত হয়ে কাঁধ জমে যায়। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, ইনজুরি বা দীর্ঘদিন কাঁধ নাড়াচাড়া না করলে ঝুঁকি বাড়ে।
৪. ইম্পিঞ্জমেন্ট সিনড্রোম
হাত তুললে কাঁধের হাড়ের নিচে টেন্ডন চাপে পড়ে, ফলে প্রদাহ হয়। বিশেষ লক্ষণ হলো: Painful Arc, ৬০-১২০ ডিগ্রিতে ব্যথা হয়।
৫. আর্থ্রাইটিস
বয়স, ক্ষয় বা পূর্বের ইনজুরিতে কাঁধের জয়েন্টে প্রদাহ ও ব্যথা হয়।
৬. ডিসলোকেশন বা সাবলাক্সেশন
ধাক্কা বা পড়ে গিয়ে কাঁধ সরে যেতে পারে। পুনরায় সরে যাওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে।
৭.ভঙ্গিগত ত্রুটি
মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহারের ভুল ভঙ্গিমা কাঁধের পেশিকে দুর্বল ও টাইট করে ব্যথা সৃষ্টি করে।
কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাধারণত— শারীরিক পরীক্ষা,রেঞ্জ অব মোশন,স্পেশাল টেস্ট প্রয়োজন হলে X-ray, USG বা MRI—এসবের মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ণয় করেন।
চিকিৎসা
আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে কাঁধে ব্যথা হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ম্যানুয়াল থেরাপি ও সফট টিস্যু রিলিজ, মেইটল্যান্ড ও মুলিগান মবিলাইজেশন,স্ক্যাপুলা স্টেবিলাইজেশন এবং পেশির ভারসাম্য ঠিক করতে স্ট্রেচিং ও স্ট্রেংথেনিং এক্সারসাইজ করানো হয়। ৪–৬ সপ্তাহে অধিকাংশ রোগী অনেকটাই উন্নতি লাভ করে। রোটেটর কাফের সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যাওয়া, বারবার ডিসলোকেশন বা গুরুতর আর্থ্রাইটিসে শেষ ধাপে সার্জারি বিবেচনা করা হয়।
প্রতিরোধ
কাঁধ সুস্থ রাখার সহজ উপায়-
১.প্রতিদিন হালকা স্ট্রেচিং করা
২.ওভারহেড কাজ কমানো।
৩.সোজা ভঙ্গিতে বসা ও একই ভঙ্গিতে বেশি সময় না থাকা।
৪.ডায়াবেটিস/থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৫.স্কাপুলার রিট্রাকশন ব্যায়াম করা।
৬.রোটেটর কাফ মাংসপেশির শক্তিবর্ধক ব্যায়াম নিয়মিত করা।৭. খেলাধূলার পূর্বে ওয়ার্ম -আপ করা।
শোল্ডার পেইন এমন একটি সমস্যা, যা দ্রুত সঠিক চিকিৎসা নিলে সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য। অধিকাংশ কাঁধের সমস্যাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ, নিয়মিত থেরাপি এবং সচেতন জীবনযাপন—এ তিনটির সমন্বয়েই একজন রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন।
লেখক: কনসালটেন্ট ফিজিওথেরাপি, প্রিমিয়ার ফিজিওথেরাপি কনসালটেশন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, আদাবর,মোহাম্মদপুর,ঢাকা- ১২০৭।
ঢাকা/লিপি