কবরের জায়গা নিয়ে বিরোধ, প্রবাসী বাবার ইচ্ছা পূরণ হলো না শিশুর দাফনে
Published: 12th, October 2025 GMT
চার দিন আগে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় শিশুটির। এরপর দেখা দেয় অন্যান্য শারীরিক জটিলতা। পরে তাকে ভর্তি করা হয় স্থানীয় হাসপাতালে। আজ রোববার সকালে সেখানে মারা যায় শিশুটি। পরিবার চেয়েছিল তাকে দাদা–দাদির কবরের পাশে দাফন করতে। কিন্তু জায়গা নিয়ে বিরোধের জেরে সেখানে দাফনে বাধা দেন শিশুটির বাবার চাচাতো ভাইয়েরা। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। শিশুটিকে দাদা–দাদির কবরের পাশে দাফন করা যায়নি।
আজ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের গাংকুলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
মৃত শিশুটির নাম ফাহাদ মিয়া (৪)। তার বাবা আল মামুন সৌদি আরবে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, শিশুটি মারা যাওয়ার পরে বাবা আল মামুনকে ভিডিও কলে ছেলের নিথর মুখ দেখানো হয়। তিনি ছেলেকে বাবা–মায়ের কবরের পাশে দাফন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে সেখানে দাফনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে আল মামুনের চাচাতো ভাইয়েরা কবর খুঁড়তে বাধা দেন। তাঁদের দাবি, এটা এজমালি জায়গা। এই কবরস্থানে আর দাফন হবে না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিদেশে থাকা শিশুটির চাচাতো চাচা সোহেল মিয়া মুঠোফোনে বাড়িতে থাকা ছোট ভাই আসিফ মিয়াকে নির্দেশ দেন, এই কবরস্থানে কবর দিতে যেন বাধা দেওয়া হয়। এরপর তিনি কবর খুঁড়তে বাধা দেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দুপুরে স্থানীয় লোকজন ৯৯৯–এ ফোন দেন। এরপর ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পাকুন্দিয়া থানার পুলিশ। তারাও বোঝাতে ব্যর্থ হয় চাচাতো চাচাদের। পরে বিকেলে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ফাহাদের বাবার কেনা ফসলি জমিতে তাকে দাফন করা হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বুঝিয়ে বলেছি, এটা তো একটা শিশু। শিশুটির বাবা বিদেশ থেকে আবেদন করেছেন দাদা–দাদির কবরের পাশে তাঁর সন্তানকে দাফন করার জন্য। কিন্তু চাচাতো চাচারা সেটা শোনেননি।’
মৃত শিশুর ফুফু পারুল আক্তার বলেন, ‘আমি ঢাকায় থাকি, আমার দুই ভাই প্রবাসে। বাড়িতে আমাদের কেউ নেই। আমার ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে ছেলেকে দাদা–দাদির পাশে কবর দিতে। কিন্তু ছোট্ট বাচ্চাটির কবর দিতে দেওয়া হলো না। কতটুকু জায়গা লাগত এ শিশুর জন্য? দূরের মানুষও তো কবরের জন্য এমনভাবে বাধা দেয় না।’
কবর খুঁড়তে বাধা দেওয়া আসিফ বলেন, ‘আমার বড় ভাই (সোহেল) বলেছে এখানে কবর না দিতে। তাই আমি বাধা দিয়েছি। ভাই জানে, কিসের জন্য বাধা দিতে বলেছে, হয়তো জায়গা পাবে। এটা এজমালি জায়গা। আমি এ বিষয়ে এর চাইতে বেশি কিছু বলব না। ভাই বিদেশ থেকে বলেছে, তাই বাধা দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাকুন্দিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান বলেন, একপক্ষ বাধা দেওয়ায় ঝামেলা এড়াতে ফাহাদের বাবার কেনা জমিতে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র কবর র প শ কবর দ ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ভাই খুন করার পর মৃত প্রেমিককে বিয়ে করলেন তরুণী
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুজনের পরিচয়। এরপর ধীরে ধীরে ভালো লাগা। পরে মন দেওয়া–নেওয়া। একপর্যায়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কিন্তু শেষমেষ সাতপাকে বাঁধা হলো না। ভিন্ন জাতের কারণে ছেলেটিকে মেরে ফেলা হয়। অভিযোগ প্রেমিকার পরিবারের বিরুদ্ধে। এতে দমে যাননি প্রেমিকা। প্রেমিকের মরদেহকে বিয়ে করে তাঁর বাড়িতে বসবাস শুরু করেছেন।
মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে। তরুণীর নাম আঁচল মামিদওয়ার (২১)। তাঁর প্রেমিকের নাম সক্ষম তাতে (২০)। মৃত প্রেমিককে বিয়ে করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
আঁচল বলেন, তাঁরা বিয়ে করলে মেনে নেবেন বলে পরিবারের সদস্যরা আশ্বস্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তিন বছর ধরে একসঙ্গে ছিলাম। কত স্বপ্ন দেখেছি। আমার ভাইয়েরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁরাই আমাদের বিয়ের আয়োজন করবেন; কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাঁরা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’
সক্ষমের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হয়েছিল বলে জানান আঁচল। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। তিনি বলেন, ‘তাঁরা (পরিবারের সদস্যরা) সক্ষমের সঙ্গে ভালো আচরণ করতেন, একসঙ্গে খেতেন। তাঁরা সক্ষমকে আশ্বস্ত করেছিলেন, সব ঠিক আছে। আমরা ভাবতে পারিনি যে এমন কিছু ঘটবে।’
পুলিশের উসকানি
আঁচল অভিযোগ করেন, ধীরাজ কোমলওয়ার ও মহিত আসারওয়ার নামের দুজন পুলিশ সদস্য এ কাজে তাঁর ভাইদের উসকানি দিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড ছিল বলে জানা গেছে।
আঁচল বলেন, ‘সক্ষমকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেদিন বেলা ১১টার দিকে আমার ছোট ভাই আমাকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে সক্ষমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিতে বলে, যা ছিল মিথ্যা। আমি তাতে রাজি হইনি।’
মহারাষ্ট্রের এই তরুণী বলেন, ‘তখন পুলিশ আমার ভাইকে বলে, “তুমি তো মানুষ খুন করার পরেও এখানে আসো। তোমার বোন যাঁর সঙ্গে প্রেম করেন, তাঁকে মেরে ফেলো না কেন?”’
আঁচল বলেন, ‘পুলিশের কথার জবাবে আমার ভাই বলে, “ঠিক আছে, সন্ধ্যার মধ্যেই তাকে মেরে আপনাদের কাছে হাজির হব।”’
সক্ষমকে যেভাবে হত্যা করা হয়
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন সক্ষম। তখন আচঁলের ভাই হিমেশ মামিদওয়ারের সঙ্গে তাঁর কথা–কাটাকাটি হয়, যা শেষ পর্যন্ত মারামারিতে রূপ নেয়। হিমেশ একপর্যায়ে ২০ বছর বয়সী সক্ষমকে গুলি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। গুলিটি তাঁর পাঁজরে লাগে। এরপর হিমেশ তাঁর মাথায় টাইলস দিয়ে আঘাত করে ঘটনাস্থলেই তাঁকে মেরে ফেলেন।
এ ঘটনায় হিমেশ, তাঁর ভাই সহিল, তাঁদের বাবা গজনান মামিদওয়ার এবং আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, দাঙ্গাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।
শেষকৃত্য রূপ নেয় বিয়েতে
পরদিন সন্ধ্যায় শুক্রবার সক্ষমের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি চলছিল। আঁচল তখন সক্ষমের বাড়িতে গিয়ে সিঁদুর পরে সক্ষমের মরদেহকে ‘বিয়ে’ করেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে সক্ষমের সঙ্গে প্রেম করেছি। কিন্তু জাতপাতের পার্থক্যের কারণে আমার বাবা এ সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিলেন। আমার পরিবার প্রায়ই সক্ষমকে হত্যার হুমকি দিত। আর এখন আমার ভাই ও বাবা সেটাই করে ফেলেছেন। আমি বিচার চাই। আমি চাই অভিযুক্তদের ফাঁসি হোক।’
আঁচল বলেন, এখন থেকে তিনি সক্ষমের পরিবারের সঙ্গে থাকবেন।
‘জাতপাতের কারণে হত্যা’
আঁচল জানিয়েছেন, পরিবার বলে দিয়েছে তাঁর জন্য বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ। তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জাতপাতের কারণে। আমার বাবা ও ভাইয়েরা বলতেন, “আমরা গ্যাংস্টার, সক্ষম তা জানে। সে কীভাবে আমাদের মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সাহস পায়?”’
আঁচল বলেন, সক্ষমের পরিবার তাঁকে মেনে নিয়েছে। তিনি আজীবন তাদের সঙ্গেই থাকবেন। তিনি ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
এই তরুণী বলেন, ‘অনেক মানুষ আমার পাশে রয়েছে। জাতের কারণে কাউকে হত্যা করা উচিত নয়।’