রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচনে কোনো মহল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করলে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান।

আজ বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবন–সংলগ্ন খেলার মাঠে আয়োজিত বিফ্রিং প্যারেডে তিনি এ কথা বলেন। আরএমপি কমিশনার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা আমরা করছি না। তারপরও যদি কোনো মহল চেষ্টা করে, তাহলে আমরা কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেব। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ছাড় দেব না। আমরা আমাদের কাজের ক্ষেত্রে দৃঢ় থাকব।’

মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ইতিমধ্যে আমরা বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি। যে জায়গাগুলোতে নিরাপত্তাঝুঁকি আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে ইতিমধ্যে আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ ফোর্সের পাশাপাশি পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে চাহিদা দিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে এক হাজার ফোর্স আনা হয়েছে।’

নির্বাচনে তিন স্তরে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা নির্বাচনকেন্দ্রিক তিন ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা রেখেছি। একটি হলো ফ্রি ইলেকশন। এ জন্য দুই দিন ধরে আমাদের ডিউটি চলছে। আগামীকাল থেকে দুই দিন আরেকটা প্রোগ্রামে আমাদের ডিউটি চলবে। সব শেষে আমাদের চলবে পোস্ট–ইলেকশন প্রোগ্রাম।’

সাইবার নিরাপত্তায় দুটি দল কাজ করছে বলে জানান আরএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা, সাইবার স্পেসে হয়তো কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। এটাকে প্রতিহত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আমাদের আলাদা সাইবার টিম যৌথভাবে কাজ করছে। যেকোনো অপপ্রচার বা অপতথ্য যাতে না ছড়ায়, সে জন্য আমরা কাজ করছি। কোনো ঘটনা আমাদের নজরে এলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সবার প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা কোনো উসকানির প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে আমাদের জানান।’

নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে উল্লেখ করে মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘নির্বাচনের দিন সাতটা গেট খোলা থাকবে। এই সাত গেটেই আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। ফটকগুলো দিয়ে বহিরাগত লোকজন প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হলকেন্দ্রিক যেসব নিরাপত্তার বিষয় আছে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলগুলাতে বহিরাগত আছে কি না, তল্লাশি করছে।’

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ‘আমাদের জনবল বাড়িয়ে ২ হাজার ৩০০ পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের বারবার ব্রিফ করেছি, যেন তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে যেন কোনো ধরনের খারাপ আচরণের অভিযোগ না আসে, সেটা তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জ করছ ব যবস থ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে রোহিঙ্গা যুবক আটক

নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে পাসপোর্ট করতে এসে আটক হয়েছেন আজিজ খান নামের এক রোহিঙ্গা যুবক। সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের সময় তার পরিচয় গরমিল ধরা পড়লে অফিসের নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। তিনি নিজেকে হাফেজ পরিচয় দিয়ে “আব্দুল আজিজ” নাম ব্যবহার করেন। বয়স দেখানো হয় ২৫ বছর, জন্ম তারিখ ২০০০ সালের ১০ জানুয়ারি। বাবার নাম হাজী নজিবুল্লাহ এবং মায়ের নাম শুকরা বেগম উল্লেখ করেন তিনি।

কিন্তু বায়োমেট্রিক স্ক্যানেই বদলে যায় পুরো চিত্র। মিলানোর সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া যায় তার আসল পরিচয়—তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন; তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী আজিজ খান।

রোহিঙ্গা তথ্য অনুযায়ী তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ২০০১ সালের ৫ জানুয়ারি, পিতার নাম সালামত খান। তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। তার রোহিঙ্গা রেফারেন্স নম্বর—১০৮২০১৮০৪১০০৮১৯৩৫।

জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, বর্তমান ঠিকানা দেখানো হয়েছিল মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা গ্রাম। এখান থেকেই তিনি চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। স্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয় চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দক্ষিণ হাশিমপুরে। আর পাসপোর্টের আবেদনে বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করেন সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর এলাকা।

নজিবুল্লাহ ও শুকরা বেগম নামে যাদের বাবা–মায়ের তথ্য দেওয়া হয়েছিল, তাদের ঠিকানা দেখানো হয় চট্টগ্রামের চন্দনাইশের খাজীরপাড়া ও হাশিমপুর এলাকায়। দুজনই চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর এনআইডি সংগ্রহ করেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানান, আজিজ খান বেশ কিছুদিন ধরে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে পাসপোর্ট নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যও অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বানানো হয়েছিল। তাদের সন্দেহ—এ ঘটনায় সংগঠিত কোনো দালালচক্র জড়িত।

নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন তিনি রোহিঙ্গা। তিনি ১৮ হাজার টাকার বিনিময়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে এনআইডি সংগ্রহ করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা নিয়মিতভাবেই আবেদনকারীদের সব নথি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করি। আজ যে ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে, তিনি ভুয়া এনআইডি ও ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে পাসপোর্ট নিতে এসেছিলেন।

বায়োমেট্রিক যাচাইয়ে তাঁর প্রকৃত পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পরই আমরা তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করি। পাসপোর্ট একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি—এখানে কোনোভাবেই ভুয়া তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা বা অন্য কোনো বিদেশি নাগরিক ভুয়া পরিচয়ে পাসপোর্ট নিতে এলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি আবেদন শতভাগ যাচাই নিশ্চিত করতে আমাদের কার্যালয় আরও সতর্কভাবে কাজ করছে। আমরা চাই, শুধুমাত্র সঠিক নাগরিকই যেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট পান।”

আটক আজিজ খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন দালালচক্র ও সংশ্লিষ্টদের খুঁজে দেখছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

উপপরিচালক শামীম আহমেদ আরও বলেন, “বাংলাদেশি পরিচয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ দালালচক্রের খপ্পরে পড়ছে।

ভুয়া জন্মনিবন্ধন, ভুয়া এনআইডি—সবই তৈরি করা হচ্ছে মোটা টাকার বিনিময়ে। এ ধরনের জালিয়াতি রোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় আরও জোরদার করা হবে।” 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে রোহিঙ্গা যুবক আটক
  • ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে শোকজ ছাড়াই প্রার্থিতা বাতিল’
  • মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত খুলনা: ১৬ মাসে ট্রিপল-ডাবলসহ ৪৮ খুন
  • হবিগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত
  • প্রতি ভোটকক্ষে ২টি গোপন বুথ থাকবে: ইসি সচিব
  • ভারতের পররাষ্ট্রনীতি কি ‘অকার্যকর’ প্রমাণিত হচ্ছে