বিমানবন্দরে ক্রিকেটারদের হেনস্থা, জড়িতদের ধরতে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য চেয়েছে বিসিবি
Published: 16th, October 2025 GMT
ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বুধবার রাতে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে অসদাচরণ করা ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ দেখে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ ছাড়া এক ফেসবুক পোস্টে মিরপুরে শনিবার থেকে শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের খেলা দেখতে গেলে দর্শকদের ‘শায়েস্তা’ করার হুমকিদাতাকেও খুঁজছে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিসিবির একজন দায়িত্বশীল পরিচালক বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বুধবার রাতে দেশে ফিরে বেশ বাজে অভিজ্ঞতাই হয়েছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমসহ কয়েকজন ক্রিকেটারকে হেনস্থা করেছেন একদল লোক।
এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় কিছু লোক নাঈমের গাড়ির খুব কাছে গিয়ে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে দুয়ো দিচ্ছে, গালাগাল করছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে তাসকিন আহমেদ বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর গাড়ির আশেপাশেও। এসব ভিডিওতে ক্রিকেটারদের উদ্দেশে করা গালাগালও স্পষ্ট শোনা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির ওই পরিচালক মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘দুটি বিষয়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর নজরে আনা হয়েছে। তাঁরা এই দুই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। সরকার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।’
এশিয়া কাপের পর আরব আমিরাতে আফগানিস্তানকে টি–টোয়েন্টি সিরিজে ৩–০ তে ধবলধোলাই করলেও ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ উল্টো ধবলধোলাই হয়েছে। বিমানবন্দরে ক্রিকেটারদের প্রতি সে কারণেই ক্ষোভ জানিয়েছে কিছু লোক। তবে তাদের ক্ষোভের প্রকাশ ছিল আক্রমণাত্মক।
বাংলাদেশ দল খারাপ খেলায় ক্ষোভ জানিয়ে দেওয়া এক ব্যক্তির ফেসবুক পোস্টের ভাষাও একই রকম আক্রমণাত্মক। তাঁর বাসা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের খুব কাছে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘মিরপুরের কিছু ভাই ব্রাদার মিলে একটা টিম গঠন করতেসি, যারা এই অবস্থায়ও মাঠে এই দলের খেলা দেখতে আসবেন, তাদের শায়েস্তা করার জন্য।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রিয় দলের খেলা দেখতে এসে কেউ বেধড়ক মার খেলে বা highly Injured হলে মিরপুরবাসীকে দায় দিতে পারবেন না।’
এ ধরনের ফেসবুক পোস্টকে বাংলাদেশ দলের দর্শক–সমর্থক এবং ক্রিকেটারদের জন্যও নিরাপত্তার হুমকি মনে করেন বিসিবির ওই পরিচালক, ‘খেলায় খারাপ ফলাফল হতে পারে। সে জন্য সমালোচনাও হতে পারে। কিন্তু এ ধরণের উসকানিমূলক হুমকি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা স্টেডিয়ামকে ক্রিকেটার ও দর্শকদের জন্য নিরাপদ রাখতে চাই।’
বিসিবির অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা মনে করে এই ঘটনার পেছনে একটি রাজনৈতিক দলের মদদ থাকতে পারে। আইন–শৃঙ্খলাবাহিনী সেটিও খতিয়ে দেখবে।
বিমাবন্দরের ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে এর আগে ক্রিকেটার নাঈম এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, ব্যর্থ হলেও ক্রিকেটাররা সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেন।
নাঈম লিখেছেন, ‘আজ যেভাবে আমাদের প্রতি ঘৃণা (প্রকাশ করা হয়েছে), গাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছে, তা সত্যিই কষ্ট দেয়। আমরা মানুষ, ভুল করি, কিন্তু কখনো দেশের প্রতি ভালোবাসা-চেষ্টার ঘাটতি রাখি না। প্রতিটা মুহূর্তে চেষ্টা করি দেশের জন্য, মানুষের জন্য, আপনাদের মুখে হাসি ফোটাতে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ সব ক প স ট র জন য প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুর কারাগারে ‘অন্য বন্দীর’ পিটুনির শিকার এক বন্দীর ঢাকায় মৃত্যু
জামালপুর জেলা কারাগারে এক বন্দীর পিটুনিতে আহত অপর এক বন্দী হজরত আলী ওরফে পাগলা হজরত (২৫) আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। হজরত আলী একটি মাদকের মামলায় জামালপুর জেলা কারাগারে বন্দী ছিলেন।
জামালপুর কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, একটি হত্যা মামলায় জামালপুর জেলা কারাগারে বন্দী রহিদ মিয়া পাশের বিছানায় ঘুমন্ত হজরতকে দরজার কাঠ দিয়ে একাধিক আঘাত করেছিলেন। এরপর দুই হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
জামালপুর জেলা কারাগারে জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক মো. গোলাম দস্তগীর আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, একটি মাদকের মামলায় হাজতি হজরত আলী জামালপুর জেলা কারাগারে ওয়ার্ডে ঘুমিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পাশের বিছানার হাজতি রহিদ মিয়া টয়লেটের দরজার কাঠ দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় মাথায় একাধিক আঘাত করে হজরত আলীকে রক্তাক্ত জখম করেন। হজরত আলী অচেতন হয়ে পড়লে প্রথমে তাঁকে জামালপুরে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আজ সকাল ১০টার দিকে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
কারা কর্মকর্তা দস্তগীর বলেন, হামলার কারণ জানা যায়নি। এ ব্যাপারে রহিদ মিয়ার বিরুদ্ধে জামালপুর সদর থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। নিহত হজরত আলীর বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার তারাটিয়া বাজার টেংরি বাড়ি গ্রামে। তাঁর বাবা ইমাম হোসেন পেশায় কৃষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে হজরত আলী ছোট ছিলেন।
আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে হজরত আলীর বাবা ইমাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাসখানেক আগে হজরত আলী মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জামালপুর জেলা কারাগারে বন্দী ছিলেন। জামালপুর জেলা কারাগার থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে সিলিং ফ্যান ছাড়া নিয়ে সেখানকার অন্য এক বন্দীর সঙ্গে হজরতের তর্কাতর্কি হয়। পরে দুই-তিনজন বন্দী মিলে দরজার চৌকাঠ খুলে হজরতের মাথাসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে পেটান। তিনি বলেন, ‘কারাগারে এত সিকিউরিটি (নিরাপত্তা) থাকা সত্ত্বেও কীভাবে আমার ছেলেকে একেবারে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো? আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’