কাবুল–দিল্লির সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা পাকিস্তানকে যে উদ্বেগে ফেলল
Published: 17th, October 2025 GMT
সীমান্তে পাকিস্তান ও আফগান তালেবান বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ লড়াইয়ের পর আপাতত বন্দুক নীরব রয়েছে। তবে পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে আবার জ্বলে উঠতে পারে। দুই পক্ষের সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। তবে এবারের লড়াইটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাকিস্তানের স্থলবাহিনী ও বিমানবাহিনী আফগান সীমান্তজুড়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। বলা হচ্ছে, আফগান তালেবান বাহিনীর পাকিস্তানি সীমান্ত পোস্টে হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই এসব আঘাত হানা হয়েছে।
উভয় পক্ষেই প্রচুর হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ও ড্রোন সীমান্ত পেরিয়ে আফগান ভূখণ্ডে তথাকথিত জঙ্গি ঘাঁটিতে বোমা বর্ষণ করার জেরেই এ সংঘর্ষ শুরু হয়। বলা হচ্ছে, সম্প্রতি পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর একাধিক হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে অভিযুক্ত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) নেতা নুর ওয়ালি মেহসুদ এসব হামলার মূল লক্ষ্য ছিল। মেহসুদ নিহত হয়েছেন কি না, সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আরও পড়ুনডুরান্ড লাইনের দুদিকে ভূরাজনৈতিক ট্র্যাজেডিতে পাকিস্তান১৩ ঘণ্টা আগেকাবুলসহ আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হওয়া বিস্ফোরণের পেছনে পাকিস্তানের হাত আছে কি না, সে বিষয়ে পাকিস্তান প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। কিন্তু দেশটির অবস্থান স্পষ্ট—সীমান্তের ওপার থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বাড়তে থাকা হামলার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার তার আছে। শুধু চলতি মাসেই বিভিন্ন টিটিপি গোষ্ঠীর হামলায় পাকিস্তানি বহু সেনা ও কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। গত এক দশকের মধ্যে এ বছরই সবচেয়ে রক্তাক্ত সময় পার করছে পাকিস্তান।
আরও কৌতূহলজনক বিষয় হলো এ উত্তেজনা শুরু হয় তখন, যখন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফরে ছিলেন। গত কয়েক মাসে যখন ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের সঙ্গে তীব্র বিরোধে লিপ্ত, ঠিক সে সময়ে কাবুল ও দিল্লির সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে উষ্ণ হয়েছে।আফগান তালেবান সরকার টিটিপি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পাকিস্তানের ধৈর্য ফুরিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইসলামাবাদ এখন বলছে, তাদের কাছে প্রমাণ আছে, আফগান তালেবানের সদস্যরাও পাকিস্তানের ভেতরে সংঘটিত কিছু সন্ত্রাসী হামলায় সরাসরি জড়িত।
যুদ্ধ আপাতত থেমে আছে, কিন্তু পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ। সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও যাতায়াত কার্যত স্থবির হয়ে গেছে। প্রতিবেশী এই দুই দেশের ক্রমবর্ধমান সংঘাত গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে।
আরও পড়ুনভারতের হয়ে প্রক্সি যুদ্ধ করলে যে বিপদ তালেবানের১৬ অক্টোবর ২০২৫আশ্চর্যের বিষয়, এ সংঘর্ষের সময়ই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছিল। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার সম্প্রতি কাবুল সফর করেছিলেন এবং তারপরই ইসলামাবাদ সিদ্ধান্ত নেয়, আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের স্তর বাড়ানো হবে। চীনও উত্তেজনা কমাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছিল। কাবুল ও ইসলামাবাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক চলছিল, এমনকি কয়েকটি বন্ধ বাণিজ্য রুট আবার খোলার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সম্প্রতি মস্কোতে অনুষ্ঠিত ‘মস্কো ফরম্যাট’ বৈঠকে মিলিত হন।
কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই সবকিছু ওলট–পালট হয়ে যায়। সীমান্ত সংঘর্ষের পর আফগান সরকার পাকিস্তানের বিশেষ দূতের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলকে নিয়মিত বৈঠকের জন্য কাবুলে ঢুকতে দেয়নি।
আরও কৌতূহলজনক বিষয় হলো এ উত্তেজনা শুরু হয় তখন, যখন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফরে ছিলেন। গত কয়েক মাসে যখন ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের সঙ্গে তীব্র বিরোধে লিপ্ত, ঠিক সে সময়ে কাবুল ও দিল্লির সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে উষ্ণ হয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের একের পর এক উসকানি, পাকিস্তান এখন কী করবে১৪ অক্টোবর ২০২৫ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তারা ঘোষণা করেছে, কাবুলে তাদের অফিসকে পূর্ণাঙ্গ দূতাবাসের মর্যাদা দেওয়া হবে। এ পদক্ষেপ ভারতের নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। কারণ, একসময় ভারত তালেবানকে পাকিস্তানের প্রক্সি বা হাতিয়ার বলে অভিহিত করত।
তবে বর্তমান আঞ্চলিক রাজনীতিতে এসব পরিবর্তন খুব একটা বিস্ময়কর নয়। এখন যেন ‘শত্রুর শত্রুই বন্ধু’ নীতি সবার পথনির্দেশক। কাবুল-দিল্লি সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা পাকিস্তানের জন্য নতুন করে উদ্বেগের কারণ তৈরি করেছে। কারণ, ইসলামাবাদ আশঙ্কা করছে, আবারও পুরোনো ভারত-আফগান জোট পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। আর সেটি হলে পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তে নিরাপত্তা হুমকি বাড়বে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, ভারত টিটিপি ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীকে আর্থিক ও কৌশলগত সহায়তা দিচ্ছে।
তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, সীমান্তের ওপার থেকে জঙ্গি হামলা পাকিস্তানের জন্য বাস্তব নিরাপত্তা হুমকি। কিন্তু এটিই একমাত্র কারণ নয়, দেশে সন্ত্রাসবাদের পুনরুত্থানের পেছনে পাকিস্তানের নিজের ব্যর্থতাও কম নয়। পাকিস্তান কখনোই দীর্ঘমেয়াদি, সুসংহত সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল তৈরি করতে পারেনি। নীতির অস্থিরতা ও দোদুল্যমানতা এখনকার পরিস্থিতির অন্যতম কারণ।
জাহিদ হুসাইন পাকিস্তানের সাংবাদিক ও লেখক
ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আফগ ন ত ল ব ন ইসল ম ব দ আফগ ন স স ঘর ষ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাপ্তবয়স্কদের এই নতুন বাংলা সিনেমায় আসলে কী আছে
চলচ্চিত্র পরিচালকেরা বরাবরই বলে থাকেন, ‘সপরিবার ছবিটি দেখতে আসুন।’ তবে ‘দ্য একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ নির্মাতা জয়ব্রত দাশ বলছেন, ‘ছবিটি সপরিবার দেখবেন না’; সিনেমার পোস্টারেও বিধিসম্মত সতর্কীকরণটি জুড়ে দিয়েছেন তিনি।
৫টি কিংবা ১০টি নয়, ৫৪টি দৃশ্য বদলের পর সিনেমাটিকে ‘অ্যাডাল্ট’ সনদ দিয়েছে সার্টিফেকেশন বোর্ড। সাম্প্রতিককালে এতগুলো দৃশ্য বদলের পরও ‘অ্যাডাল্ট’ সনদ পাওয়ার ঘটনা কলকাতার সিনেমায় দেখা যায়নি।
সিনেমার পোস্টার