যখনই কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়, তখনই শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রায় চার দশক ধরে কুমিল্লাবাসী বিভাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন, কিন্তু প্রতিবারই বঞ্চিত হয়েছে কুমিল্লা। কুমিল্লার সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বারবার রাজনৈতিক কারণে বিভাগ আটকে রাখা হয়েছে। এবার কুমিল্লার মানুষ জেগে উঠেছে, ষড়যন্ত্র করে আর বিভাগ আটকে রাখা যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত অবিলম্বে কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণা করা।

আজ শনিবার বিকেলে কুমিল্লা বিভাগ দ্রুত ঘোষণার দাবিতে নগরের কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘কুমিল্লা নামেই বিভাগ আন্দোলন’–এর ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে যোগ দিতে নগরের ব্যবসায়ীরা এক ঘণ্টা তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন। পূবালী চত্বরে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হন। স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সমাবেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কল্যাণ সমিতি, কুমিল্লার চাঁদপুর জেলা পেশাজীবী কল্যাণ সমিতিসহ আশপাশের জেলার মানুষ অংশ নেন।

সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিন-উর-রশিদ বলেন, ‘কুমিল্লা বিভাগের দাবি নতুন নয়, এটি চার দশকের পুরোনো দাবি। অতীতে শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত আক্রোশে কুমিল্লা নামে বিভাগ হতে দেননি। কখনো নদী, কখনো আয়নামতি-ময়নামতি নাম দিতে চেয়েছেন। কিন্তু কুমিল্লার মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়ন আমাদের একটি সরল দাবি। এই দাবিতে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ সব জেলাই একমত। কেবল নোয়াখালীর কিছু মানুষ বিরোধিতা করছেন। নোয়াখালীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কুমিল্লা নামে বিভাগ চান। আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করব, কুমিল্লার মানুষের প্রাণের দাবি আমাদের বিভাগ দ্রুত বাস্তবায়ন করুন। এর মাধ্যমে আপনারা কুমিল্লাবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’

মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী বলেন, কুমিল্লার মানুষের প্রাণের দাবি কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়ন। তাই দ্রুত কুমিল্লা বিভাগের ঘোষণা দিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। না হলে কুমিল্লার মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের বিভাগ আদায় করবে।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে হবে। কুমিল্লা বিভাগ এখন গণমানুষের দাবি, সময়ের দাবি। টালবাহানা করে কুমিল্লাকে আর দাবিয়ে রাখার সুযোগ নেই। দ্রুত কুমিল্লা বিভাগের ঘোষণা দিতে হবে।’

মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘কুমিল্লা প্রাচীন শিক্ষানগরী। অনেক আগেই কুমিল্লা বিভাগ হওয়ার কথা। কুমিল্লার মানুষের দাবির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী একমত। আমরা অবিলম্বে বিভাগ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’

স্থানীয় দৈনিক কুমিল্লার কাগজের সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুজ্জামন আমির, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাসান আহমেদ, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক, কুমিল্লা টাউনহলের সদস্যসচিব সাজ্জাদ হোসেন, কুমিল্লা দোকান মালিক ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লা বিভাগের দাবিতে হাজারো মোটরসাইকেল নিয়ে মহাসড়কে শোভাযাত্রা

কুমিল্লা বিভাগের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হাজারো মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রা করেছেন তরুণেরা। আজ শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার হোটেল নুরজাহানের সামনে থেকে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি মহাসড়কের কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর হয়ে আবার পদুয়ার বাজারে আসে। পরে সেখান থেকে নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে এসে শেষ হয়।

এর আগে দুপুরে জুমার নামাজের পর থেকেই কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মোটরসাইকেল নিয়ে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় জড়ো হন তরুণেরা। তাঁরা এটিকে কুমিল্লার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বলে দাবি করেছেন। তাঁদের দাবি, অরাজনৈতিক এ শোভাযাত্রায় কুমিল্লার প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বাইকার জড়ো হন।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া তরুণেরা বলছেন, একটি বিভাগ হওয়ার জন্য যাবতীয় যোগ্যতা থাকার পরও যুগের পর যুগ ধরে কুমিল্লাকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। যখনই কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণার সময় হয়, তখনই শুরু হয়ে যায় ষড়যন্ত্র। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যখন কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই শুরু হয়েছে নতুন ষড়যন্ত্র। তবে এবার আর ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। বিভাগ ছাড়া ঘরে ফিরবে না কুমিল্লাবাসী।

শোভাযাত্রার সময় তরুণদের ‘দাবি মোদের একটাই, কুমিল্লার নামে বিভাগ চাই’, ‘তুমি কে আমি কে, কুমিল্লা কুমিল্লা’, ‘মিল্লা জিল্লা, কুমিল্লা কুমিল্লা’, ‘কুমিল্লা বিভাগ, কুমিল্লা বিভাগ’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কারও কারও হাতে, মোটরসাইকেলে ও বুকে ছিল জাতীয় পতাকা। এই মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাকে স্বাগত জানিয়ে অনেকেই দোকানপাটের সামনে দাঁড়িয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম (মিঠু) বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা অতীতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থেকে তাঁর ব্যক্তিগত আক্রোশে কুমিল্লা নামে বিভাগ হতে দেননি। শেখ হাসিনা কুমিল্লাকে ‘কু’ বলে অপমান করেছেন। এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যখন কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই শুরু হয়েছে নতুন ষড়যন্ত্র। তবে কুমিল্লাবাসীর দাবির মুখে কোনো ষড়যন্ত্রই টিকবে না। এই কুমিল্লা ছিল ত্রিপুরার রাজধানী। টালবাহানা করে কুমিল্লাকে আর দাবিয়ে রাখার সুযোগ নেই।

শিহাব উদ্দিন নামের এক তরুণ বলেন, হাজারো ঐতিহ্যে ভরা কুমিল্লা যখনই বিভাগ ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে যায়, তখনই নানা মহল থেকে ষড়যন্ত্র শুরু করে। নোয়াখালীসহ বৃহত্তর কুমিল্লার ছয়টি জেলার বিভিন্ন দপ্তরের ৪২টি আঞ্চলিক কার্যালয় কুমিল্লায়। অবিলম্বে কুমিল্লা নামে বিভাগ চাই। দ্রুত বিভাগের ঘোষণা না এলে কঠোর কর্মসূচি পালন করবে কুমিল্লার মানুষ।

দেলোয়ার হোসেন নামের আরেকজন বলেন, ‘আজ কুমিল্লার তরুণেরা পাঁচ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রা করেছেন। এটা কুমিল্লার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা। এটা থেকেই বোঝা যায় যে কুমিল্লার তরুণ সমাজ বিভাগের দাবিতে কতটা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের আর ষড়যন্ত্র করে দাবিয়ে রাখা যাবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিভাগ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনগণ বিশ্বাস করে এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত: ফখরুল
  • কুমিল্লা বিভাগের দাবিতে হাজারো মোটরসাইকেল নিয়ে মহাসড়কে শোভাযাত্রা
  • ‘নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হাসিনা নানামুখী ষড়যন্ত্র করছেন’