রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত জুলাই যোদ্ধা আতিকুল ইসলামের (আতিকুল গাজী) সঙ্গে দেখা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময় তিনি আতিকুলের স্বাস্থ্যের সার্বিক খোঁজখবর নেন।

শনিবার রাত নয়টার দিকে উত্তরার আজমপুরে আতিকুলের বাসায় যান নাহিদ ইসলাম। এনসিপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর ডান হাত হারান আতিকুল ইসলাম। এরপর তিনি কৃত্রিম হাত লাগিয়েছিলেন। গতকাল শুক্রবার সংসদ ভবনের সামনে জুলাই যোদ্ধা ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় আবারও আহত হন আতিকুল। এ সময় তাঁর কৃত্রিম হাত খুলে যায়।

এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নিজেদের ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন শতাধিক ব্যক্তি। তাঁদের একজন আতিকুল ইসলাম। জুলাই আন্দোলনে অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসন বাস্তবায়নের দাবি ছিল তাদের। তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া না হলেও ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর হতে দেবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন তাঁরা।

বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার সকালে প্রাচীর টপকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেন এবং সেখানেই বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ কর্মকর্তা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা অনুরোধ করলেও তাঁরা সরছিলেন না। পরে একপর্যায়ে দুপুরের দিকে পুলিশ জোর করে তাঁদের তুলে দেয়।

পরে বিক্ষোভকারীরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান; পুলিশের দিকে ঢিল ছোড়েন, ভাঙচুর করেন পুলিশের বাসসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি। আগুন দেন সড়কে। এরপর পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে। এ ছাড়া পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এ ঘটনায় আতিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। তাঁর কৃত্রিম হাত খুলে যায়। আহত হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সরিয়ে দিল পুলিশ, লাঠিপেটা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আগুন ১৭ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স মন স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই জাতীয় সনদে ২৪ দলের সই

নানা অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সই হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে তৈরি এই সনদে শুক্রবার সই করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট। পাশাপাশি সনদে সই করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।

তবে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অনুষ্ঠানে যায়নি, সনদে সইও করেনি। এ ছাড়া চারটি বাম দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ জুলাই সনদে সই করেনি। আর গণফোরাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও সই করেনি সনদে। অবশ্য দলগুলো চাইলে পরেও সনদে সই করতে পারবে।

এদিকে বেলা একটার দিকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দিয়ে একদল লোক অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের সরিয়ে দেয়। এরপর সংসদ ভবন এলাকার আশপাশে পুলিশ ও ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ মধ্যে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

সরকার–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ ঘটনার পর সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ অনুষ্ঠান করা যাবে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেন। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজও অনুষ্ঠান করার পক্ষে দৃঢ় থাকেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দুপুরে সংঘর্ষের পর বিকেলে বৃষ্টি, কয়েকটি দলের অনুপস্থিতির মধ্যে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শুরু হয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরকে ‘নতুন বাংলাদেশের সূচনা’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে ঐক্যে জুলাই সনদে সই হলো, এই ঐক্যের সুরই দেশকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে। জুলাই জাতীয় সনদের মতো রাজনীতি ও নির্বাচনের বিষয়েও রাজনৈতিক নেতাদের বসে একটি সনদ তৈরি করার পরামর্শ দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বিকেল সোয়া চারটার দিকে সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মঞ্চে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মঞ্চে আসেন প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর বিএনসিসি, স্কাউট সদস্যদের কুচকাওয়াজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়।

বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তাঁর বক্তব্যের পর বিকেল পাঁচটার দিকে দলগুলোর প্রতিনিধি ও ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা সনদের অঙ্গীকারনামা অংশে সই করেন। মঞ্চে থাকা প্রতিটি দলের দুজন করে প্রতিনিধি সই করেন।

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই অনুষ্ঠান হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই জাতীয় সনদে ২৪ দলের সই
  • স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ যাচ্ছে না, জুলাই সনদে যা যা আছে
  • জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান কয়েক মিনিট দেরিতে শুরু হতে পারে: প্রেস সচিব
  • আগামী মাসে ইউরোপে আফ্রিকান দলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল
  • আগারকারের ওপর শামি কেন ক্ষুব্ধ
  • অপারেশন কিলোফ্লাইটের ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম আর নেই
  • ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা
  • শিশুদের হত্যার ভয় দেখিয়ে মিরসরাইয়ের দুই বাড়িতে ডাকাতি
  • সকালে ঘুম থেকে জেগে নবীজি (সা.)-এর ৭ আমল