ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় পিস্তল প্রদর্শন করা যুবকের পরিচয় দুই দিন পরও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলা সদরে বিএনপির বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন উপলক্ষে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় এক যুবক পিস্তলসদৃশ বস্তু প্রদর্শন করেন, এমন একটি ১৪ সেকেন্ডের ভিডিও এবং কয়েকটি ছবি গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, সাদা রঙের একটি ব্যাগ থেকে ওই ব্যক্তি পিস্তলসদৃশ বস্তু বের করে কিছুক্ষণ পর আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখছেন। এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই যুবকের নাম শাহ মো.

জাকারিয়া কাজী (২৫)। তিনি বোয়ালমারীর গুনবহা ইউনিয়নের উমরনগর গ্রামের মঞ্জুর কাজীর ছেলে। জাকারিয়া উপজেলা জিয়া প্রজন্ম দলের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি ও ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক।

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর গতকাল থেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন শাহ মো. জাকারিয়া কাজী। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান আজ রোববার বলেন, ‘ভিডিও ও ছবি আমি দেখেছি। তবে ওই ব্যক্তিটি কে, তা এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। আগ্নেয়াস্ত্রসদৃশ বস্তু বহনকারী ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ। শনাক্ত হলেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। এই দুই নেতা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে পৃথকভাবে মিছিল বের করে বিএনপির এই দুই পক্ষ। বিকেলে বোয়ালমারী পৌরসভার সামনে মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় উপজেলার ওয়াপদার মোড় এলাকায় হারুন কমপ্লেক্সে শামসুদ্দিন মিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি কার্যালয়সহ বেশ কিছু দোকান ভাঙচুর করা হয় এবং পুড়িয়ে দেওয়া হয় অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল। সংঘর্ষে তিনজন পুলিশ সদস্যসহ দুই পক্ষের অন্তত ২৩ জন আহত হন। ওই যুবক সত্যিকারের অস্ত্র বহন করেননি, দাবি করে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ভিডিওতে যা দেখা গেছে, সেটি আসল আগ্নেয়াস্ত্র নয়। তবে যদি কারও কাছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থাকে, পুলিশ সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।

অন্যদিকে শামসুদ্দিন মিয়া বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনায় উপজেলাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বোয়ালমারীকে অশান্ত করে তুলেছেন। সংঘর্ষের সময় নাসিরুলের দুই সমর্থকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। অথচ পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের মামলা

এদিকে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দলটির দুই নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দীন মিয়াকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল রাতে বোয়ালমারী থানায় মামলাগুলো নথিভুক্ত করা হয়।

নাসিরুলপন্থীদের পক্ষে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফরকে ২ নম্বর ও মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল কালাম আজাদকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুনফরিদপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ০৭ নভেম্বর ২০২৫

অন্যদিকে শামসুদ্দীনপন্থীদের পক্ষে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বাদী হয়ে অপর মামলা করেন, যেখানে খন্দকার নাসিরুলসহ ১৮৮ জনের নাম ও আরও ২০০ থেকে ২৫০ জন অজ্ঞাত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবু জাফর বলেন, ‘আমি শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমি এলাকায়ও যাই না। আমি নাসিরুলের পক্ষেও নেই, শামসুদ্দীনের পক্ষেও নেই। ঢাকায় শুয়ে শুয়ে আমার দিন কাটে।’

তাঁর নাম যুক্ত করার কারণ হিসেবে আবু জাফর বলেন, ‘প্রচারণা আছে বিএনপি আমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে এবং আমাকে ফরিদপুর-১ আসনে মনোনয়ন দেবে। এ প্রচারণার কারণে শঙ্কিত ও ভীত হয়ে মামলায় আমার নাম যুক্ত করা হতে পারে।’

ওসি মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, গতকাল রাতে এ মামলা দুটি বোয়ালমারী থানায় নথিভুক্ত করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র ঘটন আগ ন য় স ত র ক ত কর গতক ল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাবার আশা ছিল, ছেলে টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরবে, ফিরল লাশ হয়ে

রাজশাহীর বাগমারার গোয়ালপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক ইয়ানুস আলী বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলে আনামুল হককে (৩১) সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন। আশা ছিল, ছেলে অনেক টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরবে। তা আর হলো না, ছেলে বাড়ি ফিরল লাশ হয়ে।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর আনামুল হক স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবে যান। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সেখানে পৌঁছার পর তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। গত ১ অক্টোবর তিনি সৌদি আরবের আফিফ শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। লাশ ময়নাতদন্তের পর ওই শহরের একটি হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষিত ছিল। ছেলের মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর পরিবার খবর পায়। আজ রোববার দুপুরে তাঁর লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়েছে।

আনামুল হকের বাবা ইয়ানুস আলী আজ দুপুরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণপাতি করে ভালোভাবে চলার জন্য বেটাক (ছেলে) বিদেশ পাঠাছিনু। অনেক টাকা লিইয়্যা দেশেত আসবে ভাবছিনু, এখন সবই চইল্যা গেল।’ তিনি জানান, উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নের ঝাড়গ্রামের আতিক হোসেনের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন ছেলেকে। প্রথমে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। পরে তিনি আরও এক লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। তবে টাকা দিতে পারেননি তাঁরা।

আনামুল হকের মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর খবর পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্ত্রী বিলকিস বানু। তিনি বলেন, বিদেশ যাওয়ার পর থেকে স্বামীর সঙ্গে কথা হলেও গত ১ অক্টোবর থেকে কথা না হওয়ায় যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তবে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। পরে একজন পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় সৌদি দূতাবাসে যোগাযোগ করে দুই সপ্তাহ পর স্বামীর মৃত্যুর খবর জেনেছেন।

আজ রোববার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা বলেন, আনামুল দেশে ভ্যান চালিয়ে সংসারের খরচ জোগাতেন। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সৌদি আরবে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছেন। তাঁর ছেলে ইমতিয়াজ হোসেনকে (৮) বাবার কফিনের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন স্বজনেরা। তবে সে ভয়ে সেদিকে যাচ্ছিল না।

নিহতের মামাশ্বশুর পুলিশ সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, দূতাবাসে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, গত ১ অক্টোবর গাড়ি উল্টে আনামুল হকসহ আটজন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে আনামুল হক বাংলাদেশি। অন্যরা মিসর, সুদান ও পাকিস্তানের নাগরিক। পরে দূতাবাসের মাধ্যমে আনামুলের কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে আজ তাঁর লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, আতিকুর রহমানের প্রতি তাঁদের সন্দেহ রয়েছে। মৃত্যুর পরেও তাঁদের কাছ থেকে তিনি টাকা দাবি করেছিলেন।

এ বিষয়ে আতিকুর রহমানের মুঠোফোনে ও তাঁর বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁর কোনো স্বজনও কথা বলতে রাজি হননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ