বাংলা সিনেমার খলচরিত্রের অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও তাঁর সহযোগী মো. ফয়সালের বিরুদ্ধে এবার হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম মিজবাহ-উর-রহমানের আদালতে ডিপজলের ভক্ত হিসেবে পরিচয় দেওয়া এক নারীর স্বামী এ মামলা করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী কাইয়ুম হোসেন জানান, আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ডিপজল ও ফয়সালের বিরুদ্ধে মারধর করে অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগে গত ৮ জুলাই ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী মামলা করেন। আদালত মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দেন।

ওই মামলার পর ডিপজল ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়। ভয়ে ওই দম্পতি রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে যাত্রাবাড়ীতে চলে আসেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর তাঁর মেয়ে বাসায় একা ছিল। তখন ডিপজলের ১০ থেকে ১২ জন সহযোগী বাসায় ঢুকে ভাঙচুর চালান এবং ৫০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যান। ওই সময় তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করা হয় বলেও উল্লেখ রয়েছে। এ অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ধর্ষণের মামলা করা হয়।

আরও পড়ুনমারধর ও অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগে ডিপজলের বিরুদ্ধে মামলা করলেন নারী০৮ জুলাই ২০২৫

মামলার বাদী ১ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী থানার পেছনে একটি হোটেলে খাবার খেতে গেলে দুজন তাঁকে কথা আছে বলে সিএনজিতে শনির আখড়া এলাকায় একটি ভবনের পঞ্চম তলায় নিয়ে যায়। মামলা দুটি তুলে নিতে হুমকি দেয়। ডিপজলের কথায় রাজি না হলে তাঁকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

তাৎক্ষণিকভাবে বাদীকে লোহার রড দিয়ে মারধর করেন অভিযুক্ত ফয়সালসহ অন্যরা। তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। ডিপজল নিজেও বাদীর কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করতে যান। তখন বাদী ডিপজলের পা ধরে নিজের জীবন ভিক্ষা চান। মামলা তুলে নেবেন বলে জানান। তখন তাঁর কাছে থাকা ২০ হাজার টাকা ও বিকাশে থাকা সাড়ে ৩ হাজার টাকা নিয়ে নেওয়া হয়।

আরও পড়ুনআমি ফেল করা লোক না যে ফেল করেছি: ডিপজল২৮ মে ২০২৪

দুই দিনের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের শর্তে বাদীকে আহত অবস্থায় ফেলে যান অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। পরবর্তী সময় বাদীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর স্ত্রী। এ ঘটনায় ৩ নভেম্বর মামলা করতে ওই দম্পতি যাত্রাবাড়ী থানায় গেলেও মামলা নেওয়া হয়নি বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড পজল ও ড পজল র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগের দুজনকে ছাড়াতে ওসিকে যুবদল নেতার হুমকি, ‘আপনার রিজিক উঠে গেছে’

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ‘আওয়ামী লীগের কর্মী’ দুই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিতে এসে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদলের এক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওসির উদ্দেশে যুবদল নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি মানুষ চিনেন নাই। আপনার এখানে রিজিক নাই, রিজিক উঠে গেছে।’

ওই যুবদল নেতার নাম নাজমুল হুদা ওরফে মিঠু। তিনি পাশের পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি। পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার দুজনকে ছেড়ে দিতে রাজি না হওয়ায় ওসির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ। তবে অভিযুক্ত নেতা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে রানীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের রাজোর গ্রামের সারোয়ার নুর (৩২) ও হামিদুর রহমান (৬০), ভাউলারবস্তি গ্রামের খলিলুর রহমান (৫০) ও ধর্মগড় শালফার্ম এলাকার জিয়াউর রহমানকে (৪২) আটক করে পুলিশ। বাচোর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং আটক সারোয়ার ও হামিদুরের বাড়ি একই এলাকায়। ওই দুজনকে আটক করে গাড়িতে তোলার সময় জাহিদুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাঁদের ছেড়ে দিতে পুলিশকে চাপ দেন। পুলিশ রাজি না হলে তিনি বিভিন্নজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। পরে পুলিশ তাঁদের থানায় নিয়ে আসে।

গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে জাহিদুলের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন ব্যক্তি থানায় উপস্থিত হন। পরে পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল হুদা থানায় এসে সারোয়ার ও হামিদুরকে আত্মীয় দাবি করে তাঁদের ছেড়ে দিতে ওসিকে অনুরোধ করেন। আটক ব্যক্তিরা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন বলে দাবি করেন। বেলা দেড়টার দিকে নাজমুল হুদার সঙ্গে জাহিদুল ইসলাম যুক্ত হয়ে তাঁদের ছেড়ে দিতে ওসিকে চাপ দিতে থাকেন। রাজি না হওয়ার এক পর্যায়ে ওসির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার কয়েকজন। এ ঘটনার দুটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, থানা ভবনের সামনে লোকজনের জটলা। এ সময় যুবদল নেতা নাজমুল হুদাকে বলতে শোনা যায়, ‘মামলা করে ফেলেছেন, বলে দেন। কোনো কিছুই বলেন না। তিনটা থেকে ফোন দিচ্ছি, আমি মানুষ না?’ জবাবে ওসি বলেন, ‘আমি তো বলেছি, হবে না।’ এরপর নাজমুল বলেন, ‘ফালতু কথা বলবেন না। হবে না এ কথা বলেন নাই। মিথ্যা কথা বলবেন না।...আপনি মানুষ চিনেন নাই। আপনার এখানে রিজিক নাই, রিজিক উঠে গেছে।’ এ সময় ওসি তাঁদের চলে যেতে বললে আরও অনেকে কথা বলা শুরু করেন।

১ মিনিট ২০ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, নাজমুল ওসিকে বলছেন, ‘পোশাকের ই দেখাইলেন, আর কি! আর চ্যালেঞ্জ করলেন আমাদের সঙ্গে।’ তখন এক পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘এত কথা বলিয়েন না ভাই।’ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমুল বলেন, ‘কেন কথা বলব না? শোনেন আওয়ামী লীগ আমলের থেকে এখন আরও বেশি ই হচ্ছে।’ তখন ওসি তাঁদের চলে যেতে বললে নাজমুল বলেন, ‘কেন যাব? থানা আমরাও সেভ করছি, বুঝলেন? তিন-চার দিন থানায় বসে ছিলাম। না হলে থানা জ্বালায় দিত। আমরা কথা বলব না তো, কে কথা বলবে?’

জানতে চাইলে রানীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক বলেন, মঙ্গলবার রাতে আটক সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। তাঁদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের ছাড়িয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি থানায় এসে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তখন পুলিশ সদস্যদের হাড়গোড় ভাঙাসহ থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে তাঁর ব্যবসার অংশীদার ও তাঁর বাবাকে আটক করে পুলিশ। ওসিকে ফোন করলে তিনি তাঁকে থানায় যেতে বলেন। তিনি রানীশংকৈল থানায় গিয়ে পুলিশকে জানান, তাঁরা কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত না। কিন্তু ওসি কোনো উত্তর না দিয়ে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। ওসির ওই আচরণের কারণে প্রতিবাদ করেছেন। হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পুলিশকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি শুধু বলেছি, ৫ আগস্ট আমরা থানা পাহারা না দিলে উত্তেজিত জনগণ থানা পুড়িয়ে দিত।’

জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মো. জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ