রোহিঙ্গা শিবিরে বন্ধ শিক্ষাকেন্দ্র চালু হচ্ছে, ডিএমএইচ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ
Published: 13th, November 2025 GMT
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে বন্ধ থাকা রোহিঙ্গা শিশুদের লার্নিং সেন্টার (শিক্ষাকেন্দ্র) পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ‘ডাক্তার মোস্তফা-হাজেরা (ডিএমএইচ) ফাউন্ডেশন’। পাশাপাশি সংস্থাটি ৮০০ রোহিঙ্গা রোগীকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ দিয়েছে।
গতকাল বুধবার আশ্রয়শিবির ঘুরে এসে সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম গোলাম কিবরিয়া। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফটোসাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম, হেলথ সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের সাবেক পরিচালক সুলতানা খানম প্রমুখ।
সম্মেলনে এ কে এম গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘ডিএমএইচ ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে কাজ করছে। এ লক্ষ্যেই ‘গ্লোবাল ফাইভ জিরো ক্যাম্পেইন’ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য নিপীড়ন, অবহেলা ও মানবাধিকারে বাধাকে শূন্যে নামিয়ে আনা।
গোলাম কিবরিয়া আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা অমানবিক জীবন যাপন করছেন। তহবিলসংকটে শত শত শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্কুলপড়ুয়া শিশুদের সময় নষ্ট হচ্ছে। তারা সন্ত্রাস কিংবা মাদক চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই শিশুদের আবার শিক্ষার আলোয় ফেরানো দরকার। আমরা স্থানীয় রোহিঙ্গা শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো পুনরায় চালুর পরিকল্পনা নিয়েছি।’
রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম বলেন, ‘শিশুরা এমন এক ক্যাম্পে জন্ম নিচ্ছে, যেখানে অন্য কোনো পৃথিবী তারা চেনে না। বৃদ্ধরা দিন কাটাচ্ছেন রাখাইনের পোড়া গ্রামের স্মৃতিতে। যুবকরা তাঁদের সম্ভাবনা নিয়ে আটকে আছেন হতাশা ও নির্ভরতার চক্রে। এটি কেবল মানবিক নয়, ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও আমাদের সম্মিলিত নৈতিকতারও সংকট।’
শহিদুল আলম আরও বলেন, ‘মানবিক কারণে বাংলাদেশ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিলেও সংকটের ভার শুধু একা এ দেশের নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত কার্যকর করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। এ সংকটের নিরসন করতে হলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দ্রুত, নিরাপদ ও মযাদাপূর্ণভাবে প্রত্যাবাসন করতে হবে। মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য মিয়ানমার সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
সম্মেলনে সুলতানা খানম বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী হচ্ছে রোহিঙ্গারা। আমাদের নীরব থাকা মানে হলো অমানবিকতাকে মেনে নিচ্ছি, সমর্থন করছি। নীরবতাই মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অপরাধ। মানবাধিকারের পক্ষে প্রতিটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর। আর গত দেড় বছরে নতুন করে আরও ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তহবিলসংকটে আশ্রয়শিবিরের বেশির ভাগ শিক্ষাকেন্দ্রই বন্ধ রয়েছে। প্রাক্–প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান পুরোপুরি বন্ধ। আর চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে সপ্তাহে এক দিন। তবে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ক্লাস পাঁচ দিন চলছে। বন্ধ শিক্ষাকেন্দ্রগুলো চালুর জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
৮০০ রোহিঙ্গাকে স্বাস্থ্যসেবাএদিকে গতকাল উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে ডিএমএইচ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৮০০ রোহিঙ্গাকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে। এতে ৪ জন চিকিৎসক ও ১৬ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক দল অংশ নেয়।
সেবা নেওয়া রোগীদের মধ্যে ১২০টি শিশু ও ২০০ জন চর্মরোগী ছিলেন। এ ছাড়া বাকি ১০০ জন ডায়াবেটিস, ১০০ জন উচ্চ রক্তচাপ, ৫০ জন স্ত্রীরোগ, ৫০ জন অর্থোপেডিক, ৫০ জন নাক-কান-গলা, ৩০ জন কিডনি ও ইউরোলজি, ২০ জন চোখ, ৩০ জন লিভার ও গ্যাস্ট্রিক ও ৫০ জন সাধারণ রোগী ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম নব ধ ক র ড এমএইচ উদ য গ ম নব ক ৫০ জন
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গা শিবিরে বন্ধ শিক্ষাকেন্দ্র চালু হচ্ছে, ডিএমএইচ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে বন্ধ থাকা রোহিঙ্গা শিশুদের লার্নিং সেন্টার (শিক্ষাকেন্দ্র) পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ‘ডাক্তার মোস্তফা-হাজেরা (ডিএমএইচ) ফাউন্ডেশন’। পাশাপাশি সংস্থাটি ৮০০ রোহিঙ্গা রোগীকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ দিয়েছে।
গতকাল বুধবার আশ্রয়শিবির ঘুরে এসে সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম গোলাম কিবরিয়া। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফটোসাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম, হেলথ সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের সাবেক পরিচালক সুলতানা খানম প্রমুখ।
সম্মেলনে এ কে এম গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘ডিএমএইচ ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে কাজ করছে। এ লক্ষ্যেই ‘গ্লোবাল ফাইভ জিরো ক্যাম্পেইন’ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য নিপীড়ন, অবহেলা ও মানবাধিকারে বাধাকে শূন্যে নামিয়ে আনা।
গোলাম কিবরিয়া আরও বলেন, ‘কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা অমানবিক জীবন যাপন করছেন। তহবিলসংকটে শত শত শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্কুলপড়ুয়া শিশুদের সময় নষ্ট হচ্ছে। তারা সন্ত্রাস কিংবা মাদক চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই শিশুদের আবার শিক্ষার আলোয় ফেরানো দরকার। আমরা স্থানীয় রোহিঙ্গা শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো পুনরায় চালুর পরিকল্পনা নিয়েছি।’
রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম বলেন, ‘শিশুরা এমন এক ক্যাম্পে জন্ম নিচ্ছে, যেখানে অন্য কোনো পৃথিবী তারা চেনে না। বৃদ্ধরা দিন কাটাচ্ছেন রাখাইনের পোড়া গ্রামের স্মৃতিতে। যুবকরা তাঁদের সম্ভাবনা নিয়ে আটকে আছেন হতাশা ও নির্ভরতার চক্রে। এটি কেবল মানবিক নয়, ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও আমাদের সম্মিলিত নৈতিকতারও সংকট।’
শহিদুল আলম আরও বলেন, ‘মানবিক কারণে বাংলাদেশ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিলেও সংকটের ভার শুধু একা এ দেশের নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত কার্যকর করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। এ সংকটের নিরসন করতে হলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দ্রুত, নিরাপদ ও মযাদাপূর্ণভাবে প্রত্যাবাসন করতে হবে। মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য মিয়ানমার সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
সম্মেলনে সুলতানা খানম বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী হচ্ছে রোহিঙ্গারা। আমাদের নীরব থাকা মানে হলো অমানবিকতাকে মেনে নিচ্ছি, সমর্থন করছি। নীরবতাই মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অপরাধ। মানবাধিকারের পক্ষে প্রতিটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর। আর গত দেড় বছরে নতুন করে আরও ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তহবিলসংকটে আশ্রয়শিবিরের বেশির ভাগ শিক্ষাকেন্দ্রই বন্ধ রয়েছে। প্রাক্–প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান পুরোপুরি বন্ধ। আর চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে সপ্তাহে এক দিন। তবে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ক্লাস পাঁচ দিন চলছে। বন্ধ শিক্ষাকেন্দ্রগুলো চালুর জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
৮০০ রোহিঙ্গাকে স্বাস্থ্যসেবাএদিকে গতকাল উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে ডিএমএইচ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৮০০ রোহিঙ্গাকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে। এতে ৪ জন চিকিৎসক ও ১৬ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক দল অংশ নেয়।
সেবা নেওয়া রোগীদের মধ্যে ১২০টি শিশু ও ২০০ জন চর্মরোগী ছিলেন। এ ছাড়া বাকি ১০০ জন ডায়াবেটিস, ১০০ জন উচ্চ রক্তচাপ, ৫০ জন স্ত্রীরোগ, ৫০ জন অর্থোপেডিক, ৫০ জন নাক-কান-গলা, ৩০ জন কিডনি ও ইউরোলজি, ২০ জন চোখ, ৩০ জন লিভার ও গ্যাস্ট্রিক ও ৫০ জন সাধারণ রোগী ছিলেন।