সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা
Published: 13th, November 2025 GMT
কপ৩০ সম্মেলনে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোসহ উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিছু বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে কয়েকটি দেশ। জলবায়ু সংকট নিরসনে ধনী দেশগুলোর আর্থিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিও আলোচনায় তোলার কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে গতকাল বুধবার সমঝোতার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টার কথা ছিল আয়োজক দেশ ব্রাজিলের।
ওই পদক্ষেপগুলো আগের বিভিন্ন সম্মেলনে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছিল। ব্রাজিলের বেলেম শহরে কপ সম্মেলন শুরুর দিন গত সোমবার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। তবে এ নিয়ে আয়োজক দেশ ব্রাজিল অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ করবে এবং সমঝোতার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য মধ্যস্থতা করবে—এমন প্রতিশ্রুতির পর মূল আলোচনা পেছানো হয়েছিল।
বুধবারের আলোচনার জন্য চারটি বিষয় বিবেচনায় রয়েছে। সেগুলো হলো বাণিজ্য, স্বচ্ছতা, জলবায়ু-সংক্রান্ত অর্থায়নের দায়বদ্ধতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এমন গ্যাস নিঃসরণ কমানো। শেষের দুটি বিষয় বেশি সংবেদনশীল। কারণ, ধনী দেশগুলো আর্থিক সহায়তা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয়। আর জলবায়ু পরিবর্তনে জীবাশ্ম জ্বালানির দায় নিয়ে আলোচনা চায় না তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো।
সম্মেলনের ফাঁকে দুই দিন ধরে বিষয় দুটি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পর গতকাল দেখার পালা ছিল ব্রাজিল আদৌ সফল হয়েছে কি না। আর্থিক সহায়তা ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে মধ্যবর্তী কোনো অবস্থান খুঁজে পেয়েছে কি না। আয়োজক হিসেবে ব্রাজিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষমতা নেই। তবে সমঝোতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তারা।
কপ সম্মেলনে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে অবশ্যই জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) চুক্তিতে সই করা ১৯৭ দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মতি লাগবে। ব্রাজিলের সঙ্গে দেশগুলোর অনানুষ্ঠানিক আলোচনা সম্পর্কে জানাশোনা আছে এমন একজন পর্যবেক্ষক এএফপিকে জানিয়েছেন, কিছু দেশ আলোচনায় অংশ না নিলেও তা ‘গঠনমূলক’ হয়েছে।
আলোচনায় জোর ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রের
আর্থিক দায়বদ্ধতা ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো নিয়ে সবচেয়ে জোর দিচ্ছে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জোট (এওএসআইএস)। বেলেমে কপ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো যেন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিরাপদ মাত্রায় ধরে রাখার ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে—এমনটাই দাবি এই জোটের। এতে সম্মতি জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী তাপমাত্রা বৃদ্ধি সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখাটা সম্ভব হবে না। কারণ, এই লক্ষ্য ধরে রাখার জন্য যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে পারেনি দেশগুলো। সম্মেলনে অংশ নেওয়া একজন কূটনীতিক বলেন, ব্রাজিল শেষ পর্যন্ত বিষয়টি মোকাবিলার সাহস দেখিয়েছে।
তবে এ জন্য ব্রাজিলকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। পর্যবেক্ষকেরা জানিয়েছেন, তেল উৎপাদনকারী ২২টি আরব দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো নিয়ে আলোচনা শুরুর জন্য ব্রাজিলের সমালোচনা করেছে। এ ছাড়া আর্থিক দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনার জন্য ধনী দেশগুলোও আপত্তি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, এই বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেই, তবে তারা সমঝোতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সম্মেলনস্থলে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ
এদিকে কপ৩০-এর সম্মেলনস্থলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারীরা। এ সময় স্থানীয় আদিবাসী ও অ-আদিবাসী বিক্ষোভকারীদের একটি দল সম্মেলনস্থলেও হামলা চালায়। তখন কয়েক ডজন নারী-পুরুষ দৌড়ে সম্মেলনস্থলের মেটাল ডিটেক্টর ভেদ করে ব্লু জোনে ঢুকে পড়েন।
তখন জাতিসংঘের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের থামাতে ছুটে যান। তাঁদের ধরে ফেলেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তারক্ষীদের ধাক্কা দেন, চিৎকার করতে থাকেন। বিক্ষোভে একজন অ-আদিবাসী পুরুষ একটি ব্যানার ধরে ছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘আমাদের বন বিক্রির জন্য নয়’। অন্যদের পরনের টি-শার্টে লেখা ছিল ‘জুন্তোস’। স্প্যানিশ এই শব্দের বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘একসঙ্গে’।
বিক্ষোভকারীরা সেখানে ব্যানার নাড়াতে থাকেন। জোর করে সরিয়ে দেওয়ার আগপর্যন্ত সম্মেলনস্থলে নানা স্লোগান দেন তাঁরা। এ বিষয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু-বিষয়ক মুখপাত্র জানান, এ ঘটনায় দুজন নিরাপত্তারক্ষী সামান্য আহত হয়েছেন। সম্মেলনস্থলের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে এই অনুপ্রবেশের জন্য কে বা কারা জড়িত, সেটা স্পষ্ট নয়।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, ব্রাজিল আর জাতিসংঘের নিরাপত্তারক্ষীরা সব ধরনের প্রটোকল মেনে সম্মেলনস্থলকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে সম্মেলনস্থল পুরোপুরি সুরক্ষিত আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর থ ক র জন য জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিরামপুর রেলস্টেশনে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ নারীর সন্তান প্রসব
দিনাজপুরের বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ এক নারী সন্তান প্রসব করেছেন।
সোমবার (১০ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। বর্তমানে মা ও শিশু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় রেলসেতুর নিচ থেকে নারীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার
সড়কের পাশে সন্তান জন্ম দিলেন নারী, হাসপাতালে নিল পুলিশ
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিরামপুর রেলস্টেশন মাস্টার কাজী ফয়েজ আলাউদ্দীন বলেন, “গতকাল রাতে স্টেশনে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। বাচ্চা এবং মা দুজনেই ভালো আছেন। তারা বর্তমান হাসপাতালে ভর্তি আছেন।”
স্থানীয় বাসিন্দা মরিয়ম বেগম জানান, গত তিন-চার মাস ধরে গর্ভবতী ওই নারীকে স্টেশনের প্লাটফর্মেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছিল। তিনি কারো সঙ্গে বেশি কথা বলতেন না এবং কারো কাছে কিছু চাইতেনও না। কেউ স্বেচ্ছায় খাবার দিলে তবেই খেতেন। তিনি একেবারে নিঃসঙ্গ অবস্থায় স্টেশনের প্লাটফর্মে বসবাস করছিলেন।
তিনি বলেন, “সোমবার রাতে সন্তান প্রসবের সময় আমরা আশপাশের বাড়ির কয়েকজন নারী মানবিক বিবেচনায় এগিয়ে আসি। নবজাতকের নাড়ি কেটে নিরাপদে আনার ব্যবস্থা করি। মা ও শিশুকে কাপড়, কম্বল এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়েছে। রাতে মা ও নবজাতককে সুরক্ষিত রাখি। বর্তমানে মা-সন্তান সুস্থ আছেন।”
সন্তান প্রসবের খবর ছড়িয়ে পড়লে রেলস্টেশনে ভিড় করেন উৎসুক মানুষ। অনেকে শিশুটিকে দেখতে আসেন এবং আর্থিক সহায়তা দেন। শিশুটিকে দেখে অনেক নারী কোলে নেন। তবে, কেউই শিশুটির বাবার পরিচয় জানাতে পারেননি।
স্থানীয়দের মতে, মা ও নবজাতকের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দ্রুত প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও সমাজসেবা দপ্তরের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, “গতকাল রাতে রেলস্টেশনে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া একজন মানসিক ভারসাম্যহীন প্রসূতি আমাদের হাসপাতালের লেবার রুমে ভর্তি আছেন। বর্তমান মা ও শিশু দুইজন ভালো আছেন। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”
বিরামপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, “বিরামপুর রেলস্টেশনে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। আজকে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মা ও শিশুকে ভর্তি করেছি। বর্তমান তারা ভালো আছেন। ইউএনও মহোদয় ট্রেনিংয়ে আছেন, উনি এলে শিশুটির মঙ্গলের জন্য একটা সুব্যবস্থা করা হবে।”
বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম আওন বলেন, “বিষয়টি আমি জানি, আমি ট্রেনিংয়ে আছি। সমাজসেবা কর্মকর্তাকে শিশুটির বিষয়ে বলা আছে, উনি দেখবেন। আমি এসে ব্যবস্থা নেব।”
ঢাকা/মোসলেম/মাসুদ