তারেক রহমানের বক্তব্যের সমালোচনায় এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
Published: 13th, November 2025 GMT
গণভোটের চেয়ে আলুর ন্যায্য মূল্য পাওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
কারও নাম উল্লেখ না করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘একজন রাষ্ট্রনায়ক যিনি ভবিষ্যতে হতে যাচ্ছেন, উনি বলছেন গণভোটের চেয়ে আলুর দামটা বেশি প্রাসঙ্গিক। উনার হয়তো অজ্ঞতা রয়েছে। উনি যদি বুঝতেন যে উনি যাকে এমপি নমিনেশন দিচ্ছেন, সেই লোকটাই কৃষকদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে আলুর দামটা বাড়াচ্ছে।’
তারেক রহমানের বক্তব্যকে ‘নিজের লোক দিয়ে সবকিছুর মূল্য বাড়িয়ে তারপর কৃষকদের ওপর দায় চাপানো’ হিসেবে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘এটা একটা অপরাজনীতি। এই অপরাজনীতি গত ১৫ বছরে চলেছে। এটা আমাদের বন্ধ করতে হবে। এ জন্য যাঁরা ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন, আমরা তাঁদের কাছে আহ্বান জানাব, আপনারা শালীন হোন, যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দিন।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এসব কথা বলেন। ‘জুলাই সনদ: কৃষক বঞ্চনা ও ন্যায্যতার প্রশ্ন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে এনসিপির সহযোগী সংগঠন জাতীয় কৃষক শক্তি। তবে এই সংগঠনের এখনো আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হয়নি।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি রায়ের তারিখ ঘোষণাকে (১৭ নভেম্বর) ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগের একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক’ বলে আখ্যা দেন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, এই রায়ের আগে আওয়ামী লীগ অনলাইন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ভীতি ছড়িয়েছে। তাদের যে অর্থনৈতিক কাঠামো ছিল, গত ১৫ বছর তারা যে লুট করেছিল, ওই টাকা দিয়ে তারা ককটেল ফুটিয়েছে এবং বাসে আগুন দিয়েছে।
১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে রায় হবে, সেখানে শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
সভায় এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, বর্তমান সংবিধানে যে পদ্ধতিগুলো আছে, সেগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রতিটি শাখাকে কুক্ষিগত ও রাজনীতিকরণ করতে পারেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু যাঁরা ক্ষমতার কাছাকাছি আছেন, ক্ষমতায় আছেন, শুধু তাঁদেরই সুবিধা দেয়। যাঁরা ক্ষমতার বলয়ের বাইরে আছেন, তাঁদের দেয় না।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘জুলাই সনদের মাধ্যমে যেটুকুই আমরা অর্জন করতে পারলাম, সেটাকে আমরা হারিয়ে যেতে দিতে চাই না। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ সরকারকেই জারি করতে হবে।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাশ, যুগ্ম সমন্বয়ক খান মুহাম্মদ মুরসালীন, কৃষক উইংয়ের যুগ্ম সমন্বয়কারী হাফসা জাহান ও সাঈদ উজ্জ্বল, সংগঠক সুলতান হোসেন, মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন স র দ দ ন প টওয় র এনস প র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
যেদিন সম্পদ ও সন্তান কোনো কাজে আসবে না
জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনটি এখনো আসেনি। সেদিন সম্পদের পাহাড় থাকলেও কোনো লাভ হবে না। সন্তান-কন্যা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব—কেউ পাশে দাঁড়াবে না। সেদিন শুধু একটি জিনিস কাজে লাগবে: একটি পরিচ্ছন্ন হৃদয়।
কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন, ‘আর আমাকে সেই দিন লাঞ্ছিত করো না, যেদিন মানুষকে উত্থিত করা হবে। যেদিন না সম্পদ কোনো কাজে আসবে, না সন্তান। কিন্তু যে আল্লাহর কাছে পরিচ্ছন্ন অন্তর নিয়ে আসবে।’ (সুরা শু‘আরা, আয়াত: ৮৭-৮৯)।
এই আয়াত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া। তিনি বুঝেছিলেন, কিয়ামতের দিন সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।
সেই দিনকে কোরআন বলেছে ‘ইয়াওমুত তাগাবুন’—প্রতারণার দিন। যেদিন মানুষ বুঝবে, দুনিয়ায় যা ভেবেছিল স্থায়ী, তা সব মায়া। সম্পদ, সন্তান, পদমর্যাদা—কিছুই সঙ্গী হবে না।
ইমাম আবু মনসুর আল-মাতুরিদি (রহ.) বলেন, যদি কেউ সম্পদকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে, সন্তানকে সৎশিক্ষা দেয়, তাহলে সেটি কিয়ামতের দিন কাজে লাগবে। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের সম্পদ ও সন্তান তোমাদের কাছে আল্লাহর নৈকট্য এনে দেবে না, কিন্তু যে ইমান এনে সৎকর্ম করে, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ৩৭)। (আবু মনসুর আল-মাতুরিদি, তা’ওয়িলাতু আহলিস সুন্নাহ, ৭/৪৫৬, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ২০০৪)।
আরও পড়ুন‘পাহাড় যখন মেঘের মতো চলতে থাকবে’০৪ অক্টোবর ২০২৫দুনিয়ায় আমরা ভুল করি। শেষমেশ কেউ না কেউ এসে বাঁচিয়ে দেয়। কেউ সুপারিশ করে, কেউ সান্ত্বনা দেয়। কিন্তু কিয়ামতের দিন? সেদিন কেউ কারো জন্য না।কিন্তু যদি হৃদয় শিরক, পাপ ও দূষণে ভরা থাকে, তাহলে কোনো আমলই কাজে আসবে না। পরিচ্ছন্ন হৃদয় মানে শিরকমুক্ত, পাপমুক্ত, একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাওহিদ ধরে রাখতে হবে। মাতুরিদি (রহ.) বলেন, যদি শেষ মুহূর্তে তাওহিদ না থাকে, আগের সব আমল বৃথা। বু মনসুর আল-মাতুরিদি, তা’ওয়িলাতু আহলিস সুন্নাহ, ৭/৪৫৮, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ২০০৪)
দুনিয়ায় আমরা ভুল করি। পরিবারের প্রতি অবহেলা, দায়িত্বে গাফিলতি—কিন্তু শেষমেশ কেউ না কেউ এসে বাঁচিয়ে দেয়। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু—কেউ সুপারিশ করে, কেউ সান্ত্বনা দেয়।
কিন্তু কিয়ামতের দিন? সেদিন কেউ কারো জন্য একটি নেকিও দিতে পারবে না। নিজের সন্তানের দিকে তাকিয়ে বলবেন, ‘বাবা, তোমার একটি নেকি দাও!’ কিন্তু সে নিজেই ভয়ে কাঁপছে। মা-বাবা পালিয়ে যাবে। যাদের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছি, তারা মুখ ফিরিয়ে নেবে। কারণ তারাও নিজেদের মুক্তির জন্য হাহাকার করছে।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন বিবাদ এত তীব্র হবে যে, রূহ দেহের সঙ্গে ঝগড়া করবে।’ (আত-তাবারি, জামি‘উল বায়ান ফি তা’ওয়িলিল কোরআন, ১৯/১২৩, দারু ইহইয়া আত-তুরাস, বৈরুত, ২০০১)।
সেদিন কেউ কারো নয়। শুধু আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে একা।
আরও পড়ুনযখন নীরবতাই ইবাদত২৯ আগস্ট ২০২৫কিয়ামতের দিন বিবাদ এত তীব্র হবে যে, রূহ দেহের সঙ্গে ঝগড়া করবে।সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)তাই দুনিয়াতেই নিজের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এটা স্বার্থপরতা নয়, দায়িত্ব। শরীরের রোগ সারাই যেমন জরুরি, অন্তরের রোগ সারানো আরও জরুরি। শিরক, হিংসা, অহংকার—এগুলো অন্তরের ক্যান্সার। এগুলো থেকে মুক্ত না হলে, কিয়ামতের দিন কোনো ওষুধ কাজ করবে না।
আমরা প্রায়ই ভাবি, ‘আমার সন্তানরা আমাকে বাঁচাবে’, ‘আমার সম্পদ আমাকে সম্মান দেবে’। কিন্তু সেদিন বুঝব, সবই ধোঁকা। শুধু একটি জিনিস সঙ্গে যাবে: আমার আমলের খাতা আর আমার অন্তরের অবস্থা। যে অন্তর আল্লাহর জন্য খাঁটি, সে মুক্তি পাবে। বাকি সবাই—ধনী হোক বা গরিব, পিতা হোক বা সন্তান—সবাই একা।
ইবরাহিম (আ.)–র দোয়া আমাদের শেখায়, ‘হে আল্লাহ! আমাকে সেদিন অপমানিত করো না।’ তিনি জানতেন, সেদিন লাঞ্ছনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়—পরিচ্ছন্ন অন্তর।
চলুন, আজ থেকেই অন্তর পরিষ্কার করি। তাওবা করি। শিরক ত্যাগ করি। সৎকর্মে সম্পদ ব্যয় করি। সন্তানদের দ্বিন শেখাই। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা—নিজের অন্তরকে আল্লাহর জন্য খাঁটি রাখি। যাতে সেদিন যখন সবাই পালাবে, আল্লাহ আমাদের হাত ধরেন।
আরও পড়ুনএকজন মুসলিমের জন্মদিন কীভাবে যাপন করা উচিত১০ অক্টোবর ২০২৫