তীব্র শীত থেকে বাঁচতে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে ডানা ঝাপটে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উড়ে আসে পাখিরা। যার মধ্যে একটি দেশ বাংলাদেশ। ঠিক যে মুহূর্তে ওরা একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে যাবে, সে মুহূর্তে নিরীহ পাখিদের বধ করে আমরা মাংস খাওয়ার উৎসবে মেতে উঠি। সামান্য দয়ামায়া, প্রকৃতির প্রতি এতটুকু ভালোবাসা নিয়ে আমরা অনেকেই বেড়ে উঠতে পারিনি। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ বা যাদের আশ্রয়ের বড় বেশি প্রয়োজন, তাদের একটু আশ্রয় দিতে, ভালোবাসতে অনেকেই আমরা শিখিনি।

আমরা অনেকেই বৃদ্ধ মা–বাবাকে সম্মান দিতে শিখিনি। পিতৃতুল্য শিক্ষকের সঙ্গে সম্মানজনক ব্যবহার করতে শিখিনি। ফুলের মতো ছোট শিশুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত, আমরা জানি না। অনেক পরিবারেই বিশেষ শিশু আছে। যে বিশেষ শিশুটি পরিবারে বেড়ে উঠছে বা উঠেছে, তাকেও বিশেষভাবে গ্রহণ করার বিষয়েও আমাদের রয়েছে শিক্ষার অভাব। সব ক্ষেত্রেই অহেতুক প্রতিযোগিতা, মারাত্মক বৈষম্য।

পরগাছার মতো জীবন

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। তারাও কিন্তু আদর বোঝে, মায়া বোঝে। তাদের আত্মসম্মানবোধ আছে, আছে বিশ্বাস, স্বপ্ন। কিন্তু পদে পদে বঞ্চনার শিকার হতে হতে, সবকিছু থেকে বঞ্চিত হতে হতে আপনজন, সমাজ বা রাষ্ট্রে পরগাছার মতো তারা বেঁচে থাকে। অথচ তাদের অনেকের প্রতিভা স্বাভাবিক অনেক শিশুর চেয়েও বেশি। একটু খেয়াল করলেই আমরা দেখতে পাই, আমাদের চারপাশে নানা রকম মানুষের বাস। কেউ স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় শারীরিক, মানসিক, সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতায় পিছিয়ে আছে। তাদের কারও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অস্বাভাবিক, কারও বুদ্ধি কম, দেখা ও শোনার সমস্যা কারও, কারও আবার সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন ও যোগাযোগের অসুবিধা। আচরণেও তারা অন্যের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে।

এ ভিন্নতার পেছনে থাকতে পারে জিনগত সমস্যা, গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, জন্মগত ত্রুটি, প্রসবকালীন জটিলতা, পরিবেশের খারাপ প্রভাব, মায়ের পুষ্টি, মানসিক অবস্থাসহ নানাবিধ কারণ। আবার দুর্ঘটনা, কঠিন অসুখে চিকিৎসার অভাব বা ভুল চিকিৎসায়ও মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে জীবনের বাকি সময় দুরূহ কষ্টে অতিবাহিত করে।

সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা কেড়ে নিতে পারে বেঁচে থাকার সব আনন্দ। চলতে চলতে হঠাৎ বদলে যেতে পারে জীবনের গতি। চুরমার হয়ে যেতে পারে জীবনের স্বপ্ন। বাংলাদেশের জন্মের এত বছর পরও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কারও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই।

অগ্নিকাণ্ডের ফলেও অনেকে প্রতিবন্ধিতা লাভ করতে পারে। যখন অগ্নিকাণ্ডটি ঘটে, তখন অনেক হইচই করলেও দুই দিন পর সব ভুলে যাই। দোষী ব্যক্তিদের কখনোই সামনে আসতে দেখা যায় না। অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা বেঁচে থাকে, তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে শুনিনি।

ভুল চিকিৎসায় অনেক শিশু, অনেক প্রাপ্তবয়স্ককে প্রতিবন্ধী হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। চিকিৎসকদের জবাবদিহির কোনো উল্লেখযোগ্য খবর আমার চোখে পড়েনি।

অজ্ঞানতাবশত বিনা চিকিৎসায় অনেকেই বিকলাঙ্গ হয়ে পড়তে পারে বা হয়ে যায়। গ্রাম্য কবিরাজের তাবিজ, কবজ, পথ্য খেয়ে অনেকেই প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়।

যোগাযোগব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ার কারণে রোগীর চিকিৎসা পেতে দেরি হলেও ঘটতে পারে নানা সমস্যা।

বর্তমান সমাজে নেশাও প্রতিবন্ধিতার বড় একটি কারণ। কঠিন অসুখে ওষুধ সহজলভ্য না হওয়াও একটি কারণ।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পাঠকের কথা ভাবে কজন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন অন ক ই সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে: ভূমি উপদেষ্টা

ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। তাই সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। কেউ যদি সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্রুত সেবার ক্ষেত্রে সবার আগে জনগণ।”

সোমবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অডিটরিয়ামে ‘উপজেলা ভূমি অফিসের সেবা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

‘জ্ঞান জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করাই প্রকৃত সাফল্য’

ভূমিসেবা নিশ্চিতের মূল ভিত্তি সঠিক সার্ভে ও সেটেলমেন্ট: ভূমি উপদেষ্টা

তিনি বলেন, “ভূমি প্রশাসন বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত, যার কার্যক্রম মূলত উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সাধারণ মানুষের ভূমি-সংক্রান্ত প্রায় সব সেবা এখান থেকেই দেওয়া হয়। তাই উপজেলা ভূমি অফিস নাগরিক সেবার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।”

তিনি আরো বলেন, “ভূমি সেবার মান ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এখনও নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সেবায় জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কিভাবে কাজ করলে জনগণের কল্যাণ হবে, তা নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নির্ধারণ করতে হবে।”

সুশাসন ছাড়া অগ্রগতি অসম্ভব
ভূমি উপদেষ্টা বলেন, “সুশাসন একটি রাষ্ট্রের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। এটি এমন একটি কাঠামো, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়—ভূমি সেবার ক্ষেত্রেও তাই।”

তিনি বলেন, “ভূমি মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এটি খাদ্য, শিল্প, আবাসন ও অর্থনীতির মূল উৎস। ভূমি সেবার মানোন্নয়ন কেবল প্রযুক্তিনির্ভর নয়, এটি মানবিকতা, সততা ও দায়িত্ববোধের সমন্বয়।”

জনবান্ধব ভূমি প্রশাসনের আহ্বান
ভূমি উপদেষ্টা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “স্বচ্ছতা, দেশপ্রেম, সততা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে ভূমি খাতকে জনবান্ধব করা সম্ভব। সহকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে, অসততার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”

তিনি বলেন, “অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কাজের জন্য ওপর থেকে সুপারিশ এলে দ্রুত হয়ে যায়, কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই দ্রুত সেবা পায় না। এসব অসঙ্গতি পরিহার করতে হবে।”

ভূমি খাতে সুশাসন এখন সময়ের দাবি
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “ভূমি খাত বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। এটি শুধু উৎপাদনের উপকরণ নয়; এটি নাগরিকের অধিকার, জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ভূমি প্রশাসনে সুশাসনের অভাব ও স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে জনগণ ভোগান্তিতে ছিল।”

নতুন বাংলাদেশের পথে
ভূমি উপদেষ্টা আরো বলেন, “সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বই পালন করেন না, বরং নির্বাচন পরিচালনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁরা নির্বাচনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।”

তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশকে পুরোনো জীর্ণতা ভুলে সামনে এগোতে হবে। সামনে নির্বাচন—নতুন আশা ও নতুন প্রত্যয়ের প্রতীক। তাই এমন একটি নির্বাচন উপহার দিতে হবে, যেখানে জনগণ নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ।স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন টিআইবির পরিচালক (সিভিক এনগেজমেন্ট) ফারহানা ফেরদৌস, প্রফেসর ড. সুরাইয়া খায়ের, উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা), টিআইবি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফুটেজ প্রকাশ শুধু অনৈতিক নয়, অপেশাদার আচরণের চূড়ান্ত নিদর্শন: শাবনূর
  • ইসলামের মৌলিক বিষয় কী কী
  • ট্রাম্প কেন মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চান
  • আয়ারল‌্যান্ডের ঢিলেঢালা বোলিংয়ে বাংলাদেশের ‘রান উৎসব’
  • দস্তয়েভস্কি: মানব-অস্তিত্বের নিখুঁত দ্রষ্টা
  • জাতীয় নির্বাচনে দল ও প্রার্থীরা পোস্টার ব্যবহার করতে পারবেন না
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ চাইলেন রাকসুর প্রতিনিধিরা
  • ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেজিস্ট্রারের অপসারণ চায় রাকসু
  • সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে: ভূমি উপদেষ্টা