বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক এবং সেটা বেশ একটা ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে আছে। এ ছাড়া বৃহদাকারে যদি আমরা দৃষ্টি দিই, তাহলে বলতে হবে বাংলাদেশ একটা বেশ কঠিন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বিপ্লবোত্তর পরিবেশে আমাদের যে ধরনের জাতীয় সংহতি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল, রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে সেটা আমরা অর্জন করতে পারিনি। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য একটি মাত্র পথ খোলা আছে। সেটা হলো সঠিক নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এখন আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, রাজনৈতিক ও সমষ্টিগতভাবে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা, যাতে আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারি। এটাই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আমাদের উত্তরণ এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।

ভারত থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন রকম উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশে তাদের সমর্থক ও কর্মীদের তাঁরা একধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রমের ভেতর দিয়ে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এটাকে সম্পূর্ণভাবে এবং কঠোর হাতে দমন করতে হবে। কোনোভাবে এমন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, যাতে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়।

যেকোনো দেশে বিপ্লবোত্তর পরিবেশে বা পরিস্থিতিতে জাতীয় স্থিতিশীলতা এবং অস্থিতিশীলতার ভেতরে খুব ক্ষীণ একটা রেখা থাকে। এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা যদি কোনোভাবে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হই, সেখান থেকে আমাদের ফিরে আসা বেশ কঠিন হবে। কাজেই আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বাত্মকভাবে নিজেদের কাজে নিয়োজিত থেকে এ ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড, যেটা আওয়ামী লীগ করার চেষ্টা করছে, সেটাকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

বর্তমানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ধরনের দুর্বলতা লক্ষ করা যাচ্ছে, সেটাও একটা বড় উদ্বেগের কারণ। আমাদের পুলিশ বাহিনী সম্পূর্ণভাবে কাজ করতে পারছে না। গত দেড় বছর সময় অতিক্রান্ত হলেও আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের মাধ্যমে এই বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠন করা যায়নি। এর ফলে তাদের যে কর্মদক্ষতা বা যে কর্মক্ষমতা থাকা দরকার ছিল, তার মধ্যে বড় ধরনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। একই সঙ্গে এ ধরনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে সামাল দেওয়ার জন্য আমাদের যে গোয়েন্দা সক্ষমতা থাকা দরকার ছিল, সেখানেও বড় ধরনের দুর্বলতা এবং ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। কাজেই দুই ক্ষেত্রেই নজর দিয়ে খুব আশু পরিবর্তন এনে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, যদি আমরা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু মতভেদ এমন পর্যায়ে কোনোভাবে পৌঁছানো উচিত নয়, যেটা আমাদের রাজনৈতিক এবং জাতীয় স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করতে পারে। আমাদের সামনে বড় ছবিটা কী, সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। অর্থাৎ ছোটখাটো কারণে যাতে বড় ছবিটা হারিয়ে না যায়, সেটা লক্ষ রেখে আমাদের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। ছোটখাটো বিভেদের কারণে আমরা যাতে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না করি, যাতে আমাদের আসল আকাঙ্ক্ষাটা বাস্তবায়ন হওয়ার আগে হারিয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, যেকোনো বিপ্লবোত্তর পরিবেশ যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য একটা নাজুক পরিবেশ। এখানে যদি কোনো ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।

মেজর জেনারেল (অব.

) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র স র জন ত ক পর স থ ত পর ব শ ন করত ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, সতর্ক পুলিশ

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচির আগে আজ সোমবার ঢাকায় বাসে আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ১৩ নভেম্বর, অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের এ কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, রাজধানীতে ইতিমধ্যে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থাকবেন অন্তত ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে ১৩ নভেম্বর। ওই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি (পুলিশের মহাপরিদর্শক) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী)। জুলাই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় এটিই প্রথম মামলা, যেটির রায় ঘোষণার তারিখ জানানোর অপেক্ষায় রয়েছে।

কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে আওয়ামী লীগের পেজসহ নেতাদের পেজে ১৩ নভেম্বর ‘লকডাউন’ কর্মসূচি পালনের কথা বলা হচ্ছে। পুলিশও কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তাদের কর্মসূচি প্রতিহত করতে ঢাকায় অভিযান ও তল্লাশি চালাচ্ছে। এরই মধ্যে চোরাগোপ্তা হামলার কয়েকটি ঘটনা ঘটে। আজ ঢাকায় তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয় এবং ছয়টি জায়গায় নয়টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আজ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছে। কর্মসূচি পালনে রাস্তায় বের হলেই গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে এ মুহূর্তে বড় কিছু করা সম্ভব নয়। অপ্রীতিকর কিছু করবে—এমন কোনো আশঙ্কাও নেই।

বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ

বাসে আগুন দেওয়ার একটি ঘটনা ঘটে আজ সন্ধ্যার পর ধানমন্ডির মিরপুর রোডে ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে। পুড়ে যাওয়া বাসটি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এতে হতাহতের কোনো ঘটেনি। এর আগে আজ ভোরে আধঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকার বাড্ডা ও শাহজাদপুর এলাকায় যাত্রীবাহী দুটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতেও কেউ হতাহত হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষে কর্তব্যরত কর্মকর্তা রাশেদ বিন খালেদ বলেন, সোমবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে গুলশানের শাহজাদপুর এলাকায় যাত্রীবাহী ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসে এবং বাড্ডার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সকাল সোয়া ছয়টার দিকে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস খবর পেয়ে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।

রাজধানীর মিরপুর ও ধানমন্ডির দুটি করে জায়গায় এবং মোহাম্মদপুর ও খিলগাঁওয়ের একটি করে জায়গায় মোট ৯টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। চারটি জায়গাতেই মোটরসাইকেলে হেলমেট পরে আসা ব্যক্তিরা ককটেল ছোড়ে। দুটি জায়গায় কে বা কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তা জানা যায়নি।

পুলিশ জানায়, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে খিলগাঁও উড়ালসড়কের ওপরে দুর্বৃত্তরা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর শাহ আলী মার্কেটের সামনে পরপর তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। পুলিশ বলেছে, এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এর আগে সকাল সাতটার দিকে মোহাম্মদপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারের খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান প্রবর্তনার সামনের সড়কে ও সীমানার ভেতরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দুই দুর্বৃত্ত হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান বলে জানিয়েছেন প্রবর্তনার এক নিরাপত্তাকর্মী। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. ইবনে মিজান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন) ক্যামেরার ভিডিও চিত্র বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

এছাড়া ভোর পৌনে চারটার দিকে মিরপুর–২ নম্বরের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেলে এসে দুই দুর্বৃত্ত এ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তাদের মাথায় হেলমেট ছিল। চেহারা বোঝা যায়নি। তবে দুজনকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর প্রবেশপথে তল্লাশি চালাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। বাবু বাজার এলাকা, ১০ নভেম্বর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধানমন্ডি ৩২ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ কিশোরকে আটক
  • নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখতে সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার
  • ‘লকডাউন’ ঠেকাতে কঠোর সরকার, সন্দেহ হলেই আটক
  • সন্দেহ হলেই আটক
  • সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান: স্বরাষ্ট্র উপদে
  • ট্রাইব্যুনাল ফেস না করে যানবাহনে আগুন মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না: প্রসিকিউটর
  • রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ‘ঢাকা লকডাউন’ ঘিরে অস্থিরতার আশঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপ
  • ঢাকায় বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, সতর্ক পুলিশ