পাকিস্তানে নতুন বিল পাস, আরও ক্ষমতাধর হলেন সেনাপ্রধান
Published: 13th, November 2025 GMT
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট গতকাল বুধবার বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল অনুমোদন করেছে। এর মধ্য দিয়ে আরও ক্ষমতাধর হলেন দেশটির সেনাপ্রধান। আর সীমিত হলো সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা। সমালোচকেরা বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তানে গণতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।
পাকিস্তানি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোটে বিলটি অনুমোদন পেয়েছে। মাত্র চার আইনপ্রণেতা বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। দুই দিন আগে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বিলটি পাস করে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে দেশটির রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আসছে। নতুন এই সংস্কারের ফলে তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা আরও বেড়ে গেল। আর তাতে লাগাম দেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।সাধারণত এ ধরনের সাংবিধানিক সংশোধনীর জন্য কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী আলোচনার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তাড়াহুড়া করে বিলটি পাস করা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর এটি আইনে পরিণত হবে, যা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
এই সংবিধানিক সংশোধনীর ফলে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পাবেন। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌ ও বিমানবাহিনীরও নেতৃত্ব দেবেন তিনি। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাঁর পদমর্যাদা বহাল থাকবে। তিনি আজীবন কোনো অপরাধ বা প্রশাসনিক অভিযোগের ক্ষেত্রে আইনগত দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত থাকবেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই সংশোধনীর প্রশংসা করে বলেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য ও জাতীয় ঐক্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বলেছেন, ‘আজ আমরা যদি এটিকে সংবিধানের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করি, তবে শুধু ফিল্ড মার্শাল নয়, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীকেও স্বীকৃতি দেওয়া হবে।’
শাহবাজ শরিফ স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, ‘এতে সমস্যার কী আছে? জাতি তাদের বীরদের সম্মান করে। আমরা জানি, কীভাবে আমাদের বীরদের প্রতি সম্মান দেখাতে হয়।’
সমালোচকেরা বলছেন, সংবিধানিক এই পরিবর্তন ক্ষমতাসীন জোট ও সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতাকে আরও কেন্দ্রীভূত করবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সুপ্রিম কোর্ট সরকারের অনেক নীতিমালা আটকে দিয়েছেন। কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুতও করেছেন। কিন্তু নতুন সংস্কারের ফলে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়েছে। এই সংশোধনীর অধীন সংবিধানসংক্রান্ত মামলাগুলো সুপ্রিম কোর্ট থেকে নতুন ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতের হাতে চলে যাবে। নতুন এই আদালতের বিচারক নিয়োগ দেবে সরকার।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের সিনেটে বিতর্কিত সংশোধনী বিল তড়িঘড়ি পাসের উদ্যোগ, বিরোধীদের প্রতিবাদ০৯ নভেম্বর ২০২৫পাকিস্তানের বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) আইনপ্রণেতারা ভোটাভুটির আগে পার্লামেন্ট থেকে বের হয়ে যান এবং বিলের কপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান। তাঁরা দাবি করেন, বিলটির বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ হয়নি।
পিটিআইয়ের মুখপাত্র জুলফিকার বুখারি বলেন, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের যে ক্ষতি হয়ে গেল, তাতে আইনপ্রণেতাদের কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা নীরব দর্শক হিসেবে ভোট দিয়ে দেশকে একটি দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করলেন। এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করেছেন তিনি।
আইনজীবী ও সংবিধানবিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই সংস্কার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করতে পারে। দেশটির সংবিধানবিশেষজ্ঞ আসাদ রহিম খান বলেছেন, বিচারব্যবস্থার ওপর এমন আঘাত গত ১০০ বছরেও দেখা যায়নি। যেসব আইনপ্রণেতা এখন আনন্দ উদ্যাপন করছেন, তাঁদেরও একসময় এই আদালতের কাছেই সাহায্যের জন্য ফিরে আসতে হবে, যেটিকে তাঁরা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন।
আরও পড়ুনসরকার চূড়ান্ত করে ফেলেছে বিরোধীরা, প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শাহবাজ!০৮ এপ্রিল ২০২২সংবিধানবিশেষজ্ঞ মির্জা মোইজ বেগ বলেন, এই সংশোধনী স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টকে নিজেদের পছন্দমতো ফেডারেল সংবিধানিক আদালতের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সরকারের অতিরিক্ত ক্ষমতার ওপর আদালতের নজরদারি করার সুযোগ কমে গেল।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে দেশটির রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আসছে। নতুন এই সংস্কারের ফলে তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা আরও বেড়ে গেল। আর তাতে লাগাম দেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।
আইনজীবী মির্জা মোইজ বেগ বলেন, এই সংশোধনীর অনুমোদন দিয়ে পার্লামেন্ট এমন একটি কাজ করেছে, যা এর আগে কোনো স্বৈরশাসকও কল্পনা করতে পারেনি।
আরও পড়ুনবিলাওয়াল বললেন, গণতন্ত্রই আসল প্রতিশোধ০৮ এপ্রিল ২০২২.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র দ শট র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল লক্ষ্য: নিপুন রায়
জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রকে সুসংহত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি, অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী।
আজ (১১ নভেম্বর) মঙ্গলবার বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ইউনিয়নে অবস্থিত বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সভায় সভাপতির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
নিপুন রায় বলেন, “দেশের জনগণ গত ১৬ বছর ধরে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সেই মৌলিক ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারলেই গণতন্ত্রের ভিত্তি দৃঢ় হবে।’’
“আমরা চাই, দেশের জনগণ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, নিজের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। গণতন্ত্র মানে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা,’’ বলেন তিনি।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতান নাসের, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আলী হোসেন, ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বাবুল প্রমুখ।
ঢাকা/শিপন//