ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রায় আট মাস আগে কুমিল্লার প্রতিটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নামে জামায়াতে ইসলামী। ৩ নভেম্বর প্রার্থী ঘোষণার পর মাঠে নামে বিএনপিও। এর বাইরে আরও বিভিন্ন দলের প্রার্থী ও তাঁদের পক্ষের নেতারা প্রতিদিন সভা-সমাবেশ, মিছিল, উঠান বৈঠকসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। ১৭টি উপজেলা ও ১৮টি থানা নিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ জেলা কুমিল্লায় সংসদীয় আসন ১১টি। এর মধ্যে দক্ষিণের ১০টি উপজেলা নিয়ে ছয়টি আসন। 

দক্ষিণের ছয়টি আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থীদের তিনজনই নতুন মুখ। দুটিতে প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। অন্যদিকে পাঁচটি আসনে প্রথমবারের মতো ভোটে জামায়াতের নেতারা। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রার্থী ঘোষণা না করলেও কয়েকটি আসনে নেতারা তৎপর আছেন। বামপন্থী দলগুলোর তেমন তৎপরতা নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের নেতারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন।

কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ ও সিটি করপোরেশন)

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীকে বিএনপি মনোনয়ন দেওয়ার পর একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁরা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিনকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। আমিন-উর রশিদ বলেন, ‘ঘোষণার সময় দল বলেছে, এটা প্রাথমিক মনোনয়ন। আমি বিশ্বাস করি, দল চূড়ান্ত মনোনয়নে আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

মনোনয়ন নিয়ে একাংশের অসন্তোষ প্রসঙ্গে মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, দল সব কোন্দল নিরসনের দায়িত্ব নিয়েছে। অচিরেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এই আসনে মহানগরের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক নাভিদ নওরোজ শাহ্ প্রচার চালাচ্ছেন। আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির কুমিল্লার আহ্বায়ক মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক ও ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন।

কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া)

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সভাপতি মো.

জসিম উদ্দিন এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে। আমি বিশ্বাস করি, নেতা-কর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আমার পক্ষে, ধানের শীষের পক্ষে মাঠে কাজ করবেন।’

ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মোবারক হোসেনকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। তিনি এখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল হক রহমতপুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও মাঠে তেমন তৎপরতা নেই। 

কুমিল্লা-৮ (বরুড়া)

কেন্দ্রীয় কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলার সভাপতি জাকারিয়া তাহের (সুমন) বিএনপির প্রার্থী। বিভক্তি না থাকায় নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা, জাকারিয়া তাহের বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। জেলা কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ শফিকুল আলমকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের মুফতি সাদিক মাহমুদ বিন নূরী প্রচার চালাচ্ছেন। শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ বিশ্বাস করে আমি নির্বাচিত হলে সততার সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন করব। এ জন্য যেখানে যাচ্ছি, মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’

কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) 

বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক ও লাকসাম উপজেলার সভাপতি মো. আবুল কালামকে মনোনয়ন দিয়েছে দল। এবারই প্রথম মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। দক্ষিণ জেলার সেক্রেটারি সৈয়দ এ কে এম সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকীকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের সেলিম মাহমুদকে এখানে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তৎপরতা নেই এনসিপির।

আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনীতি করতে গিয়ে বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আমলে ৫২টি মামলার আসামি হয়েছি। কিন্তু কখনো নেতা-কর্মীদের ছেড়ে যাইনি। সেই ত্যাগের পুরস্কার দল আমাকে দিয়েছে। ইতিমধ্যে দুই উপজেলার মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।’

কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট ও লালমাই) 

নাঙ্গলকোট উপজেলার সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে রেলপথ অবরোধ, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁর অনুসারীরা। 

আবদুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার সঙ্গে জনগণের সম্পর্কটা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সুখে-দুঃখে সব সময় মানুষের পাশে থাকতে পেরেছি। আশা করছি, ধানের শীষ এখানে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। কারণ, নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ।’

এই আসনে ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাতকে প্রার্থী করেছে জামায়াত। এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীনও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম)

চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লা-১১ আসনে ২০০১ সালে এমপি হন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জোটের প্রার্থী ছিলেন তিনি। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সভাপতি কামরুল হুদাকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। 

সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকায় তাঁদের অনেক নেতা-কর্মী ও সমর্থক আমাকে ভালোবাসেন। আশা করছি, বিএনপির অনেকে আমাকে ভোট দেবেন।’ কামরুল হুদা বলেন, ২০০১ সালের হিসাব এখন চৌদ্দগ্রামে চলবে না। বিএনপি ছাড়া চৌদ্দগ্রামে জামায়াতের অস্তিত্ব কতটুকু, এবারের নির্বাচনে প্রমাণিত হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ উপজ ল র ব এনপ র আবদ ল প রথম সদস য এনস প ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় কড়া নিরাপত্তা, চলছে তল্লাশি

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে ও  বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে চলতি মানুষদের তল্লাশি করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সড়কে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে ঢাকার সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল কিছুটা কম লক্ষ্য করা গেছে। তবে সকাল থেকে সড়কে রিকশা ও অটোরিকশার দাপট থাকলেও সীমিত পরিসরে চলছে গণপরিবহন। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও উপস্থিতির হার কিছুটা কম। 

ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সাঁজোয়া যানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এছাড়া, যেকোনো অপতৎপরতা মোকাবিলায় সড়কে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির নেতা–কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। 

সকাল থেকে রামপুরা, খিলগাঁও, মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল ও পল্টন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। 

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশ এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি শুরু হওয়ার অন্তত তিন দিন আগে থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে ঢাকা ও এর আশেপাশে বাসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যদিও এসব নাশকতা ঠেকাতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। তবে এ অবস্থায় অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হওয়া এড়িয়ে চলছেন। তবে মোটরসাইকেল, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকাসহ সারা দেশে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২০টি চোরাগোপ্তা হামলার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি ব্যাংক, ১০ বাস, এক ট্রেন ও এক অটোরিকশায় আগুন, পাঁচ স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও দুই স্থানে পেট্রোল বোমা হামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে রামপুরা এলাকার বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের প্রধান কার্যালযয়ের সামনে দায়িত্বর রামপুরা ট্রাফিক জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) এ কে এম নছরুত হাসান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘সকাল থেকে কোনা ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে সড়কে যানচলাচল একটু কম রয়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ দিনের মতোই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক জানান, ‘অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠবো।’

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ