এলপিজি বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস এখন বাংলাদেশের একটি প্রধান জ্বালানির উৎস। এই গ্যাস সরবরাহের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের (এলপিজিএল) কার্যক্রম নিয়ে যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে, তা এককথায় ভয়াবহ। এলপিজিএল প্রায় সাড়ে চার লাখ সিলিন্ডার নিয়ে কাজ করে, যার মধ্যে প্রায় এক লাখ সিলিন্ডারেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ। এর চেয়েও ভয়ংকর তথ্য হলো, এসব সিলিন্ডারের মান যাচাই করা হয় আধুনিক প্রযুক্তির বদলে খালি চোখে গ্যাসের বুদ্‌বুদ দেখে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণে এমন চরম গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত এই সংবেদনশীল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে যে নিরাপত্তাহীনতা ও অব্যবস্থাপনা চলছে, তা গ্রাহকদের ঘরে যেন ‘টাইম বোমা’ তুলে দিচ্ছে।

যেভাবে সিলিন্ডারে ছিদ্র মান যাচাই করা হয়, তা শুধু গ্যাসের অপচয় নয়, বিস্ফোরণের ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। প্রতিষ্ঠানের চত্বরে গ্যাসের গন্ধ, ধোঁয়া শনাক্তকারী যন্ত্রের অভাব এবং আড়াই বছর ধরে অগ্নিমহড়া না হওয়া—একটি গ্যাস বোতলজাতকরণ ইউনিটে এমন অব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রায় পাঁচ দশকের পুরোনো রি-টেস্টিং ইউনিটটির যন্ত্রপাতি এখন অচল হয়ে পড়েছে। স্বয়ংক্রিয় ও নির্ভুল পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডারগুলোই বারবার বাজারে ছাড়া হচ্ছে।

বিপিসির চেয়ারম্যান ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডার বাদ দিতে নির্দেশনা দিয়ে গেলেও বাস্তবতা হলো, বারবার চিঠি দিয়েও পরিবেশকদের অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। সরকারি সিলিন্ডারের এমন দুরবস্থা সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপের অনুপস্থিতি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের চরম উদাসীনতাকে প্রমাণ করে। বুয়েটের জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ম.

তামিমের মন্তব্য, ‘সরকারি সিলিন্ডারগুলোই সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত। সামান্য দেবে যাওয়া বা আঘাতের চিহ্ন দেখলেই কারখানায় পাঠিয়ে চাপ পরীক্ষা করা উচিত।’ এই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার অর্থ হলো, ২০১৬ সালে বগুড়ায় বিপিসির ডিপোতে ৩০০ সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি তৈরি করা।

১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রি-টেস্টিং প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আমরা আশা করব, এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে তার আগে ঝুঁকিপূর্ণ ৯৩ হাজার বা পরিবেশকদের মতে ১ লাখ সিলিন্ডার জরুরি ভিত্তিতে বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। সিলিন্ডারে ছিদ্র শনাক্ত করতে আধুনিক প্রযুক্তিও দ্রুত চালু করা হোক। নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণে অবহেলার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রতিটি সিলিন্ডারে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদ বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত অগ্নিমহড়া এবং চত্বরে ধোঁয়া শনাক্তকারী যন্ত্র বসানোও জরুরি। আমরা চাই না অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও দীর্ঘসূত্রতা বড় কোনো দুর্ঘটনার জন্ম দিক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ এলপ জ

এছাড়াও পড়ুন:

এলপিজিএলের অব্যবস্থাপনা গ্রহণযোগ্য নয়

এলপিজি বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস এখন বাংলাদেশের একটি প্রধান জ্বালানির উৎস। এই গ্যাস সরবরাহের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের (এলপিজিএল) কার্যক্রম নিয়ে যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে, তা এককথায় ভয়াবহ। এলপিজিএল প্রায় সাড়ে চার লাখ সিলিন্ডার নিয়ে কাজ করে, যার মধ্যে প্রায় এক লাখ সিলিন্ডারেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ। এর চেয়েও ভয়ংকর তথ্য হলো, এসব সিলিন্ডারের মান যাচাই করা হয় আধুনিক প্রযুক্তির বদলে খালি চোখে গ্যাসের বুদ্‌বুদ দেখে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণে এমন চরম গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত এই সংবেদনশীল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে যে নিরাপত্তাহীনতা ও অব্যবস্থাপনা চলছে, তা গ্রাহকদের ঘরে যেন ‘টাইম বোমা’ তুলে দিচ্ছে।

যেভাবে সিলিন্ডারে ছিদ্র মান যাচাই করা হয়, তা শুধু গ্যাসের অপচয় নয়, বিস্ফোরণের ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। প্রতিষ্ঠানের চত্বরে গ্যাসের গন্ধ, ধোঁয়া শনাক্তকারী যন্ত্রের অভাব এবং আড়াই বছর ধরে অগ্নিমহড়া না হওয়া—একটি গ্যাস বোতলজাতকরণ ইউনিটে এমন অব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রায় পাঁচ দশকের পুরোনো রি-টেস্টিং ইউনিটটির যন্ত্রপাতি এখন অচল হয়ে পড়েছে। স্বয়ংক্রিয় ও নির্ভুল পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডারগুলোই বারবার বাজারে ছাড়া হচ্ছে।

বিপিসির চেয়ারম্যান ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডার বাদ দিতে নির্দেশনা দিয়ে গেলেও বাস্তবতা হলো, বারবার চিঠি দিয়েও পরিবেশকদের অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। সরকারি সিলিন্ডারের এমন দুরবস্থা সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপের অনুপস্থিতি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের চরম উদাসীনতাকে প্রমাণ করে। বুয়েটের জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ম. তামিমের মন্তব্য, ‘সরকারি সিলিন্ডারগুলোই সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত। সামান্য দেবে যাওয়া বা আঘাতের চিহ্ন দেখলেই কারখানায় পাঠিয়ে চাপ পরীক্ষা করা উচিত।’ এই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার অর্থ হলো, ২০১৬ সালে বগুড়ায় বিপিসির ডিপোতে ৩০০ সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি তৈরি করা।

১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রি-টেস্টিং প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আমরা আশা করব, এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে তার আগে ঝুঁকিপূর্ণ ৯৩ হাজার বা পরিবেশকদের মতে ১ লাখ সিলিন্ডার জরুরি ভিত্তিতে বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। সিলিন্ডারে ছিদ্র শনাক্ত করতে আধুনিক প্রযুক্তিও দ্রুত চালু করা হোক। নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণে অবহেলার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রতিটি সিলিন্ডারে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদ বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত অগ্নিমহড়া এবং চত্বরে ধোঁয়া শনাক্তকারী যন্ত্র বসানোও জরুরি। আমরা চাই না অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও দীর্ঘসূত্রতা বড় কোনো দুর্ঘটনার জন্ম দিক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ