এক্সপ্রেসওয়ে থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ, পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলছে
Published: 13th, November 2025 GMT
পদ্মা সেতুর সামনে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পদ্মা সেতু দিয়ে কিছু যানবাহন চলাচল শুরু করে।
এদিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সুয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকেও অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলটির নেতা-কর্মীরা আজ সকালে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন।
জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আজ সকালে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন। সড়কটির নাওডোবা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সকাল ৭টার দিকে তাঁরা তস্তারকান্দি এলাকায় একটি ট্রাকে আগুন দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় দুটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করা হয়। আন্দোলনকারীরা তস্তারকান্দি এলাকায় সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে মিছিল করেন। তাঁরা পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার একটি পুলিশের টহল গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করেন।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে জাজিরার নাওডোবা পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার মহাসড়কের পাঁচটি স্থানে সকাল ৬টা থেকে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ, শিবচর, ভাঙ্গা ও হাইওয়ে থানার পুলিশ সকাল ১০টার দিকে সড়ক থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেন। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ এ সময় তিনজনকে আটক করে।
বেলা ১১টার দিকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কার ও কাঁচা মালামালবোঝাই ট্রাক চলাচল করছে। তবে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি।
শরীয়তপুর বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রুটের বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকে টার্মিনালে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন।
আরও পড়ুনপদ্মা সেতুর সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ, ট্রাকে আগুন, যানবাহন চলাচল বন্ধ৩ ঘণ্টা আগেমাদারীপুরের খাসেরহাট থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য শরীয়তপুর বাস টার্মিনালে এসে অপেক্ষা করছিলেন দিদারুল আলম নামের এক ব্যক্তি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যেতে হবে। সকাল ৯টার দিকে এসে বসে আছি; কিন্তু বাস চলাচল বন্ধ। কীভাবে ঢাকা যাব বুঝতে পারছি না।’
শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ঢাকার ধোলাইরপাড় এলাকায় শরীয়তপুরের দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। ওই কারণে মালিক ও শ্রমিকেরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া টার্মিনালে যাত্রীদের চাপও নেই। তাই আপাতত বাস চলাচল বন্ধ আছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে।
জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রসুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল থেকে পদ্মা সেতুর এক কিলোমিটার পশ্চিমে সড়কে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা কিছু নাশকতা করেছেন। আমাদের একটি টহল গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন, একটি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যরা সড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়েছেন। এখন ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।’
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুর ভাঙ্গা উপজেলার সোয়াদীতে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নারী শ্রমিকের প্রতি বৈষম্য আর কত দিন
বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ নারী শ্রমিকদের কাঁধে দাঁড়িয়ে আছে। তৈরি পোশাক, কৃষি, চা–বাগান, গৃহকর্ম, নির্মাণ, হোটেল-রেস্তোরাঁ, এমনকি আইটি বা সেবা খাতেও নারী অগ্রগতি ও টিকে থাকার প্রতীক। অথচ এই নারীরাই কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ বৈষম্যের শিকার। মজুরি, নিরাপত্তা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, নেতৃত্ব বা সামাজিক মর্যাদা—সবখানেই তাঁদের ঘিরে রেখেছে অদৃশ্য দেয়াল।
এই বৈষম্য শুধু লিঙ্গভিত্তিক নয়, এটি শ্রেণি, কাঠামো আর মানসিকতার প্রতিফলন; রাষ্ট্রীয় নীতি, শ্রমবাজার ও সমাজের প্রতিটি স্তরে যা বিদ্যমান।
নারী শ্রমিকদের অবদান ও অবস্থানবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ নারী।
২০১৭ সালে এই হার ছিল মাত্র ৩৬ শতাংশ, অর্থাৎ গত এক দশকে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, কিন্তু তাঁদের কাজের মান ও মর্যাদা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়েনি।
তবে এই ৪৪ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৯৬ দশমিক ৬ শতাংশ নারী অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত (বিশ্বব্যাংক, ২০২৪)। অর্থাৎ তাঁরা কৃষি, গৃহকর্ম, চা-বাগান, গৃহকেন্দ্রিক কাজ, দোকান বা ছোট উৎপাদন ইউনিটে কাজ করেন, যেগুলো শ্রম আইন বা সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আসেনি।
নারীর এই বিশাল অবদান সত্ত্বেও তাঁদের মজুরি, কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনিরাপদ, অনিয়ন্ত্রিত ও অবমূল্যায়িত।
খাতভিত্তিক বৈষম্যের চিত্রতৈরি পোশাক খাত
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাকশিল্প থেকে, যেখানে কাজ করেন প্রায় ৪০ লাখ নারী। কিন্তু একই কাজে পুরুষের তুলনায় নারীরা গড়ে ২১ শতাংশ কম মজুরি পান (আইএলও, ২০২৩)।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির মাঠ জরিপে দেখা যায়, নারী কর্মীদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ কখনো পদোন্নতি পাননি। ৬৮ শতাংশ জানিয়েছেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি নিলে তাঁদের চাকরি ঝুঁকিতে পড়ে।
কৃষি খাতগ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও কৃষিজমির মালিকানায় তাঁদের অংশ মাত্র ১২ শতাংশ (বিবিএস, ২০২৩)। নারী কৃষিশ্রমিকেরা সাধারণত মৌসুমি বা দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন, যেখানে তাঁদের মজুরি পুরুষের তুলনায় গড়ে ৩০ শতাংশ কম। অনেক সময় ‘সহায়তাকারী শ্রম’ হিসেবে নারীর কাজ গৃহস্থালির অংশ ধরা হয়, ফলে তাঁদের কাজের কোনো আর্থিক মূল্য নির্ধারিত হয় না।
গৃহকর্ম খাতবাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ নারী গৃহকর্মীর কাজ করেন (ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স রাইটস নেটওয়ার্ক, ২০২৩)। তাঁদের অধিকাংশেরই কোনো লিখিত চুক্তি নেই, নেই কোনো নির্ধারিত কাজের সময়, দেওয়া হয় না ন্যায্য ছুটি বা মজুরি। শহরের বেসরকারি গৃহকর্মীদের মাসিক গড় আয় ৭ হাজার টাকা, যা জাতীয় ন্যূনতম মজুরির অর্ধেকও না।
কৃষিতে নারী শ্রমিকেরা পুরুষের তুলনায় গড়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পান