বলা হচ্ছে, হালকা আরামের জন্য মাঝেমধ্যে কোমর মোচড়ানোয় তেমন ক্ষতি নেই। তবে প্রায়ই কোমর মোচড়ামুচড়ি করা বা জোর করে এ ধরনের কাজ দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে কোমর মোচড়ানো নিয়ে ২০০৭ সালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। এর শিরোনাম ছিল ‘জার্নাল অব মেনিপুলেটিভ অ্যান্ড ফিজিওলজিক্যাল থেরাপিউটিকস’।

ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়, মেরুদণ্ডে চাপ প্রয়োগ করে নড়াচড়া করানো হলে তাতে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে, অল্প সময়ের জন্য কোমর ও পিঠব্যথা কমতেও পারে। কিন্তু এটা যথাযথভাবে করা না হলে পেশিতে টান পড়তে পারে, এমনকি স্নায়ুতে লাগতে পারে আঘাত।

কোমর মোচড়ানো কীভাবে মেরুদণ্ডের ক্ষতি করে

কোমর মোচড়ালে তা মেরুদণ্ডের বিভিন্ন হাড়ের সন্ধির ভেতর থাকা তরলকে নাড়িয়ে দেয়। এ সময় তরল সরে গিয়ে অস্থিসন্ধির ভেতরে বাতাসের বুদ্‌বুদ তৈরি করে, যা মটমট শব্দ হয়ে আমাদের কানে আসে। পরে তরল সেই শূন্যস্থান পূরণ করে এবং হাড় আবার তার যথাস্থানে ফিরে যায়। কিন্তু সব সময় কি হাড় সঠিক জায়গায় ফিরতে পারে? না-ও তো পারে!

তাই বারবার কোমর মোচড়ানো হালকা আরাম দিলেও এতে পেশিতে টান পড়ে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। এমনকি হাড় যথাযথ জায়গায় না বসে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।

আরও পড়ুনআবহাওয়ার সঙ্গে হাঁটু, কোমর ও বাতের ব্যথার কী সম্পর্ক?২৫ আগস্ট ২০১৭সম্ভাব্য অন্য ঝুঁকি

বোঝা যাচ্ছে, মাঝেমধ্যে কোমর মোচড়ানো ভালো হলেও দীর্ঘ মেয়াদে নিরাপদ নয়। এতে আরও যেসব ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, সেসব হলো—

এতে স্নায়ু চাপ খেয়ে যেতে পারে। ফলে পিঠব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

মাংসপেশি টান খেয়ে ছিঁড়ে যেতে পারে।

লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে হাড় ও অস্থিসন্ধির বাতজনিত অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগ দেখা দিতে পারে।

অনেক সময় ধমনিতে আঘাত লেগে তা ফুলে যেতে পারে। এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

কখন আর কোমর মোচড়াবেন না

আগেই বলা হয়েছে, মাঝেমধ্যে কোমর মোচড়ানো যেতে পারে। কিন্তু কখন বুঝবেন এটা বন্ধ করার সময় হয়েছে?

মোচড়ানোর সময় বা পরে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করলে।

যদি কারও অস্টিওপোরোসিস বা হার্নিয়েটেড ডিস্কের মতো হাড়ক্ষয় বা এ–জাতীয় রোগ থাকে।

এ ছাড়া যথাযথ কৌশল জানা না থাকলে তাঁরও কোমর মোচড়ানোর মতো কাজ করা উচিত নয়।

আরও পড়ুনঘাড় ফোটালে কি স্ট্রোক হতে পারে২১ অক্টোবর ২০২৪কোমর মোচড়ানোর বিকল্প কী

কোমর মোচড়ানোয় অস্বস্তি দূর হয়, আরামও লাগে। কিন্তু এটা যেহেতু নিরাপদ নয়, তবে এসব সুবিধা পেতে বিকল্প কী করা যেতে পারে?

কোমর ও পিঠের হাড় বা মাংসপেশি আস্তেধীরে টেনে হালকা স্ট্রেচিং করা যেতে পারে। এতে শরীরের নমনীয়তা বাড়ে এবং পেশির অস্বস্তি কমায়।

শরীরের মূল মাংসপেশি অর্থাৎ পেট, কোমর ও নাভিকে ঘিরে থাকা পেশিগুলো শক্তিশালী করা। এসব আমাদের শরীরকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে এবং অস্বস্তিও প্রতিরোধ করে।

আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ভঙ্গি ধরে রাখা। অর্থাৎ মাংসপেশি ও হাড়ের ভারসাম্য বজায় রাখা। এটি পেশি টান খাওয়া প্রতিরোধ করে ও জড়তা দূর করে।

মাঝেমধ্যে গরম ও শীতল থেরাপি নেওয়া যেতে পারে। এতে পেশি শান্ত থাকে এবং প্রদাহ কমে।

সর্বোপরি অস্বস্তি বেশি হলে একজন পেশাদার হাড়বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, এই লেখা কোনোভাবেই পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। এখানে শুধু বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

সূত্র: ওয়েব এমডি

আরও পড়ুনঘাড় ঘোরানোর সময় মটমট করে, এটা কি স্বাভাবিক২৯ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বস ত

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় ক্রয়কৃত জমির দখল পেতে খোলা আকাশের নিচে একটি পরিবার

জীবনের শেষ সম্বল ১৬ লাখ টাকা দিয়ে নগরীতে মাত্র ২ শতক জমি কিনেছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. নিজাম উদ্দিন (কালু)। সেখানে একটি ছোট্র দোকান করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু জমি বিক্রেতা সেলিম ও শামীম- এ দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের বলি হন তিনি।

বিক্রেতা সেলিম টাকা নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমালেও খুলনায় থাকা শামীম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কাউন্সিলর ডনকে দিয়ে ব্যবসায়ী কালু ও তার পরিবারকে কাউন্সিলর অফিসে নিয়ে আটকে দোকান-ঘর ভাঙচুর করে রাতারাতি ক্রয়কৃত জমি থেকে তাকে উচ্ছেদ করে।

আরো পড়ুন:

খুবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১৮ ডিসেম্বর

খাবার ও পানি সমস্যায় খুবির ছাত্রী হলে ভোগান্তি চরমে

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর নানা দেনদরবার করেও নিজের জমির দখল না পেয়ে গত ৫ নভেম্বর থেকে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী কালু ও তার স্ত্রী ক্রয়কৃত জমিতে উঠেছেন। কিন্তু সেখানে কোনো ঘর না থাকায় পরিবারটির রাত-দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। দিনে প্রখর রোদ এবং রাতের ঠান্ডায় তারা ঝুঁকির মধ্যে সেখানে অবস্থান করছেন।

এমনকি প্রতিনিয়ত জমি বিক্রেতা সেলিমের ভাই শামীম আহমেদ ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর হুমকি-ধামকির কারণেও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। এ ঘটনায় রবিবার (৯ নভেম্বর) খুলনা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, পরিচিত কেউ এ বিষয়ে কালুর সঙ্গে কথা বলতে গেলেও শামীমের লোকজন তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ছবি তুলে এবং ভিডিও করে রাখছে। এমনকি দেশিয় অস্ত্র নিয়ে কালু ও তার পরিবারকে সেখান থেকে তুলে দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। নিজের ক্রয়কৃত সম্পত্তির দখল বুঝে পেতে এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দিন কালু খুলনা মহানগরীর দোলখোলার ৪৫/১ ইসলামপুর রোড এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। বর্তমানে তিনি কাঁচামালের ব্যবসা করেন। তার স্ত্রী মেরি বেগম ও দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আর ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত।

ভুক্তভোগী কালু অভিযোগ করে জানান, ২০১৭ সালে নগরীর দোলখোলা শীতলাবাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পাশে শেখ মো. সেলিমের কাছ থেকে ৩ বছরের চুক্তি করে দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে গ্যাসের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু চুক্তির ২ বছর হতে না হতেই সেলিম তার দোকানের জায়গা বিক্রির জন্য কালুকে প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে সেলিমের কাছ থেকে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর ২ শতক জমি ১৬ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করে কবলা দলিল করে নেন (দলিল নং-৪২৯৫), যা পরবর্তীতে নিজের নামে রেকর্ডও করেন তিনি। যথারীতি তিনি খাজনাও পরিশোধ করেছেন।

তিনি জানান, তিনি জমি কেনার পর বিক্রেতা সেলিমের ভাই শামিম থানায় তার বিরুদ্ধে জিডি করেন। পরে পুলিশ এসে কালুর কাগজ সঠিক দেখে সেখান থেকে চলে যায়। ২০২১ সালে সেলিমের ভাই শামিম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কেসিসির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর জেডএ মাহমুদ ডনকে দিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে কালুর দোকানঘর ভাঙচুর করে বিপুল অংকের অর্থের মালামাল লুট করে এবং বাইরে ফেলে দেয়। 

তিনি আরো জানান, ওইদিন শামিমের কথামতো ডনের সন্ত্রাসী বাহিনী ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের তুলে তার কাউন্সিলর অফিসে তুলে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে কালুকে ডন প্রশ্ন করে ‘কেন তুমি এ জমি কিনেছো’ এ কথা বলে তাকে হুমকি-ধামকি দেন। এভাবে তাদের জোরপূর্বক নিজস্ব জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।

এদিকে, জমির দখল বুঝে পেতে গত ৫ নভেম্বর থেকে অসহায় কালুর পরিবারটি ওই জমিতে উঠে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। খবর পেয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা তথ্য জানতে গেলে অসহায় কালুর প্রতিপক্ষরা বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি সাংবাদিকরা সেখান থেকে আসার কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী শামিম তার ছেলে ছানিম, ভাগ্নে সেতু ও মিজানসহ ৬-৭ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল চাপাতি হাতে নিয়ে গেটে তালা মেরে কালুর ওপর হামলার চেষ্টা করে। ওই সময় তাদের বসবাসের তাবুও কেটে ফেলে দেয় এবং ওই জমি থেকে সবকিছু নিয়ে বের হয়ে যেতে বলে।

ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দীন কালুর স্ত্রী মেরি বেগম বলেন, “সাংবাদিকরা আমাদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শামিম, তার ছেলে ছানিম, ভাগ্নে সেতু ও মিজান সহ ৬-৭ জন একত্রিত হয়ে দা হাতে নিয়ে গেটে তালা দিয়ে হামলার চেষ্টা করে এবং আমাদের মালামাল সবকিছু নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে বলে। আমাদের এখন নিরাপত্তা দেবে কে?” তিনি তাদের জমি বুঝে পেতে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জমি বিক্রেতা শেখ মো. সেলিমের ভাই মো. শামিম আহমেদ বলেন, “নিজাম উদ্দিন কালু যে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি আদালতে মামলা করেছি। আদালতের মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে জবাব দেওয়া হবে।”

চাপাতি হাতে গেটে তালা দিয়ে হামলার চেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে শামিম সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলেন, “ওদের অত্যাচারে আমরাই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।”

লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা সদর থানার এসআই মো. আশরাফ হোসেন বলেন, “নিজাম উদ্দিন কালু থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/নুরুজ্জামান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঋণ থেকে মুক্তি চান? এই নিয়ম মানুন
  • খুলনায় ক্রয়কৃত জমির দখল পেতে খোলা আকাশের নিচে একটি পরিবার