ডানেডিনের ঠান্ডা সকালের বাতাসে সূর্যটা একটু দেখা দিচ্ছিল বটে। কিন্তু তাপমাত্রা তখনও এক অঙ্কের ঘরে। তবু জ্যাকব ডাফি মুচকি হেসে বললেন, “একদম পারফেক্ট সামারের দিন!” এমন দিনটা আসলেই ছবির মতো সুন্দর, অন্তত দ্রুত বোলারদের কাছে তো বটেই।

ওপাশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা ডাগআউটে মোটা জ্যাকেটে জড়ানো। যারা মাঠে নামলেন, তারা একে একে ফিরে গেলেন। ডাফির আগুনে বোলিংয়ে ধসে গেল পুরো দল। ৪ উইকেট নিয়ে তিনি গড়লেন এক অনন্য কীর্তি; নিউ জিল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে দ্রুত ৫০ উইকেট পাওয়া তৃতীয় বোলার তিনি। আর তার হাত ধরেই কিউইরা ৩-১ ব্যবধানে জিতে নিল সিরিজ।

আরো পড়ুন:

প্রথম সেশনে তিন উইকেট হারিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাংলাদেশ

বিপিএলের নিলামে দেশি খেলোয়াড়দের বাজেট সাড়ে ৪ কোটি

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গেল ১৪০ রানে। পাওয়ার প্লের মধ্যেই ১১ বলের ব্যবধানে হারাল চার উইকেট। উইকেটে ছিল ঘাস, আকাশে মেঘ- সুইং, গতি, বাউন্স; সবকিছুর মেলবন্ধন যেন একেবারে পেসারদের স্বপ্নের পরিবেশ।

তৃতীয় ওভারেই শুরু ডাফির তাণ্ডব। প্রথমে শাই হোপ পুল শটে টপ এজ হয়ে ফিরলেন। পরের বলেই আকিম অগাস্টে, বলটা ভেতরে ঢুকে স্টাম্প উড়িয়ে দিল। এরপর শারফেন রাদারফোর্ড এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটরক্ষকের হাতে।

এটাই ছিল ডাফির ৫০তম টি-টোয়েন্টি উইকেট। মাত্র ৩৮ ম্যাচেই মাইলফলক ছুঁলেন। নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসে ট্রেন্ট বোল্ট (৩৬ ম্যাচ) আর লকি ফার্গুসন (৩৭ ম্যাচ) ছাড়া কেউ এত দ্রুত পারেননি। সাউথল্যান্ডের সন্তান এবার জায়গা করে নিলেন ব্ল্যাকক্যাপ কিংবদন্তিদের পাশে।

একটা জায়গায় অবশ্য এগিয়ে ডাফি। সেটা হলো- অন্তত ২০ উইকেট পাওয়া কিউই বোলারদের মধ্যে ডাফির স্ট্রাইক রেট এখন সবচেয়ে ভালো (১৩.

৮), আর গড়ও দ্বিতীয় সেরা (১৭.০৫)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপ সাধারণত বেশ শক্তিশালী। এই সিরিজেই তারা ছয় উইকেট হারানোর পরও মোট ২৭৭ রান তুলেছিল ১৭৬ স্ট্রাইক রেটে। তাই ৪৭/৪ স্কোরেও তখনো আশার আলো ছিল।

কিন্তু সপ্তম ওভারেই ভরসা হারাল দলটি। অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল, যিনি আগের ম্যাচে প্রায় একা হাতে ২০৮ রানের লক্ষ্য প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিলেন, এবার বেশিক্ষণ টিকলেন না। রোস্টন চেজ ও জেসন হোল্ডার চেষ্টা করেছিলেন একটু স্থিরতা আনতে। ৩৪ বলে ৪২ রানের জুটি। কিন্তু সেই আশাটাও মিলিয়ে গেল মুহূর্তেই; দুজনই পরপর আউট। আর একটু পরেই ম্যাথিউ ফোর্ড ফিরলেন। স্কোরবোর্ড তখন ১৪ ওভারে ৯৪/৮। শেষ পর্যন্ত তারা ১৮.৪ ওভারে ১৪০ রানে অলআউট।

নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটাররাও সহজে রান তুলতে পারেননি। কারণ বল ক্রমেই নড়াচড়া করছিল। তবু লক্ষ্য ছিল ছোট ১৪১। ৬৩ মিটার দুই পাশে বাউন্ডারি। তাই রোমাঞ্চ তেমন একটা ছিল না। তবে তাতে দর্শকদের মন ভরিয়েছেন টিম রবিনসন। মনে হচ্ছিল ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যেন নতুন রূপে ফিরে এসেছেন। কব্জির কৌশল, আগ্রাসী ভঙ্গি, আকাশে বল তোলার নেশা! ২৪ বলে ৪৫ রানের ইনিংসটি ছিল পাঁচ চার ও তিন ছয়ে সাজানো। তবে দিনের শটের পুরস্কার পাওয়া উচিত রোমারিও শেফার্ডের। একদম লং-অন পেরিয়ে, গ্যালারি টপকে, প্রায় ডানেডিনের পুরনো আর্ট গ্যালারির ছাদ ছুঁয়ে চলে গিয়েছিল সেই ছয়!

ডেভন কনওয়ে অবশ্য অন্যধারার ব্যাটিং করলেন; শান্ত, মেপে খেলা। ইনিংসের মাঝেই দেশে নিজের হাজারতম টি-টোয়েন্টি রান পূর্ণ করেন তিনি। শেষে তিনিই জয়ের শটটি মেরে ম্যাচ শেষ করেন ২৬ বল বাকি থাকতে, ৮ উইকেট হাতে রেখে। তাতে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজও জেতা হলো তাদের।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবধ ন উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

শেষ ম্যাচ জিতে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ নিউ জিল্যান্ডের

ডানেডিনের ঠান্ডা সকালের বাতাসে সূর্যটা একটু দেখা দিচ্ছিল বটে। কিন্তু তাপমাত্রা তখনও এক অঙ্কের ঘরে। তবু জ্যাকব ডাফি মুচকি হেসে বললেন, “একদম পারফেক্ট সামারের দিন!” এমন দিনটা আসলেই ছবির মতো সুন্দর, অন্তত দ্রুত বোলারদের কাছে তো বটেই।

ওপাশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা ডাগআউটে মোটা জ্যাকেটে জড়ানো। যারা মাঠে নামলেন, তারা একে একে ফিরে গেলেন। ডাফির আগুনে বোলিংয়ে ধসে গেল পুরো দল। ৪ উইকেট নিয়ে তিনি গড়লেন এক অনন্য কীর্তি; নিউ জিল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে দ্রুত ৫০ উইকেট পাওয়া তৃতীয় বোলার তিনি। আর তার হাত ধরেই কিউইরা ৩-১ ব্যবধানে জিতে নিল সিরিজ।

আরো পড়ুন:

প্রথম সেশনে তিন উইকেট হারিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাংলাদেশ

বিপিএলের নিলামে দেশি খেলোয়াড়দের বাজেট সাড়ে ৪ কোটি

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গেল ১৪০ রানে। পাওয়ার প্লের মধ্যেই ১১ বলের ব্যবধানে হারাল চার উইকেট। উইকেটে ছিল ঘাস, আকাশে মেঘ- সুইং, গতি, বাউন্স; সবকিছুর মেলবন্ধন যেন একেবারে পেসারদের স্বপ্নের পরিবেশ।

তৃতীয় ওভারেই শুরু ডাফির তাণ্ডব। প্রথমে শাই হোপ পুল শটে টপ এজ হয়ে ফিরলেন। পরের বলেই আকিম অগাস্টে, বলটা ভেতরে ঢুকে স্টাম্প উড়িয়ে দিল। এরপর শারফেন রাদারফোর্ড এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটরক্ষকের হাতে।

এটাই ছিল ডাফির ৫০তম টি-টোয়েন্টি উইকেট। মাত্র ৩৮ ম্যাচেই মাইলফলক ছুঁলেন। নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসে ট্রেন্ট বোল্ট (৩৬ ম্যাচ) আর লকি ফার্গুসন (৩৭ ম্যাচ) ছাড়া কেউ এত দ্রুত পারেননি। সাউথল্যান্ডের সন্তান এবার জায়গা করে নিলেন ব্ল্যাকক্যাপ কিংবদন্তিদের পাশে।

একটা জায়গায় অবশ্য এগিয়ে ডাফি। সেটা হলো- অন্তত ২০ উইকেট পাওয়া কিউই বোলারদের মধ্যে ডাফির স্ট্রাইক রেট এখন সবচেয়ে ভালো (১৩.৮), আর গড়ও দ্বিতীয় সেরা (১৭.০৫)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপ সাধারণত বেশ শক্তিশালী। এই সিরিজেই তারা ছয় উইকেট হারানোর পরও মোট ২৭৭ রান তুলেছিল ১৭৬ স্ট্রাইক রেটে। তাই ৪৭/৪ স্কোরেও তখনো আশার আলো ছিল।

কিন্তু সপ্তম ওভারেই ভরসা হারাল দলটি। অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল, যিনি আগের ম্যাচে প্রায় একা হাতে ২০৮ রানের লক্ষ্য প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিলেন, এবার বেশিক্ষণ টিকলেন না। রোস্টন চেজ ও জেসন হোল্ডার চেষ্টা করেছিলেন একটু স্থিরতা আনতে। ৩৪ বলে ৪২ রানের জুটি। কিন্তু সেই আশাটাও মিলিয়ে গেল মুহূর্তেই; দুজনই পরপর আউট। আর একটু পরেই ম্যাথিউ ফোর্ড ফিরলেন। স্কোরবোর্ড তখন ১৪ ওভারে ৯৪/৮। শেষ পর্যন্ত তারা ১৮.৪ ওভারে ১৪০ রানে অলআউট।

নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটাররাও সহজে রান তুলতে পারেননি। কারণ বল ক্রমেই নড়াচড়া করছিল। তবু লক্ষ্য ছিল ছোট ১৪১। ৬৩ মিটার দুই পাশে বাউন্ডারি। তাই রোমাঞ্চ তেমন একটা ছিল না। তবে তাতে দর্শকদের মন ভরিয়েছেন টিম রবিনসন। মনে হচ্ছিল ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যেন নতুন রূপে ফিরে এসেছেন। কব্জির কৌশল, আগ্রাসী ভঙ্গি, আকাশে বল তোলার নেশা! ২৪ বলে ৪৫ রানের ইনিংসটি ছিল পাঁচ চার ও তিন ছয়ে সাজানো। তবে দিনের শটের পুরস্কার পাওয়া উচিত রোমারিও শেফার্ডের। একদম লং-অন পেরিয়ে, গ্যালারি টপকে, প্রায় ডানেডিনের পুরনো আর্ট গ্যালারির ছাদ ছুঁয়ে চলে গিয়েছিল সেই ছয়!

ডেভন কনওয়ে অবশ্য অন্যধারার ব্যাটিং করলেন; শান্ত, মেপে খেলা। ইনিংসের মাঝেই দেশে নিজের হাজারতম টি-টোয়েন্টি রান পূর্ণ করেন তিনি। শেষে তিনিই জয়ের শটটি মেরে ম্যাচ শেষ করেন ২৬ বল বাকি থাকতে, ৮ উইকেট হাতে রেখে। তাতে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজও জেতা হলো তাদের।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ