চীন সীমান্তের পাশে নতুন বিমানঘাঁটি স্থাপন করেছে ভারত
Published: 13th, November 2025 GMT
চীনের সঙ্গে বিতর্কিত হিমালয় সীমান্তের কাছে যুদ্ধবিমান পরিচালনার জন্য সক্ষম একটি নতুন বিমানঘাঁটি স্থাপন করেছে ভারত। বুধবার ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান একটি সামরিক পরিবহন বিমানে অবতরণের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ভারতীয় একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আরো পড়ুন:
রাশমিকাকে বিজয়ের চুম্বন, ভিডিও ভাইরাল
শেখ হাসিনার গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকার নিয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব
প্রতিবেদনে বলা হয়, পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে দীর্ঘদিনের সামরিক উত্তেজনা কমাতে গত অক্টোবরে একটি ‘মাইলফলক’ চুক্তি এবং চলতি বছর নরেন্দ্র মোদির চীন সফরের পর সম্পর্কের উন্নতির মধ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, বিমানবাহিনী প্রধান এপি সিং বুধবার লাদাখের মুধ-নিওমা বিমান ঘাঁটিতে সি-১৩০জে বিমানের মাধ্যমে উদ্বোধনী অবতরণ করেন। এটি প্রায় ১৩ হাজার ফুট (৪ হাজার মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত।
ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
নতুন বিমানঘাঁটি চীনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি এই অঞ্চলে ভারতের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ভারতের অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল সঞ্জীব কাপুর প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করে এক্স-পোস্টে বলেছেন, “লাদাখের এই নতুন বিমানঘাঁটি, যা যুদ্ধবিমান পরিচালনার জন্য সক্ষম- আমাদের উভয় প্রতিপক্ষের জন্যই নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত করবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, চীনেরও একই উচ্চতায় একটি বিমানঘাঁটি রয়েছে।
ভারতীয় বিশ্লেষক এবং কর্মকর্তারা বলছেন, চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা কমলেও অবিশ্বাস রয়ে গেছে। ভারতীয় সেনাপ্রধান এ বছর উভয় পক্ষের সীমান্তে সৈন্য উপস্থিতি এবং অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছেন।
ভারত ও চীনের মধ্যে ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি দুর্বল সীমানা রয়েছে। ১৯৫০ সাল থেকে এই সীমান্ত নিয়ে বিতর্ক চলছে। ১৯৬২ সালে তারা একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু নৃশংস যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
২০২০ সালে একটি মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষের পর সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশ সরাসরি ফ্লাইট এবং দ্বিমুখী ভ্রমণ পুনরায় শুরু করেছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আদম (আ.) এবং তাঁর সন্তানেরা
আল্লাহর নবী হজরত আদম (আ.) মানবজাতির প্রথম পিতা, যাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ-তাআলা পৃথিবীতে মানুষকে প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করেন। কোরআনে বর্ণিত আছে, আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেছিলেন, ‘আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি।’ (সুরা বাকারা, ৩০)
মানবসভ্যতার প্রথম অধ্যায় তাই শুরু হয় আদম (আ.)-এর অবতরণ থেকেই। ইসলামি ঐতিহ্য অনুসারে, তাঁর জীবনের সূচনা জান্নাতে এবং অবতরণ পৃথিবীতে। পরে সেই পৃথিবীতেই তাঁর বংশধরেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং গড়ে ওঠে মানবসমাজের প্রথম ভিত্তি।
আদম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে অবতরণের পর আল্লাহ তাঁদের সন্তান দান করেন। পবিত্র কোরআনে সন্তানদের সংখ্যা উল্লেখ নেই, তবে ইসলামি ইতিহাসবিদ ইমাম ইবনে কাসির উল্লেখ করেন, হাওয়া (আ.)-এর প্রতি গর্ভে এক পুত্র ও এক কন্যা জন্ম নিত।
এভাবে মোট চল্লিশটি যুগল সন্তান পৃথিবীতে এসেছিল। সেই হিসাবে আদম (আ.)-এর সন্তানের সংখ্যা প্রায় ৮০। ইমাম ইবনে কাসির যদিও এই মত উল্লেখ করার পর বলেছেন, এসব মতামত প্রাচীন ইসরাইলীয় বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে পাওয়া। (ইবনে কাসির, কিসাসুল আম্বিয়া, অধ্যায় ‘আদম (আ.)’; তাবারি, তারিখ আল-উমাম ওয়াল মুলুক)
আরও পড়ুনহজরত আদম (আ.) এবং পৃথিবীতে তাঁর প্রথম আবাস০৫ নভেম্বর ২০২৫প্রথম দিকের মানবসমাজ নদী ও উর্বর ভূমির আশপাশে বসতি গড়ে তোলে। দজলা ও ফুরাত নদীর তীর, সিন্ধু উপত্যকা ও মিসরের নীল নদ অঞ্চলই মানবসভ্যতার প্রথম কেন্দ্র হয়ে ওঠে।আদম (আ.)-এর সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দুই পুত্র ছিলেন কাবিল ও হাবিল। তাঁদের কাহিনি মানবেতিহাসে প্রথম ট্র্যাজেডি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি তাদের কাছে আদমের দুই পুত্রের কাহিনি বর্ণনা করো...!’ (সুরা মায়িদাহ, ২৭-৩১)
কাবিল নিজের ভাই হাবিলকে হত্যা করে মানবেতিহাসের প্রথম রক্তপাত ঘটায়। ইসলামি ঐতিহ্যে বলা হয়, হাবিল ছিলেন ধার্মিক ও বিনয়ী, আর কাবিল ছিলেন ঈর্ষাপরায়ণ। হত্যার পর আল্লাহ কাবিলকে একটি কাকের মাধ্যমে কবর দেওয়ার শিক্ষা দেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়েই মানবসমাজে পাপ ও অনুশোচনার ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। (সুরা মায়িদাহর ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাসির ও ইমাম কুরতুবি)
হাবিলের মৃত্যুর পর আদম (আ.) গভীর শোকে আচ্ছন্ন হন। কিছু সময় পর আল্লাহ তাঁকে এক নতুন সন্তান দান করেন, যার নাম রাখা হয় শিশ বা শিথ। ইসলামি বর্ণনা অনুযায়ী তিনি নবী হিসেবেও পরিচিত। আদম (আ.) মৃত্যুর আগে শিশ (আ.)-কে তাঁর উত্তরসূরি ও নবুওয়তের ধারক হিসেবে মনোনীত করেন।
শিশ (আ.)-এর ওপর আল্লাহ তাওহিদের শিক্ষা ও নির্দেশনা নাজিল করেন, যা তাঁর বংশধরদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁকে আদম (আ.)-এর ‘সত্য উত্তরাধিকারী’ বলা হয়। (ইবনে কাসির, কিসাসুল আম্বিয়া; ইমাম তাবারি, তারিখ আল-উমাম ওয়াল মুলুক; ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানসুর)
শিশ (আ.)-এর যুগে মানুষ সংগঠিত জীবনযাপনের কৌশল শিখতে থাকে। ইসলামি ইতিহাসে বলা হয়, তিনি তাঁর জনগণকে কৃষি, বয়নশিল্প এবং গণনা ও সময় পরিমাপের জ্ঞান দিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই আদম (আ.)-এর পরবর্তী প্রজন্ম প্রথমবারের মতো স্থায়ী জনপদ গড়ে তোলে।
আরও পড়ুনহজরত আদম (আ.) বিশ্বের প্রথম নবী০৭ জানুয়ারি ২০২৫আজকের পৃথিবীর সব জাতি ও ভাষা আদম (আ.)-এর এই বংশধরদের থেকেই উদ্ভূত। তাদের হাতে গড়ে ওঠা প্রাচীন সমাজগুলোই মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু ও মিসরের প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করে।এই প্রজন্মের কিছু অংশ বসতি স্থাপন করে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণে, কিছু শাম (সিরিয়া-ফিলিস্তিন) অঞ্চলে এবং কিছু ইরাক ও ব্যাবিলন এলাকায়। এখান থেকেই মানবসমাজের প্রাথমিক সম্প্রসারণ শুরু হয়। (ইমাম তাবারি, তারিখ আল-উমাম ওয়াল মুলুক; ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া; আল-মাসউদী, মুরুজুয যাহাব)
আদম (আ.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধরেরা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রথম দিকের মানবসমাজ নদী ও উর্বর ভূমির আশপাশে বসতি গড়ে তোলে। দজলা ও ফুরাত নদীর তীর, সিন্ধু উপত্যকা ও মিসরের নীল নদ অঞ্চলই মানবসভ্যতার প্রথম কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন তাফসিরকার ও ইতিহাসবিদ বলেন, নুহ (আ.)-এর আগপর্যন্ত মানুষ তাওহিদ একনিষ্ঠ ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা আদম ও শিশ (আ.)-এর ধার্মিক অনুসারীদের অতিরিক্ত শ্রদ্ধা করতে শুরু করে, যা পরে মূর্তিপূজায় পরিণত হয়। এই বিচ্যুতিই ছিল নবী নুহ (আ.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির ঐতিহাসিক ভূমিকা। (ইবনে কাসির, তাফসির আল-কোরআনুল আজিম; ইমাম কুরতুবি, তাফসিরে সুরা নুহ)
আজকের পৃথিবীর সব জাতি ও ভাষা আদম (আ.)-এর এই বংশধরদের থেকেই উদ্ভূত। তাদের হাতে গড়ে ওঠা প্রাচীন সমাজগুলোই মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু ও মিসরের প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করে।
আরও পড়ুননবী ইবরাহিম (আ.) ও চারটি পাখি১৭ জুন ২০২৫