শেখ হাসিনাসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে অগ্নিসংযোগ, যানবাহন পোড়ানো, ককটেল ফাটানো ও আতঙ্ক তৈরির ঘটনা ঘটেছে। বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এরই মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। দেশের রাজপথে উত্তেজনা আর মানুষের মনে অনিশ্চয়তা—এটাই এখন বাস্তবতা।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় কবে হবে, সেটি আজ ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করার কথা রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। ট্রাইব্যুনাল গত ২৩ অক্টোবর এটি জানিয়েছিলেন। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এবং অনলাইনে এই কর্মসূচির পক্ষে নানা রকম প্রচার চালানো হয়।
৮ নভেম্বর থেকে গত কয়েক দিনে ঢাকাসহ কিছু জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গত সোমবার দিবাগত রাতে ময়মনসিংহে একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়; এতে একজন মারা যান, দুজন গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া ঢাকার একাধিক স্কুল এবং গ্রামীণ ব্যাংকে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ রকম অবস্থায় রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়, রাস্তায় চেকপোস্ট বসানো হয় এবং লোকজনের চলাচল কমে আসে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষে আইনগতভাবে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করার সুযোগ নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যখন সড়ক অবরোধ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, তখন সেটা আর কর্মসূচি নয়—সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ফৌজদারি অপরাধ। প্রশ্ন হচ্ছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা কোনো দল কীভাবে এমন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারল? এই পরিস্থিতিতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার?
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঠেকাতে ৯ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, লকডাউন ঠেকাতে সারা দেশে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের বেশ কিছু নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী মাঠে মোতায়েন করা হয়েছে; রাজধানীতে বড় পরিসরে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্রসংগঠনগুলোও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে—তারা লকডাউন প্রতিরোধ করবে। এ রকম অবস্থায় জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি ক্লাসের বদলে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংস কার্যক্রম ও হুমকি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক পথ এসেছে, বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। কিন্তু সহিংসতার মাধ্যমে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের সংস্কৃতি যদি এখনো বজায় থাকে, তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক বিষয় হবে। সহিংস কর্মসূচিকে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
লকডাউন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা প্রশমনের দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। যারা অগ্নিসংযোগ বা ককটেল নিক্ষেপ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে প্রত্যাশা, শক্তি প্রয়োগ হতে হবে আইনসংগতভাবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন দ র কর রক ষ ক র র জন ত ক ককট ল আওয় ম অপর ধ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
‘ঢাকা লকডাউন’ ঘিরে অস্থিরতার আশঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপ
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ঘোষিত ১৩ নভেম্বরের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে কোনো অস্থিরতার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ওই দিন ঢাকাসহ সারা দেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকবে বলেও তিনি জানান।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা মাঠে কঠোর অবস্থানে থাকবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা সহ্য করা হবে না। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, “যদি কোথাও সন্দেহজনক কাউকে দেখা যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”
সরকার কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ছাড় দেবে না হুঁশিয়ারি করে তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীদের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। যারা আগুন-সন্ত্রাসে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক সময় দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা সহজে জামিন পেয়ে যায়। আমরা আদালত সংশ্লিষ্টদেরও অনুরোধ করব এমন অপরাধে অভিযুক্তদের সহজে যেন জামিন না দেওয়া হয়।”
তিনি আরো বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জনগণের সহযোগিতা সবচেয়ে জরুরি। সরকারের একার পক্ষে সব জায়গায় নজরদারি সম্ভব নয়, তাই নাগরিক সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
ঢাকা/এএএম/ইভা