রাজধানী ঢাকা সবচেয়ে বেশি অভিবাসনের চাপের মুখে পড়লেও উপকূলীয় অঞ্চলের উপজেলা সদরগুলোই অভিবাসীদের নতুন জীবন ও জীবিকার প্রথম গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এসব অভিবাসীর কারণে দেশের উপকূলীয় নগরাঞ্চলে অতিরিক্ত জনচাপ সৃষ্টি হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা, বিশেষ করে টেকসই নগর অর্জনের পথে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি এসব শহরের জন্য বাড়তি সংকট সৃষ্টি করছে।
শিরীন খাতুনের বাড়ি ছিল সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত গাবুরায়। প্রতিবছর ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের শিকার এ এলাকায় শিরীনের পরিবার বেশ কয়েকবার দুর্যোগের কবলে পড়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তিন বছর আগে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন সাতক্ষীরা শহরের কুকরালি বস্তিতে। শিরীন বলেন, ‘ভিটামাটি ছেড়ে সাতক্ষীরায় এসেছি কাজ করে ভালো থাকব বলে। পুরো বর্ষাকাল বসবাস করতে হয়েছে পানির মধ্যে। শহরেও কাজ নেই বললে চলে।’
একই এলাকার রোকেয়া খাতুন থাকেন শহরের ইটেগাছা বস্তিতে। তিনি বলেন, ‘নদীভাঙনে ঘরবাড়ি চলে যাওয়ার পর শহরে এলাম একটু ভালো থাকার জন্য। এখানে এসে পানির মধ্যে থাকতি হচ্ছে বছরের ছয় মাস। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা পেলি সেখানে চলে যাতাম।’
সাতক্ষীরা পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ৩১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভায় বর্তমানে লোকসংখ্যা ২ লাখের কিছুটা বেশি। ২০১১ সালের জরিপে লোকসংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার। উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজন ঘরবাড়ি ও কাজ হারিয়ে সাতক্ষীরা শহরে আশ্রয় নিচ্ছেন। বর্তমানে পৌর এলাকায় গড়ে উঠেছে ৪৭টি বস্তি। প্রতিটি বস্তিতে ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার বসবাস করে।
সাতক্ষীরার বস্তিবাসীর সমস্যা নিয়ে কাজ করেন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি। এর আহ্বায়ক আজাদ হোসেন বলেন, ঘরবাড়ি ছেড়ে একটু ভালো থাকার আসায় সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন বস্তিতে এসে উঠেছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। কিন্তু তাঁরা ভালো নেই। বস্তিগুলোয় বসবাসের পরিবেশ নেই। বর্ষার সময় তলিয়ে থাকে। কাজেরও অভাব। তাঁরা দুবেলা পেট ভরে খেতেও পারেন না।
একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারিয়ে উপকূলীয় জেলা খুলনা ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। কেউ খুলনা নগরীতে, কেউ রাজধানীতে, আবার কেউ কেউ চলে গেছেন পার্বত্য এলাকায়।সাতক্ষীরা শহরে নারকেলতলার মোড় থেকে বড় বাজার কিংবা নিউমার্কেট মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার পথ। এটুকু পথে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যেতে অধিকাংশ সময় এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। ফুটপাত না থাকায় হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই। শহরের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক শহীদ নাজমুল সরণি। পৌর ভবনের সামনের এ সড়কের খোয়া বের হয়ে যাওয়ায় গাড়িও চলতে পারে না ঠিকমতো। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় নাকে রুমাল দিয়ে চলতে হয়। মানুষ যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলেন।
শিরীন খাতুন কিংবা রোকেয়া খাতুনের মতো মানুষের সংখ্যা দেশের উপকূলে বাড়ছে। একেবারে নদী বা সাগরের কাছের জনবসতি থেকে উদ্বাস্তু হয়ে অনেকেরই ঠাঁই হচ্ছে উপকূলের শহরাঞ্চলে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জীবিকা হারানো এবং একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় অভিবাসন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৭১ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ১ কোটি ৩৩ লাখ।
ঝুঁকির মুখে ২২ শহর
‘ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি অ্যান্ড রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ইন লো লাইং কোস্টাল সিটিজ অব বাংলাদেশ ইউজিং অ্যানালিটিক হায়ারার্কিক প্রসেস’ নামের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় ২২টি শহরের ঝুঁকির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব ওয়াটার অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ নামের সাময়িকীতে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল গবেষকের এই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই ঝুঁকির প্রকৃত প্রভাব মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে কতটা হুমকির মুখে ফেলে, তা সংখ্যা দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়।
২২ বিঘা জমিতে চিংড়িঘের, বড় মুদিদোকান, সুন্দরবনের মাছ ও মধুর ব্যবসা, সঙ্গে পাকা ঘর—সব মিলিয়ে সুখী পরিবার ছিল তাঁর। কিন্তু আইলার জলোচ্ছ্বাস মুহূর্তেই মুছে দেয় তাঁর সুখের পৃথিবী। নদীর বাঁধ ভেঙে সবকিছু তলিয়ে যায়—ভিটামাটি, ব্যবসা, এমনকি পূর্বপুরুষের কবরও।গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল জলবায়ুজনিত, পরিবেশগত ও সামাজিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের জটিল সমস্যার মুখোমুখি। কার্যকর কৌশল নির্ধারণে বহুমাত্রিক বিপদঝুঁকি মূল্যায়ন, জলবায়ু-সহনশীল জীবিকাব্যবস্থা উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর শাসনব্যবস্থার সমন্বয় প্রয়োজন, যা দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে। শহরাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে, সেই বিষয় গবেষণায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
মানুষের ভোগান্তি, সংখ্যায় যার প্রকাশ হয় না
খুলনার কয়রার জোড়শিং গ্রামের মোবারক হোসেনের জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে ২০০৯ সালের ২৫ মের ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। মোবারক একসময় ছিলেন এলাকার সম্পন্ন গৃহস্থ। ২২ বিঘা জমিতে চিংড়িঘের, বড় মুদিদোকান, সুন্দরবনের মাছ ও মধুর ব্যবসা, সঙ্গে পাকা ঘর—সব মিলিয়ে সুখী পরিবার ছিল তাঁর। কিন্তু আইলার জলোচ্ছ্বাস মুহূর্তেই মুছে দেয় তাঁর সুখের পৃথিবী। নদীর বাঁধ ভেঙে সবকিছু তলিয়ে যায়—ভিটামাটি, ব্যবসা, এমনকি পূর্বপুরুষের কবরও।
পরদিনই পরিবার নিয়ে খুলনা শহরে আশ্রয় নেন মোবারক। শুরু হয় অচেনা শহরে টিকে থাকার সংগ্রাম। হয়রানি, প্রতারণা, অনাহার আর অবহেলায় কেটে যায় বহু বছর। তবু জীবন থেমে থাকেনি। ১৬ বছর পর তিনি এখন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় নতুন করে গড়ে তুলেছেন আশ্রয়। টিনের ছাউনি আর বেড়ার সেই ছোট্ট ঘরটিই এখন তাঁর বেঁচে থাকার আবাস। তীব্র ক্ষতি আর বেদনার ভেতর থেকেও তিনি নিজের জন্মভিটা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে খুঁজে নিতে বাধ্য হয়েছেন নতুন করে বাঁচার অবলম্বন।
কয়রার খেওনা গ্রামের হায়দার আলী গাজী, মেঘারাইট গ্রামের ইসমাইল সরদারসহ অনেকেই আইলার পর বসতবাড়ি হারিয়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। উদ্বাস্তু এসব মানুষের কেউ চালাচ্ছেন রিকশা, কেউ ঠেলাগাড়ি, কেউবা ভ্যান।
একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারিয়ে উপকূলীয় জেলা খুলনা ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। কেউ খুলনা নগরীতে, কেউ রাজধানীতে, আবার কেউ কেউ চলে গেছেন পার্বত্য এলাকায়। পেশা পরিবর্তন ও পেশা হারিয়েছেন বহু মানুষ। যাঁরা এলাকায় রয়েছেন, তাঁদের টিকে থাকতে হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে।
গত ১৯ বছরে খুলনা উপকূলে আঘাত হেনেছে আইলা, সিডর, আম্পান, রেমালসহ ১৩টি ঘূর্ণিঝড়। সরকারি ও বেসরকারি সমীক্ষা অনুযায়ী, আইলার পর খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ এলাকা ছেড়েছেন। ২০০৯ সালের আইলার পর প্রায় ৫ লাখ মানুষ উপকূলীয় অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যার মধ্যে বহু মানুষ এখনো নিজের গ্রামে ফিরে যেতে পারেননি।
২০টি জেলা নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল। মোট এলাকা প্রায় ৯ হাজার ৩৮০ বর্গকিলোমিটার। উপকূলীয় জেলার বেশির ভাগ শহর সমুদ্রের ওপরে প্রায় ১ দশমিক ২ থেকে সাড়ে ৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় শহরগুলো তাদের জটিল নদী, খাল, নদীর মোহনা ও ম্যানগ্রোভ বনের জন্য পরিচিত।
এ গবেষণার জন্য ১০টি উপকূলীয় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নগরায়ণ প্রক্রিয়া ও ঝুঁকির মধ্যে থাকা ২২টি উপকূলীয় শহরকে বেছে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে নদী, জোয়ার এবং পলির অব্যাহত সঞ্চারণ এ অঞ্চলকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছে। ঘূর্ণিঝড়, মৌসুমি বন্যা ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলীয় শহরগুলোর ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
কীভাবে ক্ষতি নিরূপণ
জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত আন্তসরকারি প্যানেল (আইপিসিসি) দুর্বলতা মূল্যায়নে কয়েকটি সূচক বিবেচনা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সংবেদনশীলতা, অভিযোজন সক্ষমতা, প্রকটতা এবং দুর্যোগ। সংবেদনশীলতার মধ্যে আছে জনসংখ্যার ঘনত্ব, নারী-পুরুষের অনুপাত, প্রতিবন্ধী মানুষের অনুপাত এবং ঘরবাড়ির ধরন। অভিযোজন সক্ষমতা নির্ণয়ে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে শিক্ষার হার, পানির ব্যবস্থা, স্যানিটেশন-সুবিধা ও পরিবহনের সুবিধা।
প্রকটতার বিষয়টির ক্ষেত্রে মানুষের সংখ্যা, কৃষি ও উপকূলীয় এলাকায় উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয় বিচার করা হয়েছে। আর দুর্যোগের ক্ষেত্রে ভাঙনের হার, ঝোড়ো হাওয়া বা জলোচ্ছ্বাসের গভীরতা, বাতাসের গতিবেগ এবং একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির হার।
সামাজিক-অর্থনৈতিক সূচকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশের স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইয়ারবুক থেকে। এর বিপরীতে, ভৌত সূচকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন মডেল, স্যাটেলাইট চিত্র, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে। পাশাপাশি বেশি ঝুঁকির এলাকাগুলোয় দলভিত্তিক আলোচনা এবং জরিপ করা হয়েছে।
ঝুঁকি মূল্যায়ন থেকে দেখা যায়, দুর্বলতা কম থাকা কিছু শহরের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি; আবার দুর্বলতা বেশি থাকা কিছু শহরের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। এর কারণ, কোন অঞ্চলে বিপদ ও প্রকটতার উপাদানগুলো কতটা উপস্থিত বা অনুপস্থিত, তার ওপর ভিত্তি করে ঝুঁকির মাত্রার পার্থক্য হয়।কোন শহর কত ঝুঁকিতে
উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বারবার ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙার কারণে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে নদীর লোনা পানি। পরে বাঁধ মেরামত করা হলেও মাটিতে থেকে যায় লবণাক্ততা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বেড়িবাঁধ কেটে বা ছিদ্র করে চিংড়িঘের তৈরি করা হয়। এতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বসতভিটা হারানো ছাড়াও গবাদিপশু মারা যায়, বনজ ও ফলদ সম্পদ উজাড় হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমের নানা স্থানে এমন চিত্র প্রতিনিয়ত দেখা যায়।
দুর্যোগ মোকাবিলায় কোন অঞ্চলের মানুষ কতটা অক্ষম, তার ওপর ভিত্তি করে গবেষণায় দুর্বলতা ও ঝুঁকি সূচক তৈরি করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, চালনা, মোরেলগঞ্জ, কুয়াকাটা, চর ফ্যাশন, লালমোহন, কলারোয়া, পাথরঘাটা, বোরহানউদ্দিন এবং পাইকগাছা উপজেলা শহরগুলো অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বা ‘অতি দুর্বল’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, নলছিটি, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী, ভেদরগঞ্জ, জানজিরা, বাকেরগঞ্জ এবং স্বরূপকাঠি উপজেলা শহরগুলো মাঝারি দুর্বলতার শ্রেণিতে রয়েছে। বেতাগী, গৌরনদী, ঝালকাঠি সদর, বাগেরহাট সদর, বানারীপাড়া ও পটুয়াখালী সদর তুলনামূলকভাবে কম দুর্বল শ্রেণির আওতায়। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভবিষ্যতেও চালনা ও মোরেলগঞ্জের দুর্বলতা সূচক অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ঝুঁকি মূল্যায়ন থেকে দেখা যায়, দুর্বলতা কম থাকা কিছু শহরের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি; আবার দুর্বলতা বেশি থাকা কিছু শহরের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। এর কারণ, কোন অঞ্চলে বিপদ ও প্রকটতার উপাদানগুলো কতটা উপস্থিত বা অনুপস্থিত, তার ওপর ভিত্তি করে ঝুঁকির মাত্রার পার্থক্য হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে চালনা, পাথরঘাটা, মেহেন্দিগঞ্জ, মোরেলগঞ্জ, মুলাদী, কলারোয়া এবং কুয়াকাটা অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ভেদরগঞ্জ, বেতাগী, নলছিটি, চর ফ্যাশন, পাইকগাছা, বোরহানউদ্দিন, স্বরূপকাঠি ও বাকেরগঞ্জ মাঝারি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে ঝালকাঠি সদর, লালমোহন, জাজিরা, বাগেরহাট সদর, গৌরনদী, বানারীপাড়া ও পটুয়াখালী সদর কম ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে রয়েছে।
কিছু শহরের অবস্থানগত শ্রেণিবিভাগ পরিবর্তিত হয়েছে; যেমন—পাথরঘাটা, মোরেলগঞ্জ ও পাইকগাছা তুলনামূলকভাবে নিম্নশ্রেণিতে নেমে গেছে। ভবিষ্যতে চালনা, বাগেরহাট সদর ও গৌরনদীর ঝুঁকি সূচক একই থাকতে পারে।
এ ছাড়া বাগেরহাট সদর, পাইকগাছা, বানারীপাড়া ও গৌরনদীর দুর্বলতা সূচক ভবিষ্যতে যথাক্রমে ৮ শতাংশ, ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, ১২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ১১ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ২২টি উপকূলীয় শহরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হার হিসেবে ধরা হয়েছে।
আট সমস্যা শহরগুলোর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে
অর্থনৈতিক অবস্থা : ভোলার চরফ্যাশনের নাজেম উদ্দিন বরিশাল শহরের এক ব্যস্ত সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান। একসময় তাঁর সংসার চলত চাষের জমি ও নদীর মাছ ধরে। কিন্তু মেঘনার ভাঙনে জমিজমা বিলীন হয়ে যাওয়ায় জীবিকার সন্ধানে তিনি শহরমুখী হন। স্ত্রী-সন্তানেরা এখনো থাকেন গ্রামের বাড়িতে, আর নাজেম থাকেন বরিশাল শহরের এক বস্তির মেসে, যেখানে আরও পনেরজন রিকশাচালক একসঙ্গে থাকেন। সরকারের নতুন দারিদ্র্য মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে, এখন সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য উপকূলীয় এলাকা বরিশাল বিভাগে।
কিছু শহরের অবস্থানগত শ্রেণিবিভাগ পরিবর্তিত হয়েছে; যেমন—পাথরঘাটা, মোরেলগঞ্জ ও পাইকগাছা তুলনামূলকভাবে নিম্নশ্রেণিতে নেমে গেছে। ভবিষ্যতে চালনা, বাগেরহাট সদর ও গৌরনদীর ঝুঁকি সূচক একই থাকতে পারে।বরিশাল শহরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, আর তার সঙ্গে বাড়ছে যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ। বছর পাঁচেক আগেও শহরে ছিল সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা, বর্তমানে তা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। চালকদের বড় অংশই ভোলা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠির মতো উপকূলীয় জেলা থেকে আসা শ্রমজীবী মানুষ।
এভাবে বরিশাল কিংবা খুলনার বিভিন্ন এলাকায় দারিদ্র পরিস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব দীপঙ্কর রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্য দেখি মানুষের ভোগ, অভিবাসন, বেকারত্ব এসব নিরিখে। উপকূলীয় অঞ্চলের অব্যাহত দুর্যোগ দারিদ্র্য পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।’
লবণাক্ততা ও পানীয় জলের সংকট : মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার কারণে পানীয় জলের প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে, চাষযোগ্য জমি নষ্ট হচ্ছে, এমনকি অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে অনেক কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে চিংড়ি ধরার কাজে যুক্ত হয়েছেন। চাষযোগ্য জমি কমে যাওয়ায় অনেকে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন, যা সারা বছরের পেশা নয়।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে পাইকগাছা, চালনা ও মোরেলগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণ প্রবেশ করায় পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। বাগেরহাট সদরে কিছু পানীয় জল সরবরাহ করা হলেও তা চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়। নিরাপদ পানি না পাওয়ায় পানিবাহিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চালনা ও মোরেলগঞ্জের মানুষ অনেক দূরের পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করেন—গ্রীষ্মকালে তাঁদের ২-৩ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়। সুসংগঠিত পুকুরের অভাব পানীয় জলের সংকট আরও বাড়িয়ে তুলছে।
উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। সাধারণত পানিতে লবণাক্ততা ৫ ডিএস/মিটারের বেশি হলে তা সেচের অযোগ্য হয়ে যায়। অথচ মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের জরিপে দেখা যায়, গত বছর এপ্রিলে কয়রা খালের পানিতে লবণাক্ততা ছিল ৪২ দশমিক ৯ ডিএস/মিটার—যা সমুদ্রের পানির (৫০ ডিএস/মিটার) কাছাকাছি। রূপসা নদীতে লবণাক্ততা ২৩ দশমিক ৭ অথচ ২০২৩ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৫৬, পাইকগাছার শিবসা নদীতে ৩৫ দশমিক ৯, আগে ছিল ২৬ দশমিক ৬৪, মোংলার পশুর নদে ৩৩ দশমিক ৩ এবং বাগেরহাটের দড়াটানায় ২২ দশমিক ৮ ডিএস/মিটার।
মাটির লবণাক্ততাও উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে। চলতি বছরের মার্চে ডুমুরিয়ার গুটুদিয়ায় ৫ দশমিক ৯৭, ফুলতলা-বটিয়াঘাটায় ৫ দশমিক ৮৪, মোংলার দিগরাজে ১২ দশমিক ২ ও পাইকগাছা মৎস্য খামার ৫ দশমিক ৯৮ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা রেকর্ড করা হয়।
কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হড্ডা গ্রামের বাসিন্দা আমেনা বেগমের চোখে লবণপানির ঘের যেন অভিশাপ। তিনি বলেন, ‘এই লবণঘেরের কারণে আমাদের বাড়ির জমির গাছপালা লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। আগে নদীর পানি বাঁধের বাইরে থাকত, এখন ঘেরের মাধ্যমে সরাসরি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।’
নদীর পলি ভরাট ও ভাঙন : ঘনবসতিপূর্ণ ও জমি-সংকটাপন্ন এই শহরগুলোতে নদীভাঙন এক বড় অভিশাপ। ভাঙনের ফলে মানুষকে বারবার স্থানান্তরিত হতে হয়। নদীর তলদেশ পলিতে ভরাট হয়ে যায়, ফলে জোয়ারের সময় নিয়মিত প্লাবন ঘটে। কপিলমুনির কবাদাক নদ আগের গভীরতা ও প্রশস্থতা হারিয়েছে। সাম্প্রতিক খনন কার্যক্রমে নদের স্রোতের গতি বেড়েছে। কিন্তু শিবসা, চুনকুড়ি, রূপসা ও পাঙ্গুচি নদীর বাঁকগুলোয় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গাবতলা গ্রামের পাঙ্গুচি নদীর তীরে বহু জমি ও সড়কের অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। রূপসা নদীর তিনটি বাঁধ ইতিমধ্যে ভেঙে গেছে এবং চতুর্থটিও ঝুঁকিপূর্ণ। চালনা ও মোরেলগঞ্জের রিটেইনিং ওয়াল ও বাঁধের সুরক্ষা কাঠামোগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল।
জলাবদ্ধতা : উপকূলীয় শহরগুলোয় জলাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা, বিশেষ করে বাজার ও নিচু এলাকায়। বর্ষাকালের তিন-চার মাসে সামান্য বৃষ্টিতে বা জোয়ারের সময় অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। মোরেলগঞ্জের কৃষি ব্যাংক রোড, কুঠিবাড়ি, বয়রা বাজারের আশপাশের গ্রামগুলোয় নিয়মিত জলাবদ্ধতা হয়। মোরেলগঞ্জ বাজার দিনে দুবার ২-৩ ঘণ্টা করে জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকে। চালনার আসাভুয়া গ্রাম ও উপজেলা কার্যালয়ের পাশে আবাসিক এলাকাগুলোতেও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির সামান্য পানিতেও জলাবদ্ধতা হয়। বাগেরহাট সদরে সঠিক পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকে। এই জলাবদ্ধতা মানুষের দৈনন্দিন চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার কাজে বড় বাধা সৃষ্টি করে।
পয়োনিষ্কাশন সমস্যা : সুনির্দিষ্ট পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার অভাবই জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। প্রায় সব এলাকায় ঝড় বা বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। অনেক ড্রেন অতি সরু বা বন্ধ হয়ে গেছে। চালনা ও মোরেলগঞ্জের আবাসিক এলাকায় কোনো ড্রেন নেই, আর খালগুলো পলিতে ভরাট। বাগেরহাট সদরে রাহাতের মোড়, মুনিগঞ্জ ও সাধনার মোড় থেকে নদীর দিকে যেসব ড্রেন রয়েছে, সেগুলো সরু ও বর্জ্যে ভরা। ডোরাতানা সেতুর পাশের খালও বন্ধ হয়ে গেছে। মোরেলগঞ্জের শেরেস্তার ব্রিজ ও মূল বাজার এলাকার ড্রেনগুলো ছোট ও অপ্রতুল, ফলে ভারী বৃষ্টিতে পানি জমে যায়। নিয়মিত পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা আরও অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা : বেশির ভাগ শহরেই কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ বা ব্যবস্থাপনার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। বাগেরহাট সদরে খুব সীমিত আকারে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়, তবে তা অপর্যাপ্ত। অন্যান্য শহরে কোনো সংগ্রহব্যবস্থা বা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান নেই। ফলে মানুষ বর্জ্য যত্রতত্র ফেলে, যা শেষ পর্যন্ত ড্রেন ও খালে জমে যায়। এই বর্জ্যের কারণে পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয় এবং পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। প্লাস্টিক ও অজৈব বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ায় এসব বর্জ্য সহজে নষ্ট হয় না, ফলে শহরের প্রাকৃতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে।
খালের পলি ভরাট : সব শহরেই খালের পলি ভরাট ও মৃতপ্রবাহ এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো বর্জ্য ফেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও খনন না হওয়া। চালনা শহরের আসাভুয়া, গৌরখালী ও বারইখালী খাল পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। বাগেরহাট সদরের সরকারি পিসি কলেজ, যদুনাথ স্কুল ও মুনিগঞ্জ সেতুর পাশের খাল প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ। মোরেলগঞ্জে খালের সংখ্যা অপর্যাপ্ত, ফলে বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। নব্বইরশি বাসস্ট্যান্ডের খাল পুরোপুরি বন্ধ, সেখানে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। শেরেস্তার ব্রিজ ও কামারপট্টি এলাকার খালগুলোরও একই অবস্থা। তবে চালনার ফায়ার সার্ভিসের পাশের খালটি কার্যকরভাবে চলছে বলে এলাকায় জলাবদ্ধতা নেই। একইভাবে বারইখালী ও ভৈজুরা এলাকার খালগুলোও সক্রিয় এবং কৃষিকাজে সেচের জন্য সহায়ক।
স্লুইসগেট সমস্যা : সব উপকূলীয় শহর—যেমন পাইকগাছা, চালনা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদর—জোয়ার-ভাটার নদীর তীরে অবস্থিত। তাই স্লুইসগেট বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি ব্যবস্থাপনা ও নদী-সমভূমির সংযোগ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু ভাঙা ও অকার্যকর স্লুইসগেটগুলো শহরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ফলে ভারী বৃষ্টিপাত বা জলোচ্ছ্বাসের সময় নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে এবং কৃষি ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। চালনার বারইখালী এলাকার স্লুইসগেট পুরোপুরি ভেঙে গেছে, মানুষ কাঠ দিয়ে সেটি বন্ধ করে রেখেছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পুরোনো স্লুইসগেটগুলোর প্রস্থও খুব সীমিত, যা বর্তমান পানিপ্রবাহ সামলানোর জন্য যথেষ্ট নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানিপ্রবাহের মাত্রা ও ঘনত্ব বাড়ায় এই সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠবে।
কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া ও কয়রা—এই তিন নদ-নদীর ১৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ঘেরা খুলনার কয়রা উপজেলা। সম্প্রতি দেখা গেছে, কয়রা উপজেলায় পাউবোর বেড়িবাঁধে চার শতাধিক স্থানে বাঁধ ছিদ্র করে অথবা কেটে পাইপ বসিয়ে চিংড়িঘেরে নদীর নোনাপানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কোথাও আবার বাঁধের দুই ধারে মোটা পাইপের সঙ্গে নলকূপ লাগানো। বাঁধের এক পাশে নদী, অন্য পাশে চিংড়িঘের।
অবকাঠামোগত দুর্বলতা : দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানিতে রাস্তা, কালভার্ট ও ড্রেনের ক্ষতি হচ্ছে। চালনার গৌরখালী খালের পাশের রাস্তা ও বারইখালী গ্রামের কালভার্টের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত। সিডর ও রেশমা ঘূর্ণিঝড়ে (২০০৭ ও ২০০৮) চালনার গ্যাস কোম্পানি ও জাহাজঘাট এলাকার রাস্তা ভেঙে যায়, যা এখনো মেরামত করা হয়নি। বাগেরহাটের রাহাতের মোড় ও সাধনার মোড়ের রাস্তাগুলো কয়েকবার উঁচু করা হলেও পয়োনিষ্কাশন না থাকায় আবারও ডুবে গেছে। মাজার খালের স্লুইসগেট ভেঙে গেছে এবং মুনিগঞ্জ সেতুর পাশের স্লুইসগেট অকার্যকর। দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় রাস্তার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে, ফলে রাস্তা ও কালভার্টগুলো দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। যেকোনো দুর্যোগে এই দুর্বল অবকাঠামোগুলো সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এলাকার দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা আরও কমিয়ে দেবে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কল্যাণ ব্যানার্জি, সাতক্ষীরা; এম জসীম উদ্দীন, বরিশাল)
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও ম র লগঞ জ র উপক ল য় এল ক দ শ র উপক ল র স ল ইসগ ট ড এস ম ট র জল চ ছ ব স র দ র বলত য স গ রহ পর স থ ত র ব যবস দশম ক ৯ উপক ল য প থরঘ ট শহর র ঝ ক র যকর ৫ দশম ক প ইকগ ছ শহরগ ল বর জ য নদ র ব হয় ছ ন প রব হ র জন য এল ক য এল ক য় বর শ ল নদ র ত পর ব র এল ক র বস ত ত উদ দ ন র ওপর আইল র সমস য অবস থ গ রনদ সরক র ঘরব ড় ক ষমত জলব য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গোপনে শিল্পপতি জয়কে বিয়ে করেছিলেন জুহি
বলিউড অভিনেত্রী জুহি চাওলা তখন তাঁর ক্যারিয়ারের শীর্ষে। ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তাক’, ‘ডর’, ‘হাম হ্যায় রাহি প্যায়ার কে’, ‘ইশক’-এর মতো সুপারহিট সিনেমায় অভিনয় করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলেছেন। ঠিক তখনই জুহি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি গোপনে বিয়ে করবেন। পাত্র কে, তা তো বুঝতেই পারছেন। ব্যবসায়ী জয় মেহতা। এরপর জুহি ও জয়ের একই ছাদের নিচে বসবাসের ৩০ বছর পেরিয়ে গেছে।
জয় মেহতা সব সময়ই মিডিয়াবিমুখ মানুষ। বলিউডের এক জনপ্রিয় তারকাকে বিয়ে করেও তিনি কখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হতে চাননি; কিন্তু জুহির সঙ্গে বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে জয়ের বিপুল সম্পদ ও ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য নিয়ে জনমনে যেন কৌতূহলের শেষ নেই। আজ ৫৭ পেরিয়ে ৫৮ বছরে পা রাখলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জুহি চাওলা। জন্মদিনে চলুন জেনে নিই জুহি আর জয়ের প্রেমের গল্প:
জুহি ও জয়ের প্রেমকাহিনি
বিয়েতে রাজি হওয়ার আগে জয়কে নাকি এক বছর অপেক্ষা করিয়েছিলেন, এক সাক্ষাৎকারে জুহি এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিয়ের আগে জয় প্রতিদিন আমাকে চিঠি লিখত। বিয়ের পর সেই অভ্যাস বন্ধ হয়ে যায় (হাসি)। তখন চিঠি আর কার্ডের যুগ ছিল, এখন সব ই–মেইল আর হোয়াটসঅ্যাপে চলে এসেছে। আমরা এক ডিনারে দেখা করেছিলাম। তার পর থেকেই সে আমার আশপাশে ঘুরঘুর করত। একবার আমার জন্মদিনে সে এক ট্রাক ভর্তি লাল গোলাপ পাঠিয়েছিল। আর আমি তাকে “হ্যাঁ” বলতে এক বছর সময় নিয়েছিলাম।’