ঘণ্টা দুয়েক আগে হাসিঠাট্টা করা মানুষটাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটছি সেকেন্ডের হিসাব করে
Published: 15th, November 2025 GMT
বিয়ের কেনাকাটা করতে আব্বু ও ছোট বোন বৃষ্টি ঢাকায় আমার বাসায় এসেছে। তখনো আমি রাস্তায়, অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম, ফিরছি। তাই আমার হাজব্যান্ডকে (রাকিব) ফোন করে বলি, ‘বাবাকে নিয়ে খেয়ে ফেলো।’
রাত দুইটায় বাসায় ঢুকে দেখি, রাকিব ছাড়া সবাই ঘুমাচ্ছে। পরদিন একটা ওয়ার্কশপের জন্য সে অনলাইন মিটিং করছে। ওকে ঘুমানোর তাড়া দিই। সাংসারিক আলাপের ফাঁকে ঠাট্টাচ্ছলে তাকে উৎসব সিনেমার ‘কিপটা জাহাঙ্গীর’ বলতেও ভুলি না। তারপর ঘুমিয়ে পড়ি।
ভোর পাঁচটার দিকে হঠাৎ আমাকে ডেকে তুলে রাকিব বলে, ‘বুকে ব্যথা করছে, তোমার কাছে কি ওষুধ আছে?’
ওষুধ খাওয়ানোর পরও ব্যথা কমে না। ডাক্তারের কাছে যেতে চাই, সে চায় না। দুজনই চ্যাটজিপিটি ও জেমিনিকে দিয়ে লক্ষণ মেলানোর চেষ্টা করি, মেলে না। ব্যথা বাড়লে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে হাসপাতালে যেতে রাজি হয় ও।
জরুরি বিভাগে পৌঁছালে ফার্মেসি থেকে আমাকে চারটি ওষুধ আনতে দেন ডাক্তার।
দ্রুত ওষুধ কিনে আনি। খাওয়ানোর পর রাকিবকে ইসিজি করতে পাঠানো হয়। রিপোর্ট দেখে ডাক্তারদের কানাঘুষা করতে দেখি। তারপর দ্রুত আমাদের জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যেতে বলেন এক ডাক্তার। কী মনে করে পেছনে ফিরে ডাক্তারদের দিকে তাকাই। তাঁদের একজন আমাকে বলেন, ‘ওনাকে কথা কম বলতে দেবেন, দাঁড় করিয়ে রাখবেন না।’
ডাক্তারের শঙ্কিত চোখ আমাকে আরও অনেক কিছু বলে। আমি বৃষ্টিকে ফোন করে কেঁদে ফেলি, ‘আব্বুকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে আয়।’
আমার তখনো ভাবতে অবাক লাগছিল, ঘণ্টা দুয়েক আগে হাসিঠাট্টা করা মানুষটাকে নিয়ে ছুটছি সেকেন্ডের হিসাব করে। আমার কাছে রাস্তার হিসাব, সময়ের হিসাব বেশি মনে হয়। প্রতিটি মুহূর্ত মনে হচ্ছিল, এক্ষুনি সব মুহূর্ত ছবি হয়ে যাবে! স্মৃতি হয়ে যাবে! কিছুতেই আমি এটা মানতেই পারছিলাম না।
আমার ছোট ছেলেটার মুখ মনে ভেসে উঠছিল। এখনো সে এত ছোট। ২০১৭ সালে ঠিক এ রকম এক বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের ছেলে তীহানকে নিয়ে দৌড়াতে হয়েছিল। আমার সেই বান্ধবীর কথা মনে পড়ছিল, যার জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না। কতটা সংগ্রাম করে তারা এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে জীবন যাপন করার চেষ্টা করে। কিছু একটা আঁকড়ে ধরে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চায়। মন থেকে সব অশুভ চিন্তা দূর করতে আয়াতুল কুরসি পড়তে থাকি এবং তখনই আমার মনে হয়, এখনো আমাদের একসঙ্গে অনেক গান শোনা বাকি, এখনো পড়া হয়নি অনেক বই, দেখা হয়নি কত সিনেমা। ছেলেকে সঙ্গে করে ঘোরা হয়নি অনেক জায়গা, এখনি চলে যাওয়ার সময় কোনোভাবেই এটা না।
হাসপাতালে ডাক্তার দেখে বললেন, ‘হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, এখনই সিসিইউয়ে নিতে হবে।’
সিসিইউয়ে নার্স জানালেন, ম্যাসিভ অ্যাটাক, এনজিওগ্রাম বা এসটিকে ইনজেকশন দিতে হবে, ঝুঁকি আছে।
ইনজেকশনের অনুমতি দিলাম। কাঁদতে কাঁদতে ওষুধ নিয়ে ফিরে এলে টেকনিশিয়ান ভাই বললেন, ‘মনে হয় কাজ হচ্ছে।’
দ্রুত তাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে স্থানান্তর করি। সেখানে পৌঁছালে ডাক্তার বলেন, ‘আল্লাহর শুকরিয়া, ৩০ শতাংশ রোগী পথে মারা যায়। আপনারা সময়মতো এনেছেন।’
এনজিওগ্রাম করার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় শুধু বললাম, ‘এত তাড়াতাড়ি তো হার মানব না বন্ধু, সাহস রাখো।’
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার জানালেন, ‘এক জায়গায় শতভাগ ব্লক, আরেকটিতে সামান্য, দুটি রিং পরানো হয়েছে।’
শঙ্কা কমলে বিকেলে সিসিইউয়ে রাকিব বলল, ‘তুমিও তো সারা রাত ঘুমাওনি!’
হাসি পেল, আর একটু হলে সারা জীবনের ঘুম উধাও করে দিচ্ছিল, এখন খবর নিচ্ছে এক রাতের ঘুমের!
আপনিও লিখুনপ্রিয় পাঠক, আপনিও লিখুন ‘ছুটির দিনে’র নিয়মিত বিভাগ ‘জীবন যেমন’–এ। লিখে জানাতে পারেন জীবনের কোনো সুখ–স্মৃতি, রোমাঞ্চ–জাগানিয়া ঘটনা, উত্থান–পতন, পাওয়া না–পাওয়ার গল্প।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
প্র ছুটির দিনে, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন
২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা–১২১৫
ই-মেইল: [email protected]
ফেসবুক পেজ: fb.
খামের ওপর বা ই–মেইলের subject-এ লিখুন ‘জীবন যেমন’।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৬ হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে আমির হামজার শোভাযাত্রা
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় ৬ হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রা করেছেন কুষ্টিয়া-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমির হামজা।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে নিজের নির্বাচনি এলাকায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেন তিনি। পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন আমির হামজা।
তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতসহ আট দল রাজপথে আন্দোলন করছে। আশা করব, যারা দায়িত্বে আছেন তারা দাবি মেনে নেবেন। সরকারে যারা আছেন তারা এত মানুষের সেন্টিমেন্ট যদি না বোঝেন, তবে দায়িত্বে থাকা ঠিক নয়।’’
আমির হামজা বলেন, “আমরা যেখানে গেছি, সেখানকার মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে সালামের জবাব দিয়েছে। আশা করছি, এভাবে এগোতে পারলে আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে দাঁড়িপাল্লা বিজয়ী হবে।’’
ঢাকা/কাঞ্চন/রাজীব