চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্রিয়তা মাত্রাতিরিক্ত
Published: 15th, November 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধিকার নেই বলে মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দিতে সরকারের সক্রিয়তা মাত্রাতিরিক্ত—এমন অভিযোগ করে তারা বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনাল নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে, বন্দরের মতো কৌশলগত সম্পদ নিয়ে চুক্তি করার আগে চুক্তির শর্ত প্রকাশ করতে হবে, সর্বজনের সম্মতি লাগবে।
আগামী নির্বাচনে যে সংসদ গঠিত হবে, সেখানে ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের মধ্যে কমিশনভোগীদের জাতীয় স্বার্থবিরোধী অপতৎপরতা বন্ধ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যথাযথ বিচার এবং সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে মনোযোগ দিক—এই দাবি জানিয়ে কমিটি বলেছে, এর অন্যথা দেশের মানুষ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। কমিটির পক্ষে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আইনজীবী শফি উদ্দিন কবির আবিদ, নারীনেত্রী সীমা দত্ত ও চিকিৎসক হারুন উর রশীদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, সন্দেহজনক তাড়াহুড়া, অনিয়ম এবং গোপনীয়তার মাধ্যমে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি, একই সঙ্গে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল এবং পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে চুক্তি-প্রক্রিয়া সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সম্পন্ন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী, সিদ্ধান্ত গ্রহণ–প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ এবং এটা অস্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এর সঙ্গে বন্দর ব্যবহারকারীদের কোনোভাবেই যুক্ত করা হয়নি। নিউমুরিং টার্মিনাল নিয়েও একই রকম অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া দেখা যাচ্ছে।’
দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তাড়াহুড়া, অনিয়ম এবং গোপনীয়তার সঙ্গে করতে অন্তর্বর্তী সরকার কেন এত ব্যস্ত, সেই প্রশ্ন তুলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) সরকারের পরামর্শক হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা ও লালদিয়া টার্মিনালের কনসেশন চুক্তি তৈরিতে কাজ করছে। তাদেরই পরামর্শে আগে আওয়ামী লীগ সরকার, বর্তমানে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরকার বন্দরের টার্মিনালগুলো বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার আয়োজন করছে, তাদেরই পরামর্শে বন্দরে সম্প্রতি ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল, লালদিয়ার চর ও পানগাঁও বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র আইএফসির পরামর্শ কেন সরকার অনুসরণ করবে, দেশের ব্যবহারকারী ও বিশেষজ্ঞসহ বাকি কারও কথাই কেন সরকার শুনবে না—সেই প্রশ্নও তুলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলেছে, ‘দেশে দেশে বিশ্বব্যাংক বা তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএফসির ভূমিকা দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা কোনো দেশের জনস্বার্থ বা জাতীয় স্বার্থ দেখে না। তারা বস্তুত যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থই দেখে। বাংলাদেশে জ্বালানি, পাট, শিক্ষা, চিকিৎসা, পানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের এই ভূমিকার প্রমাণ আছে।’ এ প্রসঙ্গে ১৯৯৯ সালে বলিভিয়ায় কোচাবাম্বা চুক্তি, ২০০৫ সালে ঘানায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বেসরকারীকরণের চুক্তি এবং ১৯৯৭ সালে ফিলিপাইনে পানি খাত ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দিতে দুই কোম্পানির সঙ্গে ২৫ বছরের কনসেশন চুক্তির অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পর্কে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শেখ হাসিনা সরকারের সময় এসব তৎপরতা শুরু হয়েছিল। সেখানে শত শত কোটি টাকার কমিশনভোগীরা এই কাজে উদ্যোগী ছিল। বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এ রকম কমিশনভোগীদের তৎপরতার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র স
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্রিয়তা মাত্রাতিরিক্ত
অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধিকার নেই বলে মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দিতে সরকারের সক্রিয়তা মাত্রাতিরিক্ত—এমন অভিযোগ করে তারা বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনাল নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে, বন্দরের মতো কৌশলগত সম্পদ নিয়ে চুক্তি করার আগে চুক্তির শর্ত প্রকাশ করতে হবে, সর্বজনের সম্মতি লাগবে।
আগামী নির্বাচনে যে সংসদ গঠিত হবে, সেখানে ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের মধ্যে কমিশনভোগীদের জাতীয় স্বার্থবিরোধী অপতৎপরতা বন্ধ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যথাযথ বিচার এবং সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে মনোযোগ দিক—এই দাবি জানিয়ে কমিটি বলেছে, এর অন্যথা দেশের মানুষ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। কমিটির পক্ষে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আইনজীবী শফি উদ্দিন কবির আবিদ, নারীনেত্রী সীমা দত্ত ও চিকিৎসক হারুন উর রশীদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, সন্দেহজনক তাড়াহুড়া, অনিয়ম এবং গোপনীয়তার মাধ্যমে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি, একই সঙ্গে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল এবং পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে চুক্তি-প্রক্রিয়া সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সম্পন্ন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী, সিদ্ধান্ত গ্রহণ–প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ এবং এটা অস্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এর সঙ্গে বন্দর ব্যবহারকারীদের কোনোভাবেই যুক্ত করা হয়নি। নিউমুরিং টার্মিনাল নিয়েও একই রকম অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া দেখা যাচ্ছে।’
দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তাড়াহুড়া, অনিয়ম এবং গোপনীয়তার সঙ্গে করতে অন্তর্বর্তী সরকার কেন এত ব্যস্ত, সেই প্রশ্ন তুলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) সরকারের পরামর্শক হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা ও লালদিয়া টার্মিনালের কনসেশন চুক্তি তৈরিতে কাজ করছে। তাদেরই পরামর্শে আগে আওয়ামী লীগ সরকার, বর্তমানে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরকার বন্দরের টার্মিনালগুলো বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার আয়োজন করছে, তাদেরই পরামর্শে বন্দরে সম্প্রতি ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল, লালদিয়ার চর ও পানগাঁও বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র আইএফসির পরামর্শ কেন সরকার অনুসরণ করবে, দেশের ব্যবহারকারী ও বিশেষজ্ঞসহ বাকি কারও কথাই কেন সরকার শুনবে না—সেই প্রশ্নও তুলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলেছে, ‘দেশে দেশে বিশ্বব্যাংক বা তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএফসির ভূমিকা দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা কোনো দেশের জনস্বার্থ বা জাতীয় স্বার্থ দেখে না। তারা বস্তুত যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থই দেখে। বাংলাদেশে জ্বালানি, পাট, শিক্ষা, চিকিৎসা, পানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের এই ভূমিকার প্রমাণ আছে।’ এ প্রসঙ্গে ১৯৯৯ সালে বলিভিয়ায় কোচাবাম্বা চুক্তি, ২০০৫ সালে ঘানায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বেসরকারীকরণের চুক্তি এবং ১৯৯৭ সালে ফিলিপাইনে পানি খাত ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দিতে দুই কোম্পানির সঙ্গে ২৫ বছরের কনসেশন চুক্তির অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পর্কে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শেখ হাসিনা সরকারের সময় এসব তৎপরতা শুরু হয়েছিল। সেখানে শত শত কোটি টাকার কমিশনভোগীরা এই কাজে উদ্যোগী ছিল। বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এ রকম কমিশনভোগীদের তৎপরতার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।’