বিএনপির নতুন স্লোগান ‘অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়ণ’: আমীর খসরু
Published: 15th, November 2025 GMT
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তারা ক্ষমতায় এলে মেগা প্রকল্প থেকে সরে এসে দক্ষতা উন্নয়ন (স্কিল ডেভেলপমেন্ট) খাতে বিনিয়োগের ওপর জোর দেবেন।
দেশের অর্থনীতিকে কোনো ‘গোষ্ঠী বিশেষের কাছে জিম্মি’ না রেখে এর সুফল প্রতিটি নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিতে বিএনপি ‘অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়ণ’ মডেল গ্রহণ করবে। এটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নতুন স্লোগান।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু এই ঘোষণা দেন।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকালে ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে ফরিদপুর বিভাগের ব্যবসায়ীদের নিয়ে এই সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম।
আমীর খসরু বলেন, “আমরা কোনো মেগা প্রজেক্টের দিকে যাব না, তার চেয়ে স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে জোর দেব। আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হলে বর্তমানে ফলো করা মডেল থেকে বেরিয়ে এসে এমন মডেলে যেতে হবে, যাতে এর সুফল প্রত্যেকটা নাগরিক পেতে পারে।”
বিনিয়োগের প্রধান লক্ষ্য হবে শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “পাশাপাশি বিনামূল্যে জনগণকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। এই লক্ষ্য পূরণে অনেকগুলো নতুন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করতে হবে।”
বিএনপির এই নেতা দেশের ব্যবসায়িক জটিলতা কমাতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অনুমোদনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, “একটা রেস্টুরেন্ট করতে গেলে ১৯টা অনুমতি নিতে হয় বাংলাদেশে। এই অনুমতি নিতে নিতে আর ব্যবসা করা হয়ে ওঠে না। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যেই অনুমোদনের দরকার, সেটি ১৫ দিনের মধ্যে করার ব্যবস্থা করতে হবে।”
“আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ঘুষ-দুর্নীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক ডিসিশনের মধ্যে টাইম ফ্রেম থাকতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সূচির মধ্যে যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে,” বলেন আমীর খসরু।
দেশের পুঁজিবাজার (ক্যাপিটাল মার্কেট) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আমীর খসরু বলেন, “আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট শেয়ারবাজার নিয়ে গেছে। এই ক্যাপিটাল মার্কেটকে বড় করতে আমাদের বিগ প্ল্যান রয়েছে।”
পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব এখন গ্রিন ইকোনমির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিএনপিও সেই ধারা অনুসরণ করবে।
“আমাদের বিনিয়োগগুলো এমন হবে, যেখানে আমাদের টাকা অপচয় হবে না, পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হবে না,” যোগ করেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, ব্যবসাকে সহজ করতে যত আইন, পরিবেশ বদলান এবং বিনিয়োগ বাড়ান দরকার, তার সবকিছুই বিএনপি করবে।
তিনি বলেন, “আমরা আগে থেকেই এসব করে নিচ্ছি, কারণ ক্ষমতায় যাওয়ার পরে এসব করতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। আমরা ডে ওয়ান থেকেই এ কাজ শুরু করতে চাই।”
স্পোর্টস ইকোনমি ও থিয়েটার ইকোনমির মতো পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন আমীর খসরু।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ আগামী ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান তৈরির ওপর জোর দেন।
বিএস জুট মিলের চেয়রাম্যানের বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া প্রচলিত আইনের পরিবর্তন করে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাংক সলভেন্সি সনদকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এসএম ফজলুল হক ঘুষ ছাড়া কাজ না হওয়ার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। ফরিদপুর জুট ফাইবার্সের পরিচালক চৌধুরী ফারিয়ান ইউসুফ জুট সেক্টরের উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন।
সভাপতি শামা ওবায়েদ ইসলাম তার বক্তব্যে ফরিদপুরে যুবকদের জন্য একটি আইটি হাব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের কথা জানান।
ঢাকা/তামিম/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব যবস ব এনপ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বিপদ এখন ইসরায়েলের ভেতরেই
নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা যেখানে খুবই প্রিয়, সেখানে একদিন কঠিন পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়। সত্যকে দমন করতে যে শক্তি একসময় বাইরের সমালোচকদের মুখ চেপে ধরত, সেই শক্তিই এ সময় গ্রাস করতে শুরু করে ‘ভেতরের’ মানুষদেরও। বিশেষ করে বিবেকবানদের।
এমন মুহূর্ত সাধারণত বিস্ফোরণ বা বিদ্রোহের মতো দামামা বাজিয়ে আসে না। আসে নীরবে।
ইসরায়েল এখন এমনই এক মুহূর্তের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। দেশটির সামরিক প্রধান প্রসিকিউটর ইয়িফাত তোমের-ইরুশালমির গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি নাকি এক ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস করেছিলেন। ব্যাপারটা ইসরায়েলের জন্য শুধু আইনি কেলেঙ্কারির বিষয় নয়। সেই ভিডিওর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এমন এক আয়না, যেখানে একটি জাতি নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে।
তোমের-ইরুশালমি কোনো বহিরাগত বা শত্রু ছিলেন না। এই নারী ছিলেন ইসরায়েলের সবচেয়ে সুরক্ষিত কেন্দ্রের অংশ। ছিলেন সেই আইন ও সামরিক কাঠামোর অংশ, যা বহুদিন ধরে নিজেকে জাতীয় অস্তিত্বের রক্ষক বলে মনে করেছে। তবু সেই কেন্দ্রের ভেতর থেকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন মানবিক অবস্থান। বেছে নিয়েছিলেন সহানুভূতি।
আরও পড়ুনযে যুদ্ধে ইসরায়েল হেরে যাচ্ছে২৯ অক্টোবর ২০২৫নিষ্ঠুরতার মুখোশ উন্মোচনের সিদ্ধান্ত ইরুশালমির জন্য কোনো বিদ্রোহ ছিল না। ছিল নৈতিক সাহসের প্রকাশ। আর সেই সাহসের জন্যই তাঁকে শাস্তি পেতে হয়েছে। তাঁর পরিণতি আমাদের সামনে উন্মোচন করেছে এক গভীর সত্য। দেখিয়েছে, সরকার যখন নিয়ন্ত্রণে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তখন সততাকেও তারা ভয় পেতে শুরু করে বিদ্রোহের মতো।
ইসরায়েল, যে দেশ একসময় বাইরের হুমকিতে আতঙ্কিত ছিল, সে দেশ এখন কাঁপছে নিজের অন্তর্নিহিত সত্যের সামনে। যখন সত্যকেই শত্রু মনে করা হয়, তখন জাতির শক্তি ভেতর থেকে ফাঁপা হয়ে যেতে শুরু করে।
দশকের পর দশক ধরে ‘নিরাপত্তা’ ছিল ইসরায়েলের অস্তিত্বের মূল শব্দ। ওই রাষ্ট্রের শুরুর সময়ে এই শব্দের মানে ছিল টিকে থাকা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি পরিণত হয়েছে এক পবিত্র ধারণায়। যার নামে প্রায় সবকিছুকেই বৈধতা দেওয়া যায়। ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা সেখানে হয়ে উঠেছে এক নিষিদ্ধ কাজ (এমনকি রাষ্ট্রের ভেতর থেকেও)।
আরও পড়ুনইসরায়েল এখন শেষ সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো১২ এপ্রিল ২০২৫এই পবিত্রতার ট্র্যাজেডি হলো, এটি এমন এক দেয়াল তৈরি করে, যা শুধু সীমান্তের চারপাশ নয়, জাতির বিবেককেও চারপাশ থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। নিজেদের রক্ষার জন্য যে দেয়াল তোলা হয়, একসময় সেই দেয়াল ভেতরেই দম বন্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
অযাচিত ক্ষমতা একসময় ভুলে যায়, কাদের রক্ষার জন্য সে সৃষ্টি হয়েছিল। যে সহিংসতাকে একসময় ‘আত্মরক্ষা’ বলে মেনে নেওয়া হয়েছিল, তা পরিণত হয় অভ্যাসে। ন্যায় রক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো তখন নিজেদের অস্তিত্ব টেকাতেই হিমশিম খায়।
নৈতিক পুনর্জাগরণের শেষ আশ্রয় যেসব সত্যবাদী, তাঁদেরও চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। এ জন্য নয় যে তাঁরা নিরাপত্তার জন্য হুমকি; বরং তাঁরা হুমকি ভ্রান্ত ধারণার জন্য।
তোমের-ইরুশালমির ঘটনা তেমনই এক ট্র্যাজেডির প্রতীক। যে দেশ নিজেদের ওই অঞ্চলের ‘একমাত্র গণতন্ত্রপন্থী’ বলে দাবি করে, ওই দেশেই সহানুভূতি এখন অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। নির্যাতনের তথ্য প্রকাশ করা হয়ে উঠেছে নির্যাতন করার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক।
ইসরায়েলের নেতারা এখনো গণতন্ত্রের কথা বলেন, বিশৃঙ্খলার মধ্যেও টিকে থাকার দাবি করেন। কিন্তু সেই কথাগুলো এখন ফাঁপা শোনায়। গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলো—বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যম এবং তদারক সংস্থাগুলো নীরবে ক্ষয়ে যাচ্ছে। আদালত এখন দুর্বলদের নয়, রক্ষা করছেন শক্তিধরদের। সংবাদমাধ্যম দ্বিধায় ভুগছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো, যারা একসময় দেশের বিবেক ছিল, তাদের করে ফেলা হয়েছে কোণঠাসা।অধিকৃত এলাকার (পশ্চিম তীর) জনগণকে নিয়ন্ত্রণের জন্য একসময় যে অস্ত্রগুলো তৈরি হয়েছিল, এখন তা ব্যবহার হচ্ছে ভেতরের দিকে। যা আগে ছিল রাজনৈতিক, এখন তা হয়ে উঠেছে মানসিক, সাংস্কৃতিক—এমনকি স্বভাবগত।
যখন সত্য বলা বিশ্বাসঘাতকতা হয়ে যায়, তখন সেই ব্যবস্থা আর শৃঙ্খলা রক্ষা করছে না; বরং নিজস্ব বিকাশের ক্ষমতাকেই শ্বাস রোধ করে ফেলছে।
তোমের-ইরুশালমির গ্রেপ্তারের বার্তাটি যেন পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতিটি করিডরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। যেখানে নীরবতাই আনুগত্য আর সততাই বিশ্বাসঘাতকতা। সহানুভূতির জায়গা দখল নিয়েছে ভয় আর ঐক্যের জায়গা নিয়েছে সন্দেহ। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো হারাচ্ছে বৈধতা, মানুষ হারাচ্ছে আস্থা।
আরও পড়ুননেতানিয়াহু যেভাবে ইসরায়েলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন২৮ আগস্ট ২০২৫এ ক্ষত কেবল রাজনৈতিক নয়, মানবিকও। যেখানে নাগরিকেরা ধীরে ধীরে চোখ ফিরিয়ে নিতে শেখেন; কর্মকর্তারা নিজেকে বোঝান যে তাঁরা কেবল ‘আদেশ মানছেন’; সৈন্যরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে নিষ্ঠুরতাই প্রয়োজন। তখন রক্ষক আর দমনকারীর সীমারেখা মুছে যায়। থেকে যায় এক প্রকার নৈতিকতার নিদ্রা।
ইসরায়েলের নেতারা এখনো গণতন্ত্রের কথা বলেন, বিশৃঙ্খলার মধ্যেও টিকে থাকার দাবি করেন। কিন্তু সেই কথাগুলো এখন ফাঁপা শোনায়। গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলো—বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যম এবং তদারক সংস্থাগুলো নীরবে ক্ষয়ে যাচ্ছে। আদালত এখন দুর্বলদের নয়, রক্ষা করছেন শক্তিধরদের। সংবাদমাধ্যম দ্বিধায় ভুগছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো, যারা একসময় দেশের বিবেক ছিল, তাদের করে ফেলা হয়েছে কোণঠাসা।
শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বিপদ তার সীমান্তের বাইরে নয়; বরং ভেতরে। সহানুভূতি, আস্থা আর বিবেকের অবক্ষয়ই তাদের সবচেয়ে বড় বিপদ। কোনো জাতি যুদ্ধ, একঘরে হয়ে পড়া, কিংবা বিশৃঙ্খলার মধ্যেও টিকে থাকতে পারে। কিন্তু নৈতিক বোধের মৃত্যু ঘটলে কোনো সমাজই টিকে থাকতে পারে না।
আরও পড়ুননেতানিয়াহু ইসরায়েলের ত্রাণকর্তা না ধ্বংসকারী?১৫ এপ্রিল ২০২৪যখন সত্য বলা অপরাধে পরিণত হয়, তখন পতন বিস্ফোরণের শব্দের মতো আসে না। আসে নিঃশব্দে, নীরবতার মাধ্যমে, ভয়ের মধ্য দিয়ে। তখন ম্লান হওয়া শুরু করে সেসব, যা একসময় তারা বিশ্বাস করত।
তোমের-ইরুশালমির গল্প কোনো সাধারণ কেলেঙ্কারি নয়। এটি এক সতর্কবার্তা। এটি দেখায়, যখন একটি জাতি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে নিজের ছায়াকেই বেশি ভয় পায়, তখন কী ঘটে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ক্ষমতার সবচেয়ে বড় শত্রু বিদ্রোহ নয়—জাগরণ।
কারণ, যে শাসনব্যবস্থা মানবতাকে ভুলে যায়, তার পরিণতি একটাই। একসময় সে নিজের অস্ত্রের লক্ষ্য বানায় নিজেকেই। তখন আর শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, মসনদ হারিয়ে ফেলে নিজের আত্মাকেও।
পিটার রজারস কলামিস্ট। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিবিষয়ক লেখক
মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত