দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু থামছে না। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসের প্রথমার্ধে ডেঙ্গুতে ৫৩ জনের মৃত্যু হলো।

আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ৭৯২ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩৪৭ জন। দুই সিটির বাইরে চট্টগ্রাম বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৩৬। সব মিলিয়ে এবার এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ৮৩ হাজার ৮৫৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত মাসে মারা গেছেন ৮০ জন, যা চলতি বছর এখন পর্যন্ত কোনো এক মাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু। গত মাসে ডেঙ্গু নিয়ে সর্বোচ্চ ২২ হাজার ৫২০ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১৫ হাজার ৮৬৬ জন।

চলতি বছরের জুনে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। ওই সময় অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বড় আকারের হতে পারে। কিন্তু সরকার ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে তেমন কোনো জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। গত জুলাই মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা জুনের দ্বিগুণ হয়ে যায়। আগস্টে মৃত্যু ও সংক্রমণ সামান্য কমে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তা আবার বেড়ে যায়। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৫ হাজার ৮৬৬ জন। অক্টোবরে প্রায় সাত হাজার রোগী বেড়েছে।

২০০০ সালে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে মারা যান ৯৩ জন। ঘটনাটি সাধারণ মানুষের কাছে নতুন ছিল। ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত ও মারা যান ২০২৩ সালে। সে বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন তিন লাখের বেশি মানুষ। মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ঙ গ র প রক প জন র ম ত য হয় ছ ল ন

এছাড়াও পড়ুন:

যারা মজলুম ছিল, তারা এখন জালিম হচ্ছে: তথ্য উপদেষ্টা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেনস্তার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নিজেও অনলাইনে ‘বট বাহিনী’র আক্রমণের শিকার হওয়ার কথা বললেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। আগে যারা আক্রান্ত ছিল, তারা এখন আক্রমণকারী হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আজ শনিবার রাজধানীর রমনায় বিস মিলনায়তনে এক গোলটেবিল আলোচনায় এ প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। ‘গণতন্ত্র বিনির্মাণে নারী: আমরা কী পেলাম’ শীর্ষক এই গোলটেবিলের আয়োজক ছিল উইমেন ইন ডেমোক্রেসি (উইন্ড)।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেনস্তার কথা ওঠার পর মাহফুজ আলম বলেন, এমন সংঘবদ্ধ আক্রমণের শিকার তিনি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরাও হচ্ছেন।

মাহফুজ আলম আরও বলেন, ‘কেন একটা মানুষ আমাকে ফেসবুকে গালি দেয় মা–বাবা তুলে? অথচ সে ফেসবুকে দিয়ে রাখছে কোনো ভালো আলেমের ছবি। অথচ সে আমাকে গালি দেয়। এটা তো ইসলামে বলে না। আমি মনে করি, এটা তার দোষ। আমরা এ ধরনের বট বাহিনী মিলিয়ে দেখতেছি।’

এই বট বাহিনী পরিচালনাকারীদের একটি আগে থেকে সুসংগঠিত ছিল এবং আরেকটি এখন সংগঠিত হচ্ছে বলে তথ্য উপদেষ্টার পর্যবেক্ষণ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা নিজেরা আগে মজলুম ছিল, তারা এখন জালিম সাজতেছে। হোয়াই?’

নেপথ্যে থেকে জুলাই অভ্যুত্থান সংগঠনে সক্রিয় থাকা মাহফুজ আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগে ছাত্রনেতারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

‘আমরা গেছিলাম একটা রাজনৈতিক দলের মহাসচিবের কাছে। এরপরে আমরা দেখা করতে গেছি একজন আমিরের সঙ্গে। এরকমভাবে সবার সঙ্গে,’ বলেন তিনি।

সবার মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও পরবর্তীকালে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেন মাহফুজ আলম।

অনেক আশা ছিল, জুলাইয়ের পরে যেই সনদটা হবে, সেই সনদে আমরা নারীদের একটা অবস্থান দেখতে পাব। কিন্তু আশাহত হয়েছিঅধ্যাপক দিলারা চৌধুরী

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার কী করতে পারেনি, সেই প্রশ্ন তোলার আগে সরকার গঠনের প্রথম আট মাস রাজনৈতিক দলগুলো কতটা সহযোগিতা করেছে, সেটা সামনে আনতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ইন্ধনে অথবা ইন্ধন ছাড়া, প্রথম আট–নয় মাসে অন্তত ২০০–এর ওপরে আন্দোলনকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। ওই সময়টা খুবই ভয়ংকর একটা সময় ছিল। ওই সময়ে যখন আমাদের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন নেওয়ার সুযোগ ছিল, তখন আমাদের ব্যস্ত রাখা হয়েছে এই রকম অনেকগুলো ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এখনো দেশে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন হয়নি।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী আরও বলেন, ‘অনেক আশা ছিল, জুলাইয়ের পরে যেই সনদটা হবে, সেই সনদে আমরা নারীদের একটা অবস্থান দেখতে পাব। কিন্তু আশাহত হয়েছি। জুলাই সনদটা ইন্টিগ্রেট হবে কি না, সেটা নিয়েও আমরা হতাশায় রয়েছি।’

দেশের নারীর ক্ষমতায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি লাগবে বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি গোলটেবিলে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছু বদলাবে না। রাজনীতি যাদের হাতে থাকবে, তাদের সহযোগিতা ছাড়া সামাজিক পরিবর্তন আসবে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি মায়ের নামে একটি ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করবে।

গণ–অভ্যুত্থানের আগে ও পরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পুরুষের দখল—একই রকম আছে বলে মন্তব্য করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন করতে হলে সামাজিক কাঠামোর সর্বনিম্ন স্তর থেকে উচ্চতর স্তর পর্যন্ত পরিবর্তন আনতে হবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের মূল বক্তব্য কোনটি হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘ইশতেহারে বক্তব্য যা, বক্তৃতায় প্রধান নেতারা যা বলেন, সেটাই কি একমাত্র পলিটিক্যাল পার্টির বক্তব্য? নাকি সোশ্যাল মিডিয়াতে সাইবার বুলিং, তাদের বিভিন্ন গ্রুপ আসলে যা বলে, সেটা তার আসল চেহারা?’

টিভি উপস্থাপক কাজী জেসিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানী মুনিয়া আমিন; বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী, দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, খান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রোখসানা খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামন্তা শারমিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোশরেফা হক অদিতি, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি মারদিয়া মোমতাজ, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে কারা ভোগকারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা, মানবাধিকারকর্মী তাসলিমা আক্তার, আইনজীবী ফাহিমা নাসরিন, এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ও গার্মেন্টস শ্রমিক পারুল বেগম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ