মানুষ নির্বাচনের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে: খুলনায় আইজিপি
Published: 15th, November 2025 GMT
গত তিনটি নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক ও সমালোচনা রয়েছে মন্তব্য করে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, সেই সমালোচনার বাইরে এসে এবার যেন সফলভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা যায়। অন্তর্বর্তী সরকার চায় এই নির্বাচন সবচেয়ে নিরপেক্ষ, অবাধ-সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর হোক। নির্বাচনে পুলিশ যেন তাঁদের দায়িত্বটা সবচেয়ে ভালো পালন করতে পারেন, সে জন্য বাহিনীর সদস্যরা প্রশিক্ষিত হচ্ছেন। আর মানুষও নির্বাচনের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে।
আজ শনিবার বিকেলে খুলনায় পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে খুলনা পুলিশ লাইনসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইজিপি এসব কথা বলেন। আইজিপি বলেন, ‘পুলিশের যাঁরা কোনো কারণে একসময় বিচ্যুত হয়েছিলেন, তাঁদের আবার আইনের শাসন ও বিধিবিধানের বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের পরিশুদ্ধ করা সম্ভব নয়, এমন বিতর্কিত ব্যক্তিরা যেন নির্বাচনে নেতৃত্বের দায়িত্বে না থাকেন, সেটিও আমরা খেয়াল রাখব।’
৫ আগস্টের পর পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতি সন্তোষজনক নয় বলেও উল্লেখ করেন আইজিপি। তিনি জানান, এসব মামলায় দ্রুত চার্জশিট দেওয়া এবং পলাতকদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মামলায় নির্দোষ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিতেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য ছাড়ানো ও ভুয়া সংবাদ নিয়ে আইজিপি জানান, মিসইনফরমেশন (ভুল তথ্য), ডিসইনফরমেশন (ভুল তথ্যের ইচ্ছাকৃত ব্যবহার) এবং ফেক নিউজ (ভুয়া সংবাদ) এখন বড় উদ্বেগের বিষয়। এসব নিয়ে বিটিআরসিতে লেখা হলে বিটিআরসি সেগুলো মেটার কাছে পাঠায়। মেটা তাদের নিজস্ব কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডে সেগুলো পর্যালোচনা করে। বিটিআরসির পাঠানো প্রায় ১০০টি অনুরোধের মধ্যে মেটা প্রায় ৪০টিতে ব্যবস্থা নেয়, আর প্রায় ৬০টি অনুরোধ গ্রহণ করে না।
কোনোভাবে নির্বাচন ঠেকানো যাবে না মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, ‘মানুষ নির্বাচনকে স্বাগত জানাচ্ছে, নির্বাচনের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে। তাই নানান বিশৃঙ্খলা, বাধাবিপত্তি বা সন্ত্রাসের প্রভাব দিয়ে নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। নির্বাচনটা আমরা করে ফেলতে পারব। ৪৩ হাজার কেন্দ্র, ওরা কয়টা বন্ধ করতে পারবে? ৫০০ কেন্দ্র বন্ধ করলে ৪২ হাজার ৫০০টিতে হবে। ১ হাজার বন্ধ হলেও ৪২ হাজারে হবে। সন্ত্রাসীরা নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। মানুষ এখন নির্বাচনমুখী—এটাই বড় শক্তি।’
বর্তমান পুলিশ নৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে দাবি করে বাহারুল আলম বলেন, ‘আমরা শতভাগ সফল, এটা বলছি না। আগের পুলিশ যেভাবে সামান্য ঘটনায় কাউকে ধরে এনে আটকে রাখত, আদালতকে জানানো হতো না। তিন দিন, এক মাস আটকে রাখা হতো বা ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হতো, সেই অন্যায়–অত্যাচার শক্তিশালী কর্তৃপক্ষের লক্ষণ নয়। সবল সরকার মানুষের ওপর অত্যাচার করে না; অত্যাচার করে দুর্বল সরকার, যার আইনি ভিত্তি নেই, নৈতিক শক্তি নেই। এখন আমরা নৈতিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী।’
অনেকেই পুরোনো অভিজ্ঞতার কারণে পুলিশকে গ্রহণ করতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন আইজিপি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, “এই পুলিশ আমাকে গুলি করেছিল।” কখনো কখনো তারা পুলিশের ওপর হামলায় আসে, আসামি ছিনিয়ে নিতে আসে। আমরা ধৈর্যের সঙ্গে সেটা মোকাবিলা করি। এখন আমরা গুলি করে মানুষ মারি না, জোর করে লাঠিপেটা বা গ্যাস মারি না। সন্ত্রাসী যদি জানে ধরা পড়লে ক্রসফায়ার হবে বা গুম হবে—এই ভয় দিয়ে আমরা সন্ত্রাস দমন করতে চাই না। নিয়মের মধ্য দিয়েই সন্ত্রাস দমন করব। ক্রসফায়ার দিয়ে সন্ত্রাস দমন করতে চাই না।’
ভোটের মাঠে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও কাজের পরিবেশ প্রসঙ্গে আইজিপি বলেন, ‘আগে বাধা দিতাম কেন? ওখানে সিল মারা হতো। সেই সময় আর এই সময় সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাংবাদিকদের কোনো রকম বাধা দেওয়া হবে না। বরং আমরা উৎসাহিত করব আপনারা বারবার কেন্দ্রে আসেন, দেখে যান। উল্টো আপনারাই ক্লান্ত হয়ে যাবেন যে না দেখেছি, আর দেখব না।’
এর আগে আইজিপি খুলনার পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আরআরএফ ও কেএমপিতে চলমান পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ পরিদর্শন করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক ও কেএমপি কমিশনার মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না: জহির উদ্দিন
ছবি: প্রথম আলো