শোবিজের ঝলমলে দুনিয়ায় সাফল্যকে অনেক সময়ই মাপা হয় বিশাল বাজেট, তারকাসমৃদ্ধ কাস্টিং আর বক্স অফিসের আয় দিয়ে। কিন্তু কিছু শিল্পী আছেন, যাঁরা এই প্রচলিত ধারণা বদলে দিচ্ছেন। বলিউডের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ছবিগুলোর মুখ হিসেবে পরিচিত দীপিকা পাড়ুকোন জানিয়েছেন, তিনি এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছেন, যেখানে আর্থিক পরিসর বা বক্স অফিসের মাইলফলক তাঁর সিদ্ধান্তের মূল কারণ নয়; বরং তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন উদ্দেশ্য, সৃজনশীলতা আর সততাকে।

প্রভাস অভিনীত দুটি বহুল আলোচিত ছবি—সন্দীপ রেড্ডি ভঙ্গার ‘স্পিরিট’ ও নাগ অশ্বিনের ‘কল্কি’র সিকুয়েল থেকে সরে দাঁড়ানোর পরই দীপিকার দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তন স্পষ্ট হয়। এক সাক্ষাৎকারে দীপিকা জানান, সংখ্যাটা তাঁর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে না। তিনি বলেন, ‘এই পর্যায়ে এসে আর সেটা নিয়ে ভাবি না। ১০০ কোটি, ৫০০ কোটি কিংবা ৬০০ কোটি—এসব আর আমার মাপকাঠি নয়।’

টাকার চেয়ে সততা জরুরি
দীপিকা বলেন, তিনি এখন প্রকল্প বেছে নেন প্রবৃত্তি ও সততার ভিত্তিতে, পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে নয়। তিনি যোগ করেন, ‘যা আমার সত্য বলে মনে হয় না, তা আমি করি না। কখনো কখনো মানুষ অনেক টাকা অফার করে এবং ভাবে শুধু সেটাই যথেষ্ট—কিন্তু সেটা নয়।’

দীপিকা পাড়ুকোন। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজবাড়ী সরকারি মুরগি প্রজনন খামার জরাজীর্ণ, নষ্ট হচ্ছে কোটির টাকার সম্পদ  

জনবলস্বল্পতা ও সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ রাজবাড়ী সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার। ১৪ জনের বিপরীতে এখানে কর্মরত আছেন ৫ জন। খামারে শুরুর দিকে হ্যাচারি চালু থাকলেও ১৯৯৭ সালে বন্ধ হয়ে যায়। সংস্কারের অভাবে মুরগির বাচ্চা পালনের শেডসহ কর্মচারীদের থাকার ঘরটিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ।

কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রয়োজনীয় জনবলের স্বল্পতা, অর্থ বরাদ্দ না থাকা এবং চাহিদার বিপরীতে নিয়মিত বাচ্চার জোগান দিতে না পারায় ওই সরকারি খামারের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। খামার নামের সঙ্গে ‘প্রজনন’ শব্দটি থাকলেও কার্যক্রম না থাকায় বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব হয় না।

খামার প্রতিষ্ঠার সময় চারটি শেড নির্মাণ ও বাচ্চা পালনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় বছরে ২০ হাজার। দুটি শেড পরিত্যক্ত থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। আবদুল লতিফ, পোলট্রি টেকনিশিয়ান

খামার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাধারণ মানুষের ডিম, মাংসের চাহিদা পূরণ ও বেকারত্ব ঘুচিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮১-৮২ সালে সরকারি হাঁস-মুরগির খামার স্থাপিত হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজবাড়ীর নতুনবাজার বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন প্রায় তিন একর জমিতে ওই খামার স্থাপিত হলেও এখন পর্যন্ত খামারে হাঁস পালন হয়নি। পাঁচ বছর আগে সরকারি আদেশে ‘হাঁস’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার’ লেখা হয়। মুরগির বাচ্চা পালনে চারটি শেড, প্রশাসনিক ভবন, ব্যবস্থাপকের বাসভবন, অতিথি কক্ষ, বিক্রয়কেন্দ্র, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আবাসিক ভবন তৈরি করা হয়। খামার প্রতিষ্ঠার পর হ্যাচারি কার্যক্রম (বাচ্চা ফোটানো) ছিল। অবকাঠামোগত সমস্যায় ১৯৯৭ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়।

জনবলসংকটে কার্যক্রম অনেকটা স্থবির। খামারের ব্যবস্থাপক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. কামাল বাশার স্বাক্ষরিত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদের তালিকা গত বছরের ১২ মে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালকের (উৎপাদন) কাছে পাঠানো হয়। এতে খামার পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার, দুজন পোলট্রি টেকনিশিয়ান, একজন অফিস সহকারী এবং একজন নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন।

এ ছাড়া খামার ব্যবস্থাপকসহ এফএ (ফডার), ইলেকট্রিশিয়ান, ড্রাইভার, পোলট্রি অ্যাটেনডেন্ট, হ্যাচারি অ্যাটেনডেন্ট, নৈশপ্রহরী, এমএলএসএস ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ শূন্য রয়েছে। ব্যবস্থাপকের পদটি এক যুগ ধরে শূন্য। দীর্ঘদিন শূন্যের পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে মো. মেহেদী হাসান যোগদান করেন।

চারদিকে দেয়ালঘেরা খামারের মূল ফটক পেরোলে বাঁয়ে প্রশাসনিক ভবন, ডানে বিক্রয়কেন্দ্রসহ একতলা ও টিনশেডের ১৩টি স্থাপনা। বাচ্চা পালনে চারটির মধ্যে দুটি শেড পরিত্যক্ত থাকলেও সম্প্রতি একটি শেড সংস্কার করা হয়। পানির ট্যাংকের খুঁটিতে ফাটল ধরায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। ব্যবস্থাপকের বাসভবন ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আবাসিক ভবন এবং অপর শেডটি জরাজীর্ণ। মাদকসেবীদের উৎপাত থেকে রক্ষায় পরিত্যক্ত অতিথি কক্ষের দরজায় কাঁটাযুক্ত ডালপালা রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় জেনারেটর, পানির পাম্প, গাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল অকেজো হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি এই খামারে বাজারের তুলনায় অনেক কম দামে মুরগির বাচ্চা পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষ কিনতে আগ্রহী থাকলেও বাচ্চা নিতে এসে অধিকাংশ মানুষ খালি হাতে ফিরে যান। 

পোলট্রি টেকনিশিয়ান আবদুল লতিফ বলেন, খামার প্রতিষ্ঠার সময় চারটি শেড নির্মাণ ও বাচ্চা পালনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় বছরে ২০ হাজার। দুটি শেড দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে গত বছর আরেকটি শেড সংস্কার শেষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০ হাজার ১৫০টি বাচ্চা পালন করা হয়। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ হাজার ৪০৫টি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৫৫০টি পালন হয়। 

পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘জনবলসংকট ও জরাজীর্ণ স্থাপনার কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ১৮ বছর ধরে বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সংস্কার না হওয়ায় তিনটির মধ্যে দুটি শেড প্রায় ১৫ বছর বন্ধ ছিল। সম্প্রতি একটি শেড সংস্কার করা হয়েছে। বছরে ২০ হাজার বাচ্চা পালনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ১৩-১৪ হাজার বাচ্চা পালন করা যায়। অন্য জেলা থেকে বাচ্চা সরবরাহ করতে হয় বলে চাহিদা দেওয়ার পরও নিয়মিত পাই না। শেড সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে পাইনি। ফলে কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, আপাতত হ্যাচারি চালুর পরিকল্পনা না থাকলেও আগামী অর্থবছরে রাজস্ব খাত থেকে জরাজীর্ণ শেড এবং আবাসিক ভবন সংস্কারের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ