মাদুরোর সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত, আবার ভেনেজুয়েলায় সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি ট্রাম্প
Published: 18th, November 2025 GMT
ক্যারিবীয় অঞ্চলে চলমান সংকট নিয়ে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে রাজি আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। তবে লাতিন আমেরিকার দেশটিতে তিনি মার্কিন সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।
যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছুদিন ধরে ভেনেজুয়েলার উপকূল ও লাতিন আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌযানগুলোতে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে আসছে।
তবে নিকোলা মাদুরো বারবার অভিযোগ করেছেন, তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে এসব হামলা চালানো হচ্ছে এবং সেখানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি জোরদার করা হচ্ছে।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে মার্কিন সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, আমি সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না; আমি কোনো সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছি না।’
তবে মাদুরোর সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন কি না—এ প্রশ্নে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, সম্ভবত আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলব। আমি সবার সঙ্গেই কথা বলি।’ সম্ভাব্য মার্কিন হামলা ঠেকাতে মাদুরো কোনো প্রস্তাব দিতে চাইলে, সেসব প্রস্তাবও শোনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এসব কথা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আকর্ষণীয় কোনো প্রস্তাব পেলে তিনি ক্যারিবীয় অঞ্চলে উত্তেজনা কমানোর কথা বিবেচনা করতে পারেন। তবে একই সঙ্গে তাঁর প্রশাসন নাটকীয়ভাবে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সংঘাত উসকে দিতেও প্রস্তুত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, তিনি কলম্বিয়ার কোকেন কারখানাগুলো ধ্বংস করতে চান। তবে সে দেশে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের ঘোষণা দেননি।
আরও পড়ুনভেনেজুয়েলায় সামরিক অভিযানে কী কী ঝুঁকি, জেনে নিলেন ট্রাম্প১৪ নভেম্বর ২০২৫আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন ও কারাকাসের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ক্যারিবীয় সাগরে একের পর এক নৌযানে হামলা শুরু করলে এমন উত্তেজনা শুরু হয়। খুব সম্প্রতি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও হামলা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী এসব নৌযানকে পাচারকারীরা মাদক পাচারের কাজে ব্যবহার করছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি সপ্তাহে ২০তম হামলাটি হয়েছে। সর্বশেষ হামলায় চারজনসহ এসব হামলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ জন নিহত হয়েছেন। বোমা হামলার শিকার নৌযানগুলোতে সত্যিই মাদক বা মাদক কারবারিরা ছিল কি না কিংবা নৌযানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছিল কি না, তা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
এ ছাড়া মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কোনো ধরনের আইনি যুক্তি উপস্থাপন করেননি। বিশেষজ্ঞদের অনেকে একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুনহামলা ঠেকানোর ক্ষমতা কি ভেনেজুয়েলার আছে১৬ নভেম্বর ২০২৫মূলত ওয়াশিংটনের অভিযোগ হলো, মাদুরো মাদকচক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি।
আরও পড়ুনরণতরিসহ ডজনখানেক যুদ্ধজাহাজ ও ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন, ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হামলা কি আসন্ন১৬ নভেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র প রস ত
এছাড়াও পড়ুন:
রাজবাড়ী সরকারি মুরগি প্রজনন খামার জরাজীর্ণ, নষ্ট হচ্ছে কোটির টাকার সম্পদ
জনবলস্বল্পতা ও সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ রাজবাড়ী সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার। ১৪ জনের বিপরীতে এখানে কর্মরত আছেন ৫ জন। খামারে শুরুর দিকে হ্যাচারি চালু থাকলেও ১৯৯৭ সালে বন্ধ হয়ে যায়। সংস্কারের অভাবে মুরগির বাচ্চা পালনের শেডসহ কর্মচারীদের থাকার ঘরটিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ।
কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রয়োজনীয় জনবলের স্বল্পতা, অর্থ বরাদ্দ না থাকা এবং চাহিদার বিপরীতে নিয়মিত বাচ্চার জোগান দিতে না পারায় ওই সরকারি খামারের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। খামার নামের সঙ্গে ‘প্রজনন’ শব্দটি থাকলেও কার্যক্রম না থাকায় বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব হয় না।
খামার প্রতিষ্ঠার সময় চারটি শেড নির্মাণ ও বাচ্চা পালনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় বছরে ২০ হাজার। দুটি শেড পরিত্যক্ত থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। আবদুল লতিফ, পোলট্রি টেকনিশিয়ানখামার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাধারণ মানুষের ডিম, মাংসের চাহিদা পূরণ ও বেকারত্ব ঘুচিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮১-৮২ সালে সরকারি হাঁস-মুরগির খামার স্থাপিত হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজবাড়ীর নতুনবাজার বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন প্রায় তিন একর জমিতে ওই খামার স্থাপিত হলেও এখন পর্যন্ত খামারে হাঁস পালন হয়নি। পাঁচ বছর আগে সরকারি আদেশে ‘হাঁস’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার’ লেখা হয়। মুরগির বাচ্চা পালনে চারটি শেড, প্রশাসনিক ভবন, ব্যবস্থাপকের বাসভবন, অতিথি কক্ষ, বিক্রয়কেন্দ্র, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আবাসিক ভবন তৈরি করা হয়। খামার প্রতিষ্ঠার পর হ্যাচারি কার্যক্রম (বাচ্চা ফোটানো) ছিল। অবকাঠামোগত সমস্যায় ১৯৯৭ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়।
জনবলসংকটে কার্যক্রম অনেকটা স্থবির। খামারের ব্যবস্থাপক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. কামাল বাশার স্বাক্ষরিত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদের তালিকা গত বছরের ১২ মে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালকের (উৎপাদন) কাছে পাঠানো হয়। এতে খামার পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার, দুজন পোলট্রি টেকনিশিয়ান, একজন অফিস সহকারী এবং একজন নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন।
এ ছাড়া খামার ব্যবস্থাপকসহ এফএ (ফডার), ইলেকট্রিশিয়ান, ড্রাইভার, পোলট্রি অ্যাটেনডেন্ট, হ্যাচারি অ্যাটেনডেন্ট, নৈশপ্রহরী, এমএলএসএস ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ শূন্য রয়েছে। ব্যবস্থাপকের পদটি এক যুগ ধরে শূন্য। দীর্ঘদিন শূন্যের পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে মো. মেহেদী হাসান যোগদান করেন।
চারদিকে দেয়ালঘেরা খামারের মূল ফটক পেরোলে বাঁয়ে প্রশাসনিক ভবন, ডানে বিক্রয়কেন্দ্রসহ একতলা ও টিনশেডের ১৩টি স্থাপনা। বাচ্চা পালনে চারটির মধ্যে দুটি শেড পরিত্যক্ত থাকলেও সম্প্রতি একটি শেড সংস্কার করা হয়। পানির ট্যাংকের খুঁটিতে ফাটল ধরায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। ব্যবস্থাপকের বাসভবন ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আবাসিক ভবন এবং অপর শেডটি জরাজীর্ণ। মাদকসেবীদের উৎপাত থেকে রক্ষায় পরিত্যক্ত অতিথি কক্ষের দরজায় কাঁটাযুক্ত ডালপালা রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় জেনারেটর, পানির পাম্প, গাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল অকেজো হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি এই খামারে বাজারের তুলনায় অনেক কম দামে মুরগির বাচ্চা পাওয়া যায়। সাধারণ মানুষ কিনতে আগ্রহী থাকলেও বাচ্চা নিতে এসে অধিকাংশ মানুষ খালি হাতে ফিরে যান।
পোলট্রি টেকনিশিয়ান আবদুল লতিফ বলেন, খামার প্রতিষ্ঠার সময় চারটি শেড নির্মাণ ও বাচ্চা পালনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় বছরে ২০ হাজার। দুটি শেড দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে গত বছর আরেকটি শেড সংস্কার শেষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০ হাজার ১৫০টি বাচ্চা পালন করা হয়। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ হাজার ৪০৫টি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৫৫০টি পালন হয়।
পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘জনবলসংকট ও জরাজীর্ণ স্থাপনার কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ১৮ বছর ধরে বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সংস্কার না হওয়ায় তিনটির মধ্যে দুটি শেড প্রায় ১৫ বছর বন্ধ ছিল। সম্প্রতি একটি শেড সংস্কার করা হয়েছে। বছরে ২০ হাজার বাচ্চা পালনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ১৩-১৪ হাজার বাচ্চা পালন করা যায়। অন্য জেলা থেকে বাচ্চা সরবরাহ করতে হয় বলে চাহিদা দেওয়ার পরও নিয়মিত পাই না। শেড সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে পাইনি। ফলে কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, আপাতত হ্যাচারি চালুর পরিকল্পনা না থাকলেও আগামী অর্থবছরে রাজস্ব খাত থেকে জরাজীর্ণ শেড এবং আবাসিক ভবন সংস্কারের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হবে।