ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (এনইআইআর) বাস্তবায়নের বিষয়ে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন স্মার্টফোন ও গ্যাজেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের (এমবিসিবি) সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াস।

সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই এনইআইআরের বিরুদ্ধে নই। তবে এটি এমনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে দেশের মোবাইলশিল্প, ভোক্তা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং সার্বিক অর্থনীতি উপকৃত হয়। কোনোভাবেই বাজারে একচ্ছত্র ক্ষমতা বা অযৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করা যাবে না।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিজস্ব কার্যালয়ে এমবিসিবি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আবু সাঈদ পিয়াস এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মো.

আসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি শামীম মোল্লা এবং ভোরের কাগজ অনলাইন বিভাগের প্রধান মিজানুর রহমান সোহেল উপস্থিত ছিলেন।

পিয়াস মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর তাঁকে ও সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেলকে বাসা থেকে অন্যায়ভাবে ডিবি অফিসে নিয়ে গিয়ে আটকানোর ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে এভাবে তুলে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনে চিঠি পাঠালে আমরা যেকোনো সময় স্বেচ্ছায় হাজির হতাম।’

পিয়াস জানান, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পূর্ব পরামর্শ ছাড়াই এনইআইআর হঠাৎ বাস্তবায়নের ঘোষণা বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এর ফলে দেশের প্রায় ২৫ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং ২০ লাখের বেশি মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে অবিক্রীত মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি করা সম্ভব নয়; এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আমদানির ক্ষেত্রে নতুন শর্ত, বিশেষ করে প্রস্তুতকারকের সঙ্গে বাধ্যতামূলক চুক্তির নিয়ম উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা পরিচালনাকে জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ করে তুলছে।

২০১৭ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তুতকারক গোষ্ঠী প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-সুবিধা পেয়েছে বলে পিয়াস বলেন, তবু তারা প্রতিবেশী দেশের তুলনায় ২০-৩০ শতাংশ বেশি দামে স্মার্টফোন বিক্রি করছে, যা বাজারে অস্বাভাবিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। তাঁর দাবি, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একতরফা আমদানি নীতিমালার কারণে মোবাইল হ্যান্ডসেট খাত অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মোবাইল ব্যবসায় খাতের স্থিতিশীলতা বিবেচনায় বিটিআরসিকে সাতটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো প্রস্তুতকারকের সঙ্গে বাধ্যতামূলক চুক্তিপত্র বাতিল করা, বিল অব এন্ট্রি জমা দিলেই হ্যান্ডসেটের স্বয়ংক্রিয় রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করা, অবিক্রীত হ্যান্ডসেট বিক্রির জন্য কমপক্ষে এক বছরের অতিরিক্ত সময় প্রদান, বিদেশি হ্যান্ডসেটে ৫৭ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে আনা, স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের খুচরা ব্যবসায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা, একাধিক মন্ত্রণালয়ের অংশগ্রহণে এনইআইআর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু করা এবং গবেষণাভিত্তিক, বাস্তবসম্মত ও অংশীজন অন্তর্ভুক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিক মিজানুরকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটর মিজানুর রহমান সোহেলকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জিজ্ঞাসাবাদে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ‘অসত্য’ তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।

মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার মধ্যরাতে তাঁর ঢাকার বাসা থেকে তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ সকালে ছেড়ে দেওয়ার পর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনের মাধ্যমে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের বক্তব্য আসে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়বকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো গণমাধ্যম আমার ওপর দায় চাপিয়েছে। তাদের উদ্দেশেই আমার বক্তব্য—এটা অনভিপ্রেত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজ করে। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকার অবকাশই নেই।’

মিজানুর রহমানকে তুলে নেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা নিয়ে আলোচনা ওঠে। তাতে এর সঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও তোলা হয়। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও।

১০ ঘণ্টা পর ছাড়া পেয়ে বাসায় ফিরে মিজানুর প্রথম আলোকে বলেন, ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) কার্যকরের প্রেক্ষাপটে আগামী ১৬ ডিসেম্বর মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও করণীয় বিষয়ে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। তিনি এর সঙ্গে যুক্ত। ডিবির কার্যালয়ে তাঁকে নিয়ে গিয়ে কর্মকর্তারা এই সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে কথা বলেন। ডিবির কর্মকর্তাদের কথায় তাঁর মনে হয়েছে, ওপরের মহলের নির্দেশনায় তাঁরা চান, এই সংবাদ সম্মেলন না হোক। এ জন্য তাঁকে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসাংবাদিক মিজানুরকে মধ্যরাতে নিয়ে গিয়ে সকালে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে ডিবি১ ঘণ্টা আগে

মিজানুর দেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যম, পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন ও ডিজিটাল বিভাগের প্রধানদের সংগঠন ‘অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স’-এর সাধারণ সম্পাদক।

মিজানুর রহমানের সঙ্গে ব্যক্তিগত বা পেশাগত কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই জানিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা এনইআইআর বাস্তবায়ন করছি। অবৈধ হ্যান্ডসেটের লাগাম টানতে সংক্ষুব্ধ পক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি বৈঠকও করেছে।’

অনিবন্ধিত মুঠোফোন হ্যান্ডসেটের ব্যবহার রোধ ও টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু হতে যাচ্ছে এনইআইআর ব্যবস্থা। এটি চালু হলে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে নিবন্ধনবিহীন, চুরি হওয়া বা আমদানি অননুমোদিত ফোনের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হবে বলে আশা করছে সরকার।

আরও পড়ুনঅনিবন্ধিত মুঠোফোনের ব্যবহার বন্ধে ১৬ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে এনইআইআর২৯ অক্টোবর ২০২৫

মিজানুরকে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে এনইআইআর বাস্তবায়নের সঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘মনের মাধুরী মিশিয়ে সত্যের অপলাপ’ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এমন ‘প্রোপাগান্ডা’ মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতাকেই ভুলুণ্ঠিত করছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের অসত্য তথ্য প্রচার জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই আশা করি, এরপর আর কেউ এ ধরনের লেখায় বিভ্রান্ত হবেন না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা ভয়ের সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করছে: টিআইবি
  • বসুন্ধরা সিটিসহ সব মোবাইল মার্কেট বন্ধ, ক্রেতাদের দুর্ভোগ
  • ‘৩০ শতাংশ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করতে চাচ্ছে’
  • সেই সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি’, অভিযোগ তুলেছে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের বিরুদ্ধে
  • সাংবাদিক মিজানুরকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
  • সাংবাদিককে ডিবি তুলে নেওয়ার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব