ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে সুপ্ত থাকা একটি আগ্নেয়গিরিতে গত রোববার অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে। এই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ছাইয়ের বিশাল মেঘ লোহিত সাগর পেরিয়ে ইয়েমেন, ওমান ও এমনকি ভারতের কিছু অংশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে আফার অঞ্চলে অবস্থিত হায়লি গুব্বি নামের আগ্নেয়গিরিটি প্রায় ১২ হাজার বছর ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল। এটি কয়েক ঘণ্টা ধরে সক্রিয় ছিল। এর ফলে প্রতিবেশী আফডেরা গ্রামটি ছাইয়ে ঢেকে যায়।

বিশেষজ্ঞরা এই অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনাকে ‘বেশ অস্বাভাবিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা বলছেন, এই অঞ্চলের আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ সম্পর্কে ‘খুব কমই গবেষণা হয়েছে।’

নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ আরিয়ানা সোলদাতি ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’ সাময়িকীকে বলেন, যত দিন ম্যাগমা তৈরির পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকে, তত দিন একটি আগ্নেয়গিরি এক হাজার বা ১০ হাজার বছর সক্রিয় না থাকলেও অগ্ন্যুৎপাত ঘটাতে পারে।

হায়লি গুব্বি একটি ‘শিল্ড আগ্নেয়গিরি’, যা পূর্ব আফ্রিকার রিফ্ট জোনে অবস্থিত। এই স্থানে আফ্রিকান ও আরব টেকটোনিক প্লেটগুলো বছরে ০ দশমিক ৪ থেকে ০ দশমিক ৬ ইঞ্চি হারে ধীরে ধীরে একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির ভূবিজ্ঞানী জুলিয়েট বিগস বলেন, ‘যদি ১২ হাজার বছরেরও আগে সত্যিই শেষ অগ্ন্যুৎপাৎ হয়ে থাকে, তবে আমি খুবই অবাক হব।’

বিগস বলেন, এ সময়ের মধ্যে কোনো অগ্ন্যুৎপাত ঘটেনি বলে জানা যাচ্ছে। তবে স্যাটেলাইট ছবি থেকে মনে হচ্ছে আগ্নেয়গিরিটি সম্প্রতি লাভা উদ্‌গিরণ করে থাকতে পারে।

এই ভূবিজ্ঞানী আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলে বড় অগ্ন্যুৎপাতের কলাম, যেমন বিশাল ছাতার মতো মেঘ দেখা সত্যিই বিরল।’

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় কোনো প্রাণহানি হয়নি। তবে স্থানীয় পশুপালক গোষ্ঠীগুলোর ওপর এর প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়তে পারে।

অগ্ন্যুৎপাতের পূর্ববর্তী লক্ষণ

বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই হায়লি গুব্বিতে একটি অগ্ন্যুৎপাতের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছিলেন। গত জুলাইয়ে কাছাকাছি এরতা আলে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়, যার ফলে হায়লি গুব্বির নিচে ভূমি চলাচল শুরু হয় এবং ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৩০ কিলোমিটার নিচে ম্যাগমার প্রবেশের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। রোববার অগ্ন্যুৎপাতের আগে বিগস ও তাঁর সহকর্মীরা হায়লি গুব্বির চূড়ায় সাদা মেঘ ও সামান্য ভূমি উত্থানও রেকর্ড করেছিলেন।

অগ্ন্যুৎপাতের সময় ইথিওপিয়ায় অবস্থান করা সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটির ভূবিজ্ঞানী ডেরেক কেইর বলেন, তিনি সোমবার ছাইয়ের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এসব নমুনা ম্যাগমারের ধরন নির্ধারণ করতে এবং আগ্নেয়গিরিটি সত্যিই ১২ হাজার বছর ধরে সুপ্ত ছিল কি না, তা যাচাই করতে সাহায্য করবে।

কেইর বলেন, এই অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা কেবল দেখিয়ে দিচ্ছে, এই অঞ্চল নিয়ে কতটা কম গবেষণা করা হয়েছে।

ফ্রান্সের টউলুস ভলক্যানিক অ্যাশ অ্যাডভাইজরি সেন্টার (ভিএএসি) অনুসারে, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ছাইয়ের মেঘ আকাশে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠেছিল। ইয়েমেন, ওমান, ভারত ও উত্তর পাকিস্তানে এই মেঘের প্রভাবিত দেখা গেছে। প্রায় ৫০০ মিটার উচ্চতার হায়লি গুব্বি ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় রিফ্ট ভ্যালির মধ্যে অবস্থিত। সেখানে টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের গ্লোবাল ভলক্যানিজম প্রোগ্রাম জানিয়েছে, হলোসিন যুগে (বর্তমান ভূতাত্ত্বিক যুগ যা শেষ বরফ যুগের শেষে প্রায় ১২ হাজার বছর আগে শুরু হয়েছিল) হায়লি গুব্বিতে কোনো পরিচিত অগ্ন্যুৎপাত হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১২ হ জ র বছর আগ ন য গ র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

গুরুতর অভিযোগ তুলে স্বামীর বিরুদ্ধে সেলিনা জেটলির মামলা

স্বামী পিটার হাগের বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগে মামলা করেছেন প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া, বলিউড অভিনেত্রী সেলিনা জেটলি। ৪৭ বছরের সেলিনার অভিযোগ—অস্ট্রিয়ান স্বামী পিটার হাগের হাতে গুরুতর মানসিক, শারীরিক, যৌন ও মৌখিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই এ খবর প্রকাশ করেছে।  

এ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২১ নভেম্বর মুম্বাইয়ের আদালতে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইনের ২(এ) ধারায় মামলাটি দায়ের করেছেন সেলিনা জেটলি। 

আরো পড়ুন:

২৩ বছর লিভ-ইনের পর বিয়ে করলেন তারকা জুটি

বিয়ে স্থগিত: হবু স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন গায়ক পলাশ?

মাসিক ১০ লাখ রুপি ভরণপোষণ এবং পিটারের কাছে ৫০ কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন সেলিনা। এসব তথ্য উল্লেখ করে মামলার নথিতে বলা হয়েছে, সন্তানদের (বর্তমানে তারা অস্ট্রিয়ায় পিটারের হেফাজতে রয়েছে) সঙ্গে সেলিনা জেটলিকে কোনোরকম যোগাযোগ করতে দেন না পিটার হাগ। ফলে সেলিনা আদালতের কাছে এমন একটি হেফাজতের নির্দেশ চাইছেন, যাতে পিটার বাধ্য হন সন্তানদের সঙ্গে ‘নিরবচ্ছিন্ন ভার্চুয়াল ও টেলিফোনিক যোগাযোগের সুযোগ’ দিতে। 

সেলিনার পক্ষে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করছে করঞ্জাওয়ালা অ্যান্ড কো.–এর আইনজীবী দল। আন্দেরির বিচারবিভাগীয় হাকিম এস.সি. টাডির আদালতে তোলা হয় মামলাটি। বিচারক অভিযোগটি পরীক্ষা করে পিটারের বিরুদ্ধে নোটিস জারি করেন। পরবর্তী শুনানির তারিখ ১২ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। 

২০১০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পিটার-সেলিনার বিয়ে নিবন্ধিত হয়। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। মামলার আবেদনে সেলিনা জেটলি বলেন, “বিয়ের পর মাঝে মাঝে কাজ করতাম। তবে সন্তান হওয়ার পর স্বামী বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে কাজ করতে নিষেধ করেন। আমার আর্থিক স্বাধীনতা ও মর্যাদা কেড়ে নেয়। পিটার পরিকল্পিতভাবে আমার পেশাগত জীবন ও আর্থিক অবস্থার ক্ষতি করেছেন।” 

মামলার আবেদনে পিটার হাগকে ‘আত্মকেন্দ্রিক, আত্মমগ্ন ব্যক্তি, যার স্ত্রী বা তিন সন্তানের প্রতি কোনো সহানুভূতি নেই’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার ‘রাগী স্বভাব’ ও ‘মদ্যপান–জনিত’ প্রবণতার কারণে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে ওঠেছে বলেও দাবি করা হয়। আর্থিক অভিযোগে বলা হয়েছে, “পিটার হাগ ধীরে ধীরে অভিযোগকারীর (সেলিনা) ব্যক্তিত্বকে ধ্বংস করেছেন। কৌশলে তাকে প্রতারিত করে তার সম্পদ ও আর্থিক বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছেন।” 

সেলিনা-পিটার দম্পতির একটি সন্তান মারা গেছে। নবজাতক সন্তানের মৃত্যু ও মা–বাবার মৃত্যুর পরপরই গুরুতর হতাশায় ভুগতে থাকা অভিনেত্রীকে চাপ সৃষ্টি করে তার মুম্বাইয়ের বাড়িটি তার (পিটারের) নামে হস্তান্তর করতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ সেলিনার। 

এক পর্যায়ে “তীব্র মানসিক, শারীরিক, মৌখিক এবং আর্থিক নির্যাতন”—এর মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সন্তানদের রেখে মধ্যরাতে অস্ট্রিয়া থেকে পালিয়ে ভারতে ফিরতে বাধ্য হন সেলিনা। 

২০১১ সালে হোটেল ব্যবসায়ী পিটার হাগকে বিয়ে করেন সেলিনা। ২০১২ সালে প্রথম জমজ সন্তানের জন্ম দেন এ অভিনেত্রী। সন্তানদের নাম রাখেন উইন্সটন এবং ভিরাজ। ২০১৭ সালে ফের জমজ সন্তান জন্ম দেন সেলিনা। সন্তানদের নাম রাখেন শমসের ও আর্থার, পরে শমসের মারা যায়। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ