রবিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত দুইটি পৃথক আলোচনা সভায় বক্তাগণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য শর্তস্বরূপ দেশে মুক্ত সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠার যেই তাগিদ দিয়াছেন, উহা যথার্থ বলিয়া আমরা মনে করি। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা দুইটির একটি সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে; অপরটি ধানমন্ডিতে ইউনেস্কোর ঢাকা অফিস, টিআইবি ও সুইডিশ দূতাবাসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। আমরা জানি, বিগত সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হইয়াছিল। সেই জনরোষের উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল দেশে বাকস্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অনুপস্থিতি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অদ্যাবধি সেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে নাই। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানের ফসলস্বরূপ টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়া রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করিয়াছে। এই বৎসরের বিশ্ব গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ ১৬ ধাপ অগ্রসর হইয়াছে সত্য। কিন্তু বাংলাদেশ যে এখনও সেই সূচকের তলানিতেই অবস্থান করিতেছে– উহা লইয়া সন্দেহ নাই। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে এহেন অবস্থান লইয়া মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার দাবি উচ্চকণ্ঠে করা কঠিন। আর মুক্ত গণমাধ্যমই যে গণতন্ত্র নিশ্চিত করিবার অন্যতম পাথেয়– উহা সর্বজনস্বীকৃত।
সম্পাদক পরিষদের নেতারা যথার্থই বলিয়াছেন, অগণতান্ত্রিক সরকার বিদায় লইলেও দেশে এখন সাংবাদিকদের নামে পাইকারি খুনের মামলা দিয়া; কোনো কোনো সাংবাদিককে কারান্তরীণ করিয়া ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হইয়াছে। বিগত সরকার দুই শতাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ভয়ংকর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ঠুকিয়া দিয়াছিল। সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে অন্য কিছু জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপের সহিত ঐ সকল মামলা তখনও দেশে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করিয়াছিল। অন্যদিকে গত আট মাসে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা বা হত্যচেষ্টা মামলা রুজু করা হইয়াছে। দেশের সংবাদমাধ্যমকে তটস্থ রাখিতে অন্য আর কীসের প্রয়োজন পড়িতে পারে! শুধু কি উহাই? দেশে ‘মব ট্রায়াল’ নামে যাহা চলিতেছে, উহারও অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হইয়া উঠিয়াছে সংবাদমাধ্যম। কোনো সংবাদ পছন্দ না হইলেই মহলবিশেষ যেইভাবে উক্ত সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ‘অভিযান’ ঘোষণা করিয়া থাকে, সেই চাপ বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সামাল দেওয়া কঠিন বৈ কি।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতির সহিত আমরাও একমত, কোনো সাংবাদিক প্রকৃতই কোনো অপরাধ করিয়া থাকিলে সেই অপরাধ চিহ্নিত করিয়া সংশ্লিষ্ট আইনে তাঁহার বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা করা যাইতে পারে। দ্রুত বিচার করিয়া তাঁহাকে শাস্তি প্রদান করা হইলেও উহা কার্যত ‘আইনি প্রক্রিয়া’ বটে। কিন্তু আট মাস অতিক্রান্ত হইলেও ঐ সকল মামলার কোনোটিরই বিচার প্রক্রিয়া সামান্যও অগ্রসর হয় নাই। বিস্ময়কর হইল, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গয়রহ হত্যা মামলা লইয়া সরকার দৃশ্যত দায়সারা বক্তব্য দিয়াই ক্ষান্ত থাকিতে চাহিতেছে। সরকারের আইন উপদেষ্টা প্রায়শ বলিয়া থাকেন, এই বিষয়ে তাহাদের কিছুই করিবার নাই। কারণ জনগণের অধিকার রহিয়াছে মামলা করিবার। কিন্তু কোনো আইনের যদি অপপ্রয়োগ হয়, সেইখানেও কি সরকারের কিছু করিবার নাই! স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একাধিকবার বলিয়াছেন, মব সন্ত্রাস চলিবে না। কিন্তু বাস্তবতা হইল, পরিস্থিতির কোনো ইতরবিশেষ ঘটে নাই।
আমরা জানি, গণতন্ত্র কোনো ধারণাবিশেষ নহে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং বাস্তবে প্রয়োগযোগ্য কিছু নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের নামই গণতন্ত্র, যেইখানে বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মুক্ত সংবাদমাধ্যম বিশেষ অনুষঙ্গ। অস্বীকার করা যাইবে না– জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতায় বসাইয়াছে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিগত আমলের সহিত পার্থক্য নিশ্চিত করিতে। অন্য সকল কিছু অপেক্ষা এই বিষয়কেই তাহাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখিতে হইবে। উহার নিদর্শনস্বরূপ সরকারকে ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ ব্যতিরেকে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের পার্শ্বে অবস্থান করিতে হইবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণতন ত র কর ব র সরক র হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ ঠেকাতে অবশ্য সচেতন থাকতে হবে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “এই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ ও চরমপন্থার উত্থান কিংবা পুনর্বাসন ঠেকাতে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্য সচেতন থাকতে হবে এবং সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রবিবার (৩ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ছাত্রদল আয়োজিত এক সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, “মনে রাখবে, যদি তোমরা আগামী দিন সাহস ও সততার সঙ্গে এগিয়ে যাও, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ তোমাদের সঙ্গে আছে, ইনশাল্লাহ তোমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতেও তারা থাকবে। মনে রাখবে, বাংলাদেশের জনগণই বিএনপি, তথা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।”
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশে বিভক্তি সৃষ্টি করার অনেক চেষ্টা হচ্ছে: ফখরুল
কোনোদিনই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ দেব না: ফখরুল
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “এই মুহূর্তে আমার সামনে উপস্থিত ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় লাখো লাখো মুখ, তোমরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ।ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তোমরাই প্রতিষ্ঠিত করবে নিজেদের অধিকার। আজকে প্রবীণ যারা, তাদের অভিজ্ঞতা, পরামর্শ আর তোমাদের বিচক্ষণ ও বুদ্ধিদীপ্ত ভূমিকায় নির্মিত হবে ইনশাল্লাহ আগামী দিনের বাংলাদেশ, লাখো শহীদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ।”
তারেক রহমান বলেন, “দেড় দশকের ফ্যাসবাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী হতাহত হয়েছে।মামলা, হামলা, জেল-জুলুম, নির্যাতন, খুন, গুম, অপহরণের শিকার হয়েছে ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী। শুধু এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানেই চট্টগ্রামের ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমসহ শতাধিক নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে আমাদের, আহত হয়েছে হাজার হাজার। গণঅভ্যুত্থানের সময় শুধু ছাত্রদলেরই দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে।”
তারেক রহমান আরো বলেন, “পলাতক পরাজিত স্বৈরাচার নিষ্ঠুর নির্মমতা চালিয়েও ছাত্রদলের অগ্রযাত্রা দমিয়ে রাখতে পারে নাই। আজকের এই লাখো ছাত্র-ছাত্রী, জনতার সমাবেশ আজকে আবারও সেটি প্রমাণ করে দিয়েছে। একটি কথা তোমরা সবাই মনে রাখবে, যদি তোমরা আগামী দিন সয়াহস ও সততার সঙ্গে এগিয়ে যাও, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ তোমাদের সঙ্গে আছে, ইনশাল্লাহ তোমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতেও তারা থাকবে। মনে রাখবে, বাংলাদেশের জনগণই বিএনপির তথা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সঞ্চালনা করছেন সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাসির।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ