আওয়ামী লীগের অনলাইন কার্যক্রম বন্ধ: অধ্যাদেশ জারি হয়নি, ধারা উল্লেখ করে চিঠি
Published: 15th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনলাইন কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি (এনসিএসএ)।
অবশ্য সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি চিঠিটি দিয়েছে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের একটি ধারার কথা উল্লেখ করে। যদিও অধ্যাদেশটি এখনো জারি হয়নি। শুধু উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে।
আইনজীবীরা বলছেন, অধ্যাদেশ জারি হওয়ার আগে সেটি আইনে পরিণত হয় না। সেটি অধ্যাদেশের ধারা বলে সরকারি চিঠি দেওয়ার সুযোগ নেই।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, কোনো অধ্যাদেশ যতক্ষণ না আইনে পরিণত ও কার্যকর হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার প্রয়োগ করা যায় না। রাষ্ট্রীয় কাজ নিয়মকানুন মেনে হতে হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাযজ্ঞের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে ১২ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওই দিন রাতে নির্বাচন কমিশনও রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের পর অনলাইন মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধে উদ্যোগী হয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীন সংস্থাটি গত মঙ্গলবার চিঠি দেয় বিটিআরসিকে। চিঠিতে মেটা (ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান), এক্স (সাবেক টুইটার), গুগল ও টিকটককে আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্লক করার জন্য নির্দেশ দিতে অনুরোধ করা হয়।
সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির চিঠিতে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’–এর ৮ নম্বর ধারার ক্ষমতা প্রয়োগের কথা বলা হয়। ৬ মে এই অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ। আইসিটি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অধ্যাদেশটি এখন ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। গতকাল বুধবার রাত আটটা পর্যন্ত অধ্যাদেশটির গেজেট (প্রজ্ঞাপন) হয়নি, অর্থাৎ আইনটি কার্যকর হয়নি।
যে অধ্যাদেশ এখনো জারি হয়নি, তার অধীন চিঠি দেওয়া প্রসঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি ও আইসিটি বিভাগে যোগাযোগ করে আনুষ্ঠানিকভাবে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অনুমোদিত খসড়ার ধারা ৮ এবং বিদ্যমান সাইবার নিরাপত্তা আইনের ধারা ৮–এর বিধান একই। অধ্যাদেশে শুধু নতুন করে যুক্ত হয়েছে, ‘স্বচ্ছতার স্বার্থে সরকার সকল ব্লক হওয়া কনটেন্টের তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করিবার ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’
ওই কর্মকর্তার দাবি, যেহেতু ধারা একই, সেহেতু চিঠি দিতে সমস্যা থাকার কথা নয়।
নতুন অধ্যাদেশের খসড়ার ৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে বিশ্বাস করে যে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক বা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য যা সহিংসতা তৈরিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করে এবং এর মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নির্দেশনা প্রদান করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা ব্লক করার জন্য মহাপরিচালকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বা প্রয়োজনে বিটিআরসিকে অনুরোধ করবেন।’
সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির চিঠিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইউআরএল বা লিংকগুলো সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫–এর ধারা ৮ অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে ব্লক বা অপসারণ করা প্রয়োজন।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.
ফেসবুক, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো কোনো পেজ বা চ্যানেল বন্ধ করবে কি না, তা নির্ভর করে তাদের নীতিমালার ওপর। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং আইনি যুক্তি তুলে ধরে চিঠি দিতে না পারলে ফেসবুক ও ইউটিউব সাধারণত সরকারের অনুরোধ রাখে না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ট আরস র জন য ফ সব ক প রক শ সহয গ সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভুল হলে শিক্ষা নিয়ে এগুতে চাই: মাহফুজ আলম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং এ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, ভুল হলে তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আমরা এগুতে চাই। তিনি বলেন, জবি থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দু’জন শিক্ষার্থী ভাই শহিদ হয়েছেন এবং অনেক ভাই-বোন আহত হয়েছেন। জবি’র ভাইবোনদের বলব, আপনাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যই আমি গিয়েছিলাম। জুলাই আমাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের আত্মিক বন্ধন তৈরি করেছে। আশা করি, এ বন্ধন কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ছিন্ন হবে না। আপনাদের যেকোনো প্রয়োজনে, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আপনারা আমাকে সঙ্গে পাবেন।
আজ বৃহস্পতিবার রাতে ৯টার পর তথ্য উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে দীর্ঘ পোস্টে বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর ন্যায্যতা বিচার করবেন শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়। আরও যুক্ত থাকবে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জোরালো ভূমিকা রাখা ও সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দেওয়া জবি শিক্ষার্থীদের দাবির একটি ফলপ্রসূ সমাধানে আসতে আমি ভিসি স্যার ও অন্যান্যদের সঙ্গে বসেছিলাম। গত পরশু রাতে যখন এসব দাবি নিয়ে জবি থেকে আমাকে জানানো হয়, তখন তাদের আমি গতকাল রাত ৯টায় আমার বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু, গতকাল সকালে তারা আন্দোলনে নামেন এবং যমুনার কাছাকাছি পৌঁছে যান। কাল দুপুর থেকেই ভিসি স্যারের সঙ্গে আমি নিয়মিত যোগাযোগ করেছিলাম। শেষপর্যন্ত রাতে এক ঘণ্টা ধরে তিনটা টকিং পয়েন্ট নির্ধারণ করে আমি ভিসি স্যার ও শিক্ষকদের সঙ্গে কাকরাইল মোড়ে যাই। সেখানে মিডিয়ার লোকজন শিক্ষার্থীদের থেকে ৫০ মিটার দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু, আমি ভিসি স্যারকে বললাম, আমি শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে কথা বলব। সেখানে যাওয়ার পর একটা গ্রুপ স্লোগান দেয়। আমি বিব্রত না হয়ে, নিজের দায়িত্ব পালনে কথা বলা শুরু করি। পূর্বনির্ধারিত টকিং পয়েন্ট অনুযায়ী পুলিশের বাড়াবাড়ি অথবা স্ব-উদ্যোগে ‘উসকানিমূলক’ কিছু করলে ক্ষমাপ্রার্থনা ও বিভাগীয় তদন্তের কথা বলতে গিয়েছিলাম। তখনই বোতল নিক্ষেপ করেন একজন শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী কেন এবং কার মদদে এ অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করলেন, তা আশা করি প্রশাসন দ্রুতই খতিয়ে দেখবে। তারপর আমি হতাশা নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। তখন স্যারদের সঙ্গে আমার হতাশা ও ক্ষুব্ধতা ব্যক্ত করি। স্যাররাও এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন। গত এক সপ্তাহব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দলের নিয়মিত আক্রমণ ও হত্যার হুমকির কারণে ন্যায্যভাবেই অনুমান করেছিলাম এটা হুমকিদাতা দলের কাজ হতে পারে। আমার হতাশা ও ক্ষুব্ধতা কাউকে আঘাত করলে আমি আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করছি।
তথ্য উপদেষ্টা ফেসবুক পোস্টে বলেন, আমার বক্তব্য ছিল, এ আক্রমণের ফলে ন্যায্য দাবির আন্দোলন বিতর্কিত হল। আমি চেয়েছিলাম, জবির আবাসন সমস্যা যেন দ্রুত সমাধান হয়। পরবর্তীতে ৫০ মিটার দূরত্বে আমি আরেকটা সংবাদ সম্মেলন করি। আমার অফিশিয়াল বক্তব্য, আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা, দাবিপূরণের রোডম্যাপ ও পুলিশি হামলার বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস সেখানে আপনারা দেখতে পাবেন। জবির শিক্ষার্থী ও শ্রদ্বেয় শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা আমি আবারও জানাচ্ছি। জবি’র শিক্ষার্থীদের আবাসনের দাবি ন্যায্য। আশা করি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান মিলে দ্রুতই একটি যৌক্তিক ও ফলপ্রসূ সমাধানে আসবে।
পুনশ্চঃ গতকাল রাতে এসেই আমি ডিএমপি কমিশনারকে বলে দিয়েছিলাম, যাতে জোরপূর্বক জবি শিক্ষার্থীদের সরানো না হয়। তাদের ওপর যেন কোনোরকম আক্রমণ না চালানো হয়। সবার সুমতি হোক। ভুল হলে তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আমরা এগুতে চাই।