ব্যস্ত রাস্তার মোড়। প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষের যাতায়াত। এই নিত্য কর্মের সহজ দৃশ্যে এমন কোনো কিছু আপনার চোখে পড়বে না যা আপনার জীবিকা অনুসন্ধানের কারণ হতে পারে। তবে দিনাজপুরের হিলির চারমাথা মোড়, সিপি ও বাজারের রাস্তার পাশে চট বিছিয়ে বসে থাকা ‘রবিদাস’ তথা মুচিদের দৃষ্টি লেগে থাকে এই চলতিফিরতি মানুষেগুলোর পদযুগলে। নষ্ট জুতা সারিয়ে তুলে বা রং করেই যে জীবন চলে তাদের!

এখন আর আগের মতো রমরমা কাজ নেই এই পেশায়। মানুষ ছেঁড়া জুতা আর মেরামত করতে চায় না। যে কারণে রবিদাসদেরও পরিবারে সুদিন ফেরে না। এমনকি কোনোমতে খেয়ে-পরে বাঁচার পথেও এসেছে দারুণ বাধা। 

দিনভর ‘হাতারপাঁতি’ বা লোহার নেহাইসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে থাকাই চলে। চলে না কর্মমুখর ব্যস্ত হাতের দ্রুত সঞ্চালন। অন্যের ছেঁড়া জুতা সেলাই ও পরিপাটি করে দিয়ে সংসারের চুলা জ্বালানো আর পেটের আগুন নেভানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের অভ্যাস। 

রবিদাস বলরাম ক্ষোভ নিয়ে বলেন, “মানুষ এখন আর পুরনো জুতো সারাই করছে না। মনে হয় মানুষের পায়ের জুতা ছিঁড়ে না। ছিঁড়লেও আর পরে না। নতুন জুতা কিনে পরে। দীর্ঘ বছরের এই পেশায় আর জীবন চলে না।”

আগে প্রতিবছর ঈদ এলে ব্যস্ততা বেড়ে যেত। তবে এবার তাদের কর্মযজ্ঞের চিত্র আলাদা। হাতে কাজ নেই, বসে বসেই অলস সময় পার করছেন তারা। সারাদিন যা উপার্জন হয় তাতে ঠিকমতো সংসারই চলছে না।

হিলিতে ২০ থেকে ২২ জন রবিদাস রয়েছেন। ছেঁড়া জুতা সেলাই আর পালিশ করাই তাদের কাজ। এ পেশায় তাদের নেই কোন লজ্জা বা ঘৃণা। অন্যের পায়ের জুতা সেলাই-পালিশ করেন তারা আপন মনে। জুতা সেলাই ১০ থেকে ২০ টাকা, আর পালিশ ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এই হলো তাদের কাজের মজুরি। এই মজুরিতে আজকের দিনে আর কীভাবে চলবে সংসার?

হিলি চারমাথা মোড়ের মিঠুন রবিদাস বলেন, “ব্যবসার হালচাল ভাল না। সারাদিন বসে বসেই সময় কাটাচ্ছি। সামনে ঈদ দেখি কাজ বাড়ে কি না?” 

খোকন রবিদাস বলেন, “আমাদের দিনকাল ভাল যাচ্ছে না। সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকানে বসে থাকি। কাজ তেমন হচ্ছে না। সারাদিনে যা উপার্জন হচ্ছে, তাতে সংসার চলানোই মুশকিল। দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কামাই হয়, এতে কি আর জীবন চলে?” 

হিলির এসব জীবন সংগ্রামী মানুষগুলোর জন্য কখনো কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়নি। মেলেনি কোনো সহায়তার আশ্বাসও। তারা কাজ চান, কর্ম করেই বেঁচে থাকতে চান। 

তবে মানুষের অভ্যাস বদলেছে। তারা আর আগের মতো ছেঁড়া জুতা ঠিকঠাক করে চলতে চান না। তার বদলে বরং নতুন এক জোড়া কিনে নেন। আর এতেই দুর্দিন নেমে এসেছে এখানকার রবিদাসদের জীবনে। তাই কাজ চাইলেও মিলছে না আশানুরূপ।

তারা জানান, প্রতি বছর ঈদ আসলে দোকানে কাজের হিড়িক পড়তো। এবছর কোন কাজ নেই, বসে বসেই সময় কাটছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণেরও কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না।

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রব দ স

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় ব্যবসায়ী নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সন্ত্রাসীদের হামলায় মোস্তফা কামাল নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামে তার ওপর হামলা হয়। নিহত মোস্তফা কামাল একই গ্রামের মৃত মমিন মিয়ার ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মোস্তফা কামাল রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছে সড়কে একা পেয়ে সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা করে। তারা তার মাথা ও ঘাড়ে কোপ দিয়ে পালিয়ে যায়।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনই বলছে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’

বান্দরবানে যুবককে পাথর দিয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার  ২

একজন পথচারী মোস্তফা কামালকে সড়কের পাশে পরে থাকতে দেখে পরিবারের লোকদের খবর দেন। তারা তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক মোস্তফা কামালকে মৃত ঘোষণা করেন। 

সরাইল থানার ওসি মোরশেদুল আলম চৌধুরী জানান, রাতে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের হামলায় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ