‘মানুষের পায়ের জুতা আর ছিঁড়ে না, ছিঁড়লেও পরে না’
Published: 28th, May 2025 GMT
ব্যস্ত রাস্তার মোড়। প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষের যাতায়াত। এই নিত্য কর্মের সহজ দৃশ্যে এমন কোনো কিছু আপনার চোখে পড়বে না যা আপনার জীবিকা অনুসন্ধানের কারণ হতে পারে। তবে দিনাজপুরের হিলির চারমাথা মোড়, সিপি ও বাজারের রাস্তার পাশে চট বিছিয়ে বসে থাকা ‘রবিদাস’ তথা মুচিদের দৃষ্টি লেগে থাকে এই চলতিফিরতি মানুষেগুলোর পদযুগলে। নষ্ট জুতা সারিয়ে তুলে বা রং করেই যে জীবন চলে তাদের!
এখন আর আগের মতো রমরমা কাজ নেই এই পেশায়। মানুষ ছেঁড়া জুতা আর মেরামত করতে চায় না। যে কারণে রবিদাসদেরও পরিবারে সুদিন ফেরে না। এমনকি কোনোমতে খেয়ে-পরে বাঁচার পথেও এসেছে দারুণ বাধা।
দিনভর ‘হাতারপাঁতি’ বা লোহার নেহাইসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে থাকাই চলে। চলে না কর্মমুখর ব্যস্ত হাতের দ্রুত সঞ্চালন। অন্যের ছেঁড়া জুতা সেলাই ও পরিপাটি করে দিয়ে সংসারের চুলা জ্বালানো আর পেটের আগুন নেভানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের অভ্যাস।
রবিদাস বলরাম ক্ষোভ নিয়ে বলেন, “মানুষ এখন আর পুরনো জুতো সারাই করছে না। মনে হয় মানুষের পায়ের জুতা ছিঁড়ে না। ছিঁড়লেও আর পরে না। নতুন জুতা কিনে পরে। দীর্ঘ বছরের এই পেশায় আর জীবন চলে না।”
আগে প্রতিবছর ঈদ এলে ব্যস্ততা বেড়ে যেত। তবে এবার তাদের কর্মযজ্ঞের চিত্র আলাদা। হাতে কাজ নেই, বসে বসেই অলস সময় পার করছেন তারা। সারাদিন যা উপার্জন হয় তাতে ঠিকমতো সংসারই চলছে না।
হিলিতে ২০ থেকে ২২ জন রবিদাস রয়েছেন। ছেঁড়া জুতা সেলাই আর পালিশ করাই তাদের কাজ। এ পেশায় তাদের নেই কোন লজ্জা বা ঘৃণা। অন্যের পায়ের জুতা সেলাই-পালিশ করেন তারা আপন মনে। জুতা সেলাই ১০ থেকে ২০ টাকা, আর পালিশ ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এই হলো তাদের কাজের মজুরি। এই মজুরিতে আজকের দিনে আর কীভাবে চলবে সংসার?
হিলি চারমাথা মোড়ের মিঠুন রবিদাস বলেন, “ব্যবসার হালচাল ভাল না। সারাদিন বসে বসেই সময় কাটাচ্ছি। সামনে ঈদ দেখি কাজ বাড়ে কি না?”
খোকন রবিদাস বলেন, “আমাদের দিনকাল ভাল যাচ্ছে না। সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকানে বসে থাকি। কাজ তেমন হচ্ছে না। সারাদিনে যা উপার্জন হচ্ছে, তাতে সংসার চলানোই মুশকিল। দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কামাই হয়, এতে কি আর জীবন চলে?”
হিলির এসব জীবন সংগ্রামী মানুষগুলোর জন্য কখনো কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়নি। মেলেনি কোনো সহায়তার আশ্বাসও। তারা কাজ চান, কর্ম করেই বেঁচে থাকতে চান।
তবে মানুষের অভ্যাস বদলেছে। তারা আর আগের মতো ছেঁড়া জুতা ঠিকঠাক করে চলতে চান না। তার বদলে বরং নতুন এক জোড়া কিনে নেন। আর এতেই দুর্দিন নেমে এসেছে এখানকার রবিদাসদের জীবনে। তাই কাজ চাইলেও মিলছে না আশানুরূপ।
তারা জানান, প্রতি বছর ঈদ আসলে দোকানে কাজের হিড়িক পড়তো। এবছর কোন কাজ নেই, বসে বসেই সময় কাটছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণেরও কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না।
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যাপ্রোচে মাটি না দেওয়ায় অকেজো ৪০ লাখের সেতু
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সেতুর অ্যাপ্রোচে মাটি না দেওয়ায় স্থানীয় লোকজনের কাজে আসছে না। ছয় মাস আগে নির্মাণ শেষ হলেও যাতায়াতের উপযোগী না করায় ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের গাফিলতিকে দুষছেন তারা। ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর অ্যাপ্রোচে মাটি দিতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় কৃষক সারেং আলীর ভাষ্য, সেতু নির্মাণের আগে কষ্ট হলেও রাস্তাটি ব্যবহার করা যেত। নির্মাণের পর এতে ওঠার জন্য মাটি দেয়নি। এতে হাট-বাজারে কৃষিপণ্য নিতে অনেক ঘুরে যেতে হচ্ছে। কয়েক দিন পর বর্ষা শুরু হবে। তার আগে দুই পাশে মাটি দেওয়া না হলে তখন যাতায়াতের জন্য নৌকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
জানা গেছে, উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের দেহানখিলায় খালের ওপর দিয়ে ১১ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস দরপত্র আহ্বান করে। কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজ এন্টারপ্রাইজ। অবকাঠামো ও দুই পাড়ে সংযোগ সড়কের সঙ্গে অ্যাপ্রোচ নির্মাণে চুক্তি হয় ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত নভেম্বর মাসে সেতুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ করে। কিন্তু অ্যাপ্রোচে মাটি না দেওয়ায় তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না লোকজন। দেহানখিলার বাসিন্দা মোবারক হোসেনের ভাষ্য, অনেক তদবির করে সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে মসজিদ ও মক্তবখানা এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উত্তরে লোকালয়। সংযোগ সড়ক সংস্কার না হওয়ায় যাতায়াত করতে অনেক ঘুরতে হচ্ছে।
সংযোগ সড়ক না হওয়ায় দুর্ভোগ আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে জানিয়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেওয়ান মো. জিকরুল ইসলাম বলেন, খালের ওপাড়ে রয়েছে দেহানখিলা কবরস্থান। কেউ মারা গেলে বিকল্প রাস্তা দিয়ে কবরস্থানে নিতে হয়। বর্ষায় লাশ নৌকায় করে নিতে হবে। অন্য পাড়ের শিক্ষার্থীদেরও স্কুলে আসতে কষ্ট হচ্ছে।
কলেজছাত্র আতিক হাসানের ভাষ্য, সেতু নির্মাণ হলেও দুই পাশে মাটি না দেওয়ার জন্য ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের গাফিলতি রয়েছে। বর্ষার আগেই দুই পাড়ে মাটি দিয়ে চলাচলের উপযোগী করতে হবে। তা না হলে এত টাকার সেতুটি কোনো কাজে আসবে না।
সেতু নির্মাণের জন্য খালের দুই পাশে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল জানিয়ে রাজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান তুহিন বলেন, সেই মাটি দিয়ে সেতুর অ্যাপ্রোচ নির্মাণের কথা ছিল। এলাকায় মানুষজন খাল তাদের দাবি করে মাটি কাটতে দেননি। বিকল্পভাবে কিছু ফেলা হয়েছিল, এলাকায় গ্রুপিংয়ের কারণে তাও বন্ধ। লোকজন সহযোগিতা করলে মাটি ফেলা হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহাদি হোসেন বলেন, সেতুটির দুই পাড়ে ঠিকাদার মাটি রাখলেও স্থানীয় লোকজন নিতে দেয়নি। ঠিকাদারকে বলা হয়েছে দ্রুত কাজ শেষ করতে। মাটি না দেওয়ায় ঠিকদার চূড়ান্ত বিল নিতে পারেনি।