শিশুর ভালো ঘুমের জন্য যেসব অভ্যাস করাবেন
Published: 30th, July 2025 GMT
সময় হোক নির্দিষ্ট
রোজ একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। তবে বিষয়টা যেন এমন না হয় যে শিশুকে জোর করে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়ে অভিভাবক রাত জেগে মুঠোফোন স্ক্রল করছেন। ছুটির দিনে দেরি করে ওঠার অভ্যাসটিও শিশুর জন্য ভালো নয়। তাতে বায়োলজিক্যাল ক্লক বা দেহঘড়ির সময় এলোমেলো হয়ে যায়। তাই ছুটির আগের দিনও রাত করে বাইরে ঘোরাঘুরি কিংবা রাত জেগে সিনেমা দেখা বা গল্প করা ভালো চর্চা নয়। তাতে সেদিন ঘুমাতে দেরি হবে, পরদিন ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হবে। এলোমেলো হবে দেহঘড়ির সময়।
ঘুমের আয়োজনবিছানায় পড়ালেখা, গেম খেলা, খাওয়া দাওয়া বা অন্য কোনো কাজ করা যাবে না। বিছানা কেবল ঘুমেরই জন্য ব্যবহার করতে হবে। তাহলে বিছানায় গেলে মস্তিষ্ক বুঝতে পারবে, এখন ঘুমের সময়।
ঘুমের আগে ছোট শিশুকে গল্প বা ছড়া বলা যেতে পারে। একটু বড় হলে ঘুমের আগে নিজেও বই পড়তে পারে শিশু। তবে উত্তেজনাপূর্ণ কোনো কিছুই ঘুমের আগে ভালো নয়। হোক তা গল্প, হোক তা বই। ঘুমের আগের সময়ে এমন বই বেছে নেওয়া উচিত নয়, যা গভীর চিন্তার খোরাক হয়ে দাঁড়ায়।
অন্ধকার ঘরে শিশু ভয় পেতে পারে। এ সমস্যা এড়াতে ঘুমের সময় ঘরে মৃদু আলোর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
ঘুমের আগে শিশুকে উষ্ণ পানিতে গোসল করানো যেতে পারে। তাঁকে প্রার্থনা করতে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে। যোগব্যায়াম, শ্বাসের ব্যায়াম, শিথিলায়নের অভ্যাস করা যেতে পারে। শোনানো যেতে পারে আয়েশি কোনো অডিও।
ঘুমের আগমুহূর্তে যা করতে নেই
ঘুমের অন্তত এক-দুই ঘণ্টা আগেই পড়ালেখা শেষ করে ফেলতে হবে। রাতে পড়া শেষ না হলে ভোরে উঠে পড়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।
ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে ইলেকট্রনিক বা স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারের পাট চুকিয়ে ফেলতে হবে।
খেলাধুলা বা শারীরিক শ্রম হয়, এমন কাজ ঘুমের অন্তত চার ঘণ্টা আগেই সেরে নিতে হবে।
আরও পড়ুনরাতের ভালো ঘুমের জন্য কার্যকর ১০ টিপস১৬ জুলাই ২০২৫খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দু-তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিতে হবে। রাতের খাবারটা হতে হবে হালকা, সহজপাচ্য। রাতে ভারী খাবার, মসলাদার খাবার, মিষ্টি খাবার, চিপস প্রভৃতি খাওয়া উচিত নয়।
ঘুমের এক ঘণ্টা আগে দুধ, খেজুর বা কলা খাওয়া যেতে পারে। তাহলে রাতে হঠাৎ খিদে পাবে না। তবে এ সময় বাড়তি কোনো স্বাদ বা ঘ্রাণের দুধ (ফ্লেভারড মিল্ক) না খাওয়াই ভালো।
বেলা দুইটার পর চকোলেট বা চকোলেট মেশানো খাবার না খাওয়াই ভালো। কারণ, চকোলেটে ক্যাফেইন থাকে, যা ঘুমের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একটু বড় হওয়ার পর চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস হলে তখনো খেয়াল রাখতে হবে, বেলা দুইটার পর যেন এসব পানীয় খাওয়া না হয়।
আরও পড়ুনযেসব বদভ্যাসের কারণে একজন ব্যক্তি আজীবন দরিদ্রই থেকে যায়১৭ জুলাই ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ
কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।
স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।