যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তাহলে কি ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠছে
Published: 30th, July 2025 GMT
ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নিউইয়র্ক নগরের মেয়র পদে দলীয় প্রাথমিক বাছাই নির্বাচনে জোহরান মামদানি শুধু গত কয়েক বছরের মধ্যে অন্যতম বড় রাজনৈতিক অপ্রত্যাশিত বিজয় অর্জন করেননি; বরং তিনি নগরের ইতিহাসে প্রাথমিক বাছাইয়ে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক নতুন জরিপে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থনই ছিল তাঁর প্রচারের প্রধান চালিকা শক্তি।
জোহরানকে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ৭৮ শতাংশ মনে করেন, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। আর ৭৯ শতাংশ চান, ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হোক।
নিউইয়র্কের এসব ভোটারের মধ্যে ৬৩ শতাংশ মনে করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুযায়ী যদি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্ক নগরে আসেন, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা উচিত। জোহরান বলেছেন, নভেম্বরের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হলে তিনিও সেটাই করবেন।
জরিপটি পরিচালনা করেছে ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং (আইএমইইউ) পলিসি প্রজেক্ট ও ‘ডেটা ফর প্রোগ্রেস’। ২০২৫ সালের ১১ থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রাথমিক বাছাইয়ের ৫১৩ জন ভোটারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
ভোটারদের করা তিনটি প্রশ্নেই দেখা গেছে, জোহরানের সঙ্গে যেসব ভোটার একমত, তাঁদের বেশির ভাগই ২০২১ সালের মেয়র নির্বাচনে ভোট দেননি। হতে পারে, তাঁদের তখনো ভোটার হওয়ার বয়স হয়নি অথবা জোহরানের প্রচারই তাঁদের ভোট দিতে অনুপ্রাণিত করেছে।
ভোটারদের প্রশ্ন করা হয়, কোন কোন বিষয় তাঁদের জোহরান মামদানিকে ভোট দিতে প্রভাবিত করেছে। সবচেয়ে বেশি ভোটার (৮৯ শতাংশ) বলেন, তাঁর জীবনযাত্রার খরচ কমানোর পরিকল্পনা তাঁদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে (৮৬ শতাংশ) বলা হয়, ধনীদের ওপর কর আরোপ ও করপোরেশনগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান।
তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ হিসেবে (৬২ শতাংশ) বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি জোহরানের সমর্থন।
২০২৫ সালের নতুন ভোটারদের মধ্যে এ সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩ শতাংশে। এমন সময়েই এ জরিপ চালানো হয়েছে, যখন কিছু রাজ্য এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, এমনকি ইসরায়েলি গবেষক ও বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলাকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ক্রমবর্ধমান সমর্থন
তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এ মনোভাব শুধু নিউইয়র্ক নগরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
সিএনএনে প্রকাশিত গ্যালাপের নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি মার্কিনদের মধ্যে জনপ্রিয়তা মাইনাস ২৩ পয়েন্ট, যা ১৯৯৭ সালের পর সবচেয়ে কম।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন মাইনাস ২৮ শতাংশ, অর্থাৎ বেশির ভাগ মানুষ তা নেতিবাচকভাবে দেখছেন।
সব মিলিয়ে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ফিলিস্তিনিদের চেয়ে ইসরায়েলিদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল, সেই সংখ্যার ব্যবধান এখন ইতিহাসের সর্বনিম্ন—মাত্র +৫ পয়েন্ট। এটি ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার আগে ছিল প্লাস ৪৮ পয়েন্ট।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে স্বাধীনতাকামী হামাসের হামলার পর গাজায় ইসরায়েল যে হামলা শুরু করেছে, তাতে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ বলেছে, এ সংখ্যা সম্ভবত কম বলা হয়েছে। আসল সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আইএমইইউ পলিসি প্রজেক্টের যোগাযোগ পরিচালক হামিদ বিনদাস মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি জোহরানের সমর্থন ও ইসরায়েলের সমালোচনার আশপাশে যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, সেটি দেখিয়ে দিচ্ছে, ডেমোক্রেটিক পার্টি এখন সাধারণ ভোটারদের ভাবনার সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
হামিদ বলেন, অভিন্ন তিনটি প্রশ্নে ভোটারদের মধ্যে যে ঐকমত্য দেখা গেছে, তার কথা কংগ্রেসের খুব কমসংখ্যক ডেমোক্র্যাট সদস্যই বলতে সাহস পান। তাঁদের মধ্যে অনেকেই গাজায় ইসরায়েলের কার্যক্রমকে গণহত্যা বলতেও ভয় পান বা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার দাবিও করেন না।
ইএমইইউ বিবৃতিতে আরও জানায়, জরিপে নিউইয়র্কের ১০ নম্বর কংগ্রেস আসনে ভোটারদের বাড়তি নমুনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ আসনের প্রতিনিধি ড্যান গোল্ডম্যান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের প্রভাবশালী সংগঠন আইপেকের অর্থায়নে রাজনীতি করেন। তিনি বারবার রিপাবলিকানদের সঙ্গে মিলে ফিলিস্তিনবিরোধী প্রস্তাবে ভোট দিয়েছেন।
আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স (অ্যাইপেক) হলো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী ইসরায়েলপন্থী লবিং গ্রুপ, যারা কংগ্রেস সদস্যদের জোরালোভাবে আর্থিকভাবে সহায়তা করে থাকে।
মামদানির সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো, যিনি আইপেকের সমর্থন পেয়েছেন।
হামিদ বিনদাস বলেন, এখানে কয়েকটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত, রাজনীতিক হিসেবে ইসরায়েল সরকারের সমালোচনা করলে, সেটি একধরনের ঝুঁকি তৈরি করে। কারণ, শক্তিশালী স্বার্থান্বেষী মহল আপনার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিজ্ঞাপন দিতে পারে। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাই নির্বাচনেও তাই হয়েছে। জোহরানের ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান ও ফিলিস্তিনপন্থী বক্তব্যের কারণেই এসব হয়েছিল।
তবু প্রাথমিক নির্বাচনে কুওমো প্রতিপক্ষ জোহরানের চেয়ে আট গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করা সত্ত্বেও তাঁর কাছে সহজেই হেরে যান।
হামিদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, বিশেষ করে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সমর্থন এবং ইসরায়েল সরকারের সমালোচনার বিষয়ে এমন ঐকমত্য যে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে প্রচার চালিয়েও তা ঠেকানো যায়নি।’
হামিদ বলেন, জোহরানের এ জয় ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যতের জন্য একটি রূপরেখা হতে পারে। দলটি এখন স্থবির হয়ে আছে, এমনকি হোয়াইট হাউস ও সিনেটে তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা।
হামিদ আরও বলেন, ফিলিস্তিন এখন ভোটারদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। এই ইস্যু মানুষকে উদ্দীপ্ত করছে এবং এমন একজন প্রার্থীকে সমর্থন দিতে উৎসাহিত করেছে, যিনি ওয়াশিংটনের নির্ধারিত পথে হাঁটছেন না এবং এটিই মানুষকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ জ য় ইসর য় ল র ন উইয়র ক র জন ত সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফরে সঙ্গী হচ্ছেন ফখরুল, তাহেরসহ চার রাজনীতিবিদ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে যাবেন চারজন রাজনীতিবিদ। তাঁরা হলেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মহাসচিব আখতার হোসাইন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফরের বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দেশের বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চারজন রাজনীতিবিদ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ২১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন প্রধান উপদেষ্টা। ২২ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। তিনি দেশে ফিরবেন ২ অক্টোবর।
২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধান উপদেষ্টা ভাষণ দেবেন জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বিগত এক বছরে দেশে ঘটে যাওয়া সংস্কার ও আগামী দিনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা হবে। রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এমন একটি উচ্চ পর্যায়ের সভার আয়োজন এবারই প্রথম। এই উচ্চ পর্যায়ের সভা থেকে যেন রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের একটি কার্যকর পরিকল্পনা উঠে আসে, সেজন্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে গত মাসে কক্সবাজারে একটি অংশীদার সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ প্রমুখ।