ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে সৃষ্টি বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।
মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর অন্তত ২০টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে ৩০টির বেশি গ্রাম।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় পানিবন্দি মানুষের মাঝে ইতিমধ্যেই খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। সাথে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মোবাইলে যোগাযোগও ব্যহত হচ্ছে। বহু স্থানে সরকারি সহায়তা পৌঁছেনি।
ফুলগাজীর দেড়পাড়া, দৌলতপুর, গাইনবাড়ি, নাপিতকোনা ও উত্তর শ্রীপুর এবং পরশুরামের শালধর, অলকা, জঙ্গলঘোনা ও দানিয়ালপুরসহ অন্তত ৩০টি গ্রাম পানির নিচে। হঠাৎ পানি বাড়ায় ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু জায়গা বা অন্যের বাড়িতে।
গাইনবাড়ির আছমা আক্তার বলেন, “রাতেই পানি ঢুকে যায় ঘরে। খাবার নেই, পানিও বিশুদ্ধ না।”
নাপিতকোনার জাহানারা বেগম বলেন, “আমরা নিজেরা বাঁধ বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, কাজ হয়নি। এখন প্রতিবেশীর বাড়িতে আছি, খাবার-পানির কষ্টে আছি।”
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহিয়া আক্তার বলেন, “এই বন্যায় অন্তত ৭৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ১ হাজার ২০০ জন। বিতরণ করা হয়েছে শুকনো খাবার, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে।”
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, “১৫টি গ্রাম প্লাবিত। আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার, আর পানিবন্দি অন্তত ৭ হাজার মানুষ। শালধরে ১৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে।”
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, “মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে বৃষ্টি বন্ধ হলে ভাঙন বাড়ার আশংকা কমবে।”
অন্যদিকে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। পানি কমলে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, “ফুলগাজী ও পরশুরামে দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে।”
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (৮ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা) পর্যন্ত জেলায় ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বুধবার থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে, এতে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ন বন দ পরশ র ম
এছাড়াও পড়ুন:
কোভিড হাসপাতাল প্রকল্পে দুর্নীতি: পিডিসহ দুজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া ঢাকার মহাখালী ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতাল নির্মাণের নামে প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করার অভিযোগে সাবেক প্রকল্প পরিচালক ডা. ইকবাল কবীরসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়। এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন দুকের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, অনুসন্ধানে পাওয়া সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকার মহাখালী ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক ডা. ইকবাল কবীরের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের কোনোরূপ অনুমোদন না নিয়ে কোনো প্রকার ওয়ার্ক অর্ডার বা নোটিফিকেশন অফ এওয়ার্ড ছাড়াই নির্মাণ কাজটি করা হয়। সাবেক প্রকল্প পরিচালকের শুধুমাত্র মৌখিক নির্দেশে এসআরএস ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেডকে হাসপাতালের ৬ষ্ঠ তলায় নির্মাণ কাজ করানোর হয়। দুদকের অনুসন্ধানে এর প্রমাণ মিলেছে।
ওই কাজের জন্য এসআরএস ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাশন অস্বাভাবিক খরচ উল্লেখ করে একটি বিল তৈরি করেছিল। ৪ কোটি ৩৫ হাজার টাকার ওই বিলটি হাসপাতালের পরিচালকের মাধ্যমে উক্ত বিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। দুদক নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর মাধ্যমে এই কাজের পরিমাপ করে মাত্র ৬৯ লাখ ৭৩ টাকা খরচের হিসাব পায়। ওই হিসাব অনুযায়ী অতিরিক্ত ৩ কোটি ৩০ লাখ ৬১ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করা হয়েছিল।
বিলটি পাশের জন্য নানা কৌশল গ্রহণ করা হলেও অবশেষে বিলটি বাতিল করা হয়। মামলার অপর আসামী হলেন, এসআরএস ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাশনের এমডি মো. সাইফুর রহমান।
সাবেক প্রকল্প পরিচালক ডা. ইকবাল কবীর অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, ক্ষমতার অপব্যবহার করায় দন্ডবিধির ৫১১/১২০-খ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।