অনলাইন কেনাকাটা আরও নিরাপদ করতে ক্রোমে নতুন সুবিধা
Published: 30th, July 2025 GMT
অনলাইন কেনাকাটা আরও নিরাপদ করতে গুগল ক্রোমে যুক্ত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (এআই) নতুন একটি সুবিধা। এ সুবিধার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা অনলাইন দোকানের মান, পণ্যের গুণাগুণ, দাম, গ্রাহকসেবা, ফেরতনীতিসহ গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো একনজরে জানতে পারবেন। গুগলের ভাষ্য, এটি অনলাইন কেনাকাটাকে আরও সহজ, নিরাপদ ও কার্যকর করবে।
সোমবার গুগল এক ঘোষণায় জানায়, ডেস্কটপ সংস্করণের ক্রোম ব্রাউজারে ওয়েব ঠিকানার বাঁ পাশে একটি নির্দিষ্ট আইকনে ক্লিক করলেই নতুন এই ফিচার সক্রিয় হবে। তখন একটি পপ-আপ উইন্ডোতে সংশ্লিষ্ট অনলাইন শপ সম্পর্কে সারসংক্ষেপ তথ্য দেখাবে। ক্রেতারা জানতে পারবেন, ওই শপের পণ্যের মান কেমন, দাম যথাযথ কি না, গ্রাহকসেবায় সন্তোষজনক সাড়া মেলে কি না কিংবা পণ্য রিটার্ন দেওয়ার প্রক্রিয়া কতটা সহজ। গুগল জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি এই সারসংক্ষেপ বিভিন্ন রিভিউ প্ল্যাটফর্ম থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে বাজারভয়েস, বিজরেট ইনসাইটস, রিপুটেশন ডটকম, রিসেলার রেটিংস, স্ক্যামঅ্যাডভাইজার, ট্রাস্টপাইলট, টার্নটু, ইয়টপো, ভেরিফায়েড রিভিউসসহ একাধিক আন্তর্জাতিক রিভিউ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের জন্য ইংরেজি ভাষায় এবং ডেস্কটপ সংস্করণেই ফিচারটি পাওয়া যাবে। মোবাইল সংস্করণে কবে এটি চালু হবে, সে বিষয়ে গুগল এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, ক্রেতাসুবিধার পাশাপাশি এটি গুগলের কৌশলগত পদক্ষেপও বটে। কারণ, অ্যামাজনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে তাদের ই–কমার্স প্ল্যাটফর্মে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পণ্যের রেটিং ও রিভিউ সারসংক্ষেপ, পোশাক বাছাইয়ে পরামর্শ, ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী সুপারিশ এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণের মতো নানা সুবিধা চালু করেছে।
এদিকে গুগলের জনপ্রিয় ক্রোম ব্রাউজার দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও সম্প্রতি একাধিক নতুন এআই ব্রাউজার বাজারে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে পারপ্লেক্সিটির ‘কমেট’, দ্য ব্রাউজার কোম্পানির ‘ডায়া’, অপেরার ‘নিয়ন’ এবং ওপেনএআইয়ের সম্ভাব্য একটি ব্রাউজার। এসব প্রতিযোগিতার মুখে গুগলও তাদের ব্রাউজারে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে গুগল একটি এআই এজেন্ট তৈরির কাজ করছে, যা ব্যবহারকারীর হয়ে সরাসরি ব্রাউজারে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতে পারবে। এর পাশাপাশি সম্প্রতি গুগল তাদের জেমিনি এআই সহকারীকে ক্রোম ব্রাউজারে যুক্ত করেছে। পাশাপাশি অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মের জন্য গুগল ইতিমধ্যে চালু করেছে এআইনির্ভর ব্যক্তিগত পণ্যের সুপারিশ, ভার্চ্যুয়াল ট্রায়াল সুবিধা, পণ্যের দামের স্বয়ংক্রিয় পর্যবেক্ষণ, ‘এআই মোডে’ কেনাকাটা ও এআই চেকআউট প্রক্রিয়া। চলতি বছরের গুগল আই/ও সম্মেলনে এসব সুবিধার ঘোষণা দেওয়া হয়।
সূত্র: টেকক্রাঞ্চ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ
কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।
স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।