পেশাগত মানসিক চাপ মোকাবিলায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্যদের জন্য প্রথমবারের মতো নিয়মিত ও বিনা মূল্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ‘খোলা জানালা’ কার্যক্রম চালু করল সংগঠনটি।

আজ মঙ্গলবার ডিআরইউর শফিকুল কবির মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

উদ্যোগটির অংশ হিসেবে প্রতি ১৫ দিন পরপর ডিআরইউ প্রাঙ্গণে সদস্য সাংবাদিকদের জন্য গোপনীয়, পেশাদার ও সম্মানজনক পরিবেশে মনোবিজ্ঞানী ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বিনা মূল্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে। এই সেবা দেবেন আন্তর্জাতিক মানের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা ‘মনের বন্ধু’র প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ পেশাজীবীরা।

ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো.

সাইদুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ‘মনের বন্ধু’র হেড অব মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম ও লিড সাইকোলজিস্ট কাজী রুমানা হক এবং স্কুল অব লিডারশিপ নির্বাহী পরিচালক জামিল আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিআরইউর যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডিআরইউর সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও মুরসালিন নোমানী, বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি গাযী আনোয়ার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই তুহিন। অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিকদের কেউ কেউ তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যসচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় অনেক শিশুশিক্ষার্থী অস্বাভাবিক আচরণ করছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাংবাদিকসহ যাঁরা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের কাছে পৌঁছাতে হবে। মরদেহ গোপনের কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেককে প্রত্যেকের পাশে থাকতে হবে। কাঙ্ক্ষিত দেশ গড়তে সবার সহযোগিতা খুব জরুরি। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা প্রয়োজন। তিনি ডিআরইউর এ আয়োজনকে সাধুবাদ জানান এবং সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ‘হাঁসের মতো সাংবাদিকদের সব দুঃখ, ভয়, সমস্যা ঝেড়ে ফেলতে হবে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে বিশ্বাসী হতে হবে। প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে কর্মপরিবেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, বছরব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনার অংশ হিসেবে এ আয়োজন। এর আগে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে। কোভিডের সময় বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারিভাবে কোভিড বুথ স্থাপনসহ ডেন্টাল, ডায়াবেটিস, গাইনি, মেডিসিন, কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প চালু রেখেছে ডিআরইউ। এ ছাড়া সদস্যদের সেবাদানের জন্য শিগগিরই হেলথ কর্নার, জরুরি সেবাদানে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, নারী সদস্য ও সন্তানদের জরায়ু ক্যানসারের টিকা এবং সদস্যদের নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

‘খোলা জানালা’ সেবা কার্যক্রমের আহ্বায়ক নাদিয়া শারমিন বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকেরা অন্যের কণ্ঠস্বর হই, কিন্তু নিজেদের মানসিক যুদ্ধের কণ্ঠস্বর চাপা পড়ে যায়। “খোলা জানালা” সেই অন্ধকার দূর করার একটি সাহসী উদ্যোগ।’

অনুষ্ঠানে বলা হয়, ‘খোলা জানালা’ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে সাংবাদিকদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা। ট্রমা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অনিদ্রা ইত্যাদি সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা করা, পেশাগত মানসিক স্থিতি ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। এ ছাড়া সহানুভূতিশীল ও সহায়ক সাংবাদিকতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা। ডিআরইউ মনে করে ‘খোলা জানালা’ মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উদ্যোগটি শুধু একটি সেবা নয়, এটি সাংবাদিকদের মানসিক সুস্থতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার একটি প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ। এটি দেশের অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠন ও গণমাধ্যম সংস্থার জন্যও একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংস্কার ভেঙে সাংবাদিক সমাজে সচেতনতা ও সহানুভূতির নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউর কার্যনির্বাহী কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ, কল্যাণ সম্পাদক রফিক মৃধা, কার্যনির্বাহী সদস্য সুমন চৌধুরীসহ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড আরইউর অন ষ ঠ ন ড আরইউ র জন য সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

শিশুদের হাতে মোবাইল না দিতে বাসস চেয়ারম্যানের অনুরোধ

শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে না দিতে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ করেন।

বাসস চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তির কারণে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারা মেধাহীন হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের মোবাইল ফোন না দিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখলে তাদের মেধার বিকাশ ঘটবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের যদি মেধাবী করে গড়ে তোলা হয়, তাহলে আগামী দিনের বাংলাদেশে সেই সুফল ভোগ করা যাবে।’’

ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি গাযী আনোয়ার হোসেন ও সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী।

ডিআরইউর সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. এমদাদুল হক খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই তুহিন, দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, নারীবিষয়ক সম্পাদক রোজিনা রোজী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিজান চৌধুরী, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ ছলিম উল্লাহ (মেজবাহ), কার্যনির্বাহী সদস্য মো. জুনায়েদ হোসাইন (জুনায়েদ শিশির), আকতারুজ্জামান, আমিনুল হক ভূঁইয়া, মো. সলিম উল্ল্যা (এস ইউ সেলিম)-সহ ডিআরইউ সদস্যরা।

প্রতি বছরের মতো এবারো ডিআরইউ শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ডিআরইউর শফিকুল কবির মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ উৎসব চলে। এতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সংগঠনের সদস্যদের শতাধিক সন্তান অংশ নেয়। চিত্রাঙ্কন, সংগীত ও আবৃত্তিতে ক, খ, গ বিভাগে ২৭ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

এবারের প্রতিযোগিতায় চিত্রাঙ্কনে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র আর্টিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন ও চিত্রশিল্পী শায়লা আক্তার। সংগীতে বিচারক ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. অণিমা রায় এবং বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক আলম মাহমুদ। আবৃত্তি বিভাগে বিচারক ছিলেন আবৃত্তিকার রেজিনা ওয়ালী লীনা, ফয়জুল আলম পাপ্পু ও শিশু একাডেমির আবৃত্তির প্রশিক্ষক রূপশ্রী চক্রবর্তী।

প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা হলো- চিত্রাঙ্কন ক বিভাগে প্রথম হোসেন রিজভান রাউসিফ, দ্বিতীয় আরাবি আল আবিদ, তৃতীয় ফাতেমা তাছনিম, খ বিভাগে প্রথম হয়েছে হোসেন রাজভীন রাউনাফ, দ্বিতীয় মেহজুবা ইবনাত সিমলা, তৃতীয় সানদিহা জাহান দিবা, গ বিভাগে প্রথম হয়েছে জাওয়াদ খান, দ্বিতীয় মারজুকা জয়নব, তৃতীয় অদ্বিতীয়া পূণ্য। 

সঙ্গীত ক বিভাগে প্রথম হয়েছে, মুয়ান্তিরা রহমান সানাইয়া, দ্বিতীয় জাওয়াদ ইনাম সানান, তৃতীয় অরুন্ধতী কর গল্প, খ বিভাগে প্রথম তাসনুভা মাহরিন তানিশা, দ্বিতীয় আরাত্রিকা দাস বৃদ্ধি, তৃতীয় ওয়াজিহা মাহবুব শাইরা, গ বিভাগে প্রথম জেরিন ফেরদৌস পঙক্তি, দ্বিতীয় রাদিতা জাহান নুভা, তৃতীয় মাকসুদা রুকাইয়া। 

আবৃত্তি ক বিভাগে প্রথম অরুন্ধতী কর গল্প, দ্বিতীয় তাহসিন হক আনিকা, তৃতীয় সুহায়লা জাইমা। খ বিভাগে প্রথম সানদিয়া জাহান দিবা, হোসেন রাজভীন রাউনাফ, আইনুন নাহার আকসা। গ বিভাগে প্রথম জেরিন ফেরদৌস পঙক্তি, দ্বিতীয় আনান মুস্তাফিজ, তৃতীয় মারজুকা জয়নব।

ঢাকা/এএএম/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিশুদের হাতে মোবাইল না দিতে বাসস চেয়ারম্যানের অনুরোধ