সমাবেশের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ছেড়ে দিল ছাত্রদল। আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রদলের ছাত্রসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন তা হবে শাহবাগে।

এর আগে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রসমাবেশ করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত আবেদন করে ছাত্রদল। তারা অনুমতিও পায়। তবে এনসিপির অনুরোধে ছাত্রদল শেষ পর্যন্ত ছাত্রসমাবেশের স্থান পরিবর্তন করল।

আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানায় ছাত্রদল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি নাছির উদ্দিন।

লিখিত বক্তব্যে রাকিবুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল ছাত্রদল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতিও পাওয়া যায়। তবে একই দিনে একই স্থানে এনসিপির কর্মসূচি থাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সমাবেশের স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছাত্রদল।

উদার রাজনৈতিক চর্চা ও পরমতসহিষ্ণুতার মূল্যবোধ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পরিবর্তে শাহবাগে সমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ছাত্রদল সভাপতি। তিনি বলেন, ‘শাহবাগে ছাত্রসমাবেশ উপলক্ষে ঢাকাবাসীর কাছে আগাম দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা কাঁটার বদলে ফুল দিতে চাই। উত্তেজনার বদলে শান্তির বার্তা দিতে চাই।’

রাকিবুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ছাত্রদল নানা নিপীড়নের মুখেও শান্তিপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও ছাত্রদলের অবদানকে অস্বীকার করা হচ্ছে। গুজব, অপপ্রচার ও অনলাইন আক্রমণের মধ্যেও ছাত্রদল সহাবস্থানের রাজনীতিতে অটল রয়েছে।

ছাত্রদলের এই অবস্থান গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও ইতিবাচক ধারার ছাত্ররাজনীতির প্রতীক হিসেবে ইতিহাস হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই উদারতা অন্য রাজনৈতিক শক্তির জন্যও পথপ্রদর্শক হবে।

কাছাকাছি স্থানের সমাবেশ নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কার করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাকিবুল ইসলাম বলেন, শান্তি ও সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ তাঁরা স্থাপন করেছেন। সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই এই কারণে, ইতিমধ্যে তাঁরা নেতা-কর্মীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এনসিপি যদি কোনো রকম উসকানিমূলক কাজও করে ছাত্রদল সে ফাঁদে পা দেবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিচার না হওয়ার আগে এমন নির্বাচন আয়োজন কতটুকু যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এরপরও তাঁরা তফসিল ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ৪০টির বেশি সংস্কারের সুপারিশ করলেও সেখান থেকে মাত্র ৪টি সুপারিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়াল, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ক ব ল ইসল ম ছ ত রসম ব শ ন ছ ত রদল ছ ত রদল র র জন ত শ হব গ এনস প আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ

কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।

এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।

তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।

স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।

জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ