সারা দেশে অবরোধের মধ্যে আদালতে শুনানি
Published: 10th, July 2025 GMT
সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে ২০২৪ সালের ১০ জুলাই নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। এদিন সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে সারা দেশে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘটও ছিল।
সেদিনের অবরোধে সারা দেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ১৮টি জায়গায় অবরোধ হয়। ঢাকার বাইরে কুমিল্লা, সাভার, খুলনা, রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, পাবনা, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়কগুলো অবরোধ করা হয়। দেশের অন্তত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া দেশের সাতটি স্থানে রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে এই অবরোধ কর্মসূচির কেন্দ্র ছিল রাজধানীর শাহবাগ। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ায় অনেক যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে। সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা একে একে শাহবাগ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়, বাংলামোটর, পরীবাগ, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকার সড়কে অবস্থান নেন। এতে মগবাজার, মৌচাক, হাতিরঝিল, পান্থপথ মোড়, বিজয় সরণি, সংসদ ভবনসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধের প্রভাব পড়ে মিরপুর এলাকার যান চলাচলেও। সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করায় নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি, রাইফেলস স্কয়ার, শংকর, আসাদগেট এলাকায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
মহাখালীর সড়ক অবরোধে উত্তরা, বনানী, গুলশানের দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রামপুরায় সড়ক অবরোধের প্রভাব পড়ে বাড্ডা, আবুল হোটেলসহ আশপাশের এলাকায়। অপর দিকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট, শিক্ষা ভবন মোড়, মৎস্য ভবন, পল্টন মোড়, কাকরাইল ও বকশীবাজারের সড়ক অবরোধ করা হয়। এতে শান্তিনগর, মতিঝিল, পুরান ঢাকা, আজিমপুরসহ ঢাকার দক্ষিণ অংশে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলনকারীরা বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত অধিকাংশ সড়ক অবরোধ করে রাখেন। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা সাতটার দিকে জিরো পয়েন্ট মোড় ছাড়েন। আর অবরোধের প্রায় আট ঘণ্টা পর রাত পৌনে আটটার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে অবরোধ কর্মসূচি তুলে নেওয়া হয়।
নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (১১ জুলাই) বেলা সাড়ে তিনটা থেকে সারা দেশে রেলপথ ও সড়কে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি। সারা দেশে শিক্ষার্থীরা তাঁদের নিকটস্থ পয়েন্টে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবেন।’
আপিল বিভাগের আদেশকোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা নিয়ে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সাতজন সন্তান। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত বছরের ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।
এই রায়ের পর কোটা সংস্কারের দাবিতে ওই পরিপত্র পুনর্বহাল চেয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেছিল। ৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীও পৃথক রিট আবেদন করেছিলেন। এই দুই আবেদনের ওপর শুনানি হয় ১০ জুলাই।
সেদিন দুপুরে কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর চাপ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়ে ৭ আগস্ট শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
ওই শুনানির এক পর্যায়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছিলেন, ‘আমি প্রথম দিনই বলেছিলাম, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন হয় না। এটা আজকে না, আমি যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ছিলাম, তখন একটি মামলায় বলেছিলাম, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন করা যায় না। এটি সঠিক পদক্ষেপ না।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সূচনালগ্ন থেকেই এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তাঁর লেখা জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু (প্রথমা প্রকাশন, ২০২৫) বইয়ে তিনি বলেছেন, ‘ছাত্রদের আদালতে নিয়ে আসার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মূলত ওবায়দুল কাদের। উদ্দেশ্য ছিল, ছাত্রদের আদালতে নিয়ে মাঠের আন্দোলনের যৌক্তিকতা শেষ করে দেওয়া।’
যে দুই শিক্ষার্থী রিট আবেদন করেছিলেন, তাঁদের একজন আল সাদী ভূঁইয়া। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) কর্মরত। আরেকজন আহনাফ সাঈদ খান। পরে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হন।
আল সাদী ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলনের এক পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতের রায় বাতিলের জন্য আপিল বিভাগে আন্দোলনকারীদের রিট করতে বলেছিল। সবার অনুরোধে আমি রিটে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করি। কিন্তু সেই রিটে আন্দোলন থামাতে একটা লোকদেখানো রায় দেওয়া হয়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ আপ ল ব ভ গ অবর ধ র ক অবর ধ বল ছ ল কর ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের লবিস্টদের লাখ লাখ ডলার দিচ্ছে দরিদ্র দেশগুলো
বিশ্বের কিছু দরিদ্র দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এমন লবিস্টদের লাখ লাখ ডলার দিতে শুরু করেছে। এই লবিস্টরা যাতে বিদেশী সাহায্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাটছাঁট বন্ধে ট্রাম্পকে প্রভাবিত করতে পারে সেজন্য এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, সোমালিয়া, হাইতি এবং ইয়েমেন ১১টি দেশের মধ্যে রয়েছে যারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিদেশী মানবিক সহায়তা হ্রাস করার পর সরাসরি তার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
গ্লোবাল উইটনেসের তদন্তে দেখা গেছে, অনেক দেশ ইতিমধ্যেই মানবিক বা সামরিক সহায়তার বিনিময়ে খনিজসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ বিনিময় শুরু করেছে।
ট্রাম্প জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পরপর মার্কিন ত্রাণ সংস্থা ইউএসএইড বন্ধের ঘোষণা দেন। গত সপ্তাহে সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে তার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই পদক্ষেপের ফলে পাঁচ বছরে ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
গ্লোবাল উইটনেসের ট্রানজিশন মিনারেলের নীতি প্রধান এমিলি স্টুয়ার্ট বলেছেন, “পরিস্থিতির অর্থ হল ওয়াশিংটনে চুক্তি করা নিম্ন আয়ের দেশগুলোআরো মরিয়া” হয়ে উঠতে পারে, যারা তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের নৃশংস শোষণের জন্য ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নথিপত্র থেকে দেখা গেছে, গত নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনের ছয় মাসের মধ্যে ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট লবি ফার্ম এবং বিশ্বের কিছু স্বল্পোন্নত দেশ, যারা ইউএএসএইডের সর্বোচ্চ প্রাপক ছিল, তাদের মধ্যে ১৭ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
মার্কিন বিদেশী এজেন্ট নিবন্ধন আইনের অধীনে জমা দেওয়া রেকর্ড থেকে জানা গেছে, কিছু দেশ একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো। রুয়ান্ডা-সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সমর্থনের জন্য কঙ্গো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য প্রস্তুত। এই চুক্তির বদৌলতে আমেরিকান কোম্পানিগুলো লিথিয়াম, কোবাল্ট এবং কোল্টান উত্তোলনের সুযোগ পাবে কঙ্গো থেকে। ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তা পেত লবিস্ট ব্যালার্ড পার্টনার্সের সাথে ১২ লাখ ডলার মূল্যের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে কঙ্গো।
ব্রায়ান ব্যালার্ডের মালিকানাধীন এই সংস্থাটি ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনের অনেক আগে ট্রাম্পের পক্ষে লবিং করেছিল এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক প্রচারণায় শীর্ষস্থানীয় দাতা ছিল।
সোমালিয়া এবং ইয়েমেন বিজিআর গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্সের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যার মূল্য যথাক্রমে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার এবং তিন লাখ ৭২ হাজার ডলার। বিজিআরের সাবেক অংশীদার শন ডাফি এখন ট্রাম্পের পরিবহনমন্ত্রী।
ঢাকা/শাহেদ